বাংলাদেশে ওএইচসিএইচআরের মিশন শাখা অনুমোদন জাতীয় স্বার্থে আঘাত: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
Published: 30th, June 2025 GMT
বাংলাদেশে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের দপ্তরের (ওএইচসিএইচআর) একটি মিশন শাখা স্থাপনের অনুমোদনকে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ, জাতীয় স্বার্থ ও ইসলামি মূল্যবোধের বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত হিসেবে আখ্যায়িত করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দলটি।
আজ সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ এ কথা বলেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের এ পদক্ষেপ এবং সরকারের পক্ষ থেকে এর অনুমোদন দেশের সার্বভৌমত্ব, রাজনৈতিক স্বকীয়তা ও ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কার। এ ধরনের ‘মানবাধিকার কার্যালয়’ দেশের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক জীবনে অযাচিত হস্তক্ষেপের পথ প্রশস্ত করবে।
অতীতে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরগুলো মুসলিম দেশগুলোর ওপর পশ্চিমা রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বলে বিবৃতিতে দাবি করা হয়।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস মনে করে, মানবাধিকারের নামে ইসলামি শরিয়াহ্, পারিবারিক আইন, সামাজিক রীতিনীতি ও শিক্ষাব্যবস্থার ওপর চাপ প্রয়োগের অপচেষ্টা একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্তেরই অংশ। বাংলাদেশে একটি স্থায়ী কার্যালয় স্থাপন সেই চক্রান্তকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার শামিল। ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের মধ্য দিয়ে দেশে যখন সুস্থধারার রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে, তখনই একটি তথাকথিত ‘মানবাধিকার অফিস’ খোলার মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নতুন করে হস্তক্ষেপের ক্ষেত্র তৈরি করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
চিরকুট: ‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’
রাজশাহীর পবার একটি ঘরে শুক্রবার সকালে চার মরদেহের সঙ্গে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে, যার শব্দ-বাক্যে জীবন-সংসারে অভাব ও ঋণের চরম অভিঘাতের কথা লেখা রয়েছে। তার মধ্যে দুটি বাক্য এমন- “আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না।”
দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করা একটি পরিবারের কর্তা ব্যক্তির বর্ণনা অনুযায়ী, প্রথমে স্ত্রী, তারপর ছেলে-মেয়ের প্রাণ নিয়ে নিজেও শেষ হয়ে গেছেন। তবে এই চিরকুট যে তারই লেখা, সেটি তদন্তের আগে নির্ধারণ করার সুযোগ নেই বলে মন্তব্য পুলিশের।
পবা উপজেলার পারিলা ইউনিয়নের বামনশিকড়ে শুক্রবার সকাল এল চারজনের জীবনাবসনের শোকের ছায়া নিয়ে। বৃহস্পতিবার রাত দ্বিপ্রহরে একই ঘরে চারজনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ। স্ত্রী ও দুই সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।
আরো পড়ুন:
পদ্মায় গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই ছাত্রের লাশ উদ্ধার
কুমিল্লায় মা-মেয়ের মরদেহ উদ্ধার
৩৫ বছর বয়সি মিনারুল ইসলামের সংসার ছিল স্ত্রী মনিরা খাতুন (২৮), ছেলে মাহিম (১৪) ও মেয়ে মিথিলাকে নিয়ে। তারা এখন বামনশিকড়ের অভাবে-ঋণে হারিয়ে যাওয়া একটি শোকগাথা।
মতিহার থানার ওসি আবদুল মালেকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মিনারুলের ঘরে তাদের লাশের পাশে একটি চিরকুট পাওয়া গেছে। চিরকুটে বেশ কিছু কথা লেখা আছে। তবে এখনই বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে না। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
দুই পাতার চিরকুটের ছবি রাইজিংবিডি ডটকমের হাতে এসেছে, যেখানে অভাব-ঋণ, বাবা-ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া কষ্টের কথা লেখা রয়েছে।
চিরকুটের এক পাতায় লেখা আছে, “আমি মিনারুল নিচের যে সব লেখা লেখবো। সব আমার নিজের কথা লিখে যাচ্ছি। কারণ, আমরা চারজন আজ রাতে মারা যাবো। এই মৃত্যুর জন্য কারো কোনো দোষ নেই। আমি মিনারুল প্রথমে আমার স্ত্রীকে মেরেছি। তারপর আমার মাহিমকে (ছেলে) মেরেছি। তারপর আমার মিথিলাকে (মেয়ে) মেরেছি। তারপর আমি নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে মরেছি।”
চিরকুটে আরো লেখা আছে, “আমাদের চারজনের মরা মুখ যেন বাপের বড় ছেলে ও তার স্ত্রী-সন্তান না দেখে এবং বাপের বড় ছেলে যেন জানাজায় না আসে। আমাদের চার জনকে কাফন দিয়ে ঢাকতে আমার বাবা যেন টাকা না দেয়। এটা আমার কসম।”
চিরকুটের দ্বিতীয় পাতায় লেখা আছে, “আমি নিজ হাতে সবাইকে মারলাম, কারণ আমি একা যদি মরে যাই তাহলে, আমার স্ত্রী-সন্তানরা কার আশায় বেঁচে থাকবে? কষ্ট আর দুঃখ ছাড়া কিছুই পাবে না।”
এরপরের বাক্যগুলো হুবহু এমন, “আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে। এত কষ্ট আর মেনে নিতে পারছি না। তাই আমারা বেঁচে থাকার চেয়ে মরে গেলাম সেই ভাল হলো। কারও কাছে কিছু চাইতে হবে না। আমার জন্যে কাউকে মানুষের কাছে ছোট হতে হবে না। আমার বাবা আমার জন্য অনেক মানুষের কাছে ছোট হয়েছে, আর হতে হবে না। চিরদিনের জন্য চলে গেলাম। আমি চাই সবাই ভালো থাকবেন।”
শেষে লেখা, “ধন্যবাদ।”
ঢাকা/কেয়া/রাসেল