মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আটক হওয়া তিনজনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এম.মিজবাহ উর রহমানের আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

আজ শনিবার বিমানবন্দর থানার প্রসিকিউশন বিভাগের উপপরিদর্শক বখতিয়ার এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, শুক্রবার ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ৫৪ ধারায় আসামিদের আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক আবেদন করে পুলিশ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

শুক্রবার মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে সংবাদ সম্মেলনে দেশটির পুলিশপ্রধান খালিদ ইসমাইল জানান, জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৩৬ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়েছে। এদের মধ্যে মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশিদের মধ্যে তিনজন দেশে পাঠানো হয়। এরা সিরিয়া ও বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেটস বা আইএসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট গ্রুপ গুলোকে অর্থ পাঠাতেন।

আটকদের মধ্যে ১৫ জনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে এবং বাকি ১৬ জন এখনও পুলিশি হেফাজতে রয়েছে বলেও জানান দেশটির আইজিপি। তার সন্দেহ পুরো নেটওয়ার্কে ১০০ থেকে ১৫০ জনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
 
দেশটির আইজিপি বলেন, ‌‌'তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে জঙ্গি মতবাদও প্রচার করত এবং আরও বাংলাদেশি শ্রমিকদের এই চক্রে যুক্ত করার চেষ্টা করত।'

মালয়েশিয়া পুলিশের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, আটক বাংলাদেশিরা আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিস ও ই-ওয়ালেটে ব্যবহার এর মাধ্যমে অর্থ পাঠাতেন। এই নেটওয়ার্কটি সিরিয়া ও বাংলাদেশে আইএসের সেলগুলোকে নিয়মিতভাবে সহায়তা করতো।

এর আগে ২০১৬ সালে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে আইএস সংশ্লিষ্ট এক বিস্ফোরণের পর দেশটির সরকার জঙ্গি তৎপরতা দমনে কঠোর অবস্থান নেয়। এরপর থেকে শত শত সন্দেহভাজনকে আটক করেছে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ শট র

এছাড়াও পড়ুন:

গাজওয়াতুল হিন্দ নিয়ে রাজনৈতিক বয়ান তৈরির উদ্দেশ্য কী

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘অনেকে বলে জামায়াত ক্ষমতায় এলে ভারতের হামলার আশঙ্কা রয়েছে। আমি বলেছি দোয়া করতেছি এরা যেন ঢুকে পড়ে। তখন আমাদের ৫০ লাখ যুবক ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে।’ (‘আমাদের ৫০ লাখ যুবক ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে: তাহের’, দেশ রূপান্তর অনলাইন, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫)

এ যুদ্ধের কথা বলতে গিয়ে তিনি (তাহের) ‘গাজওয়াতুল হিন্দ’ অর্থাৎ হাদিসে বর্ণিত ‘হিন্দুস্তানের বিরুদ্ধে মুসলমানদের সর্বশেষ যুদ্ধের’ প্রসঙ্গ টেনে আনেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন এ ধরনের নতুন নতুন বয়ান দেখা যাচ্ছে। এ কথাগুলো অনেকের কাছে শুধু ধর্মীয় আলোচনা মনে হতে পারে। কিন্তু এগুলোর গভীর রাজনৈতিক তাৎপর্য রয়েছে। প্রশ্ন হলো, ধর্মীয় রেফারেন্স ব্যবহার করে এসব রাজনৈতিক বক্তব্যের উদ্দেশ্য ও ফলাফল কী হতে পারে?

‘মালহামা আল-কুবরা’: টেক্সট ও ব্যবহার

‘গাজওয়াতুল হিন্দের পাশাপাশি কোনো কোনো ইসলামপন্থী দল ও সংগঠন ‘মালহামা আল-কুবরা’র প্রসঙ্গ উল্লেখ করে থাকে। হাদিসে মালহামা আল-কুবরা নামে এক বড় যুদ্ধের কথা আছে। এই হাদিসে ‘দাবিক’ ও ‘আমাক’ নামক স্থানে মুসলমানদের বিরুদ্ধে খ্রিষ্টানদের যুদ্ধে মুসলমানদের কনস্টান্টিনোপল বিজয় আর দাজ্জালের প্রসঙ্গ এসেছে। (সহিহ মুসলিম ২৮৯৭; আবু দাউদ ৪২৯৫-৪২৯৬)।

