বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যেই দেশে ফিরবেন বলে আশা করছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে নিজ বাসভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।

তারেক রহমানের দেশে ফেরার সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ আছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘খুব শিগগির নির্ধারিত তারিখটি জানতে পারবেন। আশা করি, নভেম্বরের মধ্যেই তিনি ফিরবেন।’

এই প্রথম বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের কোনো নেতা তারেক রহমানের দেশে ফেরার বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে মাসের (নভেম্বর) কথা উল্লেখ করলেন। এর আগে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির অন্য নেতারাও একাধিকবার বলেছেন, শিগগিরই তারেক রহমান দেশে ফিরবেন। তবে কোনো নেতাই তারেক রহমানের দেশে ফেরার দিনক্ষণ নিয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি। অবশ্য গত ২৫ সেপ্টেম্বর ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এ জেড এম জাহিদ হোসেন বলেছিলেন, তারেক রহমান কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই দেশে ফিরবেন।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারেক রহমান কোন কোন আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, এমন প্রশ্নেরও জবাব দিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। আসন পরে নির্ধারিত হবে। বাংলাদেশের যেকোনো আসন থেকে তিনি নির্বাচন করতে পারেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন কি না, এই প্রশ্নে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা আশা করছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজের শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নেবেন নির্বাচন করবেন কি না। আমরা তো চাই তিনি নির্বাচনে অংশ নিন।’

জাতীয় পার্টি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় পার্টি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ কোনো রাজনৈতিক দল নয়। তাদের রেজিস্ট্রেশনও বহাল আছে। তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের কোনো মামলা এখন পর্যন্ত দায়ের করা হয়নি। জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কি করবে না, সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘আওয়ামী লীগের তো কোনো রেজিস্ট্রেশন এখন নাই। নির্বাচন কমিশনে মার্কাও নাই এবং তাদের বিরুদ্ধে, তাদের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে এবং গণহত্যার অপরাধে বিচার চলছে। অনেকেই বাকি আছে। তারাও হয়তো বিচারের আওতায় আসবে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হতে পারে শিগরিই।.

..এখন যদি জাতীয় পার্টি এসে আওয়ামী লীগকে ছাড়া নির্বাচন না করতে চায়, সেটা তাদের স্বাধীনতা।’

আরপিও নিয়ে আপত্তি, সরকারকে চিঠি দেবে বিএনপি

নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও (সংশোধন) অধ্যাদেশের যে খসড়া উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন হয়েছে, তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে বিএনপির। এ প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেছেন, এই খসড়ায় পরিবর্তন আনতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে তাঁরা চিঠি দেবেন।

কোনো দল জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও নিজেদের প্রতীকে অংশ নিতে হবে। এমন বিধান যুক্ত করে নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া গত বৃহস্পতিবার অনুমোদন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ।

আরপিও সংশোধন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘নির্বাচনী ব্যবস্থা সংস্কার–সংক্রান্ত বিষয়গুলোর অনেকগুলোতে আমরা সবাই সম্মত হয়েছিলাম। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্বাচনী আচরণবিধি ও আরপিওর যে খসড়াটা উত্থাপন করা হয়েছে, এটাতে যে পরিবর্তন আনা হয়েছে, তাতে বিএনপির কোনো সম্মতি ছিল না।’

জোটবদ্ধ নির্বাচনে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে হলে ছোট রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হতে উৎসাহিত হবে না বলেও মনে করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘এটাতে তাদেরও (ছোট রাজনৈতিক দলগুলোরও) সম্মতি নেই, আমাদেরও সম্মতি নেই। এটা নির্বাচন কমিশন থেকে একতরফাভাবে কেন উত্থাপন করা হলো, জানি না।’

চলতি মাসেই ২০০ প্রার্থীকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেবে বিএনপি

চলতি অক্টোবর মাসের মধ্যে ২০০ আসনে দলীয় প্রার্থী বাছাই করে তাঁদের সবুজসংকেত দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘এই মাসের মধ্যেই দলের পক্ষ থেকে কমবেশি ২০০ নির্বাচনী এলাকায় একক প্রার্থীকে হয়তো আমরা গ্রিন সিগন্যাল দেব।’

অনেকে বলে বেড়াচ্ছেন তারেক রহমানের কল পেয়েছেন, তাঁদের প্রার্থিতা নিশ্চিত...এমন এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দিনরাতই কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। এটি নতুন কিছু নয়। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। নির্বাচনের আগে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা হওয়াই স্বাভাবিক।’

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিয়ে জোট গঠিত হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে যোগাযোগ আছে, তবে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি।

দুই উপদেষ্টা প্রসঙ্গে

অন্তর্বর্তী সরকারের দুজন উপদেষ্টাকে (আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম) পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে—এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, দুজন ছাত্র উপদেষ্টা সরকারের অংশ। তাঁরা যদি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান, তাহলে তাঁদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত কবে তাঁরা সরকার থেকে সরে আসবেন।

