পেডোফাইলরা কি চারপাশে কিলবিল করছে
Published: 4th, December 2025 GMT
সম্প্রতি উদ্বিগ্ন এক মা তাঁর পরিচিত অভিভাবকদের কাছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিও পোস্ট করেছেন। সেটি ভাইরাল হয়ে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ে সারা দুনিয়ায়।
দেশ–বিদেশের অনেকে চমকে উঠেছেন ভিডিওটি দেখে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, একজন শিক্ষার্থীর জন্মদিনে কেক কাটা হয়েছে। সেই কেক শিক্ষার্থীর মুখে আগ্রহ নিয়ে লেপে দিচ্ছেন শিক্ষক।
শিক্ষক এখানে থেমে গেলে বিষয়টি ‘ফান’ হিসেবে গণ্য করে সেদিনের মতো ‘ফুলস্টপ’দেওয়া যেত; কিন্তু থলের মধ্যে বিড়াল থাকলে ‘ফুলস্টপ’ সহজ নয়।
এই শিক্ষকের অতি আগ্রহের বিড়াল টুপ করে থলে থেকে বেরিয়ে পড়ল তখন, যখন তিনি কিশোর ছাত্রটির কেক মাখনো গাল নিজের জিহ্বা দিয়ে পরিষ্কার করা শুরু করেন।
এ ঘটনায় উদ্বিগ্ন শিশুটির মা জানান ওই শিক্ষক নাকি ছেলে শিক্ষার্থীদের জন্মদিনে এ রকম আচরণ করেন হামেশাই।
একজন অভিভাবক শিক্ষকটির এই অগ্রহণযোগ্য আচরণকে পেডোফাইল–সুলভ আচরণ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
প্রশ্ন উঠতে পারে পেডোফাইল কী? পেডোফাইল বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়, যিনি প্রাক্–কৈশোর শিশুদের (সাধারণত ১৩ বছরের কম) প্রতি যৌন আকর্ষণ, তাড়না বা লালসা অনুভব করেন।
তবে এখানে যে এরা থেমে থাকবেন, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, এ রকম অগ্রহণযোগ্য যৌন আচরণ ১৩ –১৪ বছর পার হয়ে যাওয়া শিশু=কিশোরদের প্রতিও থাকতে পারে। যৌন অপরাধবিজ্ঞান সেই প্রবণতাকে ‘হেবেফিলিয়া’ বলে উল্লেখ করেছে।
হেবেফিলিয়া এমন একধরনের যৌন প্রবণতা, যেখানে একজন প্রাপ্তবয়স্কের যৌন আকর্ষণ থাকে শুধু ১১ থেকে ১৪ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীদের প্রতি। এটি পেডোফিলিয়া থেকে আলাদা; কারণ পেডোফিলিয়ায় আকর্ষণ থাকে কৈশোরে পৌঁছানোর আগের শিশুদের প্রতি, অর্থাৎ যারা এখনো বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছেনি। তা ছাড়া ‘ইফেবোফিলিয়া’ বলেও আরেকটি গ্রুপের কথা গবেষকেরা উল্লেখ করেছেন।
মেয়েশিশুরা যেমন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কাছের লোকজন যেমন আত্মীয়, শিক্ষক, পারিবারিক বন্ধু, প্রতিবেশীর দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়; ছেলেদের ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটে।পেডোফিলিয়া, হেবেফিলিয়া বা ইফেবোফিলিয়ার চুলচেরা বিশ্লেষণ এই লেখার মোক্ষ নয়।
তবে এটুকু বলা যায়, তাঁরা সবাই অপ্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি যৌন তাড়নায় তাড়িত থাকেন এবং সুযোগ পেলেই নানাভাবে সেটি মিটিয়ে নেন। গালে কেক লাগিয়ে সেটি জিহ্বা দিয়ে পরিষ্কার করা সেই যৌন তাড়নারই বহিঃপ্রকাশ।
আরও পড়ুনভাইরাল ভিডিও: শিশু শোষণের নতুন মাধ্যম নিয়ে ভাবতে হবে১৯ এপ্রিল ২০২৫মাত্র হাঁটতে শেখা ভাগনে-ভাগনি বা ভাতিজা-ভাতিজির পেছন থেকে প্যান্ট খুলে দিয়ে অথবা শিশুর নরম গাল বা শরীরে দাড়ি ঘষে পুরুষ আত্মীয় বা পরিচিতজনেরা যে আনন্দ পান, সেটিও মনের মধ্যে সুপ্ত বিকৃত যৌনাচারের প্রকাশ। সেটি নির্দোষ কোনো বিনোদন নয়।
