ইরানে শাসক পরিবর্তনে ইসরায়েলি আক্রমণ বুমেরাং হলো
Published: 19th, June 2025 GMT
১৯৮০ সালে ইরানে ইরাকের আগ্রাসনের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার কথা ইসরায়েল ভুলে গেছে। সেই আগ্রাসনে সরকার পতনের বদলে, ইরানের জনগণ জাতীয়তাবাদের নামেই ইসলামি প্রজাতন্ত্রের পেছনে একত্র হয়েছিলেন।
ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলা ইরানে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ উসকে দেওয়ার বদলে উল্টো জাতীয়তাবাদী আবেগকে জাগিয়ে তুলেছে। এই আবেগ সরকারের প্রতি সমর্থনের জায়গা থেকে নয়, বরং দেশের প্রতিরক্ষাকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে।
ইরানজুড়ে শোকসভা ও অনলাইনে শ্রদ্ধা নিবেদনের ঢেউ তৈরি হয়েছে। এমনকি যাঁরা একসময় ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তাঁরাও এখন যাঁরা ‘মাতৃভূমির রক্ষক’ হিসেবে নিজেদের চিত্রিত করতেন, তাঁদের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছেন।
আরও পড়ুনইরান যখন পরিবর্তনের পথে, তখনই কেন এই হামলা৪ ঘণ্টা আগেশ্রমজীবী জনগণের এলাকা এবং গ্রামে, যেখানে সরকারবিরোধী আন্দোলন আগে তেমন গড়ে উঠতে পারেনি, সেসব জায়গায় এই জাতীয়তাবাদী আবেগ আরও প্রবল।
ইরানের জনগণকে তাদের রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন করার ইসরায়েলি প্রচেষ্টা আপাতত বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে। ইরানের ভেতরে এখন কেন্দ্রীয় অনুভূতি উদযাপন কিংবা বিদ্রোহ নয়, বরং জাতীয় পতাকা ঘিরে ইরানিরা এখন ঐক্যবদ্ধ হচ্ছেন। অতীতে এমনটাই বারবার দেখা গেছে জাতীয় সংকট ও বিদেশি হুমকির সময়ে।
উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের লক্ষ্যবস্তু করে হত্যা, সরকার পরিবর্তনের আহ্বানে ইরানিরা উৎসাহিত হচ্ছেন না। এটাকে তাঁরা জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখছেন।
ইরানি সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ মোহাম্মদ বাঘেরি, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) প্রধান হোসেইন সালামি এবং আরজিসির অ্যারোস্পেস ফোর্সের কমান্ডার আমির আলী হাজিজাদেহসহ অন্যান্য শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে হত্যা করে ইরানের সামরিক নেতৃত্বের উচ্চপর্যায়ে বড় শূন্যতা তৈরি করা হয়েছে।
আরও পড়ুন২৫০০ বছরের পুরোনো দুশমনি: ইসরায়েল কি ‘মরদখাই’? ইরান কি ‘হামান’?১৭ জুন ২০২৫নিহত সামরিক কর্তাদের কেউই অগুরুত্বপূর্ণ চরিত্র নন। তাঁরা ছিলেন ইরানের আঞ্চলিক প্রতিরোধনীতির মূল স্থপতি। মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে তাঁদের সমন্বিত পরিকল্পনায় হত্যা ইসরায়েলি অভিযানের প্রকৃতি ও উদ্দেশ্যে মৌলিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
ফলে ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযান পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে চলমান উত্তেজনা রোধে নেওয়া প্রতিরোধমূলক অভিযানের অংশ নয়। বরং ইসলামি প্রজাতন্ত্রের কৌশলগত কমান্ড কাঠামোর ওপর এটি একটি সুপরিকল্পিত আঘাত।
যদিও ইসরায়েলি কর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি করে যাচ্ছেন, তাঁদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে থামিয়ে দেওয়া বা পথচ্যুত করা। কিন্তু হামলার ব্যাপকতা ও নিখুঁত পরিকল্পনা করে হামলার ঘটনাগুলো (বিশেষ করে ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে হামলা এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের হত্যা) এই ইঙ্গিত দেয় যে ইসরায়েলের লক্ষ্য আসলে আরও বড় কিছু।
