আদালতের রায়ে জটিলতা, সীতাকুণ্ডের ৭ ইউনিয়নের প্রশাসনিক ক্ষমতা কার
Published: 26th, June 2025 GMT
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ৯টি ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিল উপজেলা প্রশাসন। ৯ মাস ধরে নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা স্থগিত রয়েছে। তাঁদের স্থলে দায়িত্ব পালন করেছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)। সম্প্রতি উচ্চ আদালতের দেওয়া এক রায়ে এই ৯ ইউনিয়নের মধ্যে ৭টিতে ইউএনও ও সহকারী কমিশনারের (ভূমি) এই দায়িত্ব পালনের ওপর স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে। তবে তাঁদের স্থলে কারা কাজ করবেন, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ক্ষমতা ফিরে পাবেন কি না, তা স্পষ্ট করা হয়নি। ফলে ইউনিয়ন পরিষদের সেবা পেতে নতুন জটিলতা তৈরি হলো।
এই ৭ ইউনিয়ন হলো সৈয়দপুর, মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা, সোনাইছড়ি ও সলিমপুর ইউনিয়ন। তবে এ আদেশের বাইরে রয়েছে বারৈয়ারঢালা ও ভাটিয়ারী ইউনিয়ন। এ দুই ইউনিয়নের এখনো অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল্লাহ আল মামুনের কাছে রয়েছে।
গত মঙ্গলবার এ–সংক্রান্ত একটি অফিস আদেশ ইউএনওর দপ্তরে পাঠান চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। এর আগে গত সোমবার তিনি ওই অফিস আদেশটি ইস্যু করেন। অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, গত বছরের ১৯ আগস্ট পরিপত্র মোতাবেক উপজেলার সৈয়দপুর, মুরাদপুর, বাড়বকুণ্ড, বাঁশবাড়িয়া, কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা ইউএনও এবং সোনাইছড়ি ও সলিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) দেওয়া হয়। ওই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। সম্প্রতি আদালত পিটিশনের রায়ও ঘোষণা করেছেন। রায় অনুযায়ী, উপজেলা প্রশাসনের ক্ষমতার ওপর ছয় মাসের জন্য স্থগিতাদেশ হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর উপজেলার প্রায় সব ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান-সদস্যরা কার্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন। এতে জনদুর্ভোগ তৈরি হয়। ওই বছরের ১৯ আগস্ট স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে একটি পরিপত্রে ইউনিয়ন পরিষদগুলোর কার্যক্রম গতিশীল রাখতে প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণের জন্য জেলা প্রশাসককে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এক মাস পর গত ১৯ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম স্বাক্ষরিত একটি অফিস আদেশে সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদের ও সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) বাকি চারটি ইউনিয়নের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পর থেকে ইউপির সদস্যদের দ্বারা সেবাগ্রহীতাকে বিভিন্ন সনদ ইস্যু করছেন ইউএনও ও সহকারী কমিশনার (ভূমি)।
জানতে চাইলে ইউএনও মো.
