আগামী সংসদ নির্বাচনে জাপা ও আ.লীগের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা যাবে না: আখতার হোসেন
Published: 24th, October 2025 GMT
আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কোনো সুযোগ রাখা যাবে না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন।
জাতীয় পার্টি সম্পর্কে এনসিপির এই নেতা বলেছেন, ৫ আগস্টের পর উচিত ছিল জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের (কার্যক্রম নিষিদ্ধ) দোসরদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা দেশবিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছে।
বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ সব রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, যদি কোনোভাবে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টি বাংলাদেশে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পায়, বাংলাদেশকে তারা আর বাংলাদেশ রাখবে না, ভারতের করদ রাজ্যে পরিণত করবে।
আজ শুক্রবার রাতে রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে এনসিপির এক দলীয় সভায় এ কথা বলেন এনসিপির নেতা আখতার হোসেন। এনসিপির ঢাকা মহানগর (উত্তর ও দক্ষিণ) এবং ঢাকা জেলার এ সমন্বয় সভায় তিনি সমাপনী বক্তব্য দেন।
সভায় আখতার হোসেন বলেন, ‘কোনো পরিকল্পিত নির্বাচন, ডিজিএফআইয়ের পূর্বপরিকল্পিত নির্বাচন, বিদেশের চাপিয়ে দেওয়া কোনো ফলাফল, সাজানো কোনো নির্বাচন বাংলাদেশে আমরা দেখতে চাই না। আমরা বাংলাদেশে আর বিশ্বশক্তির রাজনীতি দেখতে চাই না, মারামারি-দলবাজির রাজনীতি দেখতে চাই না।’
এনসিপির চাপেই ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা সংস্কারের বিষয়গুলো আড়াল হতে পারেনি দাবি করে এই নেতা বলেন, ‘এনসিপির দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই পরবর্তী ধাপে কমিশন আবার আলোচনায় বসে। সেই আলোচনায় শুরুতে আইনি ভিত্তির দেওয়ার ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর অনেকের আপত্তির জায়গা থাকলেও শেষে এসে আমরা একমত হয়েছি যে একটা আদেশ জারি করা হবে, গণভোট হবে, সামনের সংসদকে দ্বৈত ক্ষমতা দেওয়ার মধ্য দিয়ে সংবিধানের মৌলিক সংস্কারগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’
চক্রান্ত হলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের অনেক দিন পার হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, কীভাবে আইন ভিত্তি দেওয়া হবে, সে বিষয়টা সরকার খোলাসা করতে পারেনি। এনসিপি যদি সেদিনই (১৭ অক্টোবর) সেই সনদে স্বাক্ষর করত, সেদিনই জুলাই সনদের অপমৃত্যু সংঘটিত হয়ে যেত। জুলাই সনদ যতটুকু জীবিত রয়েছে, তা এনসিপির দাবির কারণেই। এনসিপি এই সনদ বাস্তবায়নের পথ সুনির্দিষ্ট করতে চাওয়ার কারণেই জুলাই সনদ এখনো জনমানুষের কাছে উজ্জ্বল অবস্থায় রয়েছে।
