ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ‘হার্ট অ্যাটাক’ করে মারা যাওয়া ছমেছ উদ্দিন (৬৫) হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হককে জামিন দিয়েছেন আদালত। রোববার বিকেলে রংপুর মহানগর দায়রা জজ আদালতে শুনানি শেষে জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারক মোছা. মার্জিয়া খাতুন। 

এর আগে দুপুরে রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক মো.

সোয়েবুর রহমানের আদালতে জামিন আবেদন করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। শুনানি শেষে তিনি আগামী মঙ্গলবার জামিন শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছিলেন। পরবর্তীতে মাহমুদুল হকের আইনজীবীরা রংপুর মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিনের জন্য শরনাপন্ন হলে বিচারক মোছা. মার্জিয়া খাতুন শুনানি শেষে আবেদন মঞ্জুর করেন। এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২ জুলাই হাজিরার দিন ধার্য রয়েছে।

মাহমুদুল হকের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম আল মামুন জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, যে মামলায় মাহমুদুল হককে আসামি করা হয়েছে মামলার বাদী এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। এমনকি আসামিকে চেনেনও না। আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের পর যে শিক্ষক প্রতিবাদ জানিয়েছেন তার বিরুদ্ধে মামলা এবং তাকে গ্রেপ্তার করা জুলাই চেতনার পরিপন্থি। তিনি জানান, প্রথমে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মাহমুদুল হকের জামিনের আবেদন করা হয়। আদালত বক্তব্য শোনার পর পরবর্তী শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন ধার্য করেন। পরবর্তীতে আমরা ন্যায়বিচার পাওয়ার আশায় মহানগর দায়রা জজ আদালতে জামিন আবেদন জানালে বিচারক আমলে নিয়ে শুনানি শেষে আসামির জামিন মঞ্জুর করেছেন।

এদিকে জামিন আবেদনের আগে ও পরে আদালত চত্বরে জড়ো হয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। তারা মাহমুদুল হককে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার দাবি জানান এবং এই মামলাকে ষড়যন্ত্রমূলক আখ্যা দেন। 

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ছমেছ উদ্দিন হত্যা মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহমুদুল হককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। তারা অবিলম্বে মাহমুদুল হকের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান এবং ঘটনাটিকে স্বাধীন চিন্তার ওপর আঘাত হিসেবে আখ্যা দেন।

পুলিশের ধাওয়া খেয়ে হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির মৃত্যুর ১০ মাস পর দায়ের করা হত্যা মামলাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে তারা এর নেপথ্যে জড়িতদের শনাক্ত করে শাস্তির দাবি জানান।

মাহমুদুল হক রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক। গত বছরের আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে স্বামীকে হত্যার অভিযোগে এ বছরের ৩ জুন রংপুর নগরের হাজীরহাট থানায় ৫৪ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন নগরের রাধাকৃষ্ণপুর মৌলভীপাড়ার বাসিন্দা আমেনা বেগম। এ মামলার ৫৪ নম্বর আসামি মাহমুদুল হক। 

অন্যদিকে ওই মামলায় বেরোবি শিক্ষককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় শনিবার হাজীরহাট থানার ওসি আব্দুল আল মামুন শাহকে বদলি করা হয়েছে।

রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মজিদ আলীর স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, আবদুল আল মামুন শাহ রংপুর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে দায়িত্ব পালন করবেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে তাঁকে রংপুর মহানগর পুলিশের পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের পরিদর্শকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। রংপুর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক রাজিবুল ইসলামকে হাজীরহাট থানার ওসির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব চ রক র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

মাটির নিচের কারাগারে আটক রাখা হয়েছে ফিলিস্তিনিদের

ইসরায়েল গাজার কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিকে একটি ভূগর্ভস্থ কারাগারে আটকে রেখেছে। সেখানে তারা কখনো দিনের আলো দেখতে পায় না, এমনকি পর্যাপ্ত খাবার থেকে তাদের বঞ্চিত করা হয়।

