এবার প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় চান না বিসিএস ২৫টি ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা
Published: 25th, October 2025 GMT
ঢাকার বড় সাতটি সরকারি কলেজের জন্য যে প্রক্রিয়ায় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে এবার আপত্তি জানিয়েছেন বিসিএস ২৫টি ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘বৈষম্যবিরোধী অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদ’। তারা বলছে এই সাত কলেজের জন্য একটি অধিভুক্তমূলক বিশ্ববিদ্যালয় (অনেকটা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো) করে বিরাজমান সংকটের সমাধান সম্ভব। শিক্ষা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের আলোকে এবং অংশীজনদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলেও মনে করেন পরিষদের নেতারা।
আজ শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন বৈষম্যবিরোধী অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদের নেতারা। সংবাদ সম্মেলনে সাত কলেজের সমস্যা ছাড়াও ২৫ ক্যাডারের বৈষম্যের শিকার অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি ও সুবিধা দেওয়া, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে সংগঠনটি।
পরিষদের সমন্বয়ক আহমেদ আলী চৌধুরী ইকবাল সংগঠনটির পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ঢাকা মহানগরীর ঐতিহ্যবাহী সাতটি কলেজ নিয়ে শিক্ষা খাতে নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে। মূল অংশীজনদের এড়িয়ে গিয়ে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করায় সমস্যা আরও ঘনীভূত হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মতভেদ তৈরি হয়েছে। কেউ স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, কেউ বিপক্ষে। এ ছাড়া একটি মহল আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘লোভ দেখিয়ে’ শিক্ষকদের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন বলেও শোনা যায়, তা অত্যন্ত দুঃখজনক। দেশসেরা কলেজগুলো বন্ধ করে অনুমাননির্ভর বা পরীক্ষামূলক কোর্স পরিচালনা সঠিক নয়। গণভোটে নয়, শিক্ষা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশের আলোকে এবং অংশীজনদের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে বলে মনে করে বৈষম্যবিরোধী অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে সাত কলেজ নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন ঢাকা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির (বর্তমান নাম বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশন) সাবেক সভাপতি আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার। তিনি সাত কলেজের ঐতিহ্য তুলে ধরে বলেন, ‘আমরা চাই সাত কলেজের জন্য একটি অ্যাফিলিয়েটিং (অধিভুক্তমূলক) ইউনিভার্সিটি হোক এবং কলেজগুলোর আর্থিক স্বাধীনতা ও সুযোগ-সুবিধা দিলে শিক্ষার মান অবশ্যই বাড়বে।’ এ ক্ষেত্রে এই কলেজগুলোতে মেধাবী শিক্ষকদের পদায়নের ব্যবস্থা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
আরও পড়ুনঢাকা কলেজ: এইচএসসিতে উজ্জ্বল, সংকট স্নাতকে২৩ অক্টোবর ২০২৫২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু অধিভুক্ত করার পর থেকে যথাসময়ে পরীক্ষা নেওয়া, ফলাফল প্রকাশসহ বিভিন্ন দাবিতে সময়-সময় আন্দোলন করে আসছিলেন এসব কলেজের শিক্ষার্থীরা। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত জানুয়ারিতে এই সাত কলেজকে আবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা করার কথা জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরে এই সাত কলেজের জন্য নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ নিয়ে এখন সংকট চলছে। পক্ষে–বিপক্ষে আন্দোলনও চলছে।
অন্যান্য বিষয়ে পরিষদের দাবিসংবাদ বৈষম্যবিরোধী অবসরপ্রাপ্ত ২৫ ক্যাডার সমন্বয় পরিষদের পক্ষে বলা হয়, প্রশাসন ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত ও প্রয়াত মিলে প্রায় ৭৭৮ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অথচ বাকি ২৫টি ক্যাডারের বঞ্চিত অবসরপ্রাপ্ত মাত্র ৭২ কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় তারা ২৫ ক্যাডারের বঞ্চিত সব কর্মকর্তার আবেদন পুনর্বিবেচনা এবং প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মতো ভূতাপেক্ষ বেতন–ভাতাসহ সব আর্থিক সুবিধা দেওয়ার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশকে আড়াল করে কম গুরুত্বপূর্ণ ও অযৌক্তিক কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে জুলাই সনদকে দুর্বল করা হয়েছে। এর একটি হলো সিভিল সার্ভিসে নিয়োগের জন্য তিনটি পাবলিক সার্ভিস কমিশন গঠন—সরকারি কর্মকমিশন (সাধারণ); সরকারি কর্মকমিশন (শিক্ষা) ও সরকারি কর্মকমিশন (স্বাস্থ্য) এবং অপরটি হলো হিসাব বিভাগ থেকে নিরীক্ষা বিভাগ আলাদা করা। যদি হিসাব বিভাগকে নিরীক্ষা বিভাগ থেকে পৃথক করা হয়, তবে প্রি-অডিট কার্যক্রম বিলুপ্ত হবে, যা আর্থিক জবাবদিহি, স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলাকে বিঘ্নিত করবে।
আরও পড়ুনসাত কলেজ ঘিরে নতুন সংকট২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, একটি মেধাভিত্তিক সিভিল সার্ভিস গঠনে উপসচিব পদে কোটা বাতিল করে সব ক্যাডার থেকে পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়োগের দাবি জানিয়ে আসছেন অনেকেই। কিন্তু জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন উপসচিব পর্যায়ের মোট পদের প্রশাসন ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ এবং বাকি ২৫ ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ পদ রাখার সুপারিশ করেছে। আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করতে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলো নিয়ে অধ্যাদেশ জারি করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় ২৫ ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এই সংগঠন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিসিএস জেনারেল এডুকেশন অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ কফিল উদ্দিন, বিসিএস ইনফরমেশন অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি স ম গোলাম কিবরিয়া, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক য ড র র অবসরপ র প ত কর মকর ত দ র ২৫ ক য ড র র স ত কল জ র ব স এস স গঠন সরক র সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পুনরায় সভা করল ঐকমত্য কমিশন
জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ বাস্তবায়নের উপায় ও পদ্ধতি সম্পর্কিত সুপারিশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পুনরায় সভা করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
বুধবার (২২ অক্টোবর) জাতীয় সংসদ ভবনে কমিশনের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ সভা হয়।
সভায় বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন—সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন এবং ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক। ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন— অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল হক এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া।
সভায় জাতীয় সনদের বিভিন্ন সুপারিশ পর্যালোচনা করা হয়। বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে প্রাপ্ত পরামর্শ নিয়েও দীর্ঘ আলোচনা হয়। এসব বিষয় পর্যালোচনার জন্য কমিশন আগামীকাল সকালে অভ্যন্তরীণ বৈঠক করবে এবং পুনরায় দুপুর ২টায় বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে দ্বিতীয় দফায় আলোচনায় বসবