ঢাকায় হওয়া সাইবার সুরক্ষা আইনের মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকে বগুড়া থেকে গ্রেপ্তার
Published: 21st, October 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বগুড়া জেলা কমিটির সাবেক সদস্যসচিব সাকিব খানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার রাত পৌনে চারটার দিকে বগুড়া শহরের নারুলী এলাকার বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাঁকে গ্রেপ্তার করে। রাতেই তাঁকে ঢাকায় নেওয়া হয়।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জেদান আল মুসা প্রথম আলোকে বলেন, শাহবাগ থানায় করা একটি মামলায় সাকিব খানকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তাঁর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কী অভিযোগ, সেটা শাহবাগ থানা-পুলিশ বলতে পারবে। র্যাব-১২ এর বগুড়ার স্পেশাল কোম্পানি কমান্ডার স্কোয়াড্রন লিডার ফিরোজ আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকা থেকে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল সাকিব খানকে গ্রেপ্তার করেছে। র্যাব অভিযান পরিচালনায় তাদের সহযোগিতা করেছে।’
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খালিদ মনসুর প্রথম আলোকে বলেন, পছন্দসই জায়গায় পুলিশে বদলি ও পদায়ন করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সাকিব খানের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো.
তবে সাকিব খানের বাবা ফরহাদ হোসেন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন, ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে সাকিব খানকে ফাঁসানো হয়েছে। প্রতারণার মাধ্যমে কারও কাছ থেকে অর্থ লেনদেনে তাঁর ছেলে জড়িত নয়। সারা দেশে সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে দায়ী করে সাকিব খান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একাধিক পোস্ট দিয়েছেন। এতে সংক্ষুব্ধ হয়ে পুলিশ মিথ্যা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করছে।
ফরহাদ হোসেন আরও বলেন, ‘৭ জুলাই থেকেই বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছে সাকিব। এই আন্দোলনে ছেলে নেতৃত্ব দেওয়ায় গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আমাকে তুলে নিয়ে ভয়ভীতিও দেখিয়েছিল। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণেই। সেই আন্দোলনের ফসল হিসেবে অন্তর্বর্তী সরকার এসেছে। অথচ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন যোদ্ধাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে এভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করা হচ্ছে। এ বিচার এখন কার কাছে চাইব? আদালতে জামিন আবেদন করেছি, জামিনে পাব বলে আশা করছি।’
সাকিব খানের ফেসবুকে গিয়ে দেখা যায়, ১৯ অক্টোবর তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সদস্য জুবায়েদ হত্যাকাণ্ডে সরকারের চরম ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন। তিনি লেখেন, ‘এই ঘটনাটি নিছক কোনো দুর্ঘটনা নয়—এটি একটি পরিকল্পিত ও সংগঠিত রাজনৈতিক খুনের আশঙ্কা স্পষ্ট। দেশের ভেতরে ভয়, আতঙ্ক ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির নীলনকশা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবেও এ ঘটনা ঘটানো হতে পারে। সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়াবহ গোয়েন্দা ব্যর্থতা এবং দায়িত্বহীনতা এর দায় এড়াতে পারে না। এটি শুধু একজন ছাত্রনেতার হত্যাকাণ্ড নয়—এটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তাব্যবস্থার প্রতি সরাসরি আঘাত। ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আমরা নীরব থাকব না। আমরা সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি—এই ঘটনায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করুন, নইলে জনগণ ও ছাত্রসমাজ নিজেরাই জবাব দিতে জানে।’
পছন্দসই জায়গায় পুলিশে বদলি ও পদায়ন করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে সাকিব খানের বিরুদ্ধে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরীর নির্দেশে শাহবাগ থানার একজন উপপরিদর্শক (এসআই) বাদী হয়ে সোমবার সাইবার সুরক্ষা আইনে একটি মামলা করেছেন।এর আগে ১৮ অক্টোবর ‘বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ড পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে’ শীর্ষক প্রধান উপদেষ্টার পেজ থেকে সরকারের একটি বিবৃতি নিজের ওয়ালে শেয়ার করেন। সেখানে লেখেন, ‘আপনার বিবৃতি আপনার পকেটে রাখেন। জনগণের সঙ্গে তামাশা বন্ধ করেন।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমালোচনা করার কারণেই সাকিব খানকে গ্রেপ্তার করা হলো কি না জানতে চাইলে এনসিপি বগুড়া জেলা কমিটির সমন্বয়কারী দলের সদস্য শওকত ইমরান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাঁকে গ্রেপ্তারের কারণ পুলিশের পক্ষ থেকে পরিষ্কার করা দরকার। ব্যক্তিগত কোনো অপরাধ করে থাকলে তার দায় দল নেবে না। আদর্শপরিপন্থী কাজের জন্য তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থাও গ্রহণ করবে। কিন্তু সরকারের সমালোচনা করার কারণে তাঁকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হলে এনসিপি অবশ্যই তাঁর পাশে থাকবে। আমরা খোঁজখবর রাখছি, বিনা অপরাধে কিংবা ফেসবুকে সরকারের সমালোচনা করে পোস্ট দেওয়ায় বাক্স্বাধীনতা হরণের জন্য পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে থাকলে দলের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আসাদুজ্জামান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরীর কাছে করা সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে সাইবার সুরক্ষা আইনের মামলায় সাকিব খানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঠানো হয়েছে। ফেসবুকে তিনি কী লিখেছেন সেটা পুলিশের জানা নেই। অভিযোগ ভিত্তিহীন হলে তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
এদিকে সাকিব খানকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ও সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশসহ সব কালো আইন বাতিলের দাবিতে আজ বিকেলে বগুড়া শহরের সাতমাথায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচি দিয়েছে ‘ভয়েস অব জুলাই, বগুড়া’। সংগঠনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর শ হব গ থ ন র প রথম আল ক সরক র র কর ছ ন ফ সব ক সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের সঙ্গে ১০ চুক্তি বাতিলের তালিকা সঠিক নয়: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ভারতের সঙ্গে ১০টি চুক্তি বাতিল করা হয়েছে বলে যে তালিকা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসেছে, সেটা সঠিক নয় বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেছেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, যে তালিকাটা এসেছে এটা কোনো একজন দিয়েছেন, সার্কুলেট (প্রচার) করেছেন। সেটা সম্ভবত কোনো একজন অ্যাডভাইজার রিটুইট করেছেন। তাঁর একটা কমেন্টসহ। কমেন্টটা নিয়ে আমি কোনো কমেন্ট করতে চাই না। হয়তো এটা উনি না করলেও পারতেন। যে তালিকাটা এসেছে ওখানে এটা সঠিক নয়। এর অধিকাংশ (তালিকার চুক্তি) এক্সিস্ট করে না।
ভারতের সঙ্গে একটি মাত্র চুক্তি অনেক আগেই বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘বাকিগুলোর কয়েকটি আছে যে বিভিন্ন পর্যায়ে আছে এবং ঠিক ওই নামে নেই। অন্য রকম ডেসক্রিপশনে (বিবরণ) আছে।’
গতকাল সোমবার স্থানীয় সরকার ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টে লেখা হয়, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেয়ার পরই চুক্তিগুলো নিয়ে আলোচনা শুরু হয় এবং যথাযথ পর্যালোচনার মাধ্যমে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’
স্থানীয় সরকার ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এই তালিকা পোস্ট করা হয়েছিল