সেই সোহেল রানা এখন আলবেনিয়ার কারাগারে
Published: 24th, October 2025 GMT
আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক ও ঢাকার বনানী থানার সাবেক পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা ৯ মাস ধরে আলবেনিয়ার কারাগারে আছেন। তিনি দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার চেষ্টা করছেন।
দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ আলবেনিয়ায় সোহেল রানা দাবি করেছেন, তিনি বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বজন। রাজনৈতিক কারণে তিনি বাংলাদেশ ছেড়েছেন। দেশে ফেরত পাঠানো হলে তাঁর মৃত্যুদণ্ড হতে পারে।
পুলিশ সদর দপ্তরের মুখপাত্র ও সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) এ এইচ এম শাহাদাত হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোহেল রানা এখন আলবেনিয়ার কারাগারে আছেন। তাঁকে দেশে ফেরত পাঠাতে আলবেনিয়ার পুলিশ সদর দপ্তরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোকে (এনসিবি) একাধিক চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা আমাদের সেসব চিঠির কোনো জবাব দেয়নি।’
ঢাকায় সোহেল রানার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার অভিযোগে ৯টি মামলা।
সোহেল রানা আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের পৃষ্ঠপোষক।
ই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে গ্রাহকের ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ।
সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক চিঠি।
আলবেনিয়ায় গ্রেপ্তারই-অরেঞ্জের মাধ্যমে প্রতারণা করে গ্রাহকের বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সোহেল রানার বিরুদ্ধে মামলা হলে ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর তিনি দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে যান। ভারত থেকে নেপালে যাওয়ার চেষ্টাকালে পরদিন তিনি পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে গ্রেপ্তার হন।
ভারতে অনুপ্রবেশের মামলায় সোহেল রানার দুই বছরের কারাদণ্ড ও ৪০ হাজার রুপি জরিমানা করা হয়। তিনি পশ্চিমবঙ্গের কারাগারে ছিলেন। ‘শারীরিক অসুস্থতা’ দেখিয়ে গত বছরের জানুয়ারিতে তিনি কলকাতা হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে লাপাত্তা হন।
পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, সোহেল রানাকে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করা হয়েছিল। বেশ কয়েকবার চিঠি চালাচালিও করা হয়। কিন্তু কাজ হয়নি।
সোহেল রানা ভারত থেকে পালিয়ে পর্তুগাল হয়ে আলবেনিয়ায় গিয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের পর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়। আলবেনিয়ার পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবির কাছ থেকে এ তথ্য জানতে পারে বাংলাদেশ পুলিশ।
আশ্রয় পাওয়ার চেষ্টাসোহেল রানার বাড়ি গোপালগঞ্জে। তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকায় মানি লন্ডারিং, অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার ৯টি মামলা আছে। এ তথ্য জানিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেন, ২০২২ সাল থেকে সোহেল রানার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি আছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) করা মানি লন্ডারিং আইনের একটি মামলায় এই রেড নোটিশ জারি হয়। এর ভিত্তিতেই ইন্টারপোলের সহযোগিতায় আলবেনিয়ার এনসিবি সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার করে।
মাস ছয়েক আগে আলবেনিয়ার এমসিএন টিভি সোহেল রানার গ্রেপ্তারের ঘটনাটি নিয়ে একটি টক শো ও প্রতিবেদন দেখায়। বলা হয়, পর্তুগাল থেকে আলবেনিয়ার রিনাস বিমানবন্দরে আসার পর গত ১ ফেব্রুয়ারি সোহেল রানা গ্রেপ্তার হন। বাংলাদেশে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণা ও হত্যার অভিযোগে মামলা আছে। সোহেল রানা দাবি করেছেন, তিনি বাংলাদেশ পুলিশে উচ্চ পদে কাজ করেছেন। তিনি শেখ হাসিনার পরিবার থেকে এসেছেন।
এমসিএন টিভির টক শোতে সোহেল রানার আইনজীবী এডন মেক্সি বলেন, ইউরোপীয় মানবাধিকার কনভেনশন অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হতে পারে—এমন দেশে কোনো বিদেশিকে ফেরত পাঠাতে পারে না আলবেনিয়া।
আলবেনিয়ায় গ্রেপ্তার হয়ে দেশটির কারাগারে সোহেল রানার থাকাসহ এই টক শোর বিষয়টি নিয়ে গত অক্টোবরে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান।
পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, আলবেনীয় আইন অনুযায়ী, বাইরের কোনো নাগরিক যদি তাঁর নিজ দেশে হত্যা মামলার আসামি হন, তাহলে তিনি আলবেনিয়ার আদালতে মামলা করে আশ্রয় চাইতে পারেন। সোহেল রানা এই সুযোগ কাজে লাগাতে আলবেনিয়ার আদালতে মামলা করেছেন। মামলায় তিনি দাবি করেছেন, গত বছরের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে ঢাকার গুলশান থানায় হত্যা মামলা হয়। তিনি দেশে ফিরলে এই মামলায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। কথিত মামলার অভিযোগের ভুয়া হলফনামা তাঁর পক্ষে আলবেনিয়ার আদালতে জমা দেওয়া হয়। এরপর আলবেনিয়ার পক্ষ থেকে সোহেল রানার কথিত মামলার বিষয়ে তথ্য চেয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবিতে চিঠি পাঠানো হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর আলবেনিয়ার এনসিবিকে চিঠি দিয়ে বলেছে, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনায় সোহেল রানার বিরুদ্ধে ঢাকার গুলশানে কোনো হত্যা মামলা হয়নি। তিনি ২০২১ সালের ২ সেপ্টেম্বর দেশ থেকে পালান। পরদিন ভারতে গ্রেপ্তার হন।
সোহেল রানাকে দেশে ফেরত পাঠাতে আলবেনিয়ার এনসিবিকে একাধিক চিঠি দিয়ে কোনো জবাব না পাওয়া বিষয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দেশটিতে কোনো বিদেশি গ্রেপ্তার হলে সে দেশের আইনে তাঁর অপরাধ অনুযায়ী বিচার হয়। সোহেল রানার বিচারের রায় এখন পর্যন্ত হয়নি। সে কারণে হয়তো তারা এখনো কিছু জানায়নি।
দেশে ফেরাতে আবেদন২০২০ সালের দিকে দেশে ই-কমার্স খাতের দ্রুত বিস্তার ঘটে। পুলিশ কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেন, সে সময়ই বনানী থানার তৎকালীন পরিদর্শক সোহেল রানা তাঁর স্ত্রী নাজনীন নাহার, বোন সোনিয়া মেহজাবিন, ভগ্নিপতি মাশুকুর রহমানকে নিয়ে গড়ে তোলেন ই-অরেঞ্জ নামের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম। নানা প্রলোভন দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি অল্প সময়ে গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রতিষ্ঠানটির সব কার্যক্রমের লক্ষ্য ছিল প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকের বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। এক বছরের মাথায় গ্রাহকেরা বুঝতে পারেন, তাঁরা ই-অরেঞ্জের প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
২০২১ সালের ১৮ আগস্ট ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে ১ হাজার ১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গুলশান থানায় মামলা হয়। মামলার পর সোহেল রানার নাম আলোচনায় আসে। পরে তাঁর নামেও মামলা হয়। মামলার পর তিনি ভারতে পালিয়ে যান। তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করার কথা জানায় পুলিশ।
অন্যদিকে মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন সোহেল রানার বোন সোনিয়া ও তাঁর স্বামী মাশুকুর। তবে সম্প্রতি তাঁরা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন বলে জানা গেছে। আর সোহেল রানার স্ত্রী নাজনীন পলাতক।
মানি লন্ডারিং আইনের মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডি। তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, সোহেল রানার বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২৫০ কোটি টাকার অপরাধলব্ধ আয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে।
সিআইডির মুখপাত্র ও বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন, মানি লন্ডারিং আইনের মামলাটি তদন্তাধীন। তদন্তের স্বার্থে সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনা দরকার। এ জন্য সিআইডির পক্ষ থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে আবেদন জানানো হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে আবার ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারির জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র হন প রথম আল ক ই অর ঞ জ র আলব ন য় র আলব ন য় য় কর মকর ত গ র হক র র এনস ব কর ছ ন এক ধ ক স আইড তদন ত বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
কারওয়ানবাজারে মুঠোফোন ব্যবসায়ীদের সড়ক অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ
ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) সংস্কার, একচেটিয়া সিন্ডিকেট প্রথা বিলোপ এবং মুঠোফোনের উন্মুক্ত আমদানির সুযোগ সৃষ্টির দাবিতে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সার্ক ফোয়ারা মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন মুঠোফোন ব্যবসায়ীরা। এতে ওই সড়ক দিয়ে চলাচলকারী মানুষেরা চরম ভোগান্তিতে পরেছেন।
আজ বুধবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে ব্যবসায়ীরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁরা সেখানে যানবাহন ভাঙচুর করছেন বলেও জানা গেছে।
অবরোধের কারণে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের তেজগাঁও অঞ্চলের সহকারী কমিশনার (এসি) মোহাম্মদ আক্কাছ আলী। তিনি বলেন, মুঠোফোন ব্যবসায়ীরা সার্ক ফোয়ারা মোড়ে অবরোধ করার কারণে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।