উদ্বিগ্ন মায়ের পোস্টে অনেকেই আওয়াজ তুলেছেন ‘শিক্ষাঙ্গনে যৌন নিপীড়ন নির্মূল করুন।’
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, বড়দের পেডোফিলিয়ার শিকার হলে শিশুর মন, শরীর, আচরণ, আত্মবিশ্বাস ও ভবিষ্যৎ সম্পর্ক সবকিছুই গভীরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পেডোফিলিয়ার শিকার হওয়া শিশু ভয়, উদ্বেগ ও দুঃস্বপ্ন, আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, অপরাধবোধ ও নিজেকে দোষী ভাবা, বিষণ্নতা ও পিটিএসডি বা আঘাত– পরবর্তী মানসিক আভিঘাতের ঝুঁকিতে পড়ে।
সময়মতো পরিবারের সহযোগিতা, চিকিৎসা বা কাউন্সেলিং না পেলে শিশুকে এর ভার সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হয়।
পাঠকদের মনে থাকার কথা, বছর তিনেক আগে (১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২) এক বয়স্ক মানুষের যৌন লালসার শিকার হয়ে সাত বছরের এক শিশু এতটাই বিপর্যস্ত হয়েছিল যে সে বাড়ির ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। আত্মহত্যা করার চেষ্টার পরেই জানা যায় ঘটনাটা।
আরও পড়ুনসবার সন্তান হয়ে ওঠা শিশু মুনতাহাকে কেন বাঁচানো যায় না১১ নভেম্বর ২০২৪ওই ঘটনায় শিশুটি প্রথমে ভয়ে সংকুচিত হলেও সে ব্যথায় অতিষ্ঠ হয়ে পরের দিন সন্ধ্যায় ফুফুকে ঘটনাটি বলে, ‘দোকানদার আঙ্কেল জোর করে ব্যথা দিয়েছে।’ এটা কোনো অভিযোগ ছিল না। স্রেফ আস্থায় থাকা একজনকে শিশুটি জানাতে চেয়েছিল গা শিউরে ওঠা অভিজ্ঞতার কথা। হয়তো তার কষ্টের কথা বলে সে হালকা হতে চেয়েছিল।
বড়রা জানেন না শিশুদের সঙ্গে এমন পরিস্থিতিতে কেমন ব্যবহার করতে হয়; এমন হলে শিশুকে তার শারীরিক আর মানসিক সুস্থতার জন্য কী পদক্ষেপ নিতে হয়।
শিশুকে দোষারোপ করে এবং জনে জনে বারবার একই প্রশ্ন করে বড়রা তাকে সেই গর্তে ফেলে দেন, যে গর্ত থেকে সে বেরিয়ে আসতে চায়।
যে ঘটনার পরিকল্পনা ফাঁদ পাতা ও বাস্তবায়ন—সবকিছুতে একজন বয়স্ক মানুষের হাত; তখন শিশুকে দোষারোপ করে তার মনের মধ্যে অপরাধবোধ চাগিয়ে তোলার কোনো যুক্তি নেই। এতে ক্ষতিগ্রস্ত শিশুটির ভোগান্তি বাড়ে।
ওই শিশুর ক্ষেত্রেও তা–ই ঘটেছিল। বড়রা কেউ বিশ্বাস করেননি। উল্টো শিশুটিকেই তাঁরা বকাবকি করেন। নিরুপায় শিশু তাই বোধ হয় মৃত্যুকেই তার শেষ আশ্রয়ের জায়গা মনে করেছিল।
আরও পড়ুনআপনাকে দেখেই কিন্তু শিখছে আপনার শিশু০৪ মে ২০২৪মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, নির্যাতনের ঘটনা যদি ঘটে, তাহলে কখনো শিশুকে দায়ী করা যাবে না। তাকে মানসিকভাবে সমর্থন করতে হবে। তাঁর সামনে এ ঘটনা নিয়ে বারবার আলোচনা বা কান্নাকাটি করা যাবে না। এতে তার মানসিক সংকট চরমে পৌঁছে যায়।
এই সাত বছরের শিশুটির ক্ষেত্রেও তা–ই ঘটেছিল। শেষমেশ সে ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ভাগ্য ভালো, শিশুটি বেঁচে গিয়েছিল। পরে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছিল যৌন নির্যাতককে।
ছেলে শিশুরা যে সহজেই যৌন নির্যাতনের শিকার হতে পারে, সেটি অনেকের ধারণাতেই নেই। এই সুযোগটাই নেয় ছদ্মবেশী যৌন নির্যাতক বা পেডোফাইলরা।
সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে ২০২১ সালে আইন সালিশ কেন্দ্রের এক হিসাবে দেখা যায়, সে বছর (২০২১ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত) মোট ৭৫ জন ছেলেশিশুকে ধর্ষণসহ যৌন হয়রানি করা হয়েছিল।