দুজন উপদেষ্টাকে নিয়ে আরেক প্রশ্নে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘তাঁরা তো বলছেন, তাঁরা ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আছেন। কোনো দলের অংশ হিসেবে নয়। সে ক্ষেত্রে যদি তাঁরা কোনো দলে যোগদান না করেন, অথবা নির্বাচন না করতে চান, তখন সে বিষয়টা তখন দেখা যাবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন র উপদ ষ ট ব এনপ র প রসঙ গ ফ রব ন আরপ ও সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

আহমদ রফিকের কাজ ও আদর্শ আরও বড় মাপে থেকে যাবে

ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক এখন নেই। কিন্তু তাঁর কাজ ও আদর্শ আরও বড় মাপে থেকে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। শুক্রবার বিকেলে আহমদ রফিকের শোকসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

‘ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিক শোকসভা জাতীয় কমিটি’র আয়োজনে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এই শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আহমদ রফিকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শোকসভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন। দুটি রবীন্দ্রসংগীত ‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু বিরহ দহন লাগে’ এবং ‘তোমায় নতুন করে পাব বলে হারাই ক্ষণে ক্ষণ’ পরিবেশন করেন অসীম দত্ত। এরপর আহমদ রফিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ২ অক্টোবর ৯৬ বছর বয়সে তিনি প্রয়াত হন।

এরপর শুরু হয় আলোচনাপর্ব। আলোচকেরা আহমদ রফিককে নিয়ে স্মৃতিচারণা, তাঁর সমাজতান্ত্রিক, রাজনৈতিক মতাদর্শ ও ব্যক্তিজীবন, কাব্য ও সাহিত্যচর্চা, রবীন্দ্র গবেষণাসহ বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। তাঁর জীবনকর্ম পাঠ করেন সংস্কৃতিকর্মী ইশরাত রহমান। সঞ্চালনা করেন শোকসভা জাতীয় কমিটির সদস্যসচিব ইসমাইল সাদী।

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘আহমদ রফিক ছিলেন আমাদের সবার অত্যন্ত আপনজন। বয়সের ব্যবধান সত্ত্বেও সবাই তাঁকে “ভাই” বলে ডাকতেন, তিনিও “ভাই” বলে আপন করে নিতেন। এক অসাধারণ ব্যক্তিক্রম চরিত্রের মানুষ ছিলেন তিনি। আহমদ রফিক দুই অর্থেই ভাষাসংগ্রামী ছিলেন। একদিকে তিনি সরাসরি মহান রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের যুক্ত ছিলেন। দ্বিতীয়ত তিনি ছিলেন সাহিত্যিক। সাহিত্যের মধ্য দিয়ে তিনি ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করা, সমৃদ্ধ করা, ভাষার ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং মানুষের সাংস্কৃতিক চর্চাকে উন্নত করতে আজীবন সংগ্রাম করেছেন।’

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আহমদ রফিকের সংস্কৃতিচর্চার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিল। তিনি সমাজবিপ্লবের স্বপ্ন দেখতেন। সেই সমাজবিপ্লবের জন্য সাংস্কৃতিক চর্চার ভেতর দিয়ে জনমানসের প্রস্তুতির ক্ষেত্র তৈরি করার কাজ করেছেন। তিনি ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে বিশ্বাস করতেন না। নিজে জীবনে তা প্রতিষ্ঠা করেছেন। কোনো ব্যক্তিগত সম্পদ তাঁর ছিল না। জীবনের পরিণামের কথা না ভেবে সব ব্যক্তিগত সম্পদ তিনি দান করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এ কারণে জীবনের অন্তিম পর্যায়ে তাঁকে অর্থকষ্টেও পড়তে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে এখন সভ্যতার সংকটের চেয়ে মানবিকতার সংকটই প্রধান। এমন সংকটময় সময়ে আহমদ রফিকের মতো মানুষের কাজ ও আদর্শ আমাদের অনুসরণ করতে হবে।’

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী আহমদ রফিকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শোকসভার আনুষ্ঠানিকতা শুরু করেন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আহমদ রফিকের কাজ ও আদর্শ আরও বড় মাপে থেকে যাবে
  • নভেম্বরে দেশে ফিরবেন তারেক রহমান: সালাহউদ্দিন
  • জাতীয় পার্টি যদি আ.লীগকে ছাড়া নির্বাচনে না আসতে চায়, সেটা তাদের স্বাধীনতা: সালাহউদ্দিন
  • চলতি মাসেই ২০০ আসনের প্রার্থীকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ দেবে বিএনপি
  • আরপিও অধ্যাদেশের খসড়ায় পরিবর্তন আনতে চিঠি দেবে বিএনপি: সালাহউদ্দিন
  • এ মাসেই ২০০ আসনে প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হবে: সালাহউদ্দিন
  • তারেক রহমান নভেম্বরের মধ্যেই দেশে ফিরবেন, আশা সালাহউদ্দিনের
  • মানসিক সংস্কার ছাড়া কোনো সংস্কার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • ওয়ালটন শোরুম থেকে আর্থিক সহায়তা পেল ২ পরিবার