সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিট ৭৮ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় যা ২০ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা কম। অবশ্য অর্থবছরের শুরুর তুলনায় শেষ দিকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। মূলত সঞ্চয়পত্রে সরকারের ঋণ কমা এবং রাজস্ব আদায়ে গতি না থাকায় এমন হয়েছে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৯ জুন পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের ঋণ স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৫২ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। গত বছরের জুন পর্যন্ত ঋণ ছিল ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। সামগ্রিকভাবে সরকারের ঋণ লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে থাকলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকে অনেক বেড়েছে। গত ২৯ জুন পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকে ঋণ স্থিতি ১ লাখ ২৯ হাজার ৬৬৪ কোটি টাকা বেড়ে ৪ লাখ ৪৮ হাজার ১০৫ কোটি টাকায় ঠেকেছে। একই সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে আগের দায় পরিশোধ হয়েছে ৫১ হাজার ১৮১ কোটি টাকা। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের ঋণ স্থিতি কমে ১ লাখ ৪ হাজার ৪৬৮ কোটি টাকায় নেমেছে। এর মানে এ পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থায় সরকারের নিট ঋণ বেড়েছে ৭৮ হাজার ৪৮৩ কোটি টাকা।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৯৯ হাজার কোটি টাকায় নামানো হয়। অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড.

আহসান এইচ মনসুর ঘোষণা দেন ঋণ ৯০ হাজার কোটি টাকার মধ্যে রাখা হবে। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছর ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৪ হাজার কোটি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার। ব্যাংকের বাইরে সঞ্চয়পত্র থেকে সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ১৪ হাজার কোটি টাকা ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। তবে গত এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসে উল্টো ঋণ কমেছে ৭ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। প্রতি বছরের বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণের একটি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও গত তিন অর্থবছর ধরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার ঋণ উল্টো কমছে।

ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রের বাইরেও সরকার বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে থাকে। ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে থেকে সরকার আরও ৪৬ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা নিয়েছে সরকার। সব মিলিয়ে অভ্যন্তরীণ উৎসে সরকারের নিট ঋণ বেড়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ৯১ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমানোসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ২০২৪-২৫ অর্থবছর মূল্যস্ফীতি ৮ শতাংশ এবং চলতি অর্থবছর সাড়ে ৬ শতাংশে নামানোর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। মূলত এ কারণেই বাণিজ্যিক ব্যাংক ও অন্য বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকে পরিশোধ করা হচ্ছে। অবশ্য এ সময়ে কয়েকটি দুর্বল ব্যাংকে বিপুল অঙ্কের ধার দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঋণ সরক র র ঋণ ক ব যবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

গণ–অভ্যুত্থানের পরে আনোয়ার ইব্রাহিমের বাংলাদেশ সফর আমাদের প্রেরণা জুগিয়েছিল: অধ্যাপক ইউনূস

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের গত বছরের ঢাকা সফর সদ্য রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে উত্তরণের সময়ে বাংলাদেশকে এক বড় ধরনের মানসিক প্রেরণা জুগিয়েছিল বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

মালয়েশিয়া সফরকালে গতকাল বুধবার দেশটির সরকারি বার্তা সংস্থা বারনামাকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আনোয়ার ইব্রাহিমের এই সফর বাংলাদেশের কঠিন সময়ে জাতির মধ্যে আশার সঞ্চার করেছিল।’

বারনামা আজ সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করে। বারনামার প্রধান সম্পাদক আরুল রাজু দুরার রাজের নেতৃত্বে সংস্থাটির একদল সাংবাদিক এই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন।

২০২৪ সালের ৮ আগস্ট থেকে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ইউনূস সাক্ষাৎকারে ছাত্র–জনতার নেতৃত্বে কীভাবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সংঘটিত হয় এবং স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হন, তা স্মরণ করেন। এ সময় বাংলাদেশ যে অনিশ্চয়তার মুখোমুখি হয়েছিল, তা তুলে ধরেন তিনি।

এই পরিস্থিতিকে ‘ম্যাগনিচিউড ৯ ভূমিকম্পে আঘাত হানা’ অবস্থার সঙ্গে তুলনা করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সবকিছু ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল, ভীষণ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি, কিছুই চলছিল না—শুধু ক্ষোভ ফুঁসে উঠছিল।’

ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের এমন এক কঠিন সময়ে দেশ চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, এটা ছিল অত্যন্ত কঠিন কাজ। শুধু বিশৃঙ্খলা দূর করাই নয়, সবকিছু নতুন করে গড়ে তুলতে হয়েছে। আমরা তখন পথ খুঁজছিলাম, কীভাবে এগোব—এমন সময়ে সুখবর এল, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আমাদের দেশে সফরে আসছেন।’

