নানা সঙ্কটে ধুঁকছে চাঁপাই মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর
Published: 26th, June 2025 GMT
যানবাহন ও জনবল সঙ্কটে ধুঁকে ধুঁকে চলছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি)। একটি গাড়ি দিয়ে চলছে সীমান্তবর্তী এলাকার দুইটি সার্কেলের কার্যক্রম। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ৩২টি পদের মধ্যে শূন্য রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ আটটি পদ।
ফলে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচাররোধ করতে গিয়ে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়েন ডিএনসির কর্মকর্তারা। তাদের দাবি- যানবাহন ও জনবলের যোগান পেলে আরো বাড়ানো যাবে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান, আইনের জালে আটকা পড়বে মাদক কারবারি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পাঁচটি উপজেলা নিয়ে গঠিত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। এর মধ্যে সীমান্তবর্তী উপজেলা রয়েছে চারটি। আছে দুর্গম চরাঞ্চলও। পার্শবর্তী দেশ ভারত থেকে এসব এলাকায় আসে হেরোইন, ফেনসিডিল, ইয়াবা, গাঁজাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক। ফলে এ জেলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরটি দুইটি সার্কেলে ভাগ হয়ে কাজ করে।
আরো পড়ুন:
চবিতে গাঁজা সেবনকালে ৩ ছাত্রীসহ ৯ শিক্ষার্থী আটক
গাইবান্ধায় মাদক পাচারকালে শাশুড়ি-জামাই আটক
প্রতিষ্ঠানটির জেলা কার্যালয়ে একটি মাত্র গাড়ি থাকায় এক সার্কেলের কর্মকর্তারা অভিযানে বের হলে অন্য সার্কেল কিংবা অফিস প্রধানকে যাতায়াতে বেছে নিতে হয় ভিন্ন পন্থা। গাড়ির অভাবে অনেক সময় মাদকবিরোধী অভিযানে যাওয়া দুস্কর হয়ে পড়ে। অনেক সময় ভাড়া গাড়িতে অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েন ডিএনসির কর্মকর্তারা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে পরিদর্শক ও উপ-পরির্দশক পদে মঞ্জুরী জনবলের সংখ্যা পাঁচজন। অথচ প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত রয়েছে মাত্র দুইজন। এদের একজন বাহিরে অবস্থান করলে অন্যজন থানায় মামলা রুজু করতে গিয়ে বিপাকে পড়েন। কারণ নিয়ম অনুযায়ী এই দুটি পদের কর্মকর্তারা মামলার বাদী ও তদন্তকারী কর্মকর্তা হতে পারবেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত কয়েক বছর ধরে সবরাহ বেড়েছে হেরোইন, ফেনসিডিল ও গাঁজার। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় এসব মাদক সরাসরি প্রবেশ করে। তবে বেশিরভাগ গাঁজা কুমিল্লা থেকে এ জেলায় সরবরাহ হয়। রাতারাতি পৌঁছে যায় গন্তব্যে। শুধু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কাজ করা চাঁপাইনবাবগঞ্জের সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি গত ৫ মাসে খুব একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারেনি।
ডিএনসির পরীসংখ্যান মতে, গত জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৪২ কেজি গাঁজা, প্রায় সাড়ে তিন কেজি হেরোইন, দেড়শ পিচ ইয়াবা ট্যাবলেট, মাত্র ৩৮৫ বোতল ফেনসিডিল, ৭৬ লিটার চোলইমদ উদ্ধার করা হয়েছে। আসামির সংখ্যা ১৫৬ জন এবং মামলা হয়েছে ১৪৮টি।
ডিএনসির কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের জনবলের অভাবে মাদকদ্রব্য উদ্ধারের পরিমাণ খুবই কম। আগামিতে জনবল বাড়লে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের অভিযান ও গ্রেপ্তারের সংখ্যা বাড়বে। ফলে এ জেলায় কমবে মাদকের আগ্রাসন।
বুধবার (২৫ জুন) চাঁপাইনবাবগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য মতে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের কর্মকর্তারা কারবারিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। বর্তমানে আদালতে ৭১৪টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে দায়রা জজ আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৪৩১টি এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ২৮৩টি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ‘ক’ সার্কেলের পরিদর্শক ইলিয়াস হোসেন তালুকদার বলেন, “মাদক সংশ্লিষ্ট তথ্য পাওয়া মাত্রই আমরা অভিযান চালাই। কিন্তু অনেক সময় গাড়ি সঙ্কটে বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। গাড়ি বা ইজিবাইক ভাড়া করে যেতে হয়। ভাড়া গাড়ি নিয়ে দূরের পথ যেতেও সমস্যায় পড়তে হয়। অনেক ক্ষেত্রে পথে বেশি সময় লেগে গেলে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। এছাড়া আসামি আটক করার পর দূরের পথ হলে নিয়ে আসতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়।”
