মিটফোর্ডে খুন হওয়া ব্যবসায়ী সোহাগকে হিন্দু বানিয়ে ছাড়লো ভারতীয় সংবাদমাধ্যম
Published: 13th, July 2025 GMT
রাজধানীর মিটফোর্ড (স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালের সামনে খুন হওয়া ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগকে (৩৯) হিন্দু বানিয়ে ছেড়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। রবিবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে এই কাণ্ড ঘটিয়েছে।
ইন্ডিয়া টুডের সংবাদমাধ্যমটির শিরোনাম ছিল, “বাংলাদেশে হিন্দু ব্যবসায়ীকে কংক্রিটের স্ল্যাব দিয়ে পিটিয়ে হত্যা; হামলাকারীরা শরীরের উপর নাচছে।” এই প্রতিবেদনের সঙ্গে গত বছর সংখ্যালঘুদের একটি বিক্ষোভ সমাবেশের ছবি যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
৯ জুলাই স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটের সামনে লালচাঁদ ওরফে সোহাগকে একদল সন্ত্রাসী পিটিয়ে হত্যা করে। পরে তার মৃতদেহের ওপর পাথর নিক্ষেপ করা হয়। এই নৃশংস ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। শুক্রবার গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার ৭ নম্বর ঢলুয়া ইউনিয়নের বান্দরগাছিয়ায় জানাজা শেষে সোহাগের লাশ দাফন করা হয়।
ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদনটির শিরোনামে সোহাগকে হিন্দু দাবি করা হলেও পুরো প্রতিবেদনের ভেতরে কোথাও তার ধর্মপরিচয় কিংবা বিস্তারিত পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি।
প্রতিবেদনটিতে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ১০ জুলাই দেওয়া একটি মন্তব্য জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদে জানিয়েছে, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট থেকে ৩৩০ দিনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দুই হাজার ৪৪২টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনার সম্মুখীন হয়েছে। সহিংসতার ধরণগুলোর মধ্যে রয়েছে হত্যা, গণধর্ষণসহ মহিলাদের উপর নির্যাতন, উপাসনালয়ে আক্রমণ, ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল, জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর উপর আক্রমণ এবং বিভিন্ন সংগঠন থেকে জোরপূর্বক পদত্যাগ।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের অসংখ্য মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করে আসছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।
ঢাকা/শাহেদ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে নির্বিচার পাখির মতো গুলি করা হয়: মামুনুল হক
ইসলামি জনতাকে বারবার বুলেটের আঘাতে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেছেন, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে নির্বিচার পাখির মতো গুলি করা হয়। ২০২১ সালে মোদিবিরোধী আন্দোলনের কারণে আলেমদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ২০২৪ সালে জুলাই বিপ্লবে এ দেশে আপামর তৌহিদি জনতা, ছাত্রজনতা, কৃষক–শ্রমিক–মজুরদের হত্যা করে বাংলাদেশকে রক্তে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আজ বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা শাখার আয়োজনে সরকারি মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মামুনুল হক এ কথা বলেন।
আগামীর বাংলাদেশ ইসলামের বাংলাদেশ হবে বলে দাবি করেন মামুনুল হক। তিনি জানান, বিগত সময়ে যারা ক্ষমতার মসনদে ছিল, তারা দেশের প্রতিনিধি নয়; বরং ভিনদেশি কৃতদাসী হিসেবে ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল। এ দেশের মানুষের অধিকার আদায় নয়, ভিনদেশিদের স্বার্থ আদায় করাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। দেশটাকে উজাড় করে সোনার বাংলাকে শ্মশান বানিয়ে মানুষের রক্ত ও জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে দেশটাকে গুমের রাজত্বে পরিণত করা হয়েছিল। বাংলাদেশটাকে মৃত্যুকূপে পরিণত করা হয়েছিল।
বিগত সরকারের আমলে ইসলামি নেতাদের বছরের পর বছর বিনা বিচারে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল অভিযোগ করে মামুনুল হক বলেন, জেল–জুলুম–হুলিয়া চালানো হয়েছিল, ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো হয়েছিল। কারাগারে বিনা চিকিৎসায় আলেমদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল—১৫টি বছর ছিল আলেম–ওলামা তথা ইসলামপন্থীদের রক্ত দেওয়ার, ত্যাগ ও কোরবানির সময়। সব জুলুম–নির্যাতনের পর চব্বিশের বিপ্লব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চব্বিশের এ বিপ্লবে যারা বুক চিতিয়ে জীবন দিয়েছিল, তাদের সিংহভাগ ছিল আলেমসমাজ। জীবন ও রক্তের বিনিময়ে বিদেশি আধিপত্যমুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করা হয়েছে। নতুন করে আবার বিদেশি পরাজিত শক্তি অন্য কারও মাথার ওপর ভর করে বাংলার মানুষকে যদি জিঞ্জিরাবদ্ধ করতে চায়, তা বরদাশত করা হবে না।
ঐক্যবদ্ধ জনগণ যাদের প্রতিহত করেছে, তারা ভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে বাংলাদেশের মানুষকে জিম্মি করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন মামুনুল হক। তিনি বলেন, ‘আমরা শপথ করছি, জীবন দিয়ে যেই ফ্যসিবাদ বিতাড়িত করেছি, সেই ফ্যাসিবাদ ভিন্নরূপে বাংলার ক্ষমতার মসনদে আসার পাঁয়তারা করলে আমরা রাজপথে লড়াই করে মোকাবিলা করব। নিজের বক্তব্যে চাঁদাবাজি, লুটপাট, দুর্নীতি বন্ধ ও জুলাই সনদের আইনিভিত্তি বাস্তবায়নে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতীকের পাশাপাশি গণভোটে হ্যাঁ ব্যালটে সিল দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানাই।’
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস উপজেলা শাখার সভাপতি হাফেজ আবদুল লতিফের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমীন, নায়েবে আমির শাহ মুহাম্মদ সাঈদ নূর, মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ হাদী, ফুলবাড়িয়া আসনে খেলাফত মজলিস মনোনীত প্রার্থী মুফতি আবদুল কাদের, জামায়াত মনেনানীত প্রার্থী অধ্যক্ষ কামরুল হাসানসহ খেলাফত মজলিসের অন্য নেতারা।
একই দিন বিকেলে ভালুকা সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত সমাবেশেও প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মামুনুল হক।