সাক্ষাৎকারে নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনূস আনোয়ার ইব্রাহিমের সেই সফর নিয়ে স্মৃতিচারণা করেন। আনোয়ার ইব্রাহিম ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ সফর করেন। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র দুই মাসের মাথায় তিনিই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি নেতা হিসেবে বাংলাদেশ সফর করেন।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘তিনি আমাদের আশা দিয়েছিলেন। তাঁর সফর জনগণের মধ্যে বিপুল উচ্ছ্বাস সৃষ্টি করেছিল। মালয়েশিয়া বাংলাদেশের মানুষের কাছে খুব পরিচিত একটি দেশ, কারণ এখানে বহু বাংলাদেশি বসবাস করেন এবং তাঁদের পরিবারও এখানে রয়েছে।’

অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, এটি কোনো অজানা-অচেনা দেশ নয়। তাই মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী এসে বললেন, ‘হ্যাঁ, আমরা তোমাদের পাশে আছি—এটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য অনেক অর্থবহ ছিল। তাঁর উপস্থিতি খুবই উৎসাহব্যঞ্জক ও অনুপ্রেরণাদায়ক ছিল।’

৮৫ বছর বয়সী অধ্যাপক ইউনূস একজন অর্থনীতিবিদ ও সামাজিক উদ্যোক্তা। তিনি ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশে দরিদ্র বিশেষত নারীদের জন্য জামানতবিহীন ক্ষুদ্রঋণ প্রদানের লক্ষ্যে গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন।

মালয়েশিয়া বাংলাদেশের বাইরে প্রথম দেশ হিসেবে আমানাহ ইখতিয়ার মালয়েশিয়া প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে গ্রামীণ ব্যাংক মডেল গ্রহণ করে।

অধ্যাপক ইউনূস ১১ থেকে ১৩ আগস্ট মালয়েশিয়ায় তিন দিনের সরকারি সফর করেন। এ সময় তিনি মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্কের অগ্রগতি বিশেষ করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শ্রম, শিক্ষা, পর্যটন ও প্রতিরক্ষা খাত এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করতে আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে বৈঠক করেন।

তিনি দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে দেশটির বিভিন্ন খাতের নেতাদের এবং বড় বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমি বলতে পারি, আমাদের সফরটি দারুণ ও অত্যন্ত সফল হয়েছে। আমরা এই সফর নিয়ে খুবই সন্তুষ্ট। সবাই তাঁদের সময় নিয়ে খুব উদার ছিলেন। আমরা যেসব কর্মকর্তা, নেতা ও ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলাম—সবাই এগিয়ে এসেছেন।’

অধ্যাপক ইউনূস আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, এই সফর দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করবে এবং পারস্পরিক উপকারী ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা সম্প্রসারিত করবে, যা ১৯৭২ সালে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধনের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘এটি অবশ্যই আরও শক্তিশালী হবে।’

দক্ষিণ এশিয়ায় মালয়েশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ও রপ্তানি গন্তব্য বাংলাদেশ। এর প্রধান রপ্তানি পণ্য হলো পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য, পাম তেল ও রাসায়নিক দ্রব্য, আর আমদানি পণ্য হলো টেক্সটাইল, জুতা, পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য ও প্রস্তুত পণ্য।

২০২৪ সালে মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ বাণিজ্য ৫ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন রিঙ্গিত (২ দশমিক ৯২) বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ২ কোম্পানিটির ক্রেডিট রেটিং নির্ণয়
  • শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেবে না প্রিমিয়ার লিজিং
  • ট্রাম্পের উচ্চ শুল্কের মুখেও বাড়ল ভারতের ঋণমান, আরও বাড়াতে পারে এসঅ্যান্ডপি
  • ঋণ ৭০০ কোটি টাকা, ফেরত সামান্যই
  • নিরাপদ ও টেকসই ভবিষ্যতের জন্য দায়বদ্ধ সিটি ব্যাংক
  • গত অর্থবছরে আরও সাত দেশে ওয়ালটনের ব্যবসা সম্প্রসারণ
  • ১২ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি
  • ১৬০ কোটি টাকার গৃহকর নিয়ে দ্বন্দ্ব মেটাতে যৌথ কমিটি
  • যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি ক্রয়াদেশ অনেক পোশাক কারখানায়
  • গণ–অভ্যুত্থানের পরে আনোয়ার ইব্রাহিমের বাংলাদেশ সফর আমাদের প্রেরণা জুগিয়েছিল: অধ্যাপক ইউনূস