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক চৌধুরী ইমরুল হাসান বলেন, “নানা ধরনের সঙ্কটের মধ্যেও আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। যানবাহন সঙ্কটে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। মাদক চোরাকারবারির খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে অভিযান না চালালে পরবর্তীতে তাদের ধরা যায় না। একই সময় দুটি জায়গায় মাদক পাচারের তথ্য পেলে জটিলতা সৃষ্টি হয়। এসব সমস্যা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।”
এদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ও অবৈধ পাচারবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপিত হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) এ উপলক্ষে আলোচনা সভা-পুরষ্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
ঢাকা/মেহেদী/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র কর মকর ত র প ইনব বগঞ জ ড এনস র
এছাড়াও পড়ুন:
গুলি ছুড়ে প্রহরীদের ভয় দেখিয়ে বনের গাছ কেটে নিল দুর্বৃত্তরা
হবিগঞ্জে বনে ঢুকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে ও বনপ্রহরীদের ভয় দেখিয়ে ২০ থেকে ২৫টি গাছ কেটে নিয়ে গেছে একদল দুর্বৃত্ত। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটায় জেলার চুনারুঘাট উপজেলায় অবস্থিত দেশের অন্যতম বনাঞ্চল রেমা–কালেঙ্গায় এ ঘটনাটি ঘটে।
বন বিভাগের হবিগঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের জনবল কম। যে কারণে ৫০ থেকে ৬০ জনের বনদস্যু দল বনের ভেতরে ঢুকে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক তৈরি করে এ ঘটনাটি ঘটিয়েছে। এ বিষয়ে তদন্ত চলছে।’
১ হাজার ৮০০ একর আয়তনের এই সংরক্ষিত বনের ভেতরে সেগুনগাছসহ নানা প্রজাতির গাছগাছালি রয়েছে। সম্প্রতি এ বনের গাছ কেটে নেওয়াসহ নানা অপরাধের ঘটনা ঘটছে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে বনের হিমানিয়া বাজারসংলগ্ন এলাকা দিয়ে ৫০ থেকে ৬০ দুর্বৃত্ত প্রবেশ করে। তারা বনে ঢুকে প্রথমে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। গুলির আওয়াজ শুনে বনপ্রহরীরা এগিয়ে গেলে তাঁদের লক্ষ্য করেও গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় প্রহরীরা পাল্টা গুলি চালান। একপর্যায়ে বনদুস্যদের তাড়া খেয়ে বনপ্রহরীরা ঘটনাস্থল থেকে চলে যান। এ সময় দুর্বৃত্তরা বনের ভেতর থেকে একে একে ২০ থেকে ২২টি সেগুনগাছ কেটে ট্রাক্টরে নিয়ে পালিয়ে যায়। বিষয়টি জানাজানি হলে আজ শুক্রবার সকালে বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
রেমা–কালেঙ্গা বন কর্মকর্তা (রেঞ্জার) আবদুল খালেক বলেন, প্রহরীদের লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা গুলি ছুড়লে তাঁরা পিছু হটেন। কারণ, এ সময় মাত্র তিন প্রহরী দায়িত্বরত ছিলেন। এর বিপরীতে দুর্বৃত্তরা ছিল বেশ সংঘবদ্ধ। বন কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বনদস্যুরা বেশি গাছ নিতে পারেনি। সেগুন ও আকাশমণি জাতের ২০ থেকে ২২টি গাছ নিয়ে গেছে। আমরা কিছু উদ্ধার করতে পেরেছি। দুর্বৃত্তরা আধুনিক করাত ব্যবহার করে। এই করাত দিয়ে তিন থেকে চার মিনিটে একটি কাছ কাটা যায়।’
হবিগঞ্জ বন বিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক মো. জয়নাল আবেদীন জানান, এত বড় বন কমসংখ্যক জনবল দিয়ে সংরক্ষণ করা কঠিন। এ ছাড়া বনের কর্মকর্তা ও বনপ্রহরী সবাই এ বনে নতুন যোগদান করেছেন। যে কারণে তাঁরা কিছু বুঝে ওঠার আগেই এ ঘটনাটি ঘটে। তিনি বলেন, কী পরিমাণ গাছ কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা, তা নির্ণয় ও তদন্তকাজ চলছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে আইনগত পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।