অনলাইনভিত্তিক জনপ্রিয় অর্থ লেনদেনের (পেমেন্ট) মাধ্যম পেপ্যাল বাংলাদেশে চালু হচ্ছে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েই গেছে। দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এ নিয়ে আলোচনা থাকলেও কবে আসবে পেপ্যাল, এ প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা। বিশ্বজুড়ে ফ্রিল্যান্সারদের কাছে অনলাইনে অর্থ লেনদেনের মাধ্যম হিসেবে প্রথম পছন্দ পেপ্যাল। আর তাই বাংলাদেশের ফ্রিল্যান্সাররাও দীর্ঘদিন ধরে দেশে পেপ্যাল চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আবার আলোচনায় আসে পেপ্যাল। এরপর শোনা যাচ্ছিল, খুব তাড়াতাড়ি বাংলাদেশে পেপ্যাল আসবে।
গত ২১ আগস্ট ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও খাতের সম্মেলন ‘বিপিও সামিট বাংলাদেশ ২০২৫’–এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছিলেন, ‘পেপ্যাল নিয়ে আমরা অনেক এগিয়েছি। কিন্তু কোনো একটা জায়গায় আটকে গেছে বিষয়টি, যা জনসম্মুখে বলার মতো নয়। কিন্তু আমরা বসে নেই। আমরা চেষ্টা করছি। তবে খুব দ্রুত বাংলাদেশে স্ট্রাইপ আসবে। এ বিষয়ে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। আশা করছি এই কাজে আমরা সফল হব। খুব দ্রুত দেশে পেপ্যাল চালু করার বিষয়ে আমরা হয়তো আশ্বাস দিতে পারছি না, তবে এ বিষয়ে আমাদের একাধিক দল কাজ করছে। আমাদের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকেও বিষয়টি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বিষয়টা নিয়ে আমাদের পর্যাপ্ত মনোযোগ আছে।’
আরও পড়ুনআসি আসি করে পেপ্যাল কেন আসে না০৬ জানুয়ারি ২০২২আপওয়ার্কের টপ-রেটেড ফ্রিল্যান্সার ও আপওয়ার্ক বাংলাদেশ গ্রুপের প্রশাসক কাজী মামুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘পেপ্যালের আসা নিয়ে অনেক কথা হলেও, বাস্তবে আমরা এর কোনো সুনির্দিষ্ট রূপরেখা এখনো পর্যন্ত দেখতে পাচ্ছি না। একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করে পেপ্যালের ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যাংক নীতি সংস্কারের উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি। স্টারলিংকের ক্ষেত্রে আমরা যেমন দ্রুত অগ্রগতি দেখেছি, পেপ্যালের ক্ষেত্রে তা অনুপস্থিত। বিশ্বায়নের এই যুগে যদি সদিচ্ছা থাকে, তবে ব্যাংকিং সেক্টরকেও ব্যবসাবান্ধব করা সম্ভব। একদিকে পেপ্যাল নিয়ে অগ্রগতি দৃশ্যমান নয়, অন্যদিকে বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে বা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা হাতে গোনা। ফ্রিল্যান্সার ও প্রযুক্তি ব্যবসায়ীরা অ্যাকাউন্ট নিষিদ্ধসহ নানাবিধ সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন হরহামেশাই। দেশে প্রযুক্তি খাতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বৃদ্ধি করতে হলে, আন্তর্জাতিক ও দেশীয় ব্যাংকিং সেক্টরে একটি সহজ, স্বচ্ছ ও ব্যবহারকারীবান্ধব প্রক্রিয়া গড়ে তোলা জরুরি। বিশ্বায়নের এই যুগে, নিজেকে যদি পুরোনো সিস্টেমে আটকে রাখি, তাহলে আইটি খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বাধার সম্মুখীন হবে।’
ফ্রিল্যান্সারদের স্থানীয় মার্কেটপ্লেস ‘কাজ৩৬০’–এর প্রতিষ্ঠাতা এমরাজিনা ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসলে পেপ্যাল কবে আসবে, এটা আমরাও জানি না। কোনো এক জাগায় সমস্যা আছে। সমস্যাটা কারা তৈরি করছে, এটা আমরা বুঝতে পারছি না। সরকারের তরফ থেকেও জানানো হচ্ছে না যে কেন পেপ্যাল চালু হচ্ছে না। আমরা আশা করছি, সরকার আন্তরিকভাবে বাংলাদেশে পেপ্যাল চালুর বিষয়টি বিবেচনা করবে। দেশের কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা চান না যে পেপ্যাল দেশে আসুক।’
