সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের ব্যবসা বেড়ে তিন গুণ
Published: 15th, November 2025 GMT
শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কনটেইনার সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান সামিট অ্যালায়েন্স (এসএ) পোর্টের ব্যবসা তিন গুণ বেড়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে মুনাফাও। চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের (জুলাই–সেপ্টেম্বর) আর্থিক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটি ১৫৪ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল ৫৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে কোম্পানিটির ব্যবসা বেড়ে প্রায় তিন গুণ হয়েছে। গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বরের চেয়ে চলতি বছরের একই সময়ে ৯৯ কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করেছে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যে কনটেইনার সেবাদাতা এই কোম্পানি।
গত বৃহস্পতিবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের সভায় জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন করা হয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে কোম্পানিটি মুনাফা করেছে সাড়ে ১৫ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল প্রায় ১২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বরের চেয়ে চলতি বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির মুনাফা সাড়ে তিন কোটি টাকা বা প্রায় ২৯ শতাংশ বেড়েছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত বছরের চেয়ে কোম্পানিটির ব্যবসা তিন গুণ বাড়লেও মুনাফা সেই অনুযায়ী বাড়েনি। এর প্রধান কারণ ব্যবসা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিচালন খরচও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে। গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটির ৫৫ কোটি টাকার ব্যবসার বিপরীতে পরিচালন খরচ ছিল সাড়ে ২৪ কোটি টাকা, অর্থাৎ ৫৫ কোটি টাকার ব্যবসার বিপরীতে পরিচালন খরচ ছিল প্রায় ৪৫ শতাংশ। চলতি বছরের একই সময়ে কোম্পানিটির পরিচালন খরচ বেড়ে ৭৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ১৫৪ কোটি টাকার ব্যবসার বিপরীতে কোম্পানিটির পরিচালন বাবদ ব্যয় হয় ১১৩ কোটি টাকা। পাশাপাশি প্রশাসনিক খরচও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গত বছরের জুলাই–সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটির পরিচালন খরচ ছিল পাঁচ কোটি টাকা। চলতি বছরের একই সময়ে তা বেড়ে হয়েছে ১০ কোটি টাকার বেশি।
কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, পরিচালন ও প্রশাসনিক ব্যয় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসা যতটা বেড়েছে, মুনাফা ততটা বাড়েনি। তা সত্ত্বেও কোম্পানিটির ব্যবসা ও মুনাফা গত বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে।
খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দেশের আমদানি-রপ্তানি বছর বছর বাড়তে থাকায় কনটেইনার ব্যবস্থাপনা সেবার ব্যবসাও বাড়ছে। এ কারণে চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরে পণ্যবাহী কনটেইনার ব্যবস্থাপনার ব্যবসাও বড় হচ্ছে। দেশে বর্তমানে বেসরকারি খাতে ১৯টি ডিপো থাকলেও সিংহভাগ ব্যবসা করছে ৬টি কনটেইনার ডিপো।
কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে, চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে বেসরকারি খাতের ১৯টি ডিপো আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী ৮ লাখ ৩০ হাজার একক কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করেছে। গত বছরের একই সময়ে যে সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ৮ হাজার একক কনটেইনার। সেই হিসাবে বেসরকারি এ খাতে ব্যবসার প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৭ শতাংশ। এ খাতের ব্যবসায় সামিট অ্যালায়েন্স পোর্টের অবস্থান তৃতীয়। সামিট গ্রুপ ও অ্যালায়েন্স হোল্ডিংসের যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে ৯২ হাজার ৬৭০ একক কনটেইনার ব্যবস্থাপনা করেছে। এই ডিপোর বাজার হিস্যা ১১ শতাংশ।
সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০৮ সালে। বর্তমানে এটি শেয়ারবাজারে ভালো মানের এ শ্রেণিভুক্ত কোম্পানি। সর্বশেষ গত অক্টোবর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারের ৫৯ শতাংশই ছিল উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। বাকি ৪১ শতাংশ শেয়ারের মধ্যে ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে সাড়ে ১১ শতাংশ ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে ছিল সাড়ে ৩ শতাংশ শেয়ার। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৪৪ টাকা ৬০ পয়সা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বছর র প রথম ট ক র ব যবস শ য় রব জ র ট র ব যবস ব যবস র পর ম ণ
