সমুদ্রপথে মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এবার প্রশান্ত মহাসাগরে মাদক বহনকারী আরেকটি নৌযানে মার্কিন বাহিনী হামলা চালিয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেছেন, বুধবারের এই হামলায় তিনজন নিহত হয়েছেন এবং মার্কিন বাহিনীর কোনো ক্ষতি হয়নি। প্রশান্ত মহাসাগরে আরেকটি নৌকায় মার্কিন বিমান হামলায় দুজন নিহত হওয়ার একদিন পর এটি ঘটল।

আরো পড়ুন:

রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নিষেধাজ্ঞা

হামাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গাজায় সেনা পাঠাতে প্রস্তুত মধ্যপ্রাচ্য, দাবি ট্রাম্পের

হেগসেথের দাবি, আন্তর্জাতিক জলসীমায় পরিচিত মাদক পাচারের পথে দুটি নৌকায়ই মাদক বহন করছিল।

গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে সন্দেহভাজন মাদক বহনকারী নৌকার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এটি অষ্টম ও নবম হামলা, প্রশান্ত মহাসাগরের জলসীমায় এটিই প্রথম। এর আগের সাতটি হামলা ক্যারিবীয় সাগরে করেছে। 

বুধবার (২২ অক্টোবর) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে হেগসেথ বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশে যুদ্ধ মন্ত্রণালয় একটি চিহ্ণিত সন্ত্রাসী সংগঠন পরিচালিত একটি নৌযানে আরো একটি মারাত্মক হামলা চালিয়েছে। সন্ত্রাসীরা পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে মাদক পাচারের সাথে জড়িত ছিল।” 

পোস্টে তিনি আরো বলেন, “এই হামলাগুলো দিনের পর দিন অব্যাহত থাকবে। এরা কেবল মাদক ব্যবসায়ী নয়, এরা মাদক সন্ত্রাসী, যারা আমাদের শহরগুলোতে মৃত্যু ও ধ্বংস ডেকে আনছে।”

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার পোস্টে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। ভিডিওটিতে মার্কিন বোমার আঘাতে একটি নৌকায় আগুন ধরে যেতে দেখা গেছে। 

এদিকে মাদক পাচারের অভিযোগ তুলে ক্যারিবীয় সাগরে ভেনেজুয়েলার নৌযানে যুক্তরাষ্ট্রের অব্যাহত হামলা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। ক্যারিবীয় সাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেনেজুয়েলার নৌযানগুলোর ওপর মার্কিন হামলাকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ এবং ‘উত্তেজনা বৃদ্ধির বিপজ্জনক উসকানি’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে জাতিসংঘের নিযুক্ত স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের একটি দল।

জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা ট্রাম্প প্রশাসনের উদ্বেগের পেছনে যুক্তি থাকলেও এসব হামলার আইনি ও নৈতিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাদের মতে, ‘যদিও অভিযোগগুলো সত্য হয়, তবুও আন্তর্জাতিক জলসীমায় কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই প্রাণঘাতী শক্তির প্রয়োগ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল এবং একে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হিসেবে গণ্য করা যায়।’

জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদ কর্তৃক নিযুক্ত এই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এসব হামলা ভেনেজুয়েলার সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অপর দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতির পরিপন্থি। পাশাপাশি, এটি যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতারও লঙ্ঘন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, আন্তর্জাতিক জলসীমায় মাদকপাচারকারী নৌযানগুলোতে বোমা হামলা চালিয়ে যাওয়ার আইনি অধিকার তার রয়েছে। তিনি স্থল অভিযান শুরু করারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। 

ট্রাম্প বুধবার হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের বলেন,“ আন্তর্জাতিক জলসীমায় মাদক সন্ত্রাসীদের ওপর হামলার করার অধিকার আমাদের রয়েছে।” 

ট্রাম্প জানান, তিনি স্থল অভিযানের সিদ্ধান্ত নিলে মার্কিন কংগ্রেসে থেকে অনুমোদন নিতে পারেন। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরো বলেন, তার প্রশাসন স্থলে মাদকবিরোধী অভিযান সম্প্রসারণের জন্য ‘সম্পূর্ণ প্রস্তুত’।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র র সন ত র স

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্ঘটনার কবলে ভারতের প্রেসিডেন্ট মুর্মুর হেলিকপ্টার

ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে বহনকারী হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে; তবে রাষ্ট্রপতি মুর্মু অক্ষত আছেন। আজ বুধবার দেশটির সর্বদক্ষিণের রাজ্য কেরালার থিরুভানান্থাপুরম জেলায় থিরুভানান্থাপুরম জেলায় ঘটেছে এ ঘটনা।

স্থানীয় সময় সাড়ে ১১টার দিকে কেরালার থিরুভানান্থাপুরম জেলার প্রমোদোম স্টেডিয়ামের নতুন তৈরি হেলিপ্যাডে অবতরণ করে দ্রৌপদী মুর্মুকে বহনকারী ভারতীয় বিমানবাহিনীর এমআই ১৭ চপার হেলিকপ্টারটি।

আরো পড়ুন:

ভূতের রাজ্যে রাশমিকা: বক্স অফিসে শুরুটা কেমন হলো?

