মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশিরা ‘আইএস তহবিলে’ অর্থ পাঠাত
Published: 5th, July 2025 GMT
মালয়েশিয়ায় জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি কর্মীদের একটি চক্র সিরিয়া ও বাংলাদেশে ‘ইসলামিক স্টেট বা আইএসের সেলগুলোকে’ অর্থ পাঠাত বলে দাবি করেছে দেশটির পুলিশ। মালয়েশিয়ার পুলিশ বলছে, চক্রটি ‘গেরাকান মিলিটান র্যাডিকাল বাংলাদেশ’ বা জিএমআরবি নামে পরিচিত। তারা হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের মতো অ্যাপে সদস্য সংগ্রহ এবং উগ্র মতবাদ প্রচার করত।
মালয়েশিয়া পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল গতকাল শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে ধারাবাহিক অভিযানে ওই ৩৬ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়। আটকরা মূলত কারখানা, নির্মাণ ও সেবা খাতে কর্মরত ছিলেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ২০১৬ সালে বড় ধরনের হামলা চালায় আইএস। ওই হামলার পর শত শত সন্দেহভাজন জঙ্গিকে আটক করেছিল দেশটির পুলিশ। কয়েক বছর ধরে আঞ্চলিক পর্যায়ে অভিযান জোরালো হওয়ায় এ ধরনের গ্রেপ্তার কমেছে। মালয়েশিয়ায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি শিল্প, খামার ও নির্মাণ খাতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।
গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে পুলিশ কর্মকর্তা খালিদ ইসমাইল বলেন, বাংলাদেশিদের চক্রটি অন্য বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্য থেকে সদস্য বাড়ানোর চেষ্টা করছিল। তারা সামাজিক মাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে ‘উগ্রবাদী মতাদর্শ’ ছড়াচ্ছিল। তিনি বলেন, চক্রটি আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিস এবং ই-ওয়ালেট ব্যবহার করে সিরিয়া ও বাংলাদেশে ‘আইএসের জন্য’ অর্থ পাঠাত। মালয়েশিয়া পুলিশের বিশেষ শাখার সন্ত্রাসবিরোধী বিভাগ অর্থ সংগ্রহের প্রমাণ পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘তারা ঠিক কত অর্থ সংগ্রহ করেছে, তা তদন্তাধীন। আমাদের ধারণা, সদস্য ফি ও চাঁদা থেকেই এ অর্থ এসেছে।’
পুলিশের বরাত দিয়ে মালয়েশিয়া স্টার জানায়, জিএমআরবি নামে পরিচিত চক্রটি হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামকে সদস্য সংগ্রহ ও উগ্র মতবাদ প্রচারের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয়। খালিদ ইসমাইল বলেন, ‘আমাদের ধারণা, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তাদের সদস্য সংখ্যা ১০০ থেকে ১৫০ জন। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, প্রত্যেক সদস্যকে বছরে ৫০০ রিঙ্গিত ফি দিতে হয়। তবে অনুদানের পরিমাণ নির্ভর করে সদস্যদের ওপর।’
আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক আইএস সেলগুলোর সঙ্গে চক্রটির কোনো সংযোগ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। পুলিশপ্রধান বলেন, আমরা অন্যান্য দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ইন্টারপোলের সঙ্গে সমন্বয় করে এ জঙ্গি নেটওয়ার্ক উন্মোচনে কাজ করছি। পুলিশ কর্মকর্তা খালিদ ইসমাইল জানান, আটকদের মধ্যে পাঁচজনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। ১৫ জনকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর ১৬ জন এখনও পুলিশের হেফাজতে আছেন। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তিনি বলেন, যাদের সংশ্লিষ্টতা কম, তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। সম্পৃক্ততা বেশি পাওয়া গেলে মালয়েশিয়ার প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ২৭ জুন ৩৬ বাংলাদেশিকে জঙ্গি সন্দেহে আটকের খবর প্রথম প্রকাশ করে মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম। এ নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন গত বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘তাদের সন্ত্রাসবাদী সন্দেহে আটক করেছে, আমরা বিস্তারিত জানতে চেয়েছি তাদের কাছে। আশা করছি, দু-চার দিনের মধ্যে জানতে পারব যে বাস্তবে তাদের বিষয়টা কী।’ তিনি জানান, কয়েকজনের বিরুদ্ধে বোধহয় তারা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনেছে; তাদের আদালতে বিচার সম্পন্ন হবে। বেশ কয়েকজনকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দেবে। স্বাভাবিকভাবে আমাদেরও চেকআপ করতে হবে। আসলে তাদের কতটুকু কী সম্পৃক্ততা আছে, কোন সংগঠনের সঙ্গে, সেটা আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখবে।
এদিকে পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, জঙ্গি সন্দেহে মালয়েশিয়ায় যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন, তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কী ধরনের তৎপরতার সঙ্গে তারা সম্পৃক্ত ছিল, সেটি বের করবে গোয়েন্দারা। তবে কবে নাগাদ তাদের ফেরত পাঠানো হবে, সে বিষয়ে নিশ্চিত নয় পুলিশ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আম দ র স গ রহ সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
