ভরণপোষণ চেয়ে ছেলের বিরুদ্ধে বাবার মামলা
Published: 23rd, October 2025 GMT
বহু কষ্টে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন বাবা। দেশে ফিরে শ্বশুরবাড়িতে উঠেছেন সেই ছেলে। ৭০ বছর বয়সী বাবা মাটির তৈজসপত্র বিক্রি করে সংসার চালাতেন। কিন্তু বয়সের কারণে এখন চোখে কম দেখেন। বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছেন। এখন চিকিৎসা ও ভরণপোষণ নিয়ে বিপদে পড়েছেন তিনি।
মা–বাবার ভরণপোষণ তো দূরের কথা, ছেলে এখন মা–বাবাকে ভিটেছাড়া করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ। বাধ্য হয়ে আদালতে নিজের সন্তানের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন বাবা। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। ২০ অক্টোবর রাজশাহীর পবা থানায় মামলাটি রেকর্ড হয়েছে।
মামলার বাদী আমির হোসেন সরকার (৭০) পবা উপজেলার নওহাটা কলেজ মোড় এলাকার বাসিন্দা। তাঁর ছেলের নাম বোরহান উদ্দিন। পবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমির হোসেন সরকার নামের এক বৃদ্ধ ব্যক্তি তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে ভরণপোষণ আইনে মামলা করেছেন। আমরা মামলাটি তদন্ত করছি। পবা থানায় এ ধরনের মামলা এবারই প্রথম দায়ের হলো।’
ভুক্তভোগী আমির হোসেন সরকার জানান, বার্ধক্যজনিত নানা অসুস্থতাসহ দীর্ঘদিন ধরে অভাব-অনটনের মধ্যে জীবনযাপন করছেন। নিজের শেষসম্বল ৬ শতাংশ বাড়ির ভিটা তিনি বড় ছেলে বোরহান উদ্দিনের নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়েছিলেন এই শর্তে যে ছেলে তাঁর মা–বাবার ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবেন। কিন্তু ছেলে বিদেশ থেকে ফিরে সেই দায়িত্ব পালন না করে উল্টো তাঁদের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
আমির হোসেন বলেন, ‘আমার সহায়সম্বল বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছিলাম। সে সৌদি আরবে ২৫ বছর থেকে অনেক টাকাপয়সা রোজগার করেছে। দেশে ফিরে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে নতুন করে বাড়ি করার পরিকল্পনা করেছে। আমি বাধা দিলে সে আমাকে ও আমার স্ত্রীকে মারধর করে, গলা চেপে ধরে হত্যার চেষ্টা করে। পরে প্রতিবেশীরা আমাদের উদ্ধার করে।’ তিনি বলেন, ‘ছেলে ও ছেলের বউ এখন আমাদের সঙ্গে কথা বলে না। তারা আলাদা বাড়িতে থাকে। আমাদের খোঁজও নেয় না। ভরণপোষণ চাওয়ায় উল্টো হুমকি দেয়।’
মামলার আরজিতে বলা হয়, স্থানীয়ভাবে বারবার মীমাংসার চেষ্টা করেও সমাধান না হওয়ায় ৬ অক্টোবর বাদী পবা থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। কিন্তু এ ধরনের মামলা আদালতের বিষয়। পরে ১৫ অক্টোবর তিনি আদালতে মামলার আবেদন করেন। এতে ছেলে বোরহান উদ্দিন ও তাঁর স্ত্রীকে আসামি করা হয়।
আদালতে মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, আসামি বোরহান উদ্দিন সৌদি আরবে যাওয়ার সময়ে তাঁর নামে জমি লিখিয়ে নেন এবং বাবার নামে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি করে দেন। কিন্তু দেশে ফিরে তিনি সেই জমির দখল নিতে চান এবং মা-বাবাকে ঘর থেকে বের করে দিতে একাধিকবার শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। পুত্রবধূও এসব ঘটনার প্ররোচক হিসেবে কাজ করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত বোরহান উদ্দিন বলেন, তিনি ভরণপোষণ করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন। এখন দেড় বছর ধরে বেকার। তাঁর দুটি বাচ্চা আছে। তাদের নিয়ে নিরুপায় হয়ে শ্বশুরবাড়িতে আছেন। মা-বাবাকে ভিটা থেকে উচ্ছেদের অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ওই জায়গায় তিনি একটা বাড়ি করার পরিকল্পনা করেছেন। কিন্তু এখন তারা (মা–বাবা) জায়গা ছাড়ছেন না। বোরহান বলেন, তাঁর আরও দুই ভাই আছেন। তিনি একা ভরণপোষণের জন্য দায়ী হবেন কেন।
এ বিষয়ে রাজশাহী মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (শাহমখদুম) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ২০১৩ সালে সরকার ‘পিতা-মাতার ভরণপোষণ আইন’ প্রণয়ন করে। এ আইনে প্রত্যেক সন্তানকে তাঁর মা-বাবার ভরণপোষণের দায়িত্ব নিতে বাধ্য করা হয়েছে। কোনো সন্তান এই দায়িত্ব পালন না করলে এক লাখ টাকা জরিমানা বা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ডের বিধান আছে। তিনি বলেন, ‘এই মামলা সমাজে একটি বার্তা দেয়, বৃদ্ধ মা-বাবার প্রতি সন্তানের অবহেলা শুধু নৈতিক নয়, আইনগতভাবেও দণ্ডনীয় অপরাধ। অনেক বৃদ্ধ মা-বাবা পারিবারিক চাপে পড়ে নীরবে কষ্ট সহ্য করেন, মামলা করতে সাহস পান না। আমির হোসেন সরকারের এই মামলা হয়তো অন্যদেরও সচেতন করবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম র হ স ন সরক র ন বল ন সন ত ন কর ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
কারওয়ানবাজারে মুঠোফোন ব্যবসায়ীদের সড়ক অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ
ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) সংস্কার, একচেটিয়া সিন্ডিকেট প্রথা বিলোপ এবং মুঠোফোনের উন্মুক্ত আমদানির সুযোগ সৃষ্টির দাবিতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সার্ক ফোয়ারা মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন মুঠোফোন ব্যবসায়ীরা। এতে ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী মানুষেরা চরম ভোগান্তিতে পরেছেন।
আজ বুধবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে ব্যবসায়ীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁরা সেখানে যানবাহন ভাঙচুর করছেন বলেও জানা গেছে।
অবরোধের কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের তেজগাঁও অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) মোহাম্মদ আক্কাছ আলী। তিনি বলেন, মুঠোফোন ব্যবসায়ীরা সার্ক ফোয়ারা মোড়ে অবরোধ করার কারণে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।