জামিন পেলেন বেরোবি শিক্ষক মাহমুদুল হক
Published: 22nd, June 2025 GMT
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ‘হার্ট অ্যাটাক’ করে মারা যাওয়া ছমেছ উদ্দিন (৬৫) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হককে জামিন দিয়েছেন আদালত। রোববার বিকেলে রংপুর মহানগর দায়রা জজ আদালতে শুনানি শেষে জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক মোছা. মার্জিয়া খাতুন।
এর আগে দুপুরে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক মো.
মাহমুদুল হকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম আল মামুন জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, যে মামলায় মাহমুদুল হককে আসামি করা হয়েছে মামলার বাদী এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। এমনকি আসামিকে চেনেনও না। আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের পর যে শিক্ষক প্রতিবাদ জানিয়েছেন তার বিরুদ্ধে মামলা এবং তাকে গ্রেপ্তার করা জুলাই চেতনার পরিপন্থি। তিনি জানান, প্রথমে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মাহমুদুল হকের জামিনের আবেদন করা হয়। আদালত বক্তব্য শোনার পর পরবর্তী শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন। পরবর্তীতে আমরা ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন জানালে বিচারক আমলে নিয়ে শুনানি শেষে আসামির জামিন মঞ্জুর করেছেন।
এদিকে জামিন আবেদনের আগে ও পরে আদালত চত্বরে জড়ো হয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। তারা মাহমুদুল হককে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানান এবং এই মামলাকে ষড়যন্ত্রমূলক আখ্যা দেন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ছমেছ উদ্দিন হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। তারা অবিলম্বে মাহমুদুল হকের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান এবং ঘটনাটিকে স্বাধীন চিন্তার ওপর আঘাত হিসেবে আখ্যা দেন।
পুলিশের ধাওয়া খেয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির মৃত্যুর ১০ মাস পর দায়ের করা হত্যা মামলাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে তারা এর নেপথ্যে জড়িতদের শনাক্ত করে শাস্তির দাবি জানান।
মাহমুদুল হক রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। গত বছরের আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে এ বছরের ৩ জুন রংপুর নগরের হাজীরহাট থানায় ৫৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন নগরের রাধাকৃষ্ণপুর মৌলভীপাড়ার বাসিন্দা আমেনা বেগম। এ মামলার ৫৪ নম্বর আসামি মাহমুদুল হক।
অন্যদিকে ওই মামলায় বেরোবি শিক্ষককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় শনিবার হাজীরহাট থানার ওসি আব্দুল আল মামুন শাহকে বদলি করা হয়েছে।
রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, আবদুল আল মামুন শাহ রংপুর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে দায়িত্ব পালন করবেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তাঁকে রংপুর মহানগর পুলিশের পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রংপুর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক রাজিবুল ইসলামকে হাজীরহাট থানার ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আইনের সংস্কার দূরে থাকুক, এ পর্যন্ত তথ্য ও মানবাধিকার কমিশন গঠিত হয়নি: ইফতেখারুজ্জামান
তথ্য এবং মানবাধিকারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিশন গঠন অন্তর্বর্তী সরকারের কাজের তালিকায় কেন প্রাধান্য পায়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
আজ সোমবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী এক বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করে টিআইবি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, ‘একধরনের বিশ্ব রেকর্ড স্থাপিত হয়েছে যে এক বছর পার হয়ে গেছে, অথচ এখনো সেটি (তথ্য ও মানবাধিকার কমিশন) গঠিত হয়নি।এসব আইন সংস্কার দূরে থাকুক, এ দুটি কমিশন এখন পর্যন্ত নেই।’ এ দুটি কমিশন গঠনে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
নাগরিক সমাজের অধিকার ও বাক্স্বাধীনতার ক্ষেত্রগুলোতে যে ধরনের আইনি প্রতিবন্ধকতা আছে, তা দূর করতে হবে বলে জানান ইফতেখারুজ্জামান। এ সময় নতুন সাইবার সুরক্ষা আইনের কিছু ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। এই আইন বাস্তবায়নে যে প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি। আইনে বেশ কিছু দুর্বল ও ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র রয়ে গেছে বলে জানান টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইনের ১৪ নম্বর ধারা বেসরকারি সংস্থাগুলোর জন্য সরাসরি হুমকি বলে উল্লেখ করেন ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন ঘটানো হলেও কর্তৃত্ববাদী চর্চার পতন চাওয়া হচ্ছে না। এর দৃষ্টান্ত হলো, এ ধরনের আইনে সংস্কার আনতে সরকারের ব্যর্থতা।
সংবাদ সম্মেলনে ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, ৫ আগস্ট–পরবর্তী রাজনৈতিক যাত্রা অশুভ ছিল। ওই দিন বিকেল থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতাদের একাংশ দলবাজি, চাঁদাবাজি, মামলা, বাণিজ্য শুরু করে। গত এক বছর ধরে তা আরও বেড়েছে। এমনকি দলের উচ্চপর্যায় থেকে ব্যবস্থা নিয়েও এগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। এর ফলে নতুন রাজনৈতিক দলগুলোও তাদের জন্মলগ্ন থেকে একই রোল মডেল অনুসরণ করেছে।
বিভিন্ন ক্ষেত্রের সংস্কারের কথা নিয়ে আলোচনা হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কার নিয়ে আলোচনা হয় না বলে সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য করেন ইফতেখারুজ্জামান।
গবেষণা প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, জুলাই সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর মতপার্থক্য সত্ত্বেও যেসব সংস্কারে ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলোর সাংবিধানিক ও আইনি বাস্তবায়ন কীভাবে হবে, সে প্রশ্ন এখনো অনিশ্চিত। ফলে সংস্কারের আশায় ধাক্কা লাগতে পারে, রাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হওয়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে ‘কর্তৃত্ববাদী সরকার পতন-পরবর্তী এক বছর: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি পড়ে শোনান টিআইবির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরাম ও মো. জুলকারনাইন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির পরিচালক মুহাম্মদ বদিউজ্জামান ও উপদেষ্টা সুমাইয়া খায়ের। সংবাদ সম্মেলনটি পরিচালনা করেন মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম।
আরও পড়ুনরাজনৈতিক সংকট ঘনীভূত হওয়ার ঝুঁকি দেখছে টিআইবি৩ ঘণ্টা আগে