পালিয়ে আত্মরক্ষার পর রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন (বালিকা) কেন্দ্রে গিয়ে ফের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন নিবাসী স্মৃতি আক্তার (১৬)। তার অভিযোগ, পুনর্বাসন কেন্দ্রে শিশুদের শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের তথ্য গণমাধ্যমে বলায় তার চুল কেটে দিয়েছেন কেন্দ্রের দায়িত্বরতরা। সেইসঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের নামে বারবার হয়রানি ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের অনিয়মের তথ্য গোপন করার জন্য চাপ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ওই কিশোরী দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে, ওই শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে নিখোঁজের ১৩ দিনেও দুই নিবাসী আশা ও নিতু উদ্ধার না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতনরা। 

পুনর্বাসন কেন্দ্রের নির্যাতন থেকে মেয়েকে রক্ষায় বুধবার রংপুর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১-এ নিজ জিম্মায় নিতে আবেদন করেন নিবাসী স্মৃতি আক্তারের মা মুক্তি বেগম। সকাল ১১টায় রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন (বালিকা) থেকে স্মৃতিকে আদালতে আনার কথা থাকলেও বিকেল ৫টার দিকে তাকে আনা হয়। আদালতের বিচারক সোয়েবুর রহমান স্মৃতির জবানবন্দি নেন এবং এজলাসে শুনানি করে তাকে মা মুক্তি বেগমের জিম্মায় দেন। আদালতে ভুক্তভোগী স্মৃতি আক্তার জানান, সকাল ১১টায় তাকে আদালতে উপস্থাপন করার কথা থাকলেও পুলিশ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কর্মকর্তারা তাকে দু’বার থানায় নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। সেইসঙ্গে পালিয়ে আত্মরক্ষার সময় যে বাড়িতে গিয়ে উঠেছিল; সেই বাড়িতে তাকে নিয়ে গিয়ে সেখানে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর বিকেলে তাকে আদালতে উপস্থাপন করে পুলিশ। 

স্মৃতি আক্তার বলেন, পুনর্বাসন কেন্দ্রে শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের কারণে আমিসহ ৪ জন পালিয়ে গিয়েছিলাম। আমাকে আবারও সেই কেন্দ্রেই পাঠানো হয়েছে। কেন্দ্রে যাওয়ার পর সেখানকার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। আমার কারণে তাদের পুনর্বাসন কেন্দ্রের দুর্নাম হয়েছে বলে। আমি ঘুমিয়ে থাকলে তারা আমার চুল কেটে দিয়েছে। আমি অসুস্থতা অনুভব করলে তারা শুধুমাত্র নাপা ট্যাবলেট খেতে দেয়। পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিবাসীদের সঙ্গে যারা শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতন করেছে, আমি তাদের বিচার চাই। 

স্মৃতি আক্তারের মা মুক্তি বেগম বলেন, জীবন বাঁচাতে আমার মেয়ে পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে পালিয়ে গিয়েছিল। পুলিশ আদালতের মাধ্যমে আবারও সেই পুনর্বাসন কেন্দ্রে আমার মেয়েকে পাঠিয়েছে। মেয়ে কেমন আছে, জানতে আমি পুনর্বাসন কেন্দ্রে গেলে সেখানকার কর্মকর্তারা আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। আমার মেয়ের চুল কেটে দেওয়াসহ নির্যাতনের ঘটনায় দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা করবো। 

এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট জোবাইদুল ইসলাম বলেন, পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিবাসী স্মৃতি আক্তারকে তার মায়ের জিম্মায় দিতে আদালতে স্মৃতিকে উপস্থাপন করা হয়েছিল। আদালত স্মৃতির জবানবন্দি নিয়ে তাকে তার মায়ের জিম্মায় দিয়ে দিয়েছে। তবে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা শিশুকে নিরাপদে থাকার জন্য রাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে রাখা হয়েছে। সেখানে নিবাসীরা যদি শারীরিক, মানসিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়, তাহলে রক্ষকই ভক্ষক হয়ে যায়। 

সমাজসেবা উপ-পরিচালক অনিল চন্দ্র বর্ম্মন নিবাসী শিশুদের ধর্ষণের সহযোগিতা করেছে। তিনিসহ পুনর্বাসন কেন্দ্রের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। 

