Samakal:
2025-06-23@23:20:33 GMT

কদম ফুলের রোদন

Published: 23rd, June 2025 GMT

কদম ফুলের রোদন

ট্রেন থামে আচমকা, যেন কোনো অদৃশ্য নির্দেশে। স্টেশনের নামটা ধরা যায় না শুরুতে। জানালার কাচে জমে থাকা বৃষ্টির ফোঁটা মুছে সাকান চোখ রাখে বাইরে। গাছপালা ঝাপসা হয়ে আছে। একটু দূরে, ভিজে ওঠা মাটির পাশ দিয়ে দুটো কদম গাছ মাথা নুয়ে দাঁড়িয়ে। পাতাগুলো যেন মাথা নিচু করে কোনো পুরোনো অপেক্ষার ভার বইছে।
সাকানের স্ত্রী লাবণী সঙ্গেই ছিল। কাপ থেকে চায়ের শেষ চুমুকটা নিয়ে সে বলে, ‘এই জায়গাটা কত শান্ত! দেখ না কদম গাছগুলো কেমন সুন্দর করে দাঁড়িয়ে আছে।’
সাকান তাকায়। গাছ দেখে না, সে দেখে স্টেশনের সাইন বোর্ডটা। জলে ভেজা কালো অক্ষরে লেখা নামটা তার ভেতরটাকে ঠান্ডা করে দেয়। নামটা খুব চেনা। ঠিক যেন বহু বছর আগে শোনা কোনো ডাকনামের মতো।
একটা পুরোনো কণ্ঠস্বর, বহু বছর আগের, খুব নিচু স্বরে তার কানে বাজে– ‘এই স্টেশন থেকে নামলেই পাবে কদম গাছের জোড়া, কদম ফুলে ভরে যায় বর্ষায়। ওখানে একটা পুরোনো মিষ্টির দোকান আছে। বাবা পছন্দ করতেন ওদের কালোজাম। তুমি এলে নিয়ে যেও, বাবার খুব ভালো লাগবে। জান, আমার ঘরের জানালা ঠিক ওই কদম গাছের দিকেই খোলে।’ সাকান থেমে যায়। ঝড়জলের শব্দের ভেতরেও কণ্ঠটা যেন স্পষ্ট শুনতে পায়। একটা মেয়ের কণ্ঠ। নামটা মনে পড়ে না, কিন্তু কণ্ঠটার মধ্যে যে ভবিষ্যৎটুকু ছিল, তা আজও বর্তমান।
সাকান তখন কলেজে, কোনো এক ট্রেনিংয়ের ছুতোয় অচেনা এক মফস্বল শহরে গিয়েছিল। আবছা মুখ, একটা লাল ছাতা আর ওই কণ্ঠ। মেয়েটি প্রতিদিন স্টেশনের কাছ দিয়ে হেঁটে যেত। একদিন তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘তোমার ঘর কি ওই কদম গাছগুলোর দিকেই?’
মেয়েটি হেসে বলেছিল, ‘হুম। তুমি যদি কোনোদিন ফিরে আস, এ কদম গাছের নিচেই দাঁড়িও। আমি জানালা দিয়ে দেখব। যদি দেখি তুমি মেরুন শার্ট পরে এসেছ, বুঝে নেব তুমি আমায় দেখতে আসনি।’ সেই কণ্ঠটি বারবার ফিরে আসে। কিন্তু সাকান কোনোদিন ফেরেনি। চাকরি, সংসার, দায়িত্ব সব একত্রে তাকে টেনে নিয়েছিল অন্যদিকে। 
লাবণী বলে, ‘এই শহরটার একটা নরম গন্ধ আছে, না? বর্ষায় আরও বেশি মনে হয়।’
সাকান মাথা নাড়ে, জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে। কদম গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে একটা বাচ্চা মেয়ে, কাঁধে ছোট ব্যাগ। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে চেয়ে আছে ট্রেনের দিকে। সাকানের মনে হয়, মেয়েটা যেন তারই কোনো গল্পের পাতার চরিত্র। ট্রেন হুইসেল দেয়। প্ল্যাটফর্মের ভেজা ছাউনি কাঁপে শব্দে। সাকানের কণ্ঠ থেমে আসে গলায়। লাবণী বলে, ‘জায়গাটা একটু ঘুরে দেখি।’
লাবণী তাকিয়ে থাকে। সাকানের চোখে সে কোনোদিন দেখেনি এমন নীরবতা। কিছুক্ষণ পর তারা নেমে পড়ে। স্টেশনের পাশের কাঁচা রাস্তা ধরে তারা যায় পুরোনো মিষ্টির দোকানটায়। দোকানের বুড়ো মালিক এখনও মনে রাখে, ‘আপনি আগে এসেছিলেন না? সেই.

.. কদম গাছের সময়।’
সাকান চমকে তাকায়। দোকানদার হেসে বলে, ‘আমার সব পুরোনো ক্রেতা মনে থাকে। আপনার সঙ্গে এক মেয়ে ছিল...।’
এই মুহূর্তে সাকান বোঝে, সে যতই দূরে থাকুক, কিছু গল্প তার জন্য অপেক্ষা করে। কিছু ফুল শুধু বর্ষার জন্যই ফোটে আর কিছু চোখ, জানালার ওপাশ থেকে তাকিয়ে থাকে সারাজীবন।
বৃষ্টির ফোঁটা পড়ে এক পুরোনো ব্যঞ্জনার মতো। সাকান জানে, এই বৃষ্টি তাকে আবার ফিরিয়ে এনেছে। হয়তো এবার সে ভুল করবে না। v
সুহৃদ ঢাকা

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স হ দ সম ব শ কদম গ ছ র

এছাড়াও পড়ুন:

যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইরান-ইসরায়েল: ডোনাল্ড ট্রাম্প

হামলা পাল্টা হামলার মধ্যে চলা তীব্র উত্তেজনার মধ্যে ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে বলে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, সম্পূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে দুই দেশ। এই যুদ্ধবিরতি চলমান সংঘাতের অবসানের পথে নিয়ে যাবে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে। খবর-আল জাজিরা

তবে ইরান জানিয়েছে, তারা এখনও যুদ্ধবিরতির কোনো প্রস্তাব পায়নি এবং তাদের কাছে এমন কোনো প্রস্তাবের প্রয়োজনও নেই। তেহরানের এক শীর্ষ সরকারি কর্মকর্তা সিএনএনকে এ কথা জানিয়েছেন। 

ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য আমাদের কাছে প্রতারণার অংশ। এর মাধ্যমে তারা ইরানে হামলার যুক্তি দাঁড় করাতে চায়। এই মুহূর্তে শত্রু পক্ষ ইরানের ওপর আগ্রাসন চালাচ্ছে। আর ইরান প্রতিশোধমূলক হামলা আরও জোরদার করার চূড়ান্ত পর্যায়ে। আমরা শত্রুর মিথ্যা কথায় কান দিচ্ছি না। 

ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এখনও যুদ্ধবিরতির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। 

যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ১২ ঘন্টার জন্য একটি সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতি মেনে চলার জন্য একমত হয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। যুদ্ধবিরতির সময় এক পক্ষ অন্য পক্ষের প্রতি শান্তিপূর্ণ ও শ্রদ্ধাশীল থাকবে।

তিনি বলেন, সবকিছু যেমনটি করা উচিত তেমনভাবে হবে। এই ধারণার উপর ভিত্তি করে আমি উভয় দেশ- ইসরায়েল ও ইরানকে অভিনন্দন জানাতে চাই, তাদের দৃঢ়তা, সাহসের অবসান ঘটানোর জন্য, যাকে ‘১২ দিনের যুদ্ধ’ বলা উচিত।

মাকির্ন  প্রেসিডেন্ট বলেন, এ যুদ্ধ বছরের পর বছর ধরে চলতে পারত এবং সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যকে ধ্বংস করে দিতে পারত। কিন্তু তা হয়নি, এবং কখনও হবেও না! ঈশ্বর ইসরায়েলকে আশীর্বাদ করুন, ঈশ্বর ইরানকে আশীর্বাদ করুন, ঈশ্বর মধ্যপ্রাচ্যকে আশীর্বাদ করুন। ঈশ্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে আশীর্বাদ করুন এবং ঈশ্বর বিশ্বকে আশীর্বাদ করুন!

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলার জবাবে কাতার ও ইরাকে মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। এ অবস্থায় সংঘাত আরও চরমে পৌঁছার আশঙ্কার মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই ঘোষণা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নিরসনে একটি বড় অগ্রগতি বলে মনে করা হচ্ছে।  

যুক্তরাষ্ট্রের দুই কর্মকর্তার সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ ইরানের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। ওয়াশিংটন ডিসির স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পরও এই যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে। কূটনৈতিক সমাধানের পথ খোলা রাখতেই এই উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

 

সম্পর্কিত নিবন্ধ