মানবাধিকার সংগঠনগুলো মনে করে, সংখ্যাটি এর চেয়ে অনেক বেশি হবে। বছর পাঁচেক আগে একটি সংগঠনের সাতক্ষীরা আর ঢাকার ৯টি স্কুলে চালানো জরিপ থেকে দেখা যায়, প্রতি ১০ জনের একজন ছেলে যৌন নির্যাতন বা অশোভন আচরণের শিকার হয়।
শুধু মা–বাবা কেন, দেশের মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোও ছেলেশিশুদের যৌন নির্যাতন নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন বলে মনে হয় না। উদ্বিগ্ন হলে প্রকাশিত ভিডিও নিয়ে তাঁরা কথা বলতেন অথবা নিরপেক্ষ ও পরিচ্ছন্ন তদন্তের ব্যবস্থার দাবি নিয়ে এগিয়ে আসতেন।এই জরিপে বিভিন্ন বয়সের ও ক্লাসের মোট ১ হাজার ২০০ ছাত্র অংশ নিয়েছিল। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চাইল্ড অ্যাডোলেসেন্ট অ্যান্ড ফ্যামিলি সাইকিয়াট্রির সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতি ছয়জন ছেলেশিশুর মধ্যে কমপক্ষে একজন যৌন হয়রানির শিকার। মেয়েশিশুদের মধ্যে এই হার প্রতি চারজনে একজন।
মেয়েশিশুরা যেমন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কাছের লোকজন যেমন আত্মীয়, শিক্ষক, পারিবারিক বন্ধু, প্রতিবেশীর দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়; ছেলেদের ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটে।
চট্টগ্রামে সেই শিশুর কথা আমরা পত্রিকায় জেনেছিলাম, যাকে ধর্ষণ করেছিল, সে শিশুটির নিকটাত্মীয়। পুলিশ ঘটনার প্রাথমিক তদন্তে সত্যতা পাওয়ার পর অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠায়।
অনেকে মনে করেন, দরিদ্র পরিবারের ছেলেশিশুরা একটু বেশি ঝুঁকিতে থাকে। অভিভাবকদের নজরদারির বাইরে থাকলেই শিশুরা যৌন নির্যাতনের ঝুঁকির মধ্যে থাকে। সেখানে ধনী–গরিবের বিষয়টি গৌণ।
শিশু নির্যাতনবিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সেমিনারে একজন ভারতীয় বক্তার জীবনের অভিজ্ঞতা বর্ণনায় জানতে পারি, মা–বাবার অর্থের অভাব না থাকায় দেশের অত্যন্ত সম্মানিত ও কাঙ্ক্ষিত বোর্ডিং স্কুলে পড়ার সুযোগ হয়েছিল তাঁর।
স্কুলের ছুটিতে বাড়ি এলে ব্যস্ত মা–বাবা অধিকাংশ সময় তাকে গৃহভৃত্যের কাছে রেখে বাইরে যেতেন। গৃহভৃত্য সেই সুযোগে নিয়মিত এই অবোধ কিশোরকে ধর্ষণ করেছেন।
বোর্ডিং স্কুল ছুটির সময় আর সব ছেলে যখন আনন্দে মেতে উঠত, কিশোরটি মনেপ্রাণে চাইত ছুটি যেন না হয়, তাকে যেন বাড়িতে যেতে না হয়।
শিশুর সম্ভাব্য যৌন নির্যাতন ও যৌন হেনস্তার ক্ষেত্রে একজন মা তাঁর মেয়ে সন্তানকে নিয়ে যত উদ্বিগ্ন–উৎকণ্ঠায় থাকেন, ছেলেকে নিয়ে ততটাই নিরুদ্বেগ নিশ্চিন্তে থাকেন। একজন মা জানান, ‘ছেলেকে নিয়ে আমার অন্য ভয়; তাকে কেউ তুলে নিয়ে যাবে না তো! তাকে কেউ ফুসলিয়ে নিয়ে বা জোর করে যৌন নির্যাতন করবে, এটা কখনো হয় নাকি? আমরা শুনি, মেয়েরাই কেবল এ ধরনের ঘটনার শিকার হয়।’
শুধু মা–বাবা কেন, দেশের মানবাধিকার ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোও ছেলেশিশুদের যৌন নির্যাতন নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন বলে মনে হয় না। উদ্বিগ্ন হলে প্রকাশিত ভিডিও নিয়ে তাঁরা কথা বলতেন অথবা নিরপেক্ষ ও পরিচ্ছন্ন তদন্তের ব্যবস্থার দাবি নিয়ে এগিয়ে আসতেন।
