জামিনে বেরিয়ে এসেই মাকে মারধর, বাড়ি ভাঙচুর
Published: 26th, May 2025 GMT
হাজেরা বেগমের বয়স ৭৫। স্বামী মো. সাকায়েত সমাদ্দার ২ ছেলে এবং ৪ মেয়ে রেখে ৩২ বছর আগে চলে যান না-ফেরার দেশে। এরপরই শুরু হয় হাজেরা বেগমের জীবনযুদ্ধ। সেই যুদ্ধে একমাত্র পণ ছিল ৬ সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তোলা। যদিও ভাগ্য সহায়তা করেনি হাজেরা বেগমকে। বড় ছেলের প্রতি তার সমস্ত আশা-ভরসা নিঃশেষ হয়ে গেছে মায়ের প্রতি সন্তানের দুঃখজনক নির্মমতায়। জমির ভাগ নিয়ে পারিবারিক অশান্তি এই বৃদ্ধ মায়ের শেষ জীবনের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বয়সে যে সন্তানের কাঁধে তিনি ভরসার হাত রাখতে চেয়েছিলেন তা আজ প্রায় দুঃস্বপ্ন। বড় ছেলে উলু সামাদ্দারের হাতে তাকে হতে হচ্ছে শারীরিক নির্যাতনের শিকার। শেষ জীবনে সমস্ত স্বপ্ন হারিয়ে হাজেরা বেগম এখন অসহায় এক মা।
রবিবার (১৫ মে) জামিনে বেরিয়ে আসেন উলু সমাদ্দার। বাড়িতে ফিরেই তিনি চড়াও হন হাজেরা বেগমের প্রতি। শুধু তাই নয়, এ সময় পাষণ্ড সন্তান বাড়িঘর ভাঙচুর করেন। বাধা দিতে গেলে দুই বোন এবং ছোট ভাইয়ের স্ত্রীকেও তিনি মারধর করেছেন।
ঘটনাটি ঘটেছে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উরফী চরপাড়া গ্রামে। মায়ের প্রতি সন্তানের এমন ক্রোধ এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে।
হাজেরা বেগম জানান, দীর্ঘদিন উরফী চরপাড়া গ্রামে নিজ জমিতে তিনি বসবাস করছেন। ছোট ছেলে মিলন সমাদ্দার দেড় বছর আগে বিদেশ চলে গেলে জমির ভাগাভাগি নিয়ে উলু সমাদ্দারের সঙ্গে তার দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
মায়ের অভিযোগ, জমির ভাগাভাগি নিয়ে তাকে, তার মেয়ে এবং ছেলের বউকে প্রায়ই মারধর করতেন উলু সমাদ্দার। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ছেলের বিরুদ্ধে গোপালগঞ্জ আদালতে মামলা দায়ের করেন তিনি। গতকাল রবিবার জামিনে মুক্ত হয়ে পুনরায় জমি দাবি করেন উলু। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে পরিবারের সবার উপর চড়াও হন তিনি। এ সময় পালিয়ে গিয়ে তারা জীবন রক্ষা করেন।
উলু সমাদ্দারের মেজ বোন সালমা বেগম (৪৫) বলেন, ‘‘বিভিন্ন সময় জমি নিয়ে আমার মাকে মারধর করে উলু। প্রতিবাদ করলে আমাকেও মারধার করে সে। আমার মা তার হুমকি-ধামকিতে বাড়িতে থাকতে পারে না। গতকাল জামিনে বেরিয়ে এসে সে মাকে তো মেরেছেই, বাড়িঘরও ভাঙচুর করেছে।’’
মিলন সমাদ্দার স্ত্রী টুম্পা বেগম বলেন, ‘‘জমি নিয়ে প্রায় সময়ই শাশুড়ী মাকে মারধর করে উলু সমাদ্দার। আমার শাশুড়ি নিজের বাড়িতে থাকতে না-পেরে মেয়েদের বাড়িতে থাকে। এসব নিয়ে প্রতিবাদ করলে আমাকেও সে মেরেছে। এখন শশুড়বাড়িতে থাকাটাই আমার কাছে অভিশাপ হয়ে উঠেছে।’’
এ ঘটনায় অভিযুক্ত উলু সমাদ্দারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি।
বাদল//
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পর ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বেরোবি
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নিয়ে অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে শিক্ষার্থীদের। গত ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গেজেট প্রকাশ হয়ছে গঠনতন্ত্র।
এরই মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর হতে যাচ্ছে কাঙিক্ষত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা ব্যাকসু নির্বাচন। তবে এর জন্য আমরণ অনশন থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মসুচিই পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
‘আমরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে চাই’
বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের মডেল প্রদর্শন
জুলাই অভ্যুত্থান পর গণরুম ও গেস্ট রুমের যে সাংস্কৃতি ছিল, তা এখন বন্ধ হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কমকাণ্ডে সামিল হওয়াও বাধ্যতামুলক নয়।
তাই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ছাত্র সংসদ। যাতে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বেরোবির বিধিমালা অনুযায়ী, ১৩টি পদে সরাসরি নির্বাচন ও হল সংসদে নয়টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সব ধরনের কথা তুলে ধরতে পারবেন।
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখর রায় বলেন, “সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও লেজুরবিত্তিক রাজনীতি ব্যতীত একটি নির্বাচন হোক। যোগ্য, আদর্শ, উত্তম চরিত্র ও মনের প্রার্থী বিজয়ী হোক। নির্বাচিত হয়ে তারা হয়ে উঠুক বেরোবির একেকজন যোগ্য প্রতিনিধি। তারা ন্যায়ের পক্ষে থাকুক । তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাক বেরোবি।”
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাওয়াদ সাজিদ বলেন, “ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের দাবি, অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার প্রধান মঞ্চ। এটি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কণ্ঠ পৌঁছে যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে। কিন্তু এজন্য সংসদকে দলীয় প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। প্রকৃত অর্থে ছাত্র সংসদ তখনই সফল, যখন তা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে তাদের সমস্যার সমাধান ও কল্যাণে কাজ করে।”
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন ছাত্র সংসদ চাই, যেখানে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে এবং সব শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হয়ে কাজ করবে। সবমিলিয়ে সবার বিশ্বস্ত জায়গা হবে এই ছাত্র সংসদ।”
ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী