ফরিদপুরের বাজারে হঠাৎ করে কমে গেছে পেঁয়াজের দাম। দুই দিনের ব্যবধানে মণপ্রতি পেঁয়াজের দাম কমেছে প্রায় ২০০ টাকা। ফলে সংকটে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর পেঁয়াজ উৎপাদকারী জেলা ফরিদপুরের পেঁয়াজচাষিরা।

গত রোববার ফরিদপুরের সালথা উপজেলার দুটি হাটে পেঁয়াজচাষিদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে। ঠেনঠেনিয়া বাজারের হাটে প্রতিটন পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৫৫০ থেকে ১ হাজার ৬৫০ টাকা দরে।

পেঁয়াজচাষিরা জানান, গত শুক্রবার সালথার বালিয়া বাজারে পেঁয়াজের হাট বসে। ওই হাটে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৭৫০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা দরে। সে হিসাবে দুই দিনের ব্যবধানে মণপ্রতি পেঁয়াজের দাম কমে গেছে ২০০ টাকা।

কেন এ দরপতন, এ নিয়ে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া গেছে। কৃষকেরা বলছেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে পেঁয়াজের বাজারে ধস নামিয়েছেন। পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের দাবি, ঈদের পর হঠাৎ বাজারে পেঁয়াজ আমদানি বেশি হওয়ায় কমে গেছে দাম।

ফরিদপুরে পেঁয়াজ উৎপাদনের দিক থেকে সালথা ও নগরকান্দা অগ্রগামী। সালথার আটঘর ইউনিয়নের খোয়াড় গ্রামের পেঁয়াজচাষি দেলোয়ার মাতুব্বর জানান, গত রোববার তিনি পেঁয়াজ বিক্রি করতে স্থানীয় ঠেনঠেনিয়া বাজারে যান। ভোর ৬টায় গিয়ে দেখতে পান, বাজারের ব্যবসায়ীদের সব ঘর বন্ধ। সাড়ে ছয়টা থেকে সাতটার মধ্যে শত শত পেঁয়াজচাষি বাজারে চলে আসেন পেঁয়াজ নিয়ে। এর মধ্যে কিছু ব্যবসায়ী দোকান খোলেন। পেঁয়াজ কেনার আগে তাঁরা (ব্যবসায়ীরা) দেশের বড় বড় আড়তদারের সঙ্গে কথা বলেন এবং বাজারের সব ব্যবসায়ী একজোট হয়ে পেঁয়াজের দাম কমিয়ে দিয়েছেন।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, সালথার ঠেনঠেনিয়া পেঁয়াজের এই বাজারে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি দেশের দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যবসায়ীরাও কৃষকদের কাছ থেকে পেঁয়াজ কেনেন। ঠেনঠেনিয়া এই বাজার চলে দুপুর পর্যন্ত। সপ্তাহে রবি ও বুধবার বসে পেঁয়াজের হাট। প্রতি হাটে পেঁয়াজের দুই শতাধিক বড় ব্যবসায়ী ২৫০ থেকে ৩০০ টন পেঁয়াজ কিনে দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে নিয়ে যান।

দাম বাড়েনি

এদিকে পেঁয়াজচাষিরা জানিয়েছেন, পেঁয়াজ উৎপাদনে তুলনামূলকভাবে ব্যয় বেড়েছে, কিন্তু সেই হারে দাম বাড়েনি। ঠেনঠেনিয়া বাজারের পেঁয়াজচাষি নিজাম উদ্দিন শেখ বলেন, পেঁয়াজ যখন জমি থেকে ঘরে তোলা হয়, সেই সময় দাম এক হাজার টাকা ছিল। একটু ভালো দামের আশায় এত দিন ঘরে সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। কিন্তু এখন যে দর, তাতে পুঁজি টেকানোই কষ্ট।

পেঁয়াজচাষি ইব্রাহিম মাতুব্বর (৫২) দাবি করেন, বাজারের যদি ২ হাজার থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দরে পেঁয়াজ বিক্রি করা যেত, তাহলে লোকসানে পড়তে হতো না। ঠেনঠেনিয়ার বাজার থেকে প্রতি হাটে ৩০ থেকে ৪০ ট্রাক পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। গড়ে এক কোটি টাকার বেশি পেঁয়াজ প্রতি হাটে ক্রয়–বিক্রয় হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শাহেদুজ্জামান বলেন, জেলার তিন প্রকারের পেঁয়াজের আবাদ হয়। সেগুলো হলো মুড়িকাটা, হালি ও দানা পেঁয়াজ। এ তিন

ধরনের পেঁয়াজের মধ্যে হালি পেঁয়াজ বেশি আবাদ হয়। ২০২৪-২৫ মৌসুমে ফরিদপুরে ৪৩ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়।

পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ৬ লাখ ৭৬ হাজার ৯১৮ মেট্রিক টন।

ঠেনঠেনিয়া বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের দাবি, ঈদের পর হঠাৎ করে পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা কমে গেছে।

ফরিদপুরের জেলা জ্যেষ্ঠ বিপণন কর্মকর্তা সাহাদাত হোসেন বলেন, কৃষিপণ্যের দাম অস্থিতিশীল। ওঠা-নামা করা এর স্বভাব। তবে বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে বৃষ্টির কারণে। তিনি বলেন, দাম পড়ে যাওয়ার এ প্রবণতা স্থায়ী হবে না। দাম আবার বাড়বে। এ নিয়ে কৃষকদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য় জ র দ ম কম ব যবস য় দ র য় জ উৎপ ২০০ ট ক

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই অভ্যুত্থানকে নস্যাতের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকে জুলাই অভ্যুত্থান নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলেছেন, এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে তারা ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে রয়েছেন।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই অঙ্গীকার করেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর নেতারা। বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা এবং আইন উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

বিএনপির প্রতিবাদ কর্মসূচি: নয়াপল্টনে এসে মিলছে সব পথের মিছিল

তারেক রহমান দেশে ফিরছেন ২৫ ডিসেম্বর: মির্জা ফখরুল

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ওসমান হাদির ওপর হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এর পেছনে বড় শক্তি কাজ করছে, যাদের লক্ষ্য নির্বাচন বানচাল করা। তিনি বলেন, হামলাটি ছিল প্রতীকী শক্তি প্রদর্শন এবং প্রাপ্ত তথ্যে প্রশিক্ষিত শুটার ব্যবহারের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এসব মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”

বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এই পরিস্থিতিতে পরস্পরের দোষারোপ বন্ধ করে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে একযোগে আওয়াজ তুলতে হবে।”

তিনি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার পরামর্শ দেন।

জামায়াত নেতা মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “নিজেদের মধ্যে দোষারোপের প্রবণতায় বিরোধীরা সুযোগ নিচ্ছে।”

ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে জাতিকে বিভক্ত করা থেকে সরে আসার আহ্বান জানান তিনি।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানকে খাটো করতে সুসংগঠিত অপতৎপরতা চলছে। মিডিয়া, প্রশাসন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “অনৈক্যই ষড়যন্ত্রকারীদের সবচেয়ে বড় শক্তি।”

তিন দলের নেতারা জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধরে রাখতে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