উগ্রপন্থী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস) মালহামা আল-কুবরা-সংক্রান্ত বয়ানকে ইরাক-সিরিয়ায় আইএসের উত্থান এবং সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় ব্যবহার করেছিল। তাদের একটি ম্যাগাজিনের নামও ছিল দাবিক। আইএসের উত্থানের আগে ‘দাবিক’ যদিও তেমন পরিচিত কোনো জায়গা ছিল না। আইএসে যোগদানকারী সিরিয়ার একটি সাংবাদিক গোষ্ঠী ২০১৪ সালে আল হায়াত মিডিয়া সেন্টার নামে বাংলা-ইংরেজিসহ বিভিন্ন ভাষার একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলে। এ প্ল্যাটফর্ম থেকেই ‘দাবিক’ ম্যাগাজিনটি প্রকাশিত হয়।

‘আমাক’ নামটিও আইএস ব্যবহার করেছে। এ নামে আরেকটি সংবাদ সংস্থা গড়ে তোলে তারা, সেটির নাম হলো আমাক নিউজ এজেন্সি। পশ্চিমা বিশ্বে বিভিন্ন সন্ত্রাসী হামলার দায় স্বীকার করে নেওয়ার প্রথম দিককার প্ল্যাটফর্ম এটি। আমাক নামটিও তারা সম্পৃক্ত করেছে সিরিয়ার হাতায় প্রদেশের ‘আমিক’ (অর্থ: গুহা, বহুবচন: আমাক) নামক জায়গা থেকে। যদিও হাদিসে উল্লেখিত আমাক স্থানটি সিরিয়া ছাড়াও জর্ডানসহ বিভিন্ন জায়গায় দাবি করা হয়ে থাকে।

আরও পড়ুনতালেবান, দেওবন্দ এবং ভারতের ‘ধর্মীয় কূটনীতি’১৮ অক্টোবর ২০২৫

ওয়াশিংটন পোস্ট-এর ২০১৬ সালের ১৭ অক্টোবরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আইএস এটিকে “শেষ যুদ্ধের ময়দান” হিসেবে তুলে ধরে সারা দুনিয়া থেকে জিহাদিদের টেনে আনে।’ পরে বিরোধীদের কাছে ‘দাবিক’ হারানোর পর নিজেরাই ঘোষণা দেয়, ‘অ্যাপোক্যালিপস’ বা ‘শেষ যুদ্ধ’ আপাতত স্থগিত।

সিরিয়ায় যুদ্ধের শুরুর দিকে দেখা যায়, ইসলামপন্থী বলে দাবি করা সংগঠনের অনেক যোদ্ধা এমন কিছু ধর্মীয় বয়ান দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, যেগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ইরাক ও সিরিয়া আইএসের উত্থানের ফলাফল কী হলো? লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারাল, কোটি মানুষ শরণার্থী হলো; ইরাক কোনোমতে টিকে থাকলেও সিরিয়া আজ ধ্বংসের পথে। যারা একসময় শেষ যুদ্ধের কথা বলে সারা দুনিয়া থেকে জিহাদিদের জড়ো করেছিল, তারাই এখন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করছে—এমন পরিহাসপূর্ণ দৃশ্যই সবাই দেখল।

সাম্প্রতিক সময়ে এ রকম একটি ঘটনার বড় উদাহরণ হলো আইএসের সাবেক শীর্ষ নেতা ও সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক। চলতি বছরের মে মাসে ওই বৈঠকের পর আকস্মিক এক ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্র জানায়, সিরিয়ার ইসলামপন্থী নেতৃত্বাধীন সরকারের ওপর থেকে তারা আরোপিত সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিচ্ছে এবং দুই দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিষয়টি বিবেচনা করছে।

আইএসের সাবেক শীর্ষ নেতা ও সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বৈঠক সাম্প্রতিক সময়ের বড় একটা ঘটনা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজওয়াতুল হিন্দ নিয়ে রাজনৈতিক বয়ান তৈরির উদ্দেশ্য কী