যোগাযোগ করা হলে রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন (বালিকা) কেন্দ্রের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম সন্ধ্যায় বলেন, ‘নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। মেয়েরা নিজ ইচ্ছায় পালিয়ে গেছে।’ 
পালানোর সময় আউটসের্সিংয়ে কর্মরত রুমা বেগমের কাছে চাবি ছিল। সে কারণে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ওই ঘটনায় তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

উল্লেখ্য, নগরীর দেওডোবা ডাংগীরপাড় এলাকার রংপুর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে গত ১২ জুন রাতে নিখোঁজ হন নিবাসী নিতু, স্মৃতি, কৃতি ও আশা নামে চার কিশোরী। ১৫ জুন পরিবারের সদস্যরা স্মৃতি ও কৃতিকে নগরীর চিড়িয়াখানা এলাকা থেকে উদ্ধার করে পুলিশকে জানায়। পরে পুলিশ তাদের আদালতের মাধ্যমে পুনরায় পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠায়। এ ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা উদ্ধার হওয়া কিশোরীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠাতে অস্বীকৃতি জানায়। আপত্তির কারণ হিসেবে তারা পুনর্বাসন কেন্দ্রে মেয়েদের উপর নির্যাতন ও তার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত বলে গণমাধ্যমকে জানান।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র প র সমন ব ত শ শ কর মকর ত ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেট বোর্ডে এসএসসিতে নতুন করে জিপিএ-৫ পেল ২২ জন

সিলেট শিক্ষাবোর্ডে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার খাতা চ্যালেঞ্জের (উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণ) ফলাফলে নতুন করে ২২ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ অর্জন করেছেন। একইসঙ্গে উওীর্ণ হয়েছেন আরো ৩০ জন। 

রবিবার (১০ আগস্ট) সকাল ১০টায় সিলেট শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে ফলাফল প্রকাশ করলে এ তথ্য পাওয়া যায়।

ফলাফলে দেখা গেছে, চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষার পুনঃনিরীক্ষণের জন্য সিলেট শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ১৭ হাজার ৬৮২ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে নতুন করে উত্তীর্ণ হয়েছেন আরো ৩০ জন। পাশাপাশি জিপিএ-৫ পেয়েছন আরো ২২ জন পরীক্ষার্থী। উত্তরপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর এমন পরিবর্তন এসেছে।

আরো পড়ুন:

শাবিপ্রবিতে বিশ্ব আদিবাসী দিবস উদযাপন

শাবিপ্রবিতে ‘অধিকার সচেতন’ শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন

সিলেট শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও অকৃতকার্য মিলিয়ে ১৭ হাজার ৬৮১ জন শিক্ষার্থী ৩৪ হাজার ৯২০ পত্রের জন্য পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করেছিলেন।

পুনঃনিরীক্ষণে নতুন করে ৩০ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হওয়ায় মোট পাসের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭০ হাজার ১২১ জন।

এর আগে, গত ১০ জুলাই ঘোষিত মূল ফলাফলে সিলেট বোর্ডের অধীনে ১ লাখ ২ হাজার ২১৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭০ হাজার ৯১ জন পাস করেছিলেন।

সিলেট মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের সচিব অধ্যাপক মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, “পুনঃনিরীক্ষণ মানে একজন শিক্ষার্থীর খাতা নতুন করে মূল্যায়ন নয়। এখানে উত্তরপত্রের চারটি বিষয় খতিয়ে দেখা হয়। এগুলো হলো, সব প্রশ্নের সঠিকভাবে নম্বর দেওয়া হয়েছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর গণনা সঠিক আছে কি না, প্রাপ্ত নম্বর ওএমআর শিটে সঠিকভাবে উঠেছে কি না এবং প্রাপ্ত নম্বর অনুযায়ী ওএমআর শিটের বৃত্ত ঠিকভাবে পূরণ করা হয়েছে কি না। এই চারটি জায়গায় কোনো ভুল পাওয়া গেলে তা সংশোধন করে নতুন করে ফল প্রকাশ করা হয়।”

ঢাকা/নুর/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