চট্টগ্রামে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিতে নিহত হওয়ার মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম, আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী ও এম এ লতিফকে গ্রেপ্তার (শ্যোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তফা শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক এমপি ফজলে করিম, নদভী, লতিফসহ ১০ আসামিকে গ্রেপ্তার দেখান আদালত। এর মধ্যে ফজলে করিম চৌধুরী কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন।

অন্য আসামিরা হলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর সলিম উল্ল্যাহ, রেখা আলম চৌধুরী, আওয়ামী লীগ নেত্রী  জিনাত সোহানা চৌধুরী, মো.

আকবর আলী, রেজাউল হাসান সবুজ ও মো. আবুল বশর প্রমুখ।

গত বছরের ৩ আগস্ট সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে চান্দগাঁও থানার বহদ্দারহাট এলাকার কাঁচা বাজার থেকে বাসায় ফেরার পথে সড়ক অবরোধ করে নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের লোকজন এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। ৭টা ২৫ মিনিটের দিকে গুলিবিদ্ধ হন শহিদুল ইসলাম। পরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। ১৯ আগস্ট মামলাটি চান্দগাঁও থানায় করেন নিহত ব্যক্তির ভাই। তিনি পেশায় একজন অটোরিকশাচালক।

গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদনে চান্দগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নুরুল হাকিম উল্লেখ করেছেন, ছাত্র–জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও সাবেক সরকারদলীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সরাসরি ও পরোক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা আসামিরা মামলার অন্য আসামিদের সঙ্গে মিলে নাশকতা চালিয়েছেন—এমন সাক্ষ্যপ্রমাণ পাচ্ছেন তিনি। আসামিরা ঘটনার আগেও এবং ঘটনাকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং অর্থায়নের মাধ্যমে এতে জড়িত থাকার প্রমাণও পাওয়া গেছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিলে সংসদ সদস্য পদ হারান ফজলে করিম চৌধুরী। হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই আত্মগোপনে ছিলেন তিনি। এরপর গত ১২ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাকালে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। পরে ১৯ সেপ্টেম্বর এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীকে একটি হেলিকপ্টারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগার থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আনা হয়। পরে আদালতে হাজির করা হলে ফজলে করিমের প্রিজন ভ্যানে ডিম ছুড়ে মারেন বিক্ষুব্ধ লোকজন।

এর পর থেকে তাঁকে আর আদালতে হাজির করা হয় না।

দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর ঢাকায় গত ১৫ ডিসেম্বর সাবেক সংসদ সদস্য নদভী গ্রেপ্তার হন। ওই বছরের ১৭ আগস্ট নগরের বায়েজিদ বোস্তামী মাজার গেট এলাকা থেকে এম এ লতিফকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আগস ট

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই অভ্যুত্থানকে নস্যাতের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকে জুলাই অভ্যুত্থান নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলেছেন, এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে তারা ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে রয়েছেন।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই অঙ্গীকার করেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর নেতারা। বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা এবং আইন উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

বিএনপির প্রতিবাদ কর্মসূচি: নয়াপল্টনে এসে মিলছে সব পথের মিছিল

তারেক রহমান দেশে ফিরছেন ২৫ ডিসেম্বর: মির্জা ফখরুল

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ওসমান হাদির ওপর হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এর পেছনে বড় শক্তি কাজ করছে, যাদের লক্ষ্য নির্বাচন বানচাল করা। তিনি বলেন, হামলাটি ছিল প্রতীকী শক্তি প্রদর্শন এবং প্রাপ্ত তথ্যে প্রশিক্ষিত শুটার ব্যবহারের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এসব মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”

বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এই পরিস্থিতিতে পরস্পরের দোষারোপ বন্ধ করে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে একযোগে আওয়াজ তুলতে হবে।”

তিনি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার পরামর্শ দেন।

জামায়াত নেতা মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “নিজেদের মধ্যে দোষারোপের প্রবণতায় বিরোধীরা সুযোগ নিচ্ছে।”

ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে জাতিকে বিভক্ত করা থেকে সরে আসার আহ্বান জানান তিনি।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানকে খাটো করতে সুসংগঠিত অপতৎপরতা চলছে। মিডিয়া, প্রশাসন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “অনৈক্যই ষড়যন্ত্রকারীদের সবচেয়ে বড় শক্তি।”

তিন দলের নেতারা জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধরে রাখতে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