এছাড়াও পড়ুন:
অর্থনীতিতে তিনটি চ্যালেঞ্জ আছে: আইএমএফের বিবৃতি
অর্থনীতিতে এখনো তিনটি চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এগুলো হলো দুর্বল কর রাজস্ব, আর্থিক খাতের দুর্বলতা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতি।
আইএমএফ বলেছে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা ও সংস্কারের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। তবে দুর্বল কর রাজস্ব, আর্থিক খাতের দুর্বলতা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অর্থনীতি এখনো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি।
আইএমএফ আজ সন্ধ্যায় একটি বিবৃতি তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে। সেখানে এসব কথা বলা হয়েছে।
গত ২৯ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে সফর করেছে। এই দলের নেতৃত্ব দেন ক্রিস পাপাজর্জিও। সফরকালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও আর্থিক নীতি নিয়ে বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিনিধিদলটি।
আইএমএফ আরও বলেছে, রাজস্ব ও আর্থিক খাতের সমস্যা মোকাবিলায় সাহসী নীতি গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। যাতে টেকসই আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করে শক্তিশালী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি পুনরুদ্ধার করা যায়। ঝুঁকিও এখনো প্রবল। বিশেষ করে যদি নীতি প্রণয়নে বিলম্ব হয় কিংবা অপর্যাপ্ত নীতি গ্রহণ করা হয়, তাহলে ঝুঁকি থাকবে।
আইএমএফ মনে করে, মধ্য মেয়াদে শাসনব্যবস্থা শক্তিশালী করা, যুব বেকারত্ব হ্রাস এবং অর্থনৈতিক বহুমুখীকরণ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে ব্যাপক কাঠামোগত সংস্কার প্রয়োজন, যা বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনাকে বাড়াবে এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।
আইএমএফের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সরকার সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রশংসনীয় অগ্রগতি করেছে। তবে দুর্বল কর রাজস্ব এবং আর্থিক খাতের মূলধন ঘাটতির কারণে এখনো আর্থিক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। কারণ, গত বছরের গণ-অভ্যুত্থানের কারণে উৎপাদনে বিঘ্ন হয়। অন্যদিক মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্ক থেকে ৮ শতাংশে নেমেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কর ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। যাতে সহজ, ন্যায্য ও কার্যকর রাজস্ব পরিবেশ গড়ে ওঠে এবং আর্থিক খাতের দুর্বলতাগুলো সমাধান করা যায়। এসব নীতি সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে ২০২৫-২৬ ও ২০২৬-২৭ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি প্রায় ৫ শতাংশে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে সাড়ে ৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে।
ব্যাংক খাত সংস্কার জরুরি
ব্যাংক খাত নিয়ে আইএমএফ বলেছে, ব্যাংকিং খাতের সমস্যা সমাধানে আর্থিক সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। দুর্বল ব্যাংকগুলো চিহ্নিত করে একটি বিশ্বাসযোগ্য কৌশল প্রণয়ন করতে হবে। সেখানে মূলধন ঘাটতি, প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা, আইনি কাঠামোয় পুনর্গঠন এবং অর্থের উৎস নির্ধারণ করা থাকবে। এ ছাড়া রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সম্পদ মান পর্যালোচনা প্রয়োজন। ব্যাংক পরিচালনা, স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা এবং খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া উন্নয়নের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
আইএমএফের সহায়তা কর্মসূচির পঞ্চম পর্যালোচনা আলোচনা ভবিষ্যতেও চলবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। বাংলাদেশের জনগণের জন্য টেকসই সামষ্টিক স্থিতিশীলতা ও শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার প্রয়াসে আইএমএফ অংশীদার হিসেবে অঙ্গীকারবদ্ধ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।
আইএমএফের দলটি সফরকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান প্রমুখ।