গাজায় নৃশংসতা চালিয়ে ইসরায়েল কি পশ্চিমা বিশ্বেও একঘরে হয়ে যাচ্ছে
Published: 1st, August 2025 GMT
ইসরায়েলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পশ্চিমা মিত্রদেশ এখন রাজনৈতিক চাপে পড়েছে। এ চাপ আসছে দেশগুলো সাধারণ মানুষের কাছ থেকে। কারণ, গাজার বাসিন্দাদের অনাহারে থাকার তথ্য-প্রমাণ তাঁদের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করছে।
গাজাবাসী যে না খেয়ে আছেন, তা মনে করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও। কয়েক মাসের মধ্যে প্রথমবারের মতো নিজের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূতকে ইসরায়েলে পাঠিয়েছেন। সেখানে গিয়ে তিনি গাজার বিশৃঙ্খল খাদ্য বিতরণব্যবস্থা দেখবেন।
গাজায় ইসরায়েল গণহত্যা করছে কি না, তা নিয়ে অনেক বুদ্ধিজীবী এখন প্রশ্ন তুলছেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশে করা জরিপে দেখা যাচ্ছে, মানুষ ইসরায়েলকে নিয়ে আরও নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন। গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের এ যুদ্ধ শেষ করার স্পষ্ট কোনো পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে না।
ইসরায়েলের প্রতি এ অবিশ্বাস নিয়ে ক্ষুব্ধ দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, গাজায় অনাহারের তথ্য অতিরঞ্জিত, হামাসকে ধ্বংস করা দরকার, সমালোচনাকারীরা অনেকেই ইহুদিবিদ্বেষী। নেতানিয়াহুর মতে, পশ্চিমা দেশগুলো ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিলে তা হবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবরের হামলার জন্য হামাসকে পুরস্কৃত করা।
ইসরায়েলি রাজনীতিবিষয়ক বিশ্লেষক নাটান স্যাকস বলেন, একে একই ধরনের আরেকটি সমস্যা হিসেবে মনে করছে ইসরায়েল। কিন্তু তারা বিশ্বের মনোভাব বুঝতে ভুল করছে। কারণ, পুরো দুনিয়ার দৃষ্টিভঙ্গি এখন বদলে যাচ্ছে। আর তরুণদের মধ্যে এ বদলটা সবচেয়ে বেশি।
গাজায় ব্যাপক অনাহার নিয়ে যখন মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে, তখন বিশ্বমঞ্চে ইসরায়েল আরও একা হয়ে পড়ছে। ২০২৩ সালে হামাসের সে হামলা এখনো ইসরায়েলিদের মনে গেঁথে আছে। কিন্তু গাজায় যেভাবে ধ্বংসযজ্ঞ আর অনাহার চলছে, তা বিশ্বের অন্যদের চোখে আরও বেশি পড়ছে এবং গুরুত্ব পাচ্ছে।
এপ্রিলে করা এক জরিপে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাপ্তবয়স্কদের ৫৩ শতাংশ এখন ইসরায়েল সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন। ইসরায়েলে হামাসের হামলার আগে এ হার ছিল ৪২ শতাংশ।হামাসের হাত থেকে জিম্মিদের মুক্তির জন্য গত মার্চে ইসরায়েল গাজায় সাহায্য বন্ধ করে দেয়। তারপর তারা সেখানে নিজেরা খাবার বিতরণের চেষ্টা করে। কিন্তু তা বিশৃঙ্খল ও প্রাণঘাতী রূপ নিয়েছে। ইসরায়েলের ত্রাণকেন্দ্রগুলোয় খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে বহু ফিলিস্তিনি হত্যার শিকার হয়েছেন।
এ সংঘাত কখন শেষ হবে, তা কেউ জানে না। ইসরায়েল বহুবার গাজার বিভিন্ন জায়গা দখলে নিয়েছে, আবার ছেড়েও দিয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, গাজায় ৬০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগই সাধারণ মানুষ। নেতানিয়াহু এখনো জানাননি, সংঘাত শেষে হামাসের বদলে কে গাজা শাসন করবে। এ কাজে যাদের সহায়তা করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি—সেই সৌদি আরব, মিসর বা উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতেও রাজি নন তিনি।
গাজার একটি ত্রাণকেন্দ্রে খাবারের জন্য ফিলিস্তিনিদের ভিড়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)