খাবার জোগাতেও আমার পরিবারকে লড়াই করতে হয়েছে: সামান্থা

কিন্তু হেলিকপ্টারটি অবতরণ করা মাত্র হেলিপ্যাডের একাংশের কংক্রিট ভেঙে যায়। ফলে চাকা বসে যাওয়ায় খানিক্ষণের জন্য বেসামাল হয়ে যায় হেলিকপ্টারটি।

পরিস্থিতি সামাল দিতে তৎক্ষণাৎ কাজে নামে পুলিশ ও দমকল। দীর্ঘ চেষ্টায় হাত দিয়ে ঠেলে কপ্টারটি ক্ষতিগ্রস্ত জায়গা থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেনা সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনার জেরে সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হেলিকপ্টারটি।

দ্রৌপদী মুর্মুর অবশ্য কোনো ক্ষতি হয়নি। তিনি নিরাপদেই হেলিকপ্টার থেকে অবতরণ করেছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবর অনুসারে, রাষ্ট্রপতির হেলিকপ্টারটির পম্বা জেলার নিলাক্কালে অবতরণ করার কথা ছিল । কিন্তু সেখানে আবহাওয়া খারাপ থাকায়, শেষ মুহূর্তে তা বদলে প্রমাদমের রাজীব গান্ধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামকে বেছে নেওয়া হয় বিকল্প হিসেবে। ফলে, মঙ্গলবার গভীর রাতেই তড়িঘড়ি করে হেলিপ্যাড তৈরি করা হয়।

জেলার এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কংক্রিটটি পুরোপুরি জমে ওঠেনি। ফলে চাকার নিচে মাটি বসে গিয়ে ছোট গর্ত তৈরি হয়।

স্থানীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সম্প্রচারে দেখা যায়, হেলিকপ্টার অবতরণের পর তার চাকা আংশিকভাবে কংক্রিটে বসে গেছে এবং একাধিক পুলিশ, দমকল ও নিরাপত্তাকর্মীরা ঠেলে সেই চাকা গর্ত থেকে বের করে আনছেন।
এই দৃশ্য দেখে বিস্মিত অনেকেই। প্রশ্ন উঠেছে, রাষ্ট্রপতির মতো উচ্চ নিরাপত্তার ব্যক্তির সফরে এতটা ত্রুটি কীভাবে হল?

সৌভাগ্যবশত, এই ঘটনায় কোনো ব্যক্তি আহত হননি এবং রাষ্ট্রপতির সফরসূচিতেও কোনো বড় প্রভাব পড়েনি। হেলিকপ্টার নামার পরে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সড়কপথে পাম্বার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন। রাষ্ট্রপতি মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কেরলে এসে পৌঁছান। আজ সকালে তিনি পৌঁছান পাথানামথিট্টা জেলায়, যেখান থেকে তিনি যাবেন শবরিমালা মন্দির দর্শনে।

যদিও আবহাওয়ার কারণেই এই হেলিপ্যাডে অবতরণ বলে দাবি করেছে প্রশাসন, তবে নিরাপত্তা ও প্রস্তুতির প্রশ্নে গাফিলতি ছিল কিনা, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। শেষ মুহূর্তে রাতারাতি তৈরি করা একটি কংক্রিট হেলিপ্যাড রাষ্ট্রপতির মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বের হেলিকপ্টার কি অবতরণের জন্য আদৌ উপযুক্ত ছিল? এই ঘটনায় কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সংস্থা ও রাষ্ট্রপতির দপ্তর থেকে রিপোর্ট চাওয়া হতে পারে বলেও সূত্রের খবর।

রাষ্ট্রপতির হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার খবরে উদ্বিগ্ন হয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, জাতীয় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা টেলিফোনে যোগাযোগ করেন এবং খোঁজখবর নেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুর্ঘটনার কবলে ভারতের প্রেসিডেন্ট মুর্মুর হেলিকপ্টার