হতে পারে নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামজাদা শিক্ষক বলেই সবাই চুপ আছেন। কেউ কেউ ফেসবুকে লিখেছেন এসব ‘এআই’–এর কীর্তি। সেটি হলেও তদন্তের কোনো বিকল্প নেই।
গওহার নঈম ওয়ারা লেখক ও গবেষক। ই–মেইল: [email protected]
*মতামত লেখকের নিজস্ব
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র শ ক র হয় উদ ব গ ন কর ছ ন প রক শ বয়স ক তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
অবকাঠামো বৈষম্য ও প্রবেশাধিকার সমতা
‘‘আমার একজোড়া পায়ের প্রয়োজন ছিল
যা যে কোনো পথেই হাঁটতে পারবে’’
হ্যাঁ, একজন পদহীন মানুষের জন্য যে কোনো পথেই হাঁটা সহজ কথা নয়। অন্তত যেখানে প্রবেশাধিকারের সমতা নেই। প্রতিবন্ধী মানুষকে এ দেশে প্রতিদিনই প্রমাণ করতে হয়, তিনিও এই দেশের নাগরিক এবং সেই নাগরিকের মৌলিক অধিকার অবাধ চলাচল, এই সুবিধা তারও প্রাপ্য। যদিও প্রতিনিয়ত খর্ব হয় তার এই মৌলিক অধিকার। তবে প্রবেশাধিকার নিয়ে বলার আগে একটি বিষয় বলে নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ‘প্রতিবন্ধী’ শব্দের ব্যবহার আছে। তবে তা আগের মতো সরল নয়। এই শব্দের পেছনের দর্শন বদলে গেছে। এখন বিশ্বে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিকে ‘প্রতিবন্ধী’ বলে না। বরং সমাজ ও পরিবেশ যে বাধা সৃষ্টি করে, সেই বাধাকেই প্রধানত প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখা হয়।
জাতিসংঘ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এখন সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছে Persons with Disabilities (PWD) অর্থাৎ ‘প্রতিবন্ধিতা সম্পন্ন ব্যক্তি’ বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তি। বাংলাদেশেও আইনগতভাবে যা স্বীকৃত। ২০১৩ সালের ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইনে’ ব্যবহার করা হয়েছে Persons with Disabilities কেন অক্ষম বা পঙ্গু বলা হয় না? আন্তর্জাতিকভাবে এসব শব্দকে অবমাননাকর, অসম্মানজনক, পুরোনো মানসিকতার প্রতিফলন হিসেবে ধরা হয়।
আজ আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য Fostering disability inclusive societies for advancing social progress. অর্থাৎ প্রতিবন্ধিতা অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গড়ি, সামাজিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করি। বিশ্বকে এই আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই আহ্বান কি বাংলাদেশের দৈনন্দিন জীবনের কোথাও প্রতিধ্বনিত হয়? নাকি শহরের যানজট, সরকারি দপ্তরের সিঁড়ি, হাসপাতালের দোতলা, ফুটপাতের ভাঙাচোরা ইট, আর গণপরিবহনের উঁচু সিঁড়িগুলো সব মিলিয়ে একটিই কথা জানান দেয়— এই পথ তোমার নয়।
প্রতিবছর এই দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব মানে শুধু জন্মের অধিকার নয়, বরং সসম্মানে বেঁচে থাকা, চলাফেরা করা, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে অংশ নেওয়া, এবং সমাজের মূলধারায় নিজের অবস্থান তৈরি করার স্বাধীনতা। কিন্তু বাংলাদেশে দশ থেকে পনেরো শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে প্রতিবন্ধিতার সঙ্গে জীবনযাপন করলেও, তাদের অধিকার ও প্রয়োজন সম্পর্কে আমাদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সচেতনতা এখনো ভয়াবহভাবে অপর্যাপ্ত।
