কুষ্টিয়া শহরের একটি বহুতল ভবনের পার্কিং থেকে জব্দ বিলাস বহুল গাড়িটি সেখানে নিয়ে যান বিএনপির সাবেক এক নেতা। প্রায় তিন মাস আগে পার্কিংয়ে রাখার পর থেকে গাড়িটি আর বাইরে বের করা হয়নি। একটি তামাক কোম্পানিতে কর্মরত ওই সাবেক বিএনপি নেতার গাড়িচালক মাঝে মধ্যে পার্কিংয়ে এসে গাড়িটি চালু করে দেখতেন।

সাফিনা টাওয়ার নামে ওই ভবনে কর্মরত নিরাপত্তাকর্মী, গাড়িচালক ও পুলিশ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিএনপির সাবেক ওই নেতার নাম মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে খোকন। তিনি মেহেরপুর জেলার গাংনী পৌরসভার বাঁশবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা। তিনি বিএনপি সরকারের সময় গাংনী পৌর বিএনপির সভাপতি ছিলেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তবে তিনি দীর্ঘ দুই দশক ধরে কুষ্টিয়ায় থাকেন।

আরো পড়ুন:

এমপি আনারের কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি মিলল কুষ্টিয়ায়

ঈদযাত্রায় উত্তরের পথে যানবাহনের চাপ দ্বিগুণ

সোমবার (৯ জুন) রাত ১টার দিকে কুিষ্টিয়া জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনের বহুতল ভবন সাফিনা টাওয়ারের পার্কিং জোনের বেসমেন্ট থেকে গাড়িটি জব্দ হয়। গাড়ির ভেতরে একটি রশিদ পেয়েছে পুলিশ। তাতে গাড়ির নম্বর, ইঞ্জিন নম্বর, চেসিস নম্বরসহ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম ওরফে আনারের নাম হাতে লেখা আছে।

কুষ্টিয়া পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, ‍“গাড়িটি জব্দ করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় রাখা হয়েছে। গাড়িটি ঝিনাইদহের সাবেক এমপির কি না, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কাগজগুলো বিআরটিএ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে যাচাই করা হবে। অফিস ছুটি থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। এটা নিয়ে কাজ করা হচ্ছে।”

সাফিনা টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী আশিকুর রহমান জানান, তিনি ছয় বছর ধরে এই ভবনের নিরাপত্তাকর্মীর দায়িত্বে আছেন। গত বছরের ১ জুলাই মোস্তাফিজুর রহমান নামের এক ব্যক্তি ভবনের তিনটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। তিনি তামাক কোম্পানিতে বড় পদে রয়েছেন। 

ভবনের নিচে ৬ ও ৭ নম্বর গ্যারেজও ভাড়া চুক্তিতে নেওয়া ছিল। ৬ নম্বর গ্যারেজে মোস্তাফিজুরের কোম্পানির ব্যবহৃত একটি গাড়ি রাখা হত। ৭ নম্বর পার্কিংয়ের জায়গাটি ফাঁকাই ছিল। প্রায় তিন মাস আগে প্রাডো গাড়িটি মোস্তাফিজুর রহমান তার চালক দিয়ে ৭ নম্বর পার্কিংয়ে এনে রাখেন। এরপর গাড়িটি বাইরে বের করতে দেখেননি তিনি।

তিনি আরো জানান, মোস্তাফিজুরের আরেক গাড়ির চালক শান্ত দুই থেকে তিনদিন পরপর প্রাডো গাড়িটি স্টার্ট দিতেন। কয়েক মিনিট চলার পর তিনি গাড়িটি ঢেকে রাখতেন। মোস্তাফিজুর রহমান তার পরিবার নিয়ে একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। বাকিগুলো কোম্পানির লোকজন মাঝে মধ্যে ব্যবহার করেন। ২০ দিন আগে মোস্তাফিজুর পরিবার নিয়ে চলে গেছেন। 

