ইলেকট্রনিকস খাতের দেশীয় জায়ান্ট ওয়ালটনের মুনাফা ৪৯ শতাংশ বেড়েছে। চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই–সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটি মুনাফা করেছে প্রায় ২২১ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির মুনাফার পরিমাণ ছিল ১৪৯ কোটি টাকা। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে মুনাফা বেড়েছে ৭২ কোটি টাকা বা ৪৯ শতাংশ।

চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় এ আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ওয়ালটন ১ হাজার ৪৫১ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ১ হাজার ২১৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের চেয়ে চলতি বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়েছে প্রায় ২৩৬ কোটি টাকার বা সাড়ে ১৯ শতাংশ। তবে ব্যবসা যতটা প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তার চেয়ে দ্বিগুণের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে কোম্পানিটির মুনাফায়। যার বড় কারণ ব্যাংকঋণের সুদ ব্যয়সহ আর্থিক খরচ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে যাওয়া। পাশাপাশি কমেছে প্রশাসনিক ব্যয়ও।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংকঋণের সুদসহ কোম্পানিটির আর্থিক খরচের পরিমাণ ছিল প্রায় ১২৩ কোটি টাকা। চলতি বছরের একই সময়ে তা কমে দাঁড়ায় ৪১ কোটি টাকায়। ফলে এ খাতে কোম্পানিটির বড় অঙ্কের খরচ কমেছে, যা কোম্পানিটির মুনাফা বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রেখেছে।

কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, উচ্চ মূল্যস্ফীতিসহ নানা সমস্যার মধ্যেও কোম্পানিটি চলতি বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ভালো ব্যবসা করেছে। খরচ কমাতে ও ব্যবসা বিক্রি বাড়াতে কোম্পানি কর্তৃপক্ষের নেওয়া নানা পদক্ষেপের সুফল পাওয়া গেছে ব্যবসা ও মুনাফায়।

জানতে চাইলে ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজের কোম্পানি সচিব রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে ব্যবসায় খুব ভালো প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ ছাড়া নানা খাতে খরচ কমানোর নানা উদ্যোগের সুফলও আমরা পেয়েছি। সব মিলিয়ে তাই মুনাফা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। এই ধারাবাহিকতা আগামী দিনেও বজায় থাকবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।’

কোম্পানিটি জানিয়েছে, চলতি বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ক্রেতাদের কাছ থেকে কোম্পানিটির আয় গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১২৫ কোটি টাকা বেড়েছে। পাশাপাশি কাঁচামাল ও অন্যান্য পণ্য সরবরাহকারী বাবদ খরচ কমেছে ৩২৫ কোটি টাকা।

ওয়ালটন হাইটেক ইন্ডাস্ট্রিজ ২০২০ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। বর্তমানে এটি শেয়ারবাজারে ভালো মানের কোম্পানি হিসেবে এ শ্রেণিভুক্ত। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৩৬৪ টাকা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বছর র একই সময় গত বছর র খরচ কম পর ম ণ ব যবস প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

অর্থনীতিতে তিনটি চ্যালেঞ্জ আছে: আইএমএফের বিবৃতি

অর্থনীতিতে এখনো তিনটি চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এগুলো হলো দুর্বল কর রাজস্ব, আর্থিক খাতের দুর্বলতা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি।

আইএমএফ বলেছে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা ও সংস্কারের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তবে দুর্বল কর রাজস্ব, আর্থিক খাতের দুর্বলতা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অর্থনীতি এখনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।

আইএমএফ আজ সন্ধ্যায় একটি বিবৃতি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। সেখানে এসব কথা বলা হয়েছে।

গত ২৯ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে সফর করেছে। এই দলের নেতৃত্ব দেন ক্রিস পাপাজর্জিও। সফরকালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও আর্থিক নীতি নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিনিধিদলটি।

আইএমএফ আরও বলেছে, রাজস্ব ও আর্থিক খাতের সমস্যা মোকাবিলায় সাহসী নীতি গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। যাতে টেকসই আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করে শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার করা যায়। ঝুঁকিও এখনো প্রবল। বিশেষ করে যদি নীতি প্রণয়নে বিলম্ব হয় কিংবা অপর্যাপ্ত নীতি গ্রহণ করা হয়, তাহলে ঝুঁকি থাকবে।

আইএমএফ মনে করে, মধ্য মেয়াদে শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী করা, যুব বেকারত্ব হ্রাস এবং অর্থনৈতিক বহুমুখীকরণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ব্যাপক কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন, যা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনাকে বাড়াবে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।

আইএমএফের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকার সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রশংসনীয় অগ্রগতি করেছে। তবে দুর্বল কর রাজস্ব এবং আর্থিক খাতের মূলধন ঘাটতির কারণে এখনো আর্থিক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। কারণ, গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের কারণে উৎপাদনে বিঘ্ন হয়। অন্যদিক মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্ক থেকে ৮ শতাংশে নেমেছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কর ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। যাতে সহজ, ন্যায্য ও কার্যকর রাজস্ব পরিবেশ গড়ে ওঠে এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতাগুলো সমাধান করা যায়। এসব নীতি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ৫ শতাংশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে সাড়ে ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে।

ব্যাংক খাত সংস্কার জরুরি

ব্যাংক খাত নিয়ে আইএমএফ বলেছে, ব্যাংকিং খাতের সমস্যা সমাধানে আর্থিক সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। দুর্বল ব্যাংকগুলো চিহ্নিত করে একটি বিশ্বাসযোগ্য কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। সেখানে মূলধন ঘাটতি, প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা, আইনি কাঠামোয় পুনর্গঠন এবং অর্থের উৎস নির্ধারণ করা থাকবে। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সম্পদ মান পর্যালোচনা প্রয়োজন। ব্যাংক পরিচালনা, স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা এবং খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

আইএমএফের সহায়তা কর্মসূচির পঞ্চম পর্যালোচনা আলোচনা ভবিষ্যতেও চলবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। বাংলাদেশের জনগণের জন্য টেকসই সামষ্টিক স্থিতিশীলতা ও শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার প্রয়াসে আইএমএফ অংশীদার হিসেবে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

আইএমএফের দলটি সফরকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের ব্যবসা বেড়ে তিন গুণ
  • সাগর থেকে মাছ আহরণ বাংলাদেশের কমছে, ভারত-মিয়ানমারে বাড়ছে
  • পে স্কেল হচ্ছে না, কী হওয়া দরকার ছিল
  • অর্থনীতিতে তিনটি চ্যালেঞ্জ আছে: আইএমএফের বিবৃতি
  • পেঁয়াজের দাম কমেনি, কেজিপ্রতি দাম ১০০–১২০ টাকা