আটককৃতদের মধ্যে কমপক্ষে দুইজন বেসামরিক নাগরিক রয়েছেন যাদের কোনো অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই আটক রাখা হচ্ছে। এদের মধ্যে একজন নার্স এবং একজন তরুণ খাদ্য বিক্রেতা। ইসরায়েলের পাবলিক কমিটি অ্যাগেইনস্ট টর্চার ইন এর আইনজীবীরা এ তথ্য জানিয়েছেন।

জানুয়ারি থেকে এই দুই ব্যক্তিকে ভূগর্ভস্থ রাকেফেট কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। অন্যান্য ইসরায়েলি আটক কেন্দ্রে যেভাবে নির্যাতন করা হয় বন্দিদের ঠিক তেমনই তাদের নিয়মিত মারধর করা হয়।

রাকেফেট কারাগারটি ১৯৮০ এর দশকের গোড়ার দিকে ইসরায়েলের সবচেয়ে বিপজ্জনক কারাগার। এটি সংগঠিত অপরাধীদের রাখার জন্য খোলা হয়েছিল। কিন্তু কয়েক বছর পরে এটি অমানবিক বলে অভিযোগ করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ২০২৩ সালে ৭ অক্টোবরের হামলার পর অতি-ডানপন্থী নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গভির এটিকে পুনরায় চালু করার নির্দেশ দেন।

কারাগারের সেলগুলো, আঙ্গিনা এবং আইনজীবীদের একটি সভাকক্ষ-সবকিছুই ভূগর্ভস্থ, তাই বন্দিরা এখানে প্রাকৃতিক আলো ছাড়াই বাস করে।

কারাগারটি প্রাথমিকভাবে কয়েকটি উচ্চ-নিরাপত্তা বন্দির জন্য তৈরি করা হয়েছিল যারা পৃথক কক্ষে অবস্থান করত। ১৯৮৫ সালে এটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় ১৫ জন আটক ছিল। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে, প্রায় ১০০ জন বন্দিকে সেখানে রাখা হয়েছে।

অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে সম্মত যুদ্ধবিরতির অধীনে, ইসরায়েল গাজা থেকে ১ হাজার ৭০০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে যাদের অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক রাখা হয়েছিল। সেইসাথে ইসরায়েলি আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ২৫০ জন ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

তবে, আটকের পরিমাণ এতটাই ব্যাপক যে, সেই গণমুক্তির পরেও, কমপক্ষে এক হাজার জন এখনো একই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের হাতে আটক রয়েছে।

পাবলিক কমিটি অ্যাগেইনস্ট টর্চার ইন বলেছে, “যদিও যুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়েছে, (গাজার ফিলিস্তিনিরা) এখনো আইনিভাবে বিতর্কিত এবং সহিংস যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে বন্দি রয়েছে যা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করে এবং নির্যাতনের সমান।”

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় গণহত্যার প্রমাণ মার্কিন গোয়েন্দা তথ্যে
  • মাটির নিচের কারাগারে আটক রাখা হয়েছে ফিলিস্তিনিদের
  • সাংবাদিকের ওপর চড়াও আইনজীবী, ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা
  • যৌন হয়রানি: বেরোবি শিক্ষককে একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি
  • যুক্তরাষ্ট্রে ৬ বছরের ছাত্রের গুলিতে আহত শিক্ষককে কোটি ডলার ক্ষতিপূরণের নির্দেশ
  • আইনজীবীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, মেজবাহউদ্দীন ফরহাদকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান
  • সোনারগাঁয়ে ভূমি অফিসে গ্রাহক হয়রানী, দেড় মাস ধরে বন্ধ নামজারী
  • পদে থেকেও নির্বাচন করা যায়: অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান
  • জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে মামলা
  • সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় লতিফ সিদ্দিকী ও মঞ্জুরুল আলমের হাইকোর্টে জামিন