রাজধানীতে নারী গণমাধ্যমকর্মীর আত্মহত্যার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ২৪৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। বিবৃতিদাতারা বলেছেন, এমন ঘটনা বাংলাদেশের নারী কর্মীদের কর্মপরিবেশের ভয়াবহ বাস্তবতাকে সামনে নিয়ে এসেছে।

আজ মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা এবং কবি ও সাংবাদিক গিরীশ গৈরিক গণমাধ্যমে বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন। এতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন মানবাধিকারকর্মী জেড আই খান পান্না, অর্থনীতিবিদ আব্দুল বায়েস, কবি নির্মলেন্দু গুণ, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, সামিনা লুৎফা, কামরুল হাসান মামুন, আইনুন নাহার, কবি গুলতেকিন খান, কাসফিয়া নাহরিন, মাহমুদুল সুমন প্রমুখ।

রাজধানীর সোবহানবাগের বাসা থেকে গত শনিবার সন্ধ্যায় ওই নারী গণমাধ্যমকর্মীর লাশ উদ্ধার হয়। অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা স্ট্রিমে গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে তিনি কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি ঢাকা স্ট্রিমের বাংলা কনটেন্ট এডিটর আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ করেন ওই সংবাদমাধ্যমের বেশ কয়েকজন কর্মী। তাঁদের মধ্যে ওই নারী কর্মীও ছিলেন।

এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘২৬ গণমাধ্যমকর্মীর লিখিত ও প্রমাণসাপেক্ষ অভিযোগের পরও ঢাকা স্ট্রিমের প্রধান সম্পাদক গোলাম ইফতেখার মাহমুদ অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেননি। নিয়ম অনুযায়ী, এ ধরনের ঘটনায় অভিযুক্তকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা। প্রতিষ্ঠানটি তা না করে তাঁকে দায়িত্বে বহাল রাখা হয়। আমরা মনে করি, এ ঘটনায় সংবাদমাধ্যমটির সম্পাদক-প্রকাশক এবং মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান তাঁদের নৈতিক ও প্রশাসনিক দায় এড়াতে পারেন না।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘তাঁরা আলতাফ শাহনেওয়াজের বিরুদ্ধে ৮টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ উত্থাপন করেন, যা স্পষ্টতই গুরুতর অন্যায় এবং নারীর প্রতি চরম অবমাননাকর আচরণ। অভিযোগকারীদের মধ্যে ৯ জন নারী সাংবাদিক ছিলেন, যাঁরা প্রত্যেকেই অভিযুক্ত ব্যক্তির আচরণের কারণে হয়রানির শিকার হয়েছেন।’

তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্ত আলতাফ শাহনেওয়াজসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আইনের মুখোমুখি করার দাবি জানানো হয়েছে বিবৃতিতে। বলা হয়েছে, ঢাকা স্ট্রিম কর্তৃপক্ষের ভূমিকা ও অবহেলা তদন্তের আওতায় আনতে হবে এবং কর্মক্ষেত্রে নারীদের নিরাপত্তা, সম্মান ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নীতিমালা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণম ধ যমকর ম র তদন ত ঘটন য়

এছাড়াও পড়ুন:

স্ত্রী সন্তান রেখে স্কুল শিক্ষিকাকে নিয়ে পালালেন শ্রমিকদল নেতা 

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক এস.এম. রাজু হোসেনকে ঘিরে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। 

স্ত্রী ও দুই সন্তানকে ফেলে এই রাজনীতিবিদ সম্প্রতি এক বিবাহিতা স্কুলশিক্ষিকার সঙ্গে পরকিয়ার সম্পর্কের সূত্র ধরে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে দুই পরিবারের তিনটি শিশুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

স্থানীয়রা জানান, রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন রাজু হোসেন। একজন দায়িত্বশীল দলের নেতা হয়ে তার এমন আচরণে স্থানীয়ভাবে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। 

২০০৬ সালে তেওতা বাছেট এলাকার আয়নাল হোসেনের ছেলে মো. শামিম হোসেনের সঙ্গে কাটাখালি গ্রামের লিয়াকত আলীর মেয়ে সানজিদা আক্তারের বিয়ে হয়। তাদের সংসারে ২০১২ সালে এক পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। একই বছর সানজিদা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষিকা হিসেবে যোগ দেন। শামিম বেসরকারি একটি ওষুধ কোম্পানিতে চাকরির কারণে বাইরে থাকতেন। এই সুযোগে শিবালয় উপজেলা শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক রাজু হোসেনের সঙ্গে সানজিদার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়।

প্রায় তিন বছর আগে তাদের পরকীয়া সম্পর্ক ফাঁস হয় বলে অভিযোগ করেন শামিম। তিনি বণেন, “স্ত্রীর আচরণে সন্দেহ হলে আমি নজরদারি শুরু করি। এরপর রাজুর সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্কের প্রমাণ হাতে পাই। ঝামেলা তৈরি হলেও তারা গোপনে সম্পর্ক চালিয়ে যায়।”

সম্প্রতি সানজিদা কলাগারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে উথলি এলাকায় রাজুর সহায়তায় একটি বাসা ভাড়া নেন। সেখানে স্বামীর বাড়ি থেকে গহনা, নগদ টাকা ও আসবাবপত্র নিয়ে যান। স্থানীয়রা এক পর্যায়ে তাদের হাতেনাতে ধরে ফেলে এবং রাজুকে গণপিটুনি দেয়।

শামিম অভিযোগ করেন, “সানজিদা বাড়ি ফিরে আসার কথা বলে আমার কাছ থেকে আরো সাড়ে তিন লাখ টাকা নেয়। পরে জুন মাসে আমাকে তালাক পাঠায়। এখন আমার সন্তানকে নিয়ে সে রাজুর সঙ্গে পালিয়েছে।”

এদিকে রাজুর স্ত্রী মোসা. আইরিন আক্তারও শিবালয় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তিনি জানান, প্রায় ১৭ বছর আগে রাজু হোসেনের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।

অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, “রাজুকে আমার পিতার ব্যবসার দায়িত্ব দিলে সে প্রায় ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে। পরে পরকীয়ায় জড়িয়ে আমাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন শুরু করে। সম্প্রতি দৌলতপুরের সানজিদা নামে এক নারীকে ভাগিয়ে নিয়ে বিয়ে করেছে।”

তিনি আরো বলেন, “রাজু আমার দেওয়া স্বর্ণালংকার, জমি, গরু, মোটরসাইকেল ও ফেরিঘাটের শেয়ার দখলে রেখেছে। এখন সে আমাদের কোনো খোঁজ নেয় না, ভরণপোষণও দেয় না।”

এ বিষয়ে জানতে শ্রমিক দল নেতা এস.এম. রাজু হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

বিষয়টি নিয়ে মানিকগঞ্জ জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি আব্দুর কাদের বলেন, “ঘটনাটি আমি এখনো জানি না। খোঁজ নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

ঢাকা/চন্দন/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নারী সংবাদকর্মীর লাশ উদ্ধার: অপমৃত্যু মামলা, আরেকটি মামলা করবে পরিবার
  • রাজধানীতে নারী গণমাধ্যমকর্মীর লাশ উদ্ধার
  • শাপলার জায়গায় দৃঢ় রয়েছি, অবশ্যই অর্জন করব: হাসনাত আবদুল্লাহ
  • স্ত্রী সন্তান রেখে স্কুল শিক্ষিকাকে নিয়ে পালালেন শ্রমিকদল নেতা