অতিদ্রুত জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এবং বাস্তবায়নের পথ পরিষ্কার করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান আখতার। তিনি বলেন, ‘টেবিলের আলোচনাতেই এ সমস্যার সমাধান করতে হবে। যদি জুলাই সনদকে আবারও নব্বইয়ের মতো কাগুজে দলিলে পরিণত করার কোনো চক্রান্ত হয়, বাংলাদেশের জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আমাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেব। আর কোনোভাবেই কোনো ফ্যাসিবাদী, স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামোকে বাংলাদেশের সংবিধান ও রাষ্ট্রকাঠামোতে স্থান দেওয়া হবে না।’
এ সময় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) আসা সংশোধনী নিয়েও কথা বলেন এনসিপির সদস্যসচিব। তিনি বলেন, ‘সংশোধনীতে অনেকগুলো ভালো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটা যাতে টেকসই না হয়, সে ব্যাপারে একটা দল পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। যদি একটা দলের সিদ্ধান্তের কারণে আরও সংশোধনী বাতিল করা হয়, তাহলে আমরা বুঝে নেব, সরকার লন্ডনে যে বৈঠক করেছিল, সেই বৈঠকের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাকে কারও কাছে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রত্যেক ঘরে এনসিপির বার্তা পৌঁছাতে হবে
বিভিন্ন জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, মানুষ এনসিপির ওপর আস্থা রেখেছে উল্লেখ করে সভায় দলের সদস্যসচিব আখতার হোসেন নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, এটা সম্ভব হয়েছে এনসিপির নীতিনির্ধারণী রাজনীতির কারণে। দেশ গঠনের যে পরিকল্পনাগুলো আছে, সেগুলো ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে।
ঢাকা জেলা ও মহানগরকে এনসিপির অভেদ্য দুর্গ হিসেবে গড়ে তুলতে দলীয় শৃঙ্খলাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা এবং ভদ্রোচিত উপায়ে রাজনীতি করতেও নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান আখতার।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আখত র হ স ন সদস যসচ ব জ ল ই সনদ এনস প র র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
এনভিডিয়ার প্রধান হুয়াং প্রতিদিন ভোর ৪টায় ঘুম থেকে ওঠেন, কেন সব সময় উদ্বেগে থাকেন
মার্কিন প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান এনভিডিয়াকে বিশ্বের প্রথম ৫ লাখ কোটি ডলার মূল্যের কোম্পানিতে পরিণত করেছেন সিইও জেনসেন হুয়াং। এরপরও তাঁর শান্তি নেই। নিজেই স্বীকার করেছেন, তিনি অবিরাম উদ্বেগের মধ্যে থাকেন। ছুটির দিনসহ প্রতিদিন কাজ করেন।
হুয়াংয়ের এই ভয়ের যৌক্তিক কারণও থাকতে পারে। শুধু এই সপ্তাহেই এনভিডিয়ার বাজারমূল্য ২৫ হাজার কোটি ডলার কমে গেছে। খবর বেরিয়েছে, গুগল থেকে শত শত কোটি ডলারের প্রতিযোগী চিপ কেনার জন্য আলোচনা করছে মেটা। এই খবর এআই হার্ডওয়্যারে এনভিডিয়ার কয়েক দশকের আধিপত্যের জন্য হুমকি তৈরি করেছে।
জো রোগান এক্সপেরিয়েন্স পডকাস্টে হুয়াং বলেন, ‘ব্যবসা বন্ধে হয়ে যাওয়া থেকে আর মাত্র ৩০ দিন দূরে আছি আমরা। এ কথাটি আমি ৩৩ বছর ধরে বলে আসছি।’
হুয়াং বলেন, ‘এই অনুভূতি বদলায় না। দুর্বলতা, অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি—এগুলো কখনো আপনাকে ছেড়ে যায় না।’
হুয়াংয়ের এই উদ্বেগ ভিত্তিহীন নয়। এটি বেঁচে থাকার লড়াইয়ের ক্ষতচিহ্ন। ১৯৯০–এর দশকের মাঝামাঝি সেগার গেমিং কনসোলের জন্য প্রযুক্তি তৈরির সময় এনভিডিয়ার গ্রাফিকস চিপে প্রথম মারাত্মক ত্রুটি ধরা পড়ে। তখন অর্থ ফুরিয়ে আসছিল।