‘আইএস তহবিলে অর্থ পাঠাত’ গ্রেপ্তার বাংলাদেশিরা: মালয়েশিয়ার আইজিপি
জঙ্গিবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশিরা সিরিয়া ও বাংলাদেশে ‘ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সেলগুলোকে অর্থ পাঠাত’ বলে জানিয়েছেন দেশটির পুলিশ প্রধান (আইজিপি) মোহাম্মদ খালিদ ইসমাইল।
আজ শুক্রবার সদর দপ্তর বুকিত আমানে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের মহাপরিদর্শক বলেন, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে পরিচালিত ধারাবাহিক অভিযানে ওই ৩৬ বাংলাদেশিকে আটক করা হয়। তারা মূলত কারখানা, নির্মাণ ও সেবা খাতে কর্মরত ছিলেন।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুসলিম অধ্যুষিত মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে ২০১৬ সালে আইএসের এক হামলার পর থেকে শত শত সন্দেহভাজন জঙ্গিকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আঞ্চলিক অভিযান জোরদার হওয়ার পর এ ধরনের গ্রেপ্তারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে।
শিল্প, খামার ও নির্মাণ খাতে শ্রমিক ঘাটতি পূরণে মালয়েশিয়া ব্যাপকভাবে বিদেশি শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল। প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশি শ্রমিক দেশটিতে পাড়ি জমান।
গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে পুলিশ প্রধান খালিদ ইসমাইল বলেছেন, বাংলাদেশিদের ওই চক্রটি অন্য বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে থেকে সদস্য বাড়াচ্ছিলেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে ‘উগ্রবাদী মতাদর্শ’ ছড়াচ্ছিল।
তিনি আরও বলেন, এই চক্র আন্তর্জাতিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিস ও ই-ওয়ালেট ব্যবহার করে সিরিয়া ও বাংলাদেশে ‘আইএসের জন্য’ অর্থ পাঠাত। মালয়েশিয়া পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের কাউন্টার টেরোরিজম ডিভিশন অর্থ সংগ্রহের প্রমাণ পেয়েছে। তিনি বলেন, ‘তারা ঠিক কত অর্থ সংগ্রহ করেছে, তা এখনও তদন্তাধীন। আমাদের ধারণা, সদস্য ফি এবং চাঁদা থেকেই এই অর্থ এসেছে।’
পুলিশের বরাত দিয়ে মালয়েশিয়ার সংবাদমাধ্যম স্টার লিখেছে, ‘গেরাকান মিলিটান র্যাডিকাল বাংলাদেশ’ বা ‘জিএমআরবি’ নামে পরিচিত এই চক্র হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রামের মতো অ্যাপে সদস্য সংগ্রহ এবং উগ্র মতবাদের প্রচার করে আসছিল।
খালিদ ইসমাইল বলেন, আমাদের ধারণা, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে তাদের সদস্য সংখ্যা ১০০ থেকে ১৫০ জনের মত। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, প্রত্যেক সদস্যকে বছরে ৫০০ রিংগিত ফি দিতে হয়। তবে অনুদানের পরিমাণ নির্ভর করছে সদস্যদের ওপর।
আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক আইএস সেলগুলোর সঙ্গে এই চক্রের কোনো সংযোগ আছে কি না—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এখনও তদন্ত চলছে।
মালয়েশিয়ার পুলিশ প্রধান বলেন, আমরা অন্যান্য দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং ইন্টারপোলের সঙ্গে সমন্বয় করে এই জঙ্গি নেটওয়ার্ক উন্মোচনে কাজ করছি।
আটকদের মধ্যে পাঁচ জনের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদে জাড়িত থাকার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। ১৫ জনকে দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর ১৬ জন এখনো পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন আইজিপি খালিদ ইসমাইল।
তিনি বলেন, তবে যাদের সংশ্লিষ্টতা কম, তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে। আর যাদের সম্পৃক্ততা বেশি, তাদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দিন নাসিউশন ইসমাইলের বরাত দিয়ে ৩৬ বাংলাদেশিকে জঙ্গি সন্দেহে আটকের খবর প্রথম সংবাদমাধ্যমে এসেছিল গত ২৭ জুন।
তিনি বলেছিলেন, আটক বাংলাদেশিদের ওই দলটি আইএসের মতাদর্শ মালয়েশিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল এবং নিজেদের ভেতরে সদস্য নিয়োগের সেল গঠন করেছিল। এই সেলগুলো উগ্র মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থ সংগ্রহ এবং নিজের দেশের বৈধ সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনায় কাজ করছিল।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বৃহস্পতিবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘তাদের সন্ত্রাসবাদী সন্দেহে আটক করেছে, আমরা বিস্তারিত জানতে চেয়েছি তাদের কাছে। আশা করছি, দুই-চারদিনের মধ্যে জানতে পারব যে বাস্তবে তাদের বিষয়টা কী।
আটকদের বিষয়ে বাংলাদেশের করণীয় কী, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমাদের করণীয় হচ্ছে যে দেখা, এ ধরনের বিশেষ অপকর্মের সঙ্গে জড়িত কি-না; যদি জড়িত হয়, তাদের ব্যাপারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা; এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সেটার চেষ্টা করা।