বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত ৩, দুজন গুলিবিদ্ধ
Published: 15th, June 2025 GMT
নরসিংদীর পলাশে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিন নেতা–কর্মী আহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে দুজন গুলিবিদ্ধ। আজ রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পলাশ বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন বিএডিসি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
আহত ব্যক্তিরা হলেন নরসিংদী জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল কবির (জুয়েল), উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইসমাইল হোসেন (৩০) ও বিএনপির কর্মী সোহেল মিয়া (১৮)। তাঁদের মধ্যে ইসমাইল ও সোহেল মিয়া গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পলাশ উপজেলা বিএনপিতে দুটি পক্ষ সক্রিয়। এক পক্ষ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানের অনুসারী। এই পক্ষের নেতৃত্ব দেন তাঁর পিএস বাহাউদ্দিন মিল্টন। অন্য পক্ষের নেতৃত্বে আছেন জেলা বিএনপির সহসাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল কবির। গুলিবিদ্ধ ইসমাইল আবদুল মঈন খানের পক্ষের কর্মী।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, আজ সন্ধ্যার পর ফজলুল কবির তাঁর লোকজন নিয়ে এলাকায় মহড়া দিচ্ছিলেন। তাঁরা পলাশ বাসস্ট্যান্ড থেকে বিএডিসি মোড় এলাকায় পৌঁছালে অপর পক্ষের নেতা–কর্মীরা তাঁদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। দুই পক্ষের ছোড়া গুলিতে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন ইসমাইল হোসেন ও সোহেল মিয়া। এ ছাড়া মারধরে আহত হন ফজলুল কবির জুয়েল।
গুলিবিদ্ধ ইসমাইল ও সোহেলকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। দুজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক। এরপর ইসমাইলকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আর সোহেলকে নেওয়া হয় নরসিংদী সদর হাসপাতালে। আহত ফজলুল কবির জুয়েল নরসিংদী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ইসমাইলের বুকের নিচের অংশে ও সোহেলের নিতম্বে গুলির আঘাত রয়েছে। ইসমাইলের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন জানান, কী কারণে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটল, তা তদন্ত শেষে বলা যাবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র স ঘর ষ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
‘কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে’
৯ মাস আগে বিধবা লাকি রানী দের (৪০) গোয়ালঘরের তালা কেটে দুর্বৃত্তরা চারটি গরু চুরি করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর কানাডাপ্রবাসী এক ব্যক্তি তাঁকে একটি গাভি কিনে দেন। পরে গাভিটি একটি বাছুরের জন্ম দেয়। বাছুরটির বয়স হয়েছিল প্রায় সাত মাস। গতকাল শুক্রবার রাতে দুর্বৃত্তরা আবারও তাঁর গোয়ালঘরের দরজার তালা লাগানোর শিকল কেটে বাছুরসহ গাভিটি চুরি করে নিয়ে গেছে।
লাকি রানীর বাড়ি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর গ্রামে। তাঁর স্বামী প্রশান্ত দে প্রায় চার বছর আগে হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। লাকির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে রিয়া রানী দে স্থানীয় তৈয়বুন্নেছা খানম সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। ছোট মেয়ে রুহি রানী দে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। স্বামীর অকালমৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন লাকি। পাঁচটি গরু লালন-পালন করছিলেন। গরু বিক্রি করে সংসার আর দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাবেন ভেবেছিলেন। একটি গরু বিক্রিও করেন। এরই মধ্যে গত মার্চ মাসে বাকি চারটি গরু চুরি হয়ে যায়।
আজ শনিবার বিকেলে সরেজমিনে লাকির বাড়িতে গেলে তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ঘুম থেকে জেগে দেখেন, গোয়ালঘরের দরজায় তালা লাগানোর শিকল কাটা। ভেতরে গরু–বাছুর কোনোটাই নেই। জুড়ী থানার পুলিশের এক কর্মকর্তার মুঠোফোনের নম্বর ছিল তাঁর কাছে। ওই নম্বরে কথা বলে তাঁকে ঘটনাটি জানান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে লাকি রানী বলেন, ‘গাইটা (গাভি) পাইয়া মনে কিছু শান্তি ফিরিয়া আইছিন। একটা বাছুরও পাইলাম। মনে করছিলাম, বাছুরটার বয়স ৯-১০ মাস হইলে বিক্রি করি দিমু। ৫০ হাজার টাকা লোন (ঋণ) করছিলাম বেশ আগে। ২০-২৫ হাজার টাকা পরিশোধের বাকি। বাছুর বিক্রি করে এই টাকাটা পরিশোধ করার চিন্তাভাবনা করছিলাম। চোর আমারে আবার পথে নামাই দিল। কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে?’
এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি লাকি। তিনি বলেন, ‘আগেরবার চুরির পরেও পুলিশরে জানাইয়া কোনো লাভ হইছে না। খামাখা করিয়া লাভ কিতা হইব? তবে কাইল (শুক্রবার) খবর জানানির পর তারা (পুলিশ) আইয়া খোঁজাখুঁজি করছে, চেষ্টা করছে।’
লাকি বলেন, ‘সংসারের নানা খরচ আছে। মেয়েরার লেখাপড়ায়ও খরচ লাগে। এইটা তো চালানি লাগব। এসএসসি পাসের পর আমার বিয়া হই গেছে। ৩-৪ হাজার টাকা বেতনের একটা চাকরি পাইলে করতাম। কিন্তু এসএসসি পাসে তো চাকরি পাওয়াও কঠিন। কিতা করতাম, কিলা চলতাম—এইটাই খালি ভাবি। ঘরে বেকার বসি থাকলে সংসার চলব কেমনে?’
আরও পড়ুনশূন্য গোয়ালের সামনে কাঁদতে কাঁদতে লাকী রানী বললেন, ‘চোরে মরা মানুষরে মারিয়া গেল’০৩ মার্চ ২০২৫জুড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফরহাদ মিয়া বলেন, খবর পেয়ে তিনিসহ থানার আরেক এসআই মুজিবুর রহমান লাকি রানীর বাড়িতে যান। খোঁজাখুঁজি করেও চুরি হওয়া গরু ও বাছুরের সন্ধান মেলেনি। তবে তাঁদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।