সেই সময় হুয়াং জাপানে গিয়ে এক কঠিন আলোচনায় বসেন। তিনি সেগার সিইওকে জানান, তাঁদের পণ্য কাজ করবে না এবং চুক্তি বাতিল করতে হবে। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচতে শেষ ৫০ লাখ ডলার অর্থ দেওয়ার অনুরোধ জানান।
আশ্চর্যজনকভাবে সেগা হুয়াংয়ের এই আবেদনকে বিনিয়োগ হিসেবে গ্রহণ করে। এটাই এনভিডিয়াকে এমন একটি লাইফলাইন দেয়, যা শেষ পর্যন্ত লক্ষ–কোটি ডলারের এক সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে।
সেই পতনের কাছাকাছি যাওয়ার অভিজ্ঞতাটিই এখন হুয়াংয়ের নিরলস কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণা। তিনি প্রতিদিন ভোর চারটায় ঘুম থেকে ওঠেন। উঠেই তিনি ‘কয়েক হাজার ই–মেইল পড়তে’ বসে যান। থ্যাঙ্কসগিভিং বা বড়দিনসহ ব্যতিক্রমী কোনো উৎসব–অনুষ্ঠান ছাড়াই সপ্তাহের সাত দিনই কাজ করেন।
হুয়াং স্বীকার করেন, তিনি ‘সব সময় উদ্বেগের মধ্যে থাকেন’। তার প্রেরণা কী? এনভিডিয়াপ্রধান বলেন, ‘সফল হতে চাওয়ার চেয়ে ব্যর্থ হতে না চাওয়ার তাড়না আমার মধ্যে বেশি কাজ করে। লোভের চেয়ে ব্যর্থতা আমাকে বেশি চালিত করে।’
হুয়াংয়ের এই উদ্বেগ হয়তো একধরনের প্রজ্ঞা। ‘দ্য ইনফরমেশন’ যখন খবর প্রকাশ করেছিল, এ বছর এআইয়ে ৭ হাজার ২০০ কোটি ডলার পর্যন্ত খরচের পরিকল্পনা করছে মেটা। এ জন্য তারা গুগলের টেনসর প্রসেসিং ইউনিট (টিপিইউ) কিনতে বড় ধরনের আলোচনা করছে। এনভিডিয়া তখন প্রকাশ্যে এর বিরোধিতা করে বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়।
‘দ্য ইনফরমেশন’–এর ওই প্রতিবেদনের কারণে এনভিডিয়ার শেয়ার ৬ শতাংশ কমে যায়। এতে প্রতিষ্ঠানটির ২৫ হাজার কোটি ডলার মূল্য মুছে যায়। অন্যদিকে অ্যালফাবেটের (গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান) শেয়ার ৪ শতাংশ বেড়ে যায়।
সাধারণত প্রতিদ্বন্দ্বীদের বিষয়ে নীরব থাকা এনভিডিয়া ‘এক্স’–এ (সাবেক টুইটার) ঘোষণা দেয়, এনভিডিয়া চিপশিল্পে এক প্রজন্ম এগিয়ে আছে। এটিই একমাত্র প্ল্যাটফর্ম, যা প্রতিটি এআই মডেল চালায়।
তবে গুগলের সর্বশেষ জেমিনি–৩ এআই মডেলে এনভিডিয়ার চিপের পরিবর্তে সম্পূর্ণরূপে টিপিইউর ওপর তৈরি হয়েছে এবং এতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এই শিল্পের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে এটি উন্নত বলে প্রশংসা কুড়িয়েছে।
সেলসফোর্সের সিইও মার্ক বেনিওফ প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেন, তিনি তিন বছর পর চ্যাটজিপিটি ব্যবহার বন্ধ করে দিচ্ছেন। তিনি জেমিনি–৩-কে আরও ভালো পণ্য বলে উল্লেখ করেন।
এআই অ্যাক্সিলারেটরের বাজারে এনভিডিয়ার ৯০ শতাংশ অংশীদারত্বের জন্য এই হুমকি অস্তিত্বের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি গুগল এআই প্রসেসরের জন্য ব্যয় হওয়া হাজার হাজার কোটি ডলারের মধ্যে সামান্য অংশও দখল করতে পারে—বিশেষ করে মেটার মতো গ্রাহকদের কাছ থেকে, তবে তা এনভিডিয়ার আধিপত্যে প্রথম গুরুতর ফাটল ধরাবে।
হুয়াংয়ের এই কাজের নেশা তাঁর পরিবারকেও প্রভাবিত করেছে। তাঁর ত্রিশের কোঠায় থাকা দুই সন্তান ম্যাডিসন ও স্পেন্সার এখন এনভিডিয়াতে কাজ করেন।