বহু বছর ধরে মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা নীতিনির্ধারক মহলে একটি ধারণা রয়েছে যে ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত হিসাব হচ্ছে, একটি শক্তিশালী, স্থিতিশীল ও ভৌগোলিকভাবে অখণ্ড ইরান তাদের জন্য স্থায়ী ভূরাজনৈতিক হুমকি। ইসরায়েল ইরানকে কেবল একটি শত্রুরাষ্ট্র হিসেবে দেখে না। বরং আঞ্চলিক সভ্যতাগত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবেও দেখে। ফলে ইরানের ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনাকে জরুরি বলে মনে করে ইসরায়েল। সে কারণে ইসরায়েলের লক্ষ্য শুধু পারমাণবিক কর্মসূচি ভন্ডুল করাই নয়, বরং দেশটির রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক সংহতিও বিনষ্ট করে দেওয়া।
গত সপ্তাহে ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর এই মৈত্রী আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ইসরায়েল এবার আগের মতো শুধু পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধের কথা বলছে না। এবার ইসরায়েল এই আক্রমণকে ইরানি জনগণকে নিপীড়নমূলক শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্ত করার বৃহত্তর সংগ্রামের অংশ হিসেবে চিত্রিত করছে।এই কৌশলগত যুক্তিই দশকের পর দশক ধরে ইরানে ইসরায়েলের গোপন অভিযান, ইরানকে কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা এবং দেশটির ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার পেছনে কাজ করেছে। এই কৌশল দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত কিছু ধারণাকেও শক্তি জুগিয়ে চলেছে। যেমন একদিন ইরানে শাসনক্ষমতার পরিবর্তন হবে, দেশটি ভেঙে ছোট ও দুর্বল কয়েকটি রাষ্ট্রে পরিণত হবে। এসব কথা কখনো ফিসফিস করে, আবার কখনো প্রকাশ্যেই আলোচিত হয়েছে।
এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি, একসময় কেবল ওয়াশিংটন ও তেল আবিবের আক্রমণাত্মক নীতির শ্বেতপত্রগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ২০২২ সালে মাসা আমিনির মৃত্যুর পর ইরানজুড়ে যে বিক্ষোভের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই দৃষ্টিভঙ্গিটি নতুন করে গুরুত্ব পায়। নারী ও তরুণদের নেতৃত্বে পরিচালিত ‘নারী, জীবন, স্বাধীনতা’ স্লোগানে গড়ে ওঠা অভ্যুত্থানটি ছিল ইসলামি প্রজাতন্ত্রটির জন্য এক প্রজন্মের মধ্যে দেশের ভেতরকার সবচেয়ে স্পষ্ট ও বড় চ্যালেঞ্জ।
আরও পড়ুনইরানে হামলা ইসরায়েলের জন্য কৌশলগত বিপর্যয় ডেকে আনবে ১৭ জুন ২০২৫এ পরিস্থিতিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল—দুই দেশই সুযোগ হিসেবে নেয়। ইরানের বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর প্রতি তাদের সমর্থন বাড়িয়ে তোলে। এর মধ্যে নির্বাসিত যুবরাজ রেজা পাহলভিও রয়েছেন, যিনি প্রতীকী চরিত্র হিসেবে উঠে এসেছেন। রেজা পাহলভির ইসরায়েল সফরকে ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়। তিনি নজিরবিহীনভাবে ইসলামি প্রজাতন্ত্রকে উৎখাত করতে বিদেশি সহায়তার প্রকাশ্য আহ্বান জানান। ইরানের বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বিদেশি সরকারগুলোর এই সম্মিলন, কেবল নিষ্ক্রিয় সংহতি প্রকাশ থেকে খোলাখুলি মৈত্রীতে মোড় নিয়েছে।
গত সপ্তাহে ইরানে ইসরায়েলের হামলার পর এই মৈত্রী আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ইসরায়েল এবার আগের মতো শুধু পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধের কথা বলছে না। এবার ইসরায়েল এই আক্রমণকে ইরানি জনগণকে নিপীড়নমূলক শাসনব্যবস্থা থেকে মুক্ত করার বৃহত্তর সংগ্রামের অংশ হিসেবে চিত্রিত করছে।
ইসরায়েল এবারে যে বয়ান দাঁড় করাচ্ছে, সেখানে জোর দিয়েই বলা হচ্ছে, এই যুদ্ধ ইরানের জনগণের বিরুদ্ধে নয়, বরং ইসলামি প্রজাতন্ত্রের শাসকদের বিরুদ্ধে। জনপ্রচারণার সময় ইসরায়েলের এই সামরিক অভিযানকে সাধারণ ইরানিদের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে দেখানোর চেষ্টা চলছে। প্রবাসী ইরানিদের মধ্যে রাজপুত্র রেজা পাহলভি ও সাবেক ফুটবলার আলী করিমি প্রকাশ্যে এই অবস্থানকে সমর্থন জানিয়েছেন। তাঁরা ইরানিদের শাসনব্যবস্থা বদলের জন্য আহ্বানও জানিয়েছেন।