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ২০১৬ সালের ১৫ জুলাই সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে পেপ্যালের চুক্তি হয়। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে পেপ্যাল আসছে। সোনালী ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, চুক্তির আওতায় পেপ্যালের মাধ্যমে প্রবাসী আয়, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের ফ্রিল্যান্সারদের আয় সহজে ও নিরাপদে দেশে আনা যাবে। বাস্তবতা হলো, আজ পর্যন্ত পেপ্যাল চালু হয়নি। এর আগে ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড মেলায় দেশে পেপ্যাল চালুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। আদতে সেটি ছিল পেপ্যালের একটি সেবা ‘জুম’। জুম দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসীরা বাংলাদেশে তাঁদের আত্মীয়স্বজনের কাছে অর্থ পাঠাতে পারেন।
আরও পড়ুনপেপ্যাল কি আসবে বাংলাদেশে০৪ মে ২০২৫বিভিন্ন সময় পেপ্যাল নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য২০২১ সালের ২৩ অক্টোবর গাজীপুরের চন্দ্রায় ওয়ালটনের কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান জানিয়েছিলেন, ডিসেম্বরেই (২০২১) দেশে চালু হতে যাচ্ছে পেপ্যাল। এ ছাড়া ২০২১ সালের ১১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের বেসিস আউটসোর্সিং অ্যাওয়ার্ড ২০২১ অনুষ্ঠানে সাবেক তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ বলেছিলেন, ‘আমরা পেপ্যালের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। আশা করছি একটি ভালো সংবাদ দিতে পারব।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বিয়ে-তালাকের তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক: হাইকোর্ট
বিয়ে ও তালাকের সব তথ্য ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার নির্দেশ দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মো. আসিফ হাসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
আদালত বলেছেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধন করতে হবে, যাতে প্রতিটি তথ্য সরকারি ব্যবস্থায় সুরক্ষিত থাকে; ডেটাবেজ সম্পূর্ণ কার্যকর ও ব্যবহারযোগ্য হয় এবং নাগরিকেরা বিশেষ করে নারীরা সহজেই তথ্য যাচাই করতে ও ডিজিটাল কপি সংগ্রহ করতে পারেন।
বিবাহ ও তালাকের ক্ষেত্রে ডিজিটালাইজ রেজিস্ট্রেশনে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা চেয়ে এইড ফর ম্যান ফাউন্ডেশন নামের একটি সংগঠন এবং তিন ব্যক্তি ২০২১ সালের ৪ মার্চ রিট করেন।
রিট আবেদনের ভাষ্য, বিয়ে ও তালাকের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর তথা ডিজিটালাইজ রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় প্রতারণার ঘটনা ঘটছে। স্বামী বা স্ত্রী বিয়ের তথ্য গোপন করে অনেক ক্ষেত্রে আবার বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ডিজিটাল আর্কাইভের অনুপস্থিতিতে অনেক সময় সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে অনিশ্চয়তা ও জটিলতা দেখা যায়।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ২৩ মার্চ হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে পারিবারিক জীবনের বৃহত্তর সুরক্ষায় বিয়ে ও তালাকের ক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন ডিজিটালাইজেশনের জন্য কেন্দ্রীয় একটি ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর শুনানি শেষে আজ রায় দেওয়া হয়।
রায়ের পর ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্ট বিয়ে ও তালাকের সব তথ্য পুরোপুরি ডিজিটাল পদ্ধতিতে নিবন্ধন করতে নির্দেশ দিয়েছেন। রুল নিষ্পত্তি করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সহ বিবাদীদের প্রতি এ নির্দেশ দিয়ে রায় দেওয়া হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান, তাঁকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী তানজিলা রহমান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইকরামুল কবির।
রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, আদালতের এই সিদ্ধান্ত দেশে পরিবারের নিরাপত্তা, নারীর সুরক্ষা, বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ, আইনগত স্বচ্ছতা এবং সবচেয়ে বড় বিষয় বিয়ে–তালাকসংক্রান্ত প্রতারণা বন্ধে ঐতিহাসিক এক পদক্ষেপ হিসেবে কাজ করবে। ডিজিটাল নিবন্ধন চালু হলে গোপন বিয়ে, একাধিক বিয়ে লুকানো, পূর্ববর্তী তথ্য গোপন, তালাক প্রমাণের জটিলতা—এসব সমস্যা ব্যাপকভাবে কমবে।