পুলিশ ও স্থানীয় কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, ‘জেনুইন লিফ কোম্পানি’ নামে একটা সিগারেট কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান। এই কোম্পানি ৫ আগস্টের আগে ‘তারা টোব্যাকো’ নামে ছিল। ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে কোম্পানির নাম ও মালিকানা পরিবর্তন হলেও কর্মকর্তা একই থাকেন। এই কোম্পানির পুরাতন কর্মকর্তা বিল্লাল হোসেন সবকিছু দেখভাল করেন।

গাড়ি চালক শান্ত বলেন, “আমি এখন জেনুইন লিফ কোম্পানির গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করি। জিএম বিল্লাল স্যার ও সিইও জাহিদ স্যারের গাড়ি চালাই। তারা দুজন আমাকে চাবি দিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিতে বলেন। জেনুইন লিফ টোব্যাকোর বিল্লাল ও জাহিদ স্যারের হুকুমে আমি স্টার্ট দিয়েছি। গাড়ির মালিক কে, তা আমি জানি না। সাফিনা টাওয়ারে বাড়িভাড়া চুক্তিপত্রে মোস্তাফিজুর রহমানের দেওয়া তথ্যের মধ্যে মুঠোফোন নম্বরও দেওয়া হয়েছে।”

সেই নম্বরে যোগাযোগ করা হলে প্রতিষ্ঠানের পাবলিক রিলেশন অফিসার পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি নিজের নাম জানান এস এম সালেহ বিন উৎস। তিনি জানান, এক মাস আগে তিনি এই কোম্পানিতে যোগ দিয়েছেন। প্রায় ১৫ দিন আগে ভাড়ার চুক্তি বাড়ানোর সময় তার ফোন নম্বর চুক্তিপত্রে দেওয়া হয়েছিল। তিনি এখনো প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। এর বেশি কিছু জানেন না বলেও তিনি জানান। 

মোস্তাফিজুর রহমানের মোবাইল নম্বর চাইলে তার কাছে নেই বলেও জানান এস এম সালেহ বিন উৎস। পরে দিতে পারবেন বলে জানান এই কর্মকর্তা। এরপর তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে গেলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলা এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপি সরকারের আমলে মোস্তাফিজুর রহমান সক্রিয় বিএনপির রাজনীতি করতেন। আওয়ামী লীগের আমলে তিনি কুষ্টিয়ায় চলে আসেন। এখানেই ব্যবসা করেন। তবে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে গাংনীতে কয়েকবার গিয়ে কয়েকটি অনুষ্ঠান করেছিলেন। কয়েক মাস ধরে তাকে আর কোনো অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি।

মেহেরপুর জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন বলেন, “মোস্তাফিজুর রহমান একসময় গাংনী পৌর বিএনপির সভাপতির পাশাপাশি জেলা বিএনপির সহসভাপতিও ছিলেন। পরে আর রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না।” 

তিনি জানান, মোস্তাফিজুর রহমান বর্তমানে তামাকের ব্যবসা করেন বলে জানেন। বিলাসবহুল গাড়িটি জব্দের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকায় অনেক জল্পনাকল্পনা চলছে। গাড়িটিতে চড়ে মোস্তাফিজুর রহমানের পরিবারের এক সদস্য কিছুদিন আগে একবার এলাকায় এসেছিলেন বলেও শোনা যাচ্ছে।

এদিকে, কুষ্টিয়া শহরের সাফিনা টাওয়ারে পাওয়া বিলাসবহুল গাড়িটি আনোয়ারুল আজিম আনারের বলে দাবি করেছেন তার মেয়ে  মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। তিনি তার বাবার গাড়িটি ফিরে পাওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চেয়েছেন।

মঙ্গলবার (১০ জুন) মোবাইল ফোনে রাইজিংবিডিকে ডরিন বলেন, ‘‘গাড়িটি আমা‌দের। আমরা গাড়িটি কারো কাছে বিক্রি করিনি। তবে গাড়িটি ওইখানে কেন, সেটাও জানি না।’’

