মেয়ের প্রতি বিল গেটসের বিরল ভালোবাসা
Published: 26th, July 2025 GMT
মাইক্রোসফটের সহপ্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস পৃথিবীর শীর্ষ ধনীদের একজন। কাজ থেকে অবসর নিলেও নিজের প্রতিষ্ঠা করা ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে উদ্ভাবন ও গবেষণার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন দাতব্য কাজে শত শত কোটি মার্কিন ডলার দান করেছেন তিনি। এবার শত ব্যস্ততার মধ্যেও নিজের ছোট মেয়ে ফোবি গেটসের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিনির্ভর শপিং অ্যাপ ‘ফিয়া’র গ্রাহকসেবা দলের সঙ্গে এক দিন কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে মেয়ের প্রতি ভালোবাসার অনন্য নজির গড়েছেন বিল গেটস। এ বিষয়ে নিজের লিংকডইন পোস্টে বিল গেটস লিখেছেন, ‘আমি আবার স্টার্টআপ জগতে প্রবেশ করছি। যখন আপনার মেয়ে জিজ্ঞাসা করে, তুমি কি তার স্টার্টআপের গ্রাহকসেবায় পরিবর্তন আনতে ইচ্ছুক, তখন একমাত্র সঠিক উত্তর হলো, হ্যাঁ।’
লিংকডইন পোস্টে বিল গেটস জানান, ‘প্রযুক্তি কীভাবে বিভিন্ন পদ্ধতিকে আরও দক্ষ, ন্যায়সংগত ও ব্যবহারযোগ্য করে তুলতে পারে, তা জানতে আমি অনেক সময় ব্যয় করেছি। বছরের পর বছর ধরে আমি শিখেছি। কোনো কিছু কীভাবে কাজ করে বা করে না, তা বোঝার সর্বোত্তম উপায় হলো সরাসরি ব্যবহারকারীদের কাছে সেই প্রযুক্তি নিয়ে যাওয়া। এ কারণেই আমি এক দিনের জন্য ফিয়ার গ্রাহকসেবা দলে যোগ দিচ্ছি। একটি ফ্যাশন আর প্রযুক্তিগত প্ল্যাটফর্ম ফিয়া। এটি কেনাকাটাকে আরও স্মার্ট এবং টেকসই করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। আমার মেয়ে ফোবি গেটস ও তার বন্ধু সোফিয়া কিয়ানির ভাবনা এটি। তারা একটি অ্যাপ ও ব্রাউজার এক্সটেনশন তৈরি করেছে। এটি সেরা দাম খুঁজে বের করে। বিভিন্ন পুরোনো পণ্যের বিকল্পের তথ্য দেয়। হাজার হাজার অনলাইন খুচরা বিক্রেতাদের দামের বিকল্প তথ্য দেখাতে পারে। এই প্ল্যাটফর্ম মানুষকে আরও স্মার্ট কেনাকাটা করতে সহায়তা করে। তাদের বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। আমরা যেভাবে কেনাকাটা করি, তা পুনর্বিবেচনা করতে আর ব্যবহারকারীদের কাছে সঠিক পণ্য পৌঁছে দিতে তাদের কাজ অনুপ্রেরণাদায়ক। আমি তাদের হয়ে কাজ করব। স্টার্টআপের জগতে ফিরে যাওয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি আমি।’
আরও পড়ুনবিল গেটস, স্টিভ জবসদের সন্তানেরা কে কোথায়, কী করেন তাঁরা?১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪২২ বছর বয়সী ফোবি গেটসের চালু করা শপিং অ্যাপ ফিয়া থেকে বিভিন্ন পণ্যও কেনাকাটা করছেন বিল গেটস। তবে বিশ্বজুড়ে উদ্ভাবন ও গবেষণার কাজে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করলেও নিজের মেয়ে ফোবি গেটসের চালু করা অ্যাপে কোনো অর্থ বিনিয়োগ করেননি বিল গেটস। অর্থ বিনিয়োগের পরিবর্তে মেয়েকে ব্যবসাবিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে নির্দেশনা দেন তিনি।