কিন্তু এই পরিষ্কার কৌশলগত প্রচারণা থাকা সত্ত্বেও এটি ইরানের জনগণের মধ্যে সাড়া জাগাতে পারেনি।
ইসরায়েলি নেতৃত্ব ও এর মিত্ররা সম্ভবত যে সত্যটি বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন, সেটি হলো—ইরানিরা গভীরভাবে তাঁদের ইতিহাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিদেশি হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ইরানিদের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিরোধের ইতিহাসটাও অনেক দীর্ঘ।
ইরানে এখন ইসলামি প্রজাতন্ত্রের বিরোধিতা (বিশেষ করে তরুণ ও শহরকেন্দ্রিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে) প্রবল। কিন্তু ইরানের মাটিতে বিদেশি বাহিনীর হাতে শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের নিহত হওয়ার দৃশ্য দেশটির মানুষের মধ্যে পুরোপুরি ভিন্ন এক আবেগের জন্ম দিয়েছে।
ইরানের এই পরিবর্তনটা কেবল প্রতীকী নয়। ইরানের জনগণের মধ্যে যে বিরাট ঐক্য এখন দেখা যাচ্ছে, তাতে এটা স্পষ্ট, ইসরায়েল অনিচ্ছাকৃতভাবে ইসলামি প্রজাতন্ত্রের হাতে বড় রাজনৈতিক উপহার তুলে দিয়েছে।
ফলে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেই তালিকায় যুক্ত হলেন, যেখানে আগে থেকে ছিলেন ইরাকের শাসক সাদ্দাম হোসেন। ১৯৮০ সালে ইরানে হামলা চালিয়ে সাদ্দাম হোসেন বিপ্লব-পরবর্তী ইরানে আয়াতুল্লাহ খোমেনির নড়বড়ে অবস্থানকে পাকাপোক্ত করেছিলেন।
ইরানের এই জাতীয় ঐক্য কত দিন স্থায়ী হবে, তা বলার সময় এখনো আসেনি। ইরান এখনো একটি বিভক্ত সমাজ। সেখানে প্রজন্মগত, মতাদর্শগত ও অর্থনৈতিক বিভাজন স্পষ্ট। তবে আপাতত এটা পরিষ্কার যে ইসরায়েলের হামলা ইসলামি শাসনের পতন ত্বরান্বিত করছে না; বরং তা বিলম্বিত করছে।
মোহাম্মদ ইসলামি মিনহো বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সহকারী অধ্যাপক
ইব্রাহিম আল-মারাশি ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি সান মারকোসে মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসের সহযোগী অধ্যাপক
মিডলইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ মনোজ দে
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত দ র র ইসর য় ল ইসর য় ল র র লক ষ য কর ত দ র জনগণ র ক শলগত প রক শ র জন য ত করছ ইসল ম আরও প সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৩০০ আসনে প্রার্থী বাছাই প্রায় চূড়ান্ত: তারেক রহমান
জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি বলেন, “দেশের ৩০০ সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী কিংবা বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ধাপে রয়েছে।”
আরো পড়ুন:
বরগুনায় জামায়াতে যোগ দিলেন বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা মামুন
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের কর্মসূচি ঘোষণা বিএনপির
রবিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে প্রবাসে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে কার্যক্রম উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তারেক রহমান। লন্ডন থেকে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত হন তিনি।
প্রতিটি নির্বাচনী আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জানিয়ে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “দেশের প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক যোগ্য এবং জনপ্রিয় প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি মানুষকে নিশ্চয়ই মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। ভিন্ন রাজনৈতিক দলের যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে আমাদের সঙ্গে রাজপথের সঙ্গী ছিলেন, এমন প্রার্থীকেও বিএনপি সমর্থন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”