প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে বৈষম্য আমাদের চেতনায়, আচরণে এবং সর্বোপরি আমাদের রাষ্ট্রের অবকাঠামোতেই দৃশ্যমান। আধুনিক রাষ্ট্রের অন্যতম সূচক হলো—কতটা অন্তর্ভুক্তিমূলক তার রাস্তাঘাট, ভবন, পরিবহন ও সেবা ব্যবস্থা। সেই পরীক্ষায় বাংলাদেশ এখনো খুব নিচে অবস্থান করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনোভাবে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। সেই হিসেবে বিশ্বের একশ কোটিরও অধিক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন জনগোষ্ঠীর প্রায় ৯ কোটি ৩০ লাখ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু, যা মোট জনগোষ্ঠীর ৯ শতাংশ।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পুরুষের সংখ্যা ৯ লাখ ৮১ হাজার ৭৪১ জন এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন নারীর সংখ্যা ৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৩৯ জন। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশে দুই কোটিরও বেশি মানুষ বিভিন্ন ধরনের বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষ। এতো বড় একটি জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে প্রবেশাধিকার থাকবে না; এটা স্বাভাবিক ঘটনা কি?
একটি দেশের সভ্যতার পরিচয় ঘটে তার রাস্তাঘাট ও প্রতিষ্ঠানের প্রবেশপথে। বাংলাদেশ সেখানে চরমভাবে বিবর্ণ। রাজধানী ঢাকায় একবার হাঁটলেই বোঝা যায়, এই শহর এখনো ভিন্ন সক্ষমতার মানুষের কথা ভেবে গড়ে ওঠেনি। যে ফুটপাত মানুষকে বাঁচাতে বানানো হয়, সেই ফুটপাতই আমাদের দেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে প্রথমেই মৃত্যুভয়ের সামনে দাঁড় করায়। কারও পায়ের নিচে গর্ত, কারও সামনে সিঁড়ি, কোথাও দোকানপাট, কোথাও গাড়ি চাপা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশা—সব মিলিয়ে ফুটপাত এখানে মানুষের জন্য নয়; বরং শক্তিধর, সক্ষম ও দাপুটেদের জন্য।
একজন হুইলচেয়ার ব্যবহারকারীকে আপনি যদি ফুটপাতে তুলতে চান, প্রথমেই তাকে তুলতে হবে কার্বে একটি উঁচু, অনমনীয় বাধায়। প্রতিটি কার্ব, প্রতিটি সিঁড়ি, প্রতিটি অসমান ঢালু জায়গা যেন তাকে বলে, তুমি এই শহরের কেউ নও। এ শুধু ঢাকার নয়; চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী—সব শহরের একই চিত্র। আমাদের পৌরসভা বা সিটি করপোরেশনের পরিকল্পনায় এখনো প্রবেশাধিকার মানে সিঁড়ির পাশে ছোট্ট একটি র্যাম্প আঁকা। কিন্তু সেই র্যাম্প এত খাড়া হয় যে তাতে হুইলচেয়ার ওঠানো মানে যন্ত্রণা নয়—বিপদ। সেই র্যাম্পে সুস্থ মানুষের বাইকখানা তোলাই মুশকিল হয়ে পড়ে।
হাসপাতাল এমন একটি জায়গা যেখানে কারো কাছে দয়া নয়, সেবা পাওয়াই মৌলিক অধিকার। কিন্তু বাংলাদেশে অসুস্থ মানুষ হুইলচেয়ার বা ক্রাচে বা ব্রেইলে চলা মানুষটি হাসপাতালে পৌঁছে প্রথমেই দেখেন—প্রবেশদ্বার সিঁড়ি বাঁধানো। চিকিৎসার চেয়েও বড় শঙ্কা তখন হয়, আমি ভেতরে ঢুকব কীভাবে? এখানে আমার প্রবেশের স্বাধীনতা আছে তো?