তিনি বলেন, ‘‘আমার বাবা যেভাবে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন, তাতে আমাদের গাড়ির কথা মনেই ছিল না। ৫ আগস্টের ঘটনার পর আমরা আরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তবে গাড়িটা আমরা নিজেদের মধ্যে খোঁজাখুঁজি করছিলাম। নিজেদের মতো করেই এ নিয়ে খোঁজ নিচ্ছিলাম।’’

ডরিন বলেন, ‘‘আমার বাবার ডেথ সার্টিফিকেট ও ডিএনএ টেস্টের রেজাল্ট এখনো পাইনি। কিছুদিন আগেও ভারত থেকে ঘুরে এলাম। বাবার জানাজাটা পর্যন্ত হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। যেহেতু বাবার হঠাৎ করেই এমন দুর্ঘটনা হলো, তারপর থেকে আমাদের মাথায় গাড়ির বিষয়টি ছিলই না।’’

তিনি আরো বলেন, ‘‘এ বিষয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তবে আমাদের গাড়িটি বুঝিয়ে দিতে তাদের সহায়তা নেব।’’

গত বছরের ১২ মে কলকাতায় চিকিৎসার জন্য যান আনোয়ারুল আজীম আনার। কলকাতা পুলিশ জানায়, ১৩ মে নিউটাউনের একটি ফ্ল্যাটে খুন হন এই সংসদ সদস্য।

ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম স ত ফ জ র রহম ন ব এনপ র স ব ক কর মকর ত দ ন আগ আম দ র ভবন র

এছাড়াও পড়ুন:

কনসার্টের জন্য কত পারিশ্রমিক নেন অরিজিৎ

তাঁর সংগীতের সফর শুরু হয়েছিল মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ থেকে। আজ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে রয়েছেন তাঁর অনুরাগীরা। মাত্র ৩৮ বছর বয়সে অরিজিৎ সিং ভারতের অন্যতম আলোচিত শিল্পী। তবে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি কনসার্টে গাওয়ার জন্য বেশি পারিশ্রমিক নেন। আসলে কত পারিশ্রমিক নেন গায়ক?

সম্প্রতি সুরকার মন্টি শর্মা পিংকভিলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন অরিজিতের পারিশ্রমিক নিয়ে। তিনি বলেন, ‘একটা সময় পরে অনেক কিছুর বিবর্তন হয়েছে। আগে গোটা একটা গান আমরা দুই লাখ রুপিতে শেষ করতাম। এর মধ্যে গোটা অর্কেস্ট্রা, ৪০ জন বেহালা বাদক, আরও অনেক কিছু থাকত। তারপর ধীরে ধীরে গানপ্রতি নিজের জন্য ৩৫ হাজার রুপি নিতে থাকলাম।’

এরপরই অরিজিতের প্রসঙ্গ টেনে আনেন তিনি। মন্টি বলেন, ‘অরিজিৎ যখন আসত, তখন টানা ছয় ঘণ্টা আমার সঙ্গে একটা গান নিয়ে বসত। এখন ও একটি অনুষ্ঠানের জন্য দুই কোটি রুপি নেয়। তাই ওকে নিয়ে অনুষ্ঠান করতে হলে দুই কোটিই দিতে হবে। আগে তো মানুষ বেতারে ও টিভিতেও গান শুনত। কিন্তু এখন তাদের কাছে ইউটিউব আছে। এখন গান শোনার মাধ্যম অনেক বড়। তাই অর্থের পরিমাণও এখন বেড়েছে। তাই এখন যদি ১৫-২০ লাখ টাকা দিয়ে একটা গান করি, তা হলে ৯০ শতাংশ স্বত্ব কিনে নেয় অডিও সংস্থা। এই অডিও সংস্থাগুলো এখন আয় করছে।’

আরও পড়ুনযার গানে মুগ্ধ অরিজিৎ সিং, কে এই এনজেল নূর? ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