ঈদের ১০ দিনের ছুটির পর লেনদেন শুরুর প্রথম দিনেই বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী করতে পারেনি দেশের শেয়ারবাজার। দীর্ঘ ছুটির পর আজ রোববার শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় দরপতনে। যদিও দিন শেষে সূচক ও লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। তবে তা বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী হওয়ার মতো নয়। উল্টো ভালো মৌল ভিত্তির কিছু শেয়ারের দরপতন বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে।

ঢাকার বাজারে রোববার লেনদেন হওয়া ৩৯২ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৭৯টিরই দরপতন হয়েছে, দাম বেড়েছে ১৪৫টির আর অপরিবর্তিত ছিল ৬৮টির দাম। লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর দামের উত্থান–পতনের প্রভাবে দিন শেষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৫ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭২৪ পয়েন্টে। আর লেনদেনের পরিমাণ ছিল ২৬৩ কোটি টাকা, যা আগের দিনের চেয়ে ৩৯ কোটি টাকা বেশি।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেয়ারবাজারের লেনদেন বর্তমানে যে পর্যায়ে নেমেছে, তাতে বাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী কারও জন্যই তা আশান্বিত হওয়ার মতো না। এই লেনদেনে অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর পরিচালন খরচ তোলায় দুঃসাধ্য হয়ে গেছে। ফলে অনেক ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক মাস শেষে বাজার থেকে পরিচালন খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছে। একইভাবে লেনদেন থেকে স্টক এক্সচেঞ্জগুলো যে কমিশন আয় করে তা দিয়ে স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালন খরচ উঠছে না।

সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, বাজেটকে সামনে রেখে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আশান্বিত হয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘোষিত বাজেটে সরাসরি বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো সুখবর ছিল না। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বাজার নিয়ে হতাশা আরও বেড়েছে। এ অবস্থায় নতুন করে বাজারে কোনো বিনিয়োগকারী তো আসছেনই না, উল্টো বিদ্যমান বিনিয়োগকারীরাও সুযোগ পেলে লোকসানে শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বাজার দীর্ঘ মন্দার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।

ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার বাজারে আজ রোববার সূচকের পতনে যেসব কোম্পানি বড় ভূমিকা রেখেছে তার মধ্যে ছিল ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ, ইসলামী ব্যাংক, গ্রামীণফোন, বেক্সিমকো ফার্মা, বিএসআরএম লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক, রেনাটা, ওরিয়ন ইনফিউশন, ইউনাইটেড পাওয়ার ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। এসব কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে আজ ডিএসইএক্স সূচকটি ৭ পয়েন্ট কমেছে। তার বিপরীতে সূচকের উত্থানে বড় ভূমিকা রেখেছে ব্র্যাক ব্যাংক, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, স্কয়ার ফার্মা, লাভেলো আইসক্রিম, সিটি ব্যাংক, এসিআই, এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আল–আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংক ও বীকন ফার্মা। এসব কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধিতে ডিএসইএক্স সূচকটি ১৮ পয়েন্টের বেশি বেড়েছে।

লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের এই প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা যায়, একদিকে ভালো মৌল ভিত্তির কিছু কোম্পানির শেয়ারের দরপতনে সূচক কমেছে, অন্যদিকে কিছু ভালো কোম্পানির শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধি সেই পতনকে রোধ করেছে। এই কারণে দিন শেষে সূচকটি ইতিবাচক ধারায় ছিল।

ঢাকার বাজারে আজ লেনদেনের এক–পঞ্চমাংশ বা প্রায় ২০ শতাংশই ছিল খাদ্য খাতের দখলে। এ খাতের লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫২ কোটি টাকা। যার প্রায় অর্ধেকই আবার একটি কোম্পানির, সেটি লাভেলো আইসক্রিম। রোববার ঢাকার বাজারে লেনদেনের শীর্ষে ছিল কোম্পানিটি। দিন শেষে ২৫ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়। মূলত লাভেলো আইসক্রিমের লেনদেনের ওপর ভিত্তি করেই এদিন খাদ্য খাত লেনদেনের শীর্ষে জায়গা করে নেয়। খাতভিত্তিক লেনদেনের দিক থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল ব্যাংক খাত। এই খাতের কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৩৪ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতকে এদিন লেনদেনের দ্বিতীয় অবস্থানে রাখার পেছনে বড় ভূমিকা ছিল ব্র্যাক ব্যাংকের। ঢাকার বাজারে আজ রোববার ব্র্যাকের ব্যাংকের ১৫ কোটি টাকার শেয়ারের হাতবদল হয়। সেই হিসাবে ব্যাংক খাতের সম্মিলিত লেনদেনের প্রায় অর্ধেকই ছিল ব্যাংকটির একক লেনদেন।

বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে শীর্ষস্থানীয় এক ব্রোকারেজ হাউসের শীর্ষ নির্বাহী প্রথম আলোকে বলেন, বাজারে এখন নতুন করে কোনো আশা দেখছেন না সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। এ কারণে প্রতিদিনই কোনো না কোনো বিনিয়োগকারী বাজার ছেড়ে যাচ্ছেন। বাজেটকে ঘিরে বিনিয়োগকারীদের যে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল, সেটি পূরণ না হওয়ায় হতাশা আরও বেড়েছে। যার প্রভাব বাজারে পড়ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল নদ ন র প ত ল নদ ন র শ য় রব জ র র ল নদ ন র বব র আরও ব ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

ডিএসইতে সূচক কমলেও সিএসইতে বেড়েছে

চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার (২ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সূচক বাড়লেও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) কমে লেনদেন শেষ হয়েছে।

এদিন ডিএসই ও সিএসইতে আগের কার্যদিবসের চেয়ে টাকার পরিমাণে লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। তবে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার এবং মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দাম কমলেও সিএসইতে বেড়েছে।

আরো পড়ুন:

কমোডিটি এক্সচেঞ্জ পরীক্ষামূলক চালু ডিসেম্বরে, নতুন দিগন্ত উন্মোচনের অপেক্ষা

ধ্বংসপ্রাপ্ত পুঁজিবাজারে গতি ফেরাতে কার্যক্রম চলমান: অর্থ উপদেষ্টা

বাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, অনেক দিন ধরে পুঁজিবাজারে লেনদেনের শুরুতে সূচকের উত্থান দেখা গেলেও লেনদেন শেষে তা পতনে রূপ নেয়। রবিবার সকাল থেকেই ডিএসইএক্স সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় লেনদেনের শুরু হয়। তবে দুপুর ২টার দিকে তা পতনে রূপ নেয়। লেনদেনের শেষ হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত তা অব্যাহত ছিল। তবে গত কয়েক মাসের ব্যবধানে পুঁজিবাজারে লেনদেন অনেক কমে গেছে।

ডিএসই ও সিএসই সূত্রে জানা গেছে, দিনশেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের চেয়ে ৬.৩৩ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ১১৫ পয়েন্টে। ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৩.৬৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৭৮ পয়েন্টে এবং ডিএস৩০ সূচক ৪.৮০ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯৮২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

ডিএসইতে মোট ৩৯৫টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ১২৮টি কোম্পানির, কমেছে ২০৭টির এবং অপরিবর্তিত আছে ৬০টির।

এদিন, ডিএসইতে মোট ৫৪৪ কোটি ৭৬ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৪৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সিএসসিএক্স সূচক আগের দিনের চেয়ে ১৯ পয়েন্ট বেড়ে অবস্থান করছে ৮ হাজার ৮৩২ পয়েন্টে। সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৭.৫১ পয়েন্ট বেড়ে ১৪ হাজার ৩১৩ পয়েন্টে, শরিয়াহ সূচক ০.৬২ পয়েন্ট কমে ৮৯৮ পয়েন্টে এবং সিএসই ৩০ সূচক ১৯.৭৮ পয়েন্ট বেড়ে ১২ হাজার ৬৭১ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

সিএসইতে মোট ১৮৬টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৯৩টি কোম্পানির, কমেছে ৬৫টির এবং অপরিবর্তিত আছে ২৮টির।

সিএসইতে ১৬ কোটি ৫১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ১৪ কোটি ৮৯ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট।

ঢাকা/এনটি/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ডিএসইতে ৭৫ শতাংশ শেয়ার-মিউচুয়াল ফান্ডের দরপতন
  • ডিএসইতে সূচক কমলেও সিএসইতে বেড়েছে