ইরানের জনগণকে সাহায্য করতে রাশিয়া প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেছেন, ‘ইরানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন ভিত্তিহীন। রাশিয়া ইরানি জনগণকে সাহায্য করতে প্রস্তুত।’

মস্কোতে স্থানীয় সময় সোমবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচির সঙ্গে আলোচনার শুরুতে এই মন্তব্য করেন পুতিন। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাঘচি ইরানে মার্কিন হামলার নিন্দা জানানোর জন্য পুতিনকে ধন্যবাদ জানান। রাশিয়া ‘ইতিহাসের সঠিক দিকে’ দাঁড়িয়ে আছে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খোমেনি ও প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান তাকে পুতিনের প্রতি তাদের শুভকামনা জানাতে বলেছেন।

এদিকে ক্রেমলিন বলেছে, তিনটি ইরানি পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলা সংঘাতে অংশগ্রহণকারীদের সংখ্যা বাড়িয়েছে এবং উত্তেজনাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার কী হয়েছে এবং তেজস্ক্রিয়তার ঝুঁকি আছে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে হামলা সম্পর্কে আগে থেকে কিছু জানাননি, যদিও তারা মার্কিন সামরিক সম্পৃক্ততার সম্ভাবনা নিয়ে সাধারণভাবে আলোচনা করেছেন বলে জানান পেসকভ।

ইরানের দীর্ঘদিনের মিত্র রাশিয়া এর আগে তেহরানের সঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোর পরমাণু আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের এ স্থায়ী সদস্য ছয় বিশ্বশক্তির সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তির অন্যতম পক্ষও ছিল। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদের মাঝামাঝিতে, ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তি থেকে বের করে নিয়েছিলেন।

ইরান সহায়তা চাইলেও মস্কোর পক্ষে এখন তাদেরকে বড় ধরনের সামরিক সহায়তা দেওয়ার সম্ভাবনা খুব কম বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ, রাশিয়াকে এখন নিজেই ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। তার ওপর ট্রাম্পকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে আগ্রহী দেখা যাচ্ছে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমার খেজুরবাগানের এখন যে অবস্থা, তাতে চৌদ্দ পুরুষ বসে খেতে পারবে’

সৌদি আরবে খেজুরবাগানে কাজ করতে গিয়ে কিছু বীজ দেশে আনেন আবদুল মোতালেব নামের এক ব্যক্তি। এরপর নিজের একটি খেজুরবাগান তৈরির কাজ শুরু করেন। হতাশা কাটিয়ে কয়েক বছর পর সফলতার দেখা পান। বর্তমানে তাঁর খেজুরবাগান থেকে বছরে ৫০ লাখ টাকার বেশি আয় হচ্ছে বলে দাবি করেছেন। মোতালেবের দেখাদেখি স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন খেজুর চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।

আবদুল মোতালেব ময়মনসিংহের ভালুকার উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের পাড়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরবে। সেখানে ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিন বছর খেজুরবাগানে কাজ করেছেন। ২০০১ সালের শেষ দিকে নিজে খেজুর চাষের পরিকল্পনা দেশে ফেরেন। এ সময় উন্নত জাতের খেজুরের প্রায় ৩৫ কেজি বীজ নিয়ে আসেন। বাড়ির আঙিনায় ৭০ শতাংশ জমিতে রোপণ করে ২৭৫টি চারা। বর্তমানে মোতালেবের ৭ বিঘা খেজুরবাগানে প্রায় ৩ হাজারের বেশি খেজুরগাছ আছে। এগুলোর মধ্যে সৌদি আরবের আজোয়া, শুক্কারি, আম্বার, লিপজেল ও মরিয়ম জাতের দেখা মেলে।

গত বুধবার মোতালেবের খেজুরবাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের গাছে গাছে ঝুলছে নানা জাতের খেজুর। মোতালেব জানান, আজোয়া খেজুর ৩ হাজার টাকা, শুক্কারি এক হাজার, আম্বার আড়াই হাজার, লিপজেল সাড়ে ৪ হাজার ও মরিয়ম খেজুর ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। এ ছাড়া বিক্রি হয় খেজুরের চারাও। কাটিং করা প্রতিটি চারা ১৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এ ছাড়া বীজ থেকে তৈরি চারা ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন।

আবদুল মোতালেব বলেন, ‘আমি পড়ালেখা করি নাই। দেশেও কৃষিকাজ করি এবং সৌদি আরবে গিয়ে আমি কৃষিকাজ পাই। সেখানে খেজুরবাগানে কাজ করে খেজুর খেয়ে মনে হলো, যদি দেশে একবার এই খেজুর চাষ করতে পারি তাহলে জীবন সার্থক, আর বিদেশে যেতে হবে না। ২০০১ সালে বাড়িতে আসার সময় ৩৫ কেজি বীজ নিয়ে আসি, সেখান থেকে মাত্র ২৭৫টি গাছ তৈরি করা হয়। দীর্ঘ ১৮ বছর গবেষণা করে ৭টি মাতৃগাছ পাই, বাকিগুলো সব পুরুষ গাছ। পুরুষ গাছগুলো কেটে মাতৃগাছগুলো থেকে কাটিং করে চারা উৎপাদন শুরু করি। এখন আমার বাগানের যে অবস্থা, তাতে আমার পরবর্তী চৌদ্দ পুরুষ বসে খাবে, আমার সন্তানদের আর কষ্ট করতে হবে না। বাগানে এখন শুধু মাতৃ গাছ আছে। আমাদের বাগানে উৎপাদিত খেজুর পুরোপুরি সৌদি আরবের সঙ্গে স্বাদে-গন্ধে মেলে।’

বাগানটিতে সৌদি আরবের আজোয়া, শুক্কারি, আম্বার, লিপজেল ও মরিয়ম জাতের দেখা মেলে

সম্পর্কিত নিবন্ধ