পাবনার শরীফ ক্লিনিক থেকে নবজাতক চুরির ঘটনা ঘটেছে। রহস্যজনক এ চুরির ঘটনার দুই ঘণ্টার মধ্যেই স্থানীয় মানুষ ও সাংবাদিকরা শিশুটিকে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে। 

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ এ ঘটনার সঙ্গে মালিকের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছে। বুধবার দুপুরে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) উপস্থিতিতে ক্লিনিক সিলগালা করা হয়েছে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ২৪ জুন রাতে ভাঙ্গুড়া উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের বড়পুকুরিয়া গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান তাঁর প্রসূতি স্ত্রীকে শরীফ হাসপাতালে ভর্তি করেন। রাত ১০টার দিকে তাঁর স্ত্রীর সিজারের মাধ্যমে পুত্র সন্তান হয়। 

স্বজনের অভিযোগ, অপারেশনের সময়ই চিকিৎসক সাবরিন ইসলাম, চিকিৎসক নাসিম, ক্লিনিকের মালিক শরিফুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী যোগসাজশ করে শিশুটিকে চুরি করে বিক্রি করে দেন। খবর পেয়ে সাংবাদিক ও এলাকার লোকজন তাৎক্ষণিকভাবে অনুসন্ধানে নামেন। তারা শিশুটিকে পাবনা জেনারেল হাসপাতাল থেকে উদ্ধার করেন। 

এ ঘটনায় পুলিশ শিশুটির বাবাকে মামলা করতে বললে তিনি মামাল করতে অস্বীকৃতি জানান। বলেন, ‘সন্তান ফিরে পেয়েছি। তাই মামলা করব না।’ এতে সন্দেহ হলে সিদ্দিককে আরও জিজ্ঞাসাবদ করা হয়। এক পর্যায়ে জানান, তাঁর চারটি মেয়ে সন্তান। এ কারণে স্ত্রীকে ক্লিনিকে ভর্তি করার পর মালিক শরীফের সঙ্গে আঁতাত করেন। চুক্তি হয়, মেয়ে সন্তান হলে শরীফ তাঁকে টাকা দেবেন। অগ্রিম হিসেবে ২০ হাজার টাকাও নেন। এরই মধ্যে তাঁর স্ত্রী ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের না জানিয়ে মিনা নামে এক ধাত্রীর মাধ্যমে সন্তানকে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। 

এদিকে ছেলে সন্তান হওয়ার খবরটি জানতে পেরে সিদ্দিক মরিয়া হয়ে তাকে খুঁজতে থাকেন। এ সময়ের মধ্যে শরীফ পাবনা সদরের আওতাপাড়া এলাকার ধাত্রী মিনা খাতুনকে বাচ্চা কেনার মতো কোনো নিঃসন্তান দম্পতি খোঁজ করতে বলেন। খোঁজ পেয়েই মিনা শিশুটিকে নিতে সদর হাসপাতালে এলে স্থানীয়রা তাকে আটক করে পুলিশে দেয়। 

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম বলেন, নবজাতককে উদ্ধারের পর পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো.

মশিউর রহমান শিশুটির বাবাকে মামলা করতে বলেন। তিনি রাজি হননি। এতে সন্দেহ হলে জিজ্ঞাসাবাদে ক্লিনিক মালিক শরীফের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টি জানায়। বুধবার দুপুরে শরীফ ক্লিনিকে অভিযান চালালো হয়। মালিক শরীফ পলাতক থাকায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। ওসি আরও বলেন, এ ঘটনায় মিনা খাতুন নামে একজনকে আটক করা হয়। মানসিক ভারসাম্যহীন জানার পর মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। 

শিশু চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ডা. সাবরিন ইসলাম ও  ডা. নাসিম। ঘটনার পর থেকে পালিয়ে যান ক্লিনিকের মালিক শরীফুল ইসলাম শরীফ। মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, ঘটনাটি চুরি নয়। শিশুটি অসুস্থ হওয়ায় জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। বিষয়টি প্রসূতির স্বামীকে বলা হয়ে ওঠেনি। 

সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ বলেন, নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে গত ৪ মে শরীফ হাসপাতালকে নোটিশ দিয়ে সিলগালা করে বন্ধ করা হয়। অনুমতি ছাড়া ফের হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প বন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই অভ্যুত্থানকে নস্যাতের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা–৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলাকে জুলাই অভ্যুত্থান নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বলেছেন, এই ষড়যন্ত্র রুখে দিতে তারা ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে রয়েছেন।

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই অঙ্গীকার করেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর নেতারা। বৈঠকে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি, ইনকিলাব মঞ্চের নেতারা এবং আইন উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন।

আরো পড়ুন:

বিএনপির প্রতিবাদ কর্মসূচি: নয়াপল্টনে এসে মিলছে সব পথের মিছিল

তারেক রহমান দেশে ফিরছেন ২৫ ডিসেম্বর: মির্জা ফখরুল

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ওসমান হাদির ওপর হামলা ছিল পূর্বপরিকল্পিত এবং গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এর পেছনে বড় শক্তি কাজ করছে, যাদের লক্ষ্য নির্বাচন বানচাল করা। তিনি বলেন, হামলাটি ছিল প্রতীকী শক্তি প্রদর্শন এবং প্রাপ্ত তথ্যে প্রশিক্ষিত শুটার ব্যবহারের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। এসব মোকাবিলায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”

বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “এই পরিস্থিতিতে পরস্পরের দোষারোপ বন্ধ করে ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে একযোগে আওয়াজ তুলতে হবে।”

তিনি অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার পরামর্শ দেন।

জামায়াত নেতা মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, “নিজেদের মধ্যে দোষারোপের প্রবণতায় বিরোধীরা সুযোগ নিচ্ছে।”

ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে জাতিকে বিভক্ত করা থেকে সরে আসার আহ্বান জানান তিনি।

এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানকে খাটো করতে সুসংগঠিত অপতৎপরতা চলছে। মিডিয়া, প্রশাসন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “অনৈক্যই ষড়যন্ত্রকারীদের সবচেয়ে বড় শক্তি।”

তিন দলের নেতারা জুলাই অভ্যুত্থানের স্পিরিট ধরে রাখতে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। 

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