আরও পড়ুনবিল গেটস যে কারণে নিজের মেয়ের ব্যবসায়িক উদ্যোগে বিনিয়োগ করেননি২৭ এপ্রিল ২০২৫ফোবি গেটস তাঁর স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রুমমেট সোফিয়া কিয়ানির সঙ্গে মিলে ফিয়া প্রতিষ্ঠাতা করেন।ফিয়া অ্যাপ ৪০ হাজারের বেশি ওয়েবসাইট থেকে নতুন ও পুরোনো পণ্যের দাম তুলনা করতে ব্যবহারকারীদের সাহায্য করছে। ফিয়া ফ্যাশনদুনিয়ার জন্য বুকিং ডটকম হতে চাচ্ছে। বুকিং ডটকম ব্যবহারকারীদের বিশ্বের বিভিন্ন পর্যটন এলাকার বিভিন্ন হোটেলের মধ্যে দামের তুলনা দেখায়।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ল গ টস র জন য গ টস র
এছাড়াও পড়ুন:
এই অদম্য মেয়েদের আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না
অবহেলিত মেয়েরা কঠিন একটি কাজ সম্পন্ন করেছেন। অনেকের কাছে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। অসাধ্য এক অর্জনকে বাস্তবের জমিনে নামিয়ে এনেছেন আমাদের বাঘিনীরা। সাফ পর্যায় জয় করে নারীদের ফুটবলকে এশীয় পর্যায়ে নিয়ে গেলেন। বিশ্বকাপও খেলে ফিরতে পারেন এই অদম্য বাঘিনীরা।
এখন বলাই যায়, নারী ফুটবলের বিশ্ব পর্যায়ে কড়া নাড়ছেন আমাদের মেয়েরা। ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাঁরা। শুধু ফুটবলই নয়, আমাদের নারী জাগরণের নতুন দিশা হতে পারে মেয়েদের এই সাফল্য। এই মেয়েরা সারা দেশের মেয়েদের জন্য উদাহরণ। নারী অধিকার, নারী ক্ষমতায়নের নতুন দিনের আলোকবর্তিকা আমাদের নারী ফুটবল দল।
ফুটবলে মেয়েদের এই সাফল্যের পেছনে আছে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস। সফলতা খুব সহজে আসেনি। নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে কঠিন এক সংগ্রামের ফসল মেয়েদের আজকের এই অর্জন। ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত পল্লি থেকে কোহাটি কিষ্ক, কলসিন্দুরের মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার, তহুরা খাতুন, সানজিদা আক্তার বা রাঙামাটির দুর্গম গ্রাম মগছড়ি থেকে ঋতুপর্ণা চাকমাদের আজকের এই পর্যায়ে আসার ইতিহাসটা আমরা কমবেশি সবাই জানি।
এই পথচলায় সামাজিক বিধিনিষেধ ছিল। ছিল আর্থিক টানাপোড়েন, অনিশ্চয়তা। জীবনের এমন কোনো সংকট নেই, যা তাঁদের সামনে আসেনি। কিন্তু হিমালয়সম সেই বাধাকে সাহসিকতার সঙ্গে পেছনে ঠেলে আজকে তাঁরা এশীয় পর্যায়ে নিজেদের উন্নীত করেছেন।
তাঁদের অর্জনের তুলনায় রাষ্ট্র দিতে পেরেছে খুবই কম। বলতে গেলে, তাঁরা পেটেভাতে দেশের জন্য খেলে দিচ্ছেন। যেন খেলার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চলছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আদলে। যৎসামান্য যে বেতন দেওয়া হয়, সেটাও অনিয়মিত। যেকোনো সাফল্যের পর যখন মেয়েদের কাছে শুনতে চাওয়া হয়, ‘আপনারা কী চান?’ উত্তরে মেয়েরা জানান, ‘নিয়মিত বেতনটা চাই। আর বেতনটা বাড়ালে আরও ভালো হয়।’ ২০২৫ সালে এসে এটা মেনে নেওয়া কঠিন।
দেশে মেয়েদের নিয়মিত লিগ হয় না। অন্য কোনো টুর্নামেন্টও হয় না নিয়মিত। নিয়মিত খেলার জন্য আমাদের মেয়েদের ভুটান লিগে খেলতে যেতে হয়। কেবল আবাসিক ক্যাম্পের প্রশিক্ষণ ও কিছু প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলেই মেয়েদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় নামতে হয়। সেই সব খেলায় তাঁরা নিয়মিত লিগ খেলা দলগুলোকে বলে-কয়ে হারাচ্ছে।
আমাদের খেলাধুলাকে রাজধানীকেন্দ্রিক না রেখে প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। শুধু নারী ফুটবল নয়, সব ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে তৃণমূল থেকে। তবেই নতুন নতুন প্রতিভাবান খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে। ঢাকাকেন্দ্রিক খেলার কুফল কী হতে পারে, তার বড় উদাহরণ আমাদের ছেলেদের ফুটবল। সারা দেশে নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক লিগ না হওয়ার কারণে নতুন নতুন ফুটবলার বেরিয়ে আসছেন না।কী পরিমাণ প্রতিভার অধিকারী হলে ন্যূনতম সুবিধা না পেয়েও এ পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করা যায়, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। ভারত ও নেপালে নিয়মিত মেয়েদের খেলা হয়, লিগ হয়। আর আমরা তাদের এখন নিয়মিতই হারাই। এখন সাফের বাইরের দলগুলোকেও আমরা হারাতে শুরু করেছি।
এই মেয়েদের প্রচেষ্টা ও সাহস নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রচণ্ড রকম ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে তাঁরা খেলতে নামেন। ভয়হীন ফুটবল খেলেন। সব থেকে বড় কথা, খেলার যেকোনো ধরনের ট্যাকটিকসের সঙ্গেই তাঁরা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন। আগে আমাদের মেয়েরা কিছুটা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতেন। রক্ষণ সামলে প্রতি-আক্রমণে যেতেন। এবার এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে মেয়েরা পুরো খেলার ধরন বদলে ফেলেছেন।
আমাদের মেয়েরা এবার হাই প্রেসিং ফুটবল খেলেছেন। এই দল আগের থেকে দ্রুতগতিসম্পন্ন ফুটবল খেলে। বল পায়ে রাখতে পারে। তাদের বল ডিস্ট্রিবিউশন আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। পাসিংও ভালো। পজিশন সেন্স চমৎকার। বিশেষ করে বল হারালে দ্রুত নিজেরা অবস্থান নিতে পারে।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে হাই লাইন ডিফেন্স করে গেছে দুর্দান্তভাবে। আর বাহরাইনের সঙ্গে শামসুন্নাহার জুনিয়র যেভাবে গতি সঞ্চার করে ডিফেন্স থেকে বেরিয়ে ওয়ান টু ওয়ানে গোলরক্ষককে পরাজিত করলেন ঠান্ডা মাথায়, তা আমাদের পুরুষ দলের স্ট্রাইকার বা উইঙ্গাররাও করতে পারেন না। নিয়মিত খেলার মধ্যে না থাকা একটি দলের কাছে এর বেশি আশা করা উচিত নয়। কিন্তু তাঁরা আমাদের সেই আশাকে ছাড়িয়ে গেছেন। তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে মাঠে খেলাটা তৈরি করতে পারেন।
মেয়েদের এই লড়াইকে ধরে রাখতে হবে। তাঁদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সিরাত জাহান স্বপ্না বা আঁখি খাতুনের মতো খেলোয়াড়দের আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে ফুটবল থেকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। মেয়েদের প্রতিযোগিতামূলক লিগ নিয়মিত আয়োজন করতে হবে। এর পাশাপাশি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে লিগের আয়োজন করতে হবে।
‘সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এই মেয়েরা আমাদের ফুটবল নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।’