এই বাস্তবতার কারণে হয়তো কিছু সংসদীয় সংসদীয় আসনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, “বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, দেশ ও জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে আপনারা এই বাস্তবতাকে মেনে নেবেন।”
জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে জনমনে সৃষ্ট সংশয়, সন্দেহ গণতন্ত্রে উত্তরণের পথকে সংকটপূর্ণ করে তুলতে পারে মন্তব্য করে তারেক রহমান বলেন, “দেশে প্রতিনিয়ত একের পর এক নিত্য নতুন শর্ত জুড়ে দিয়ে গণতন্ত্র উত্তরণের পথকে সংকটাপূর্ণ করে তোলা হচ্ছে। তবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী শক্তিতে বিশ্বাসী নাগরিকেরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই বিএনপিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।”
আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে মানুষের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, “পরাজিত পলাতক স্বৈরাচারের শাসন আমলে জনগণের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কোনোই আগ্রহ ছিল না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় জনমনে কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিজ্ঞাসা বাড়ছে, যথাসময়ে কি নির্বাচন হবে?... এমন তো হবার কথা ছিল না।”
বিএনপির বিজয় ঠেকাতে অপপ্রচার ও অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “উদ্বেগ এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশেও বর্তমানে বিএনপির বিজয় ঠেকাতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার এবং অপকৌশল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।”
শুধু বিএনপির বিজয় ঠেকাতে গিয়ে পতিত পরাজত পলাতক স্বৈরাচার দেশে ‘ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিল’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিগত ১৫ বছরে দেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করা হয়েছে।”
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিএনপি দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে মন্তব্য করে তারেক রহমান জানান, তবে বিএনপির প্রতি দেশের গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের আস্থা, ভালোবাসা থাকায় সে সংকট কাটিয়েছে তার দল।
তারেক রহমান বলেন, “দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি শুরু থেকেই ফ্যাসিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্য বজায় রাখার স্বার্থে সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে একদিকে গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার পথ বেছে নিয়েছে। অপরদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেও যতটুকু সম্ভব, যতটুকু যথাসাধ্য সম্ভব আমাদের অবস্থান থেকে আমরা সহযোগিতা করে আসছি।”
দেশে নারীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সামাজিক উদাসীনতা প্রকট হয়ে উঠছে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এ সংক্রান্ত গণমাধ্যমের প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, “নারী ও শিশুদের জন্য নিরাপত্তাহীন সমাজ নিশ্চয়ই সভ্য সমাজ হিসেবে গণ্য হতে পারে না।”
সেজন্য তিনি জাতীয়তাবাদী মহিলা দলসহ বাংলাদেশের সচেতন নারী সমাজকে তাদের দাবি সরকারের কাছে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে অনলাইনে বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ এবং তার ফি পরিশোধের প্রক্রিয়া নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তাতে বলা হয়, এখন থেকে বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে অনলাইনে বিএনপির দলীয় ওয়েবসাইটে গিয়ে সদস্যপদ গ্রহণ করা যাবে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, এ জে ড এম জাহিদ হাসান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মওদুদ আলমগীর হোসেন প্রমুখ।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