এক প্রশ্নের জবাবে মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ওই সব ইউপির চেয়ারম্যানরা পুনরায় বহাল কি না, জেলা প্রশাসকের অফিস আদেশে তা উল্লেখ নেই। ফলে কে দায়িত্ব পালন করবেন, সেটি অস্পষ্ট।
একই কথা বলেছেন সহকারী কমিশনারও (ভূমি)। তিনি বলেন, তাঁর কাছে থাকা চারটি ইউনিয়নের দুটির যাবতীয় কাজ তিনি করছেন। উল্লিখিত ইউনিয়নের কাজ তিনি করছেন না। চেয়ারম্যান করবেন, নাকি অন্য কেউ করবেন, তা তিনি জানেন না।
সাতটি ইউনিয়নের তিনটির সচিব এ বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন। ইউনিয়ন তিনটি হলো সলিমপুর, কুমিরা ও বাড়বকুণ্ড। বাড়বকুণ্ড ইউপির চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্ল্যাহ মিয়াজি তাঁর সচিব আজিজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। সচিবদের ভাষ্য, ১৯ সেপ্টেম্বরের আগপর্যন্ত কাজের ধারাবাহিকতার ছন্দপতন হলেও এরপর আবারও ছন্দে ফিরে আসে। মঙ্গলবার থেকে আবারও ছন্দপতন হলো। তবে চেয়ারম্যানরা পরিষদের নিয়মিত কার্য পরিচালনা করলে সেবা চলমান থাকবে। এখন চেয়ারম্যানরা পরিষদে না এলে মানুষের সেবা পেতে অনেকটা ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
সলিমপুরের সচিব আল আমিন বলেন, আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা প্রত্যাহারের প্রথম দিনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে কোনো ফাইল স্বাক্ষরিত হয়নি। চেয়ারম্যানও যোগাযোগ করেননি। চেয়ারম্যানের পুরোনো নম্বর বন্ধ পাচ্ছেন। এ অবস্থায় সেবাগ্রহীতার সেবার অনুমোদন তাঁরা কীভাবে নেবেন, তা বুঝতে পারছেন না। ফলে সেবাগ্রহীতাদের সঙ্গে তাঁদের নতুন করে বাদানুবাদ হবে।
কুমিরার সচিব শোভন চন্দ্র ভৌমিক ও বাড়বকুণ্ডের আজিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা তাঁদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন। কুশলবিনিময় হওয়ার পর প্রাথমিক কথা হয়। তবে তাঁরা কবে থেকে অফিস করবেন, তা জানাননি।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউন য ন ও সহক র উপজ ল করব ন করছ ন প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ধামইরহাটের ইউএনওর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ
নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীকে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে তার কার্যালয় ঘেরাও করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করা হয়েছে।
বুধবার (১ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন উপজেলার মঙ্গলকোটা গ্রামের বাসিন্দারা।
ওই অন্তঃসত্ত্বা নারীর স্বামীর আব্দুল কুদ্দুস বলেছেন, আজ সকাল ১১টায় ইউএনও মঙ্গলকোটা গ্রামে একটি খাস জায়গা দখলমুক্ত করে সেটিকে ধামইরহাট পৌরসভার বর্জ্য রাখার স্থান নির্ধারণ করেন। স্থানীয়রা ওই জায়গাকে বর্জ্য রাখার স্থান করতে বাধা দিলে ইউএনওর সঙ্গে হট্টগোল হয়। আমি মোবাইল ফোনে ঘটনার ভিডিও ধারণ করতে গেলে ইউএনওর নির্দেশে আমাকে আটক করার চেষ্টা করেন আনসার সদস্য। এ সময় আমার স্ত্রী এসে আমাকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলে ইউএনও নিজে আমার স্ত্রীর বুকে আঘাত করে মাটিতে ফেলে দেন এবং লাল নিশান টাঙানো বাঁশের লাঠি দিয়ে আমার স্ত্রীকে এলোপাতাড়িভাবে মারপিট শুরু করেন। প্রতিবেশী সাবিনা ইয়াসমিন বাধা দিতে গেলে ইউএনও তাকেও মারপিট করেন। এতে গুরুতর আহত হয়ে আমার স্ত্রী ও সাবিনা ইয়াসমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসাধীন আছেন।
এ বিষয়ে ধামইরহাট উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. হানজালা বলেছেন, পৌরসভার বর্জ্য রাখার স্থান নির্ধারণ নিয়ে স্থানীয়দের সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের ঝামেলা হয়। এর জের ধরে গ্রামবাসী উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ঘেরাও করেন। পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে জানতে পেরে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি।
এ বিষয়ে ইউএনও শাহারিয়ার রহমান বলেছেন, নারীর গায়ে হাত দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা। গ্রামবাসী সরকারি কাজে বাধা দিয়েছে। এ থেকে বাঁচার জন্যই তারা নাটক করছে।
ঢাকা/সাজু/রফিক