একটি অগম্য ভবন কেবল প্রতিবন্ধী মানুষের বিরুদ্ধে নয়, এটি মৌলিক মানবাধিকারের বিরুদ্ধে। একটি জটিল রাস্তা কেবল তার জীবনকে কঠিন করে না, এটি সরাসরি গণতন্ত্রকে দুর্বল করে। কারণ গণতন্ত্র তখনই শক্তিশালী হয় যখন রাষ্ট্রের প্রতিটি ভবনে, প্রতিটি সেবায় সব নাগরিক সমানভাবে অংশ নিতে পারে। একজন মানুষ ভোটকেন্দ্রে পৌঁছাতে না পারলে তার ভোটাধিকার ক্ষুণ্ন হয়। একজন মামলার বাদী আদালতে ঢুকতে না পারলে বিচার তার নাগালের বাইরে চলে যায়। একজন উদ্যোক্তা সরকারি দপ্তরে যেতে না পারলে তার ব্যবসা আটকে যায়। এগুলো শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, রাষ্ট্রেরই ক্ষতি।
মেট্রোরেলে একটি ঘটনা বলি। সেখানে লিফট আছে। লাইনে দাঁড়িয়ে আছে একজন হুইল চেয়ার আরোহী। সুস্থ সক্ষম ব্যক্তিরা সকলেই উঠে গেলেন। এবং বলত বলতে গেলেন একটা হুইল চেয়ার অন্তত তিনজনের জায়গা আটকাবে। তাদের তাড়া আছে। পরের বার সে যেন ওঠে। পরের বারও হুড়ুমুড় করে উঠে গেল পদযুক্ত মানুষগণ। যেনো হুইল চেয়ারের দায়ে তার কোনো ফেরার তাড়া নেই। সময়মতো পৌঁছেও তাকে দুবার ট্রেন মিস করতে হলো।
২০১৩ সালে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন পাস করেছে। সেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে, অ্যাক্সেসিবিলিটি বা প্রবেশাধিকার একটি মৌলিক অধিকার। সরকারি-বেসরকারি সব ভবনে র্যাম্প, লিফট, প্রতিবন্ধীবান্ধব শৌচাগারের প্রবেশসুবিধা, ব্রেইল সাইন, অডিও-ভিজ্যুয়াল নির্দেশনা—সব থাকতে হবে। কিন্তু আইন যেন কেবল কাগজে-কলমে, নথিতেই জন্ম নেয়ার জন্য, বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই। নতুন নির্মিত ভবনেও র্যাম্পের নাম করে সামান্য ঢালু সিঁড়ি বানানো হয়, যা হুইল চেয়ার নয়, চড়াইপথে অভ্যস্ত মানুষের চলাচলের উপযোগীও নয় যেন। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মনে করে, অ্যাক্সেসিবিলিটি মানে বাড়তি খরচ। অথচ আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিটি অ্যাক্সেসিবল ভবন দীর্ঘমেয়াদে বেশি লাভজনক। কারণ তা সর্বজনীনভাবে ব্যবহৃত হয়।
সরকারি তদারকি বিভাগগুলোও প্রায়ই ভবন পরিদর্শন করে; কিন্তু প্রবেশাধিকারের দিকটি অনেক সময়ই গৌণ হিসেবে ধরা হয়। বলা হয়, পরে ঠিক করা যাবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, পরে কখন? কারা করবে? মজার বিষয় হলো, একজন মানুষ প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মান না, আবার জন্মানও। জীবনের যে কোনো সময় দুর্ঘটনা, রোগ, বয়স, যুদ্ধ, জলবায়ু দুর্যোগ—সব কিছু মিলিয়ে যে কেউ যে কোনো দিন প্রতিবন্ধিতা অর্জন করতে পারেন। তাহলে প্রবেশাধিকার কেবল ‘অন্যের’ বিষয় নয়, এটা আমাদের সবার ভবিষ্যতের নিরাপত্তা।
আমরা হয়তো আজ সক্ষম; কিন্তু বয়স বাড়লে সবাই কখনো না কখনো শারীরিক সীমাবদ্ধতার মুখোমুখি হবো। জন্মগত বা দুর্ঘটনা, অসুস্থতা—জীবনের যে কোনো পর্যায়েই কেউ একজন ভিন্ন সক্ষমতার হয়ে যেতেই পারেন। অথচ অ্যাক্সেসিবিলিটি সবার জন্য: শিশুর জন্য সুবিধাজনক পথ, গর্ভবতী নারীর নিরাপদ চলাচল, বয়স্ক মানুষের আরাম, রোগীর সুরক্ষা, সবার স্বাভাবিক গতিশীলতা।
অ্যাক্সেসিবিলিটি মানে ভবন, সেবা ও প্রযুক্তিকে এমনভাবে নির্মাণ করা যাতে সেটি সকলের জন্য ব্যবহারযোগ্য হয়। এটি উন্নয়ন ব্যয় নয়, এটি উন্নয়নের ন্যূনতম শর্ত। বিশ্বের যেসব দেশ সত্যিকার অর্থে সমতা চায়, তারা জানে, প্রবেশাধিকার শুধু প্রতিবন্ধী মানুষের বিষয় নয়; এটি সকল মানুষের নিরাপত্তা, সম্মান ও উন্নয়নের অংশ। র্যাম্প শুধু হুইল চেয়ারের জন্য নয়, শিশু কোলে নেওয়া মা, বয়স্ক মানুষ, আহত ব্যক্তি—সবাই সেই র্যাম্প ব্যবহার করে। লিফট শুধু ভিন্ন সক্ষমতার মানুষের জন্য নয়, এটি সভ্যতারও চিহ্ন।
বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ থেকে উন্নত দেশে রূপান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু কোনো দেশ উন্নত হয় তখনই, যখন তার রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা সবচেয়ে দুর্বল মানুষটিও নিজেকে নিরাপদ ও স্বাগত মনে করে। কখনো কখনো জনগণের মনোভাব সরকারি ব্যর্থতার চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর। বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী মানুষকে এখনো করুণার চোখে দেখা হয়। তাকে সক্ষম, প্রতিভাবান, কর্মক্ষম নাগরিক হিসেবে না দেখে, বেশিরভাগ সময় তাকে ‘সহানুভূতির বা করুণার পাত্র’ বানিয়ে ফেলা হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি ভেঙ্গে দেয় তার মনোবল। তার আত্মবিশ্বাসটুকু নষ্ট করে দেয়। তাকে হীনমন্য করে তোলে যেন তারই কোনো সহকর্মী বা প্রতিবেশী।
দেশের বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা জানেন না কীভাবে ভিন্ন সক্ষমতার ছাত্রকে ক্লাসে অন্তর্ভুক্ত করবেন। অফিসে অনেকে মনে করেন, হুইল চেয়ার ব্যবহারকারী মানে কম সক্ষম কর্মী। গণপরিবহনে উঠতে গেলে তাকে প্রায়ই বলা হয়, এটা আপনার জন্য না। সিট নাই, পরের বাসে আসেন।
এই মনোভাবই মূলত সাম্যের পথে সবচেয়ে বড় বাধা। কারণ অবকাঠামো গড়া সহজ; কিন্তু মন গড়া কঠিন, দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা আরো কঠিন। আর রাষ্ট্র যদি সচেতন দৃষ্টিভঙ্গি গড়তে না পারে, তাহলে র্যাম্প, লিফট, সাইন—সবই কাগজের উন্নয়ন হয়ে থাকে, জীবনের নয়।
বাংলাদেশে প্রায় দেড় কোটির মতো মানুষ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধিতা নিয়ে বাস করছেন—দৃষ্টিহীনতা, শ্রবণপ্রতিবন্ধকতা, শারীরিক চলাচলগত প্রতিবন্ধকতা, বুদ্ধিবৃত্তিক চ্যালেঞ্জ, স্নায়বিক পার্থক্যসহ নানা পরিস্থিতি। অর্থাৎ আমরা এই দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠীকে পথ চলার অধিকার দিচ্ছি না। রাষ্ট্রের চোখে তারা নাগরিক, কিন্তু নাগরিকত্বের দরজাটা তাদের জন্য খোলা নয়। বাংলাদেশ চাইলে এখনই পরিবর্তন শুরু করতে পারে। বিশ্বজুড়ে যে নীতিগুলো কার্যকর সেগুলো আমরা খুব সহজেই অনুসরণ করতে পারি:
এ জন্য নতুন ভবন অনুমোদন পাওয়ার আগে অ্যাক্সেসিবিলিটি পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রবেশাধিকার নিরীক্ষা করতে হবে। প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রবেশাধিকার মূল্যায়ন টিম গঠন করা যেতে পারে। লো-ফ্লোর বাস, র্যাম্পযুক্ত ট্রেন কোচ, স্টেশন প্ল্যাটফর্মের সমতল নকশা—এসব জরুরি।
সরকারি ওয়েবসাইট, ব্যাংকিং অ্যাপ, শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম—সবই স্ক্রিন রিডার, অডিও-ভিজ্যুয়াল গাইড ইত্যাদিতে উপযোগী করতে হবে। শিশুরা যদি ছোটবেলা থেকেই ভিন্ন সক্ষমতাকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে শেখে সমাজ বদলাবে দ্রুত।
উন্নয়নের দিকে ধাবিত আমাদের বাংলাদেশ। কিন্তু এই পরিবর্তন তখনই অর্থপূর্ণ হবে, যখন রাস্তায় নামা একটি হুইল চেয়ার, হাঁটার লাঠি, সাদা ছড়ি বা ব্রেইল বই সমাজকে সংকুচিত করবে না, বরং সমৃদ্ধ করবে। প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনে কোনো সমস্যা নেই; সমস্যাটি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও অবকাঠামোয়। সমাজের এই খাড়া করে রাখা মনোদেয়াল ভাঙ্গতে হবে।
জাতিসংঘের প্রতিপাদ্য তাই শুধু স্লোগান নয়, একটি সতর্ক সংকেত। বাংলাদেশ যদি সত্যিকার অর্থেই সামাজিক অগ্রগতি চায় তাহলে প্রথম কাজটি হলো প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি অফিস, প্রতিটি হাসপাতাল, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সবার জন্য প্রবেশাধিকারের সমতা তৈরি করা। কারণ সমতা মানে দয়া নয়। সমতা মানে সকলের জন্য সমান দরজা। শুধু র্যাম্প নয়, দৃষ্টিভঙ্গিও বদলাতে হবে।
শুধু আইন নয়, প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে। শুধু স্লোগান নয়, প্রতিটি নাগরিকের জীবনে তা দৃশ্যমান করতে হবে। তবেই আমরা বলতে পারব, বাংলাদেশ সত্যিই disability inclusive society গড়ার পথে হাঁটছে। তবেই অগ্রগতি হবে সবার। তবেই রাষ্ট্র হবে মানুষের জন্য, সকল মানুষের জন্য।
লেখক: কবি ও প্রাবন্ধিক
ঢাকা/তারা//