আত্মতুষ্টির কারণ নেই, শুল্ক নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে: বিজিএমইএ সভাপতি
Published: 2nd, August 2025 GMT
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানিতে পাল্টা শুল্ক কমে ২০ শতাংশ হওয়ায় একটি সমূহ বিপর্যয় এড়ানো গেছে। এতে আমরা আপাতত স্বস্তি প্রকাশ করছি। তবে এই শুল্কহার নিয়ে বসে থাকলে চলবে না, এটি নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখতে হবে।’
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘প্রতিযোগী দেশগুলো তাদের নির্ধারিত শুল্কহার নিয়ে বসে থাকবে না। সেটি তারা কমানোর চেষ্টা করবে। তাতে ভবিষ্যতে কিছু ক্ষেত্রে তাদের শুল্ক কমেও আসতে পারে। ফলে আমাদের এতটা আত্মতুষ্টির কারণ নেই।’
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক কমানোর বিষয়ে আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএর নিজস্ব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মাহমুদ হাসান খান। শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি। বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র সরকার একটি ভারসাম্যপূর্ণ শুল্ককাঠামো ঘোষণা করেছে; যেটি প্রায় চার মাস ধরে আমাদের উদ্বেগের কারণ ছিল। বাংলাদেশের ওপর অতিরিক্ত আমদানি শুল্ক (পাল্টা শুল্ক) প্রথমে ৩৭ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশ এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে ২০ শতাংশে পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এই শুল্কহার আমাদের প্রধান পোশাক রপ্তানিকারী প্রতিযোগীদের তুলনায় সমান বা কাছাকাছি এবং কিছু প্রধান প্রতিযোগী যেমন চীন ও ভারতের তুলনায় কম। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার, বিশেষ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং তাঁদের দলের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশের একটি সমূহ বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়েছে।’
মাহমুদ হাসান খান জানান, শুল্কবিষয়ক আলোচনায় সম্পৃক্ত হতে তাঁরা বিজিএমইএর পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছেন। সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সরকারকে সহায়তা করেছেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ও অন্যান্য অংশীজনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সরকারকে যেন গুরুত্ব বোঝানো হয় সে জন্য প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেও গেছেন ব্যবসায়ীরা।
২০% পাল্টা শুল্ক কমানোরও সুযোগ রয়েছে
সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বিষয়ে কিছু স্পষ্টকরণ করা প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের (বাংলাদেশের) রপ্তানির প্রায় ৭৫ শতাংশ হচ্ছে তুলাভিত্তিক পোশাক। সে দেশের শুল্ক–সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে (ক্লজ নাম্বার এফ; পৃষ্ঠা ১৩ ও ১৪) বলা আছে যে কোনো পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করলে তার উপকরণে যদি ২০ শতাংশ বা এর বেশি সে দেশটির কাঁচামাল থাকে তাহলে রপ্তানি পণ্যের সেই অংশটুকুর পাল্টা শুল্কহার প্রযোজ্য হবে না বা শূন্য থাকবে। ফলে আমরা যদি যুক্তরাষ্ট্রে কোনো পোশাক রপ্তানি করি সেটির মধ্যে যদি ৫০ শতাংশ ইউএস কটন থাকে তাহলে ওই ৫০ শতাংশের ওপরে নতুন ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপিত হবে না। অর্থাৎ কাঁচামাল ব্যবহার করলে আমরা বাড়তি কিছু শুল্কছাড় পাব।’
মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘শুল্কের এই ধারাটি কীভাবে প্রযোজ্য হবে, কাদের মাধ্যমে হবে, সেটি অবশ্য পরিষ্কার না। এ বিষয়টি আরও পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন। কারণ, এটা যদি আমরা কার্যকর করতে পারি তাহলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও বেশি পরিমাণে তুলার সুতা বা কৃত্রিম তন্তু আমদানির বিষয়ে আমাদের সদস্যদের আগ্রহী করে তুলব। তাতে শুল্ক ২০ শতাংশের নিচে নেমে আসবে।’
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের মূল প্রতিদ্বন্দ্বী একাধিক দেশ নিজেদের দেশে উৎপাদিত সুতা (কটন) ব্যবহার করে এবং যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য কম আমদানি করে। ফলে তাদের পক্ষে হঠাৎ করে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানো সম্ভব না। কিন্তু আমরা এটি পারব। বর্তমানে বাংলাদেশ ৪০০ থেকে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সুতা যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করে। এটিকে দুই বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলার করা খুবই সম্ভব।’
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক নিয়ে অবশ্যই আমাদের স্বস্তির বিষয় আছে। কারণ, আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারতের চেয়ে আমাদের শুল্ক কম আছে, পাকিস্তানে ১ শতাংশ বেশি, আর ভিয়েতনামের সমান আছে। ফলে আমাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনায় আমাদের শুল্ক সহনীয় পর্যায়ে আছে বলে আমরা আপাতত স্বস্তি প্রকাশ করছি। তবে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ বিশেষ করে ভারত, ভিয়েতনাম, চীন, পাকিস্তান কিন্তু পাল্টা শুল্কের নতুন হার নিয়ে বসে থাকবে না। তারা আলোচনা ও লবিং অব্যাহত রাখবে। এতে যেকোনো সময় তাদের শুল্ক আরও কমতে পারে। ফলে এখানে আত্মতুষ্টির কোনো সুযোগ নেই। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে স্পষ্ট করে বলা আছে, কিছু দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বা নিরাপত্তা চুক্তি আলোচনা এখনো চলমান আছে। ফলে বাংলাদেশকেও আলোচনা চালিয়ে যেতে হবে।’
আরও কিছু উদ্বেগের বিষয় রয়েছে বলে জানান বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, নতুন পরিস্থিতিতে একজন ক্রেতার চলতি মূলধনে টান পড়বে। কারণ, একই পরিমাণ পণ্য কিনতে হলে তাঁকে ২০ শতাংশ অতিরিক্ত টাকা জোগাড় করতে হবে। কোনো ক্রেতার সেই সক্ষমতা থাকলে কিনবেন, না থাকলে ব্যাংকঋণ নেবেন। যাঁরা ব্যাংকঋণ পাবেন না, তাঁরা হয়তো ক্রয়াদেশের সংখ্যা কমিয়ে দেবেন। সেটাই হলো আমাদের আশঙ্কার বিষয়। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, বাড়তি শুল্কের চাপ চূড়ান্তভাবে ভোক্তার কাঁধে গিয়ে পড়বে। এতে ভোক্তারা যদি পণ্য কেনা কমিয়ে দেন তাতেও আমাদের ক্রয়াদেশ কমবে। এসব বিষয় নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তবে আশা করছি, পরিস্থিতি সেদিকে যাবে না। পুরো বিষয়টি বুঝতে হলে আগামীতে অন্তত একটি সিজন দেখতে হবে।’
বাড়তি শুল্ক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও রপ্তানিকারকের মধ্যে কে বহন করবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মাহমুদ হাসান খান বলেন, ‘আমাদের তৈরি পোশাকের ৯৫ শতাংশ ব্যবসা হয় এফওবি (ফ্রেইট অন বোর্ড) পদ্ধতিতে। এতে ক্রেতা প্রতিষ্ঠান শুল্কের বিষয়টি বহন করে। পাল্টা শুল্কের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো ক্রেতা সুনির্দিষ্ট করে বলেননি যে তাঁরা এটি দেবেন না। সুতরাং আমরা ধরে নিচ্ছি, এটি ওনারাই দেবেন। আমরা এ বিষয়ে আগ বাড়িয়ে কিছু বলব না। তবে ওনারা আলোচনা করতে চাইলে আমরা রাজি।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র আম দ র প শ ল ক কম সরক র আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
শ্রম আইন সংশোধন দ্রুত শেষ করতে বলেছে মার্কিন প্রতিনিধিদল
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্য রপ্তানিতে পাল্টা শুল্ক কমাতে হলে বাণিজ্যঘাটতি কমানোর পাশাপাশি শ্রম আইন সংশোধনপ্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করতে বলেছে ঢাকা সফররত মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদল।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর নেতাদের সঙ্গে আজ সোমবার সকালে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠক করে এমনটাই বলেছে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদল। যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডেন লিঞ্চ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খানের নেতৃত্বে সংগঠনটির সহসভাপতি মো. রেজওয়ান সেলিম, পরিচালক ফয়সাল সামাদ, মোহাম্মদ আবদুস সালাম প্রমুখ মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। বৈঠকে আরও ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন। ব্রেন্ডেন লিঞ্চ দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন বাণিজ্যনীতি বাস্তবায়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মার্কিন প্রতিনিধিদল বিজিএমইএর নেতাদের স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত দিয়েছে যে পাল্টা শুল্ক নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে এখনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি। ফলে পাল্টা শুল্কের হার সেটি আরও কমানোর সুযোগ রয়েছে। তার জন্য বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার বাণিজ্যঘাটতি এবং শ্রম আইন সংশোধনপ্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাণিজ্যঘাটতি কমানোর বিষয়ে আমরা প্রতিনিধিদলকে জানিয়েছি, ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা আমদানি শুরু হয়েছে। এ ছাড়া গম, এলএনজিসহ অন্যান্য পণ্য আমদানির প্রক্রিয়াও চলছে। এসব পণ্য আমদানি হলে বাণিজ্যঘাটতি অনেকটাই কমে আসবে। এ ছাড়া শ্রম আইন সংশোধনের ১২৪টির মধ্যে ১২২টির বিষয়ে আমরা ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে একমত হয়েছি। বাকিগুলোর বিষয়েও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানো যাবে। তা ছাড়া আইএলওর কনভেনশন অনুসমর্থন নিয়েও আমাদের কোনো আপত্তি নেই।’
বিজিএমইএর সভাপতি আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা কোনো পণ্য উৎপাদনে ওই পণ্যের মোট মূল্যের কমপক্ষে ২০ শতাংশ যদি দেশটির উপকরণ বা কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়, তাহলে ওই ২০ শতাংশের ওপর পাল্টা শুল্ক প্রযোজ্য না হওয়ার একটি বিষয় আমরা জেনেছি। সেটি পরিষ্কার করার বিষয়ে আমরা মার্কিন প্রতিনিধিদলকে অনুরোধ করেছি। তাঁরা বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে তাঁরা কাজ করছেন। তাঁরা দ্রুতই জানাবেন।’
পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমে ২০ শতাংশ হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়নি। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে বাণিজ্য চুক্তির একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। বাণিজ্য চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে তিন দিনের সফরে ঢাকায় এসেছে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদলটি। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সঙ্গে গতকাল রোববার সচিবালয়ে বৈঠক করে প্রতিনিধিদল। এতে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান, বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান নাজনীন কাউসার চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সফররত মার্কিন দল প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গেও বৈঠক করবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।