চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিল উপজেলা প্রশাসন। ৯ মাস ধরে নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা স্থগিত রয়েছে। তাঁদের স্থলে দায়িত্ব পালন করেছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)। সম্প্রতি উচ্চ আদালতের দেওয়া এক রায়ে এই ৯ ইউনিয়নের মধ্যে ৭টিতে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) এই দায়িত্ব পালনের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁদের স্থলে কারা কাজ করবেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ক্ষমতা ফিরে পাবেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের সেবা পেতে নতুন জটিলতা তৈরি হলো।

এই ৭ ইউনিয়ন হলো সৈয়দপুর, মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা, সোনাইছড়ি ও সলিমপুর ইউনিয়ন। তবে এ আদেশের বাইরে রয়েছে বারৈয়ারঢালা ও ভাটিয়ারী ইউনিয়ন। এ দুই ইউনিয়নের এখনো অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল মামুনের কাছে রয়েছে।

গত মঙ্গলবার এ–সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ ইউএনওর দপ্তরে পাঠান চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। এর আগে গত সোমবার তিনি ওই অফিস আদেশটি ইস্যু করেন। অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ১৯ আগস্ট পরিপত্র মোতাবেক উপজেলার সৈয়দপুর, মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা ইউএনও এবং সোনাইছড়ি ও সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দেওয়া হয়। ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। সম্প্রতি আদালত পিটিশনের রায়ও ঘোষণা করেছেন। রায় অনুযায়ী, উপজেলা প্রশাসনের ক্ষমতার ওপর ছয় মাসের জন্য স্থগিতাদেশ হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান-সদস্যরা কার্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। এতে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়। ওই বছরের ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে একটি পরিপত্রে ইউনিয়ন পরিষদগুলোর কার্যক্রম গতিশীল রাখতে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণের জন্য জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এক মাস পর গত ১৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদের ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) বাকি চারটি ইউনিয়নের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পর থেকে ইউপির সদস্যদের দ্বারা সেবাগ্রহীতাকে বিভিন্ন সনদ ইস্যু করছেন ইউএনও ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)।

জানতে চাইলে ইউএনও মো.

ফখরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, জেলা প্রশাসকের অফিস আদেশ মঙ্গলবার তিনি পেয়েছেন। ওই দিনই তিনি তা কার্যকর করেছেন। ফলে তিনি আর ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক ও প্রশাসনিক কোনো ফাইলে স্বাক্ষর করছেন না।

এক প্রশ্নের জবাবে মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ওই সব ইউপির চেয়ারম্যানরা পুনরায় বহাল কি না, জেলা প্রশাসকের অফিস আদেশে তা উল্লেখ নেই। ফলে কে দায়িত্ব পালন করবেন, সেটি অস্পষ্ট।

একই কথা বলেছেন সহকারী কমিশনারও (ভূমি)। তিনি বলেন, তাঁর কাছে থাকা চারটি ইউনিয়নের দুটির যাবতীয় কাজ তিনি করছেন। উল্লিখিত ইউনিয়নের কাজ তিনি করছেন না। চেয়ারম্যান করবেন, নাকি অন্য কেউ করবেন, তা তিনি জানেন না।
সাতটি ইউনিয়নের তিনটির সচিব এ বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। ইউনিয়ন তিনটি হলো সলিমপুর, কুমিরা ও বাড়বকুণ্ড। বাড়বকুণ্ড ইউপির চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্ল্যাহ মিয়াজি তাঁর সচিব আজিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সচিবদের ভাষ্য, ১৯ সেপ্টেম্বরের আগপর্যন্ত কাজের ধারাবাহিকতার ছন্দপতন হলেও এরপর আবারও ছন্দে ফিরে আসে। মঙ্গলবার থেকে আবারও ছন্দপতন হলো। তবে চেয়ারম্যানরা পরিষদের নিয়মিত কার্য পরিচালনা করলে সেবা চলমান থাকবে। এখন চেয়ারম্যানরা পরিষদে না এলে মানুষের সেবা পেতে অনেকটা ভোগান্তিতে পড়তে হবে।

সলিমপুরের সচিব আল আমিন বলেন, আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রত্যাহারের প্রথম দিনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে কোনো ফাইল স্বাক্ষরিত হয়নি। চেয়ারম্যানও যোগাযোগ করেননি। চেয়ারম্যানের পুরোনো নম্বর বন্ধ পাচ্ছেন। এ অবস্থায় সেবাগ্রহীতার সেবার অনুমোদন তাঁরা কীভাবে নেবেন, তা বুঝতে পারছেন না। ফলে সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে তাঁদের নতুন করে বাদানুবাদ হবে।

কুমিরার সচিব শোভন চন্দ্র ভৌমিক ও বাড়বকুণ্ডের আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা তাঁদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন। কুশলবিনিময় হওয়ার পর প্রাথমিক কথা হয়। তবে তাঁরা কবে থেকে অফিস করবেন, তা জানাননি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইউন য ন ও সহক র উপজ ল করব ন করছ ন প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

আনোয়ারায় মানসিক প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় মানসিক প্রতিবন্ধী এক তরুণীকে (২২) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে গতকাল রোববার বিকেলে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মানসিক প্রতিবন্ধী ওই তরুণী কয়েক মাস ধরে আনোয়ারা এলাকায় রয়েছেন। ধর্ষণের কারণে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে তিনি কাতরাচ্ছিলেন। বিষয়টি এলাকাবাসীর নজরে এলে তাঁরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) অবহিত করেন। এরপর জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, মানসিক প্রতিবন্ধী ওই তরুণীকে একাধিক ব্যক্তি ধর্ষণ করেছেন। চিকিৎসার প্রতিবেদন পাওয়ার পর এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আনোয়ারার ইউএনও তাহমিনা আক্তার বলেন, স্থানীয়ভাবে মানসিক প্রতিবন্ধী এক তরুণীকে ধর্ষণের খবর পেয়ে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আনোয়ারায় মানসিক প্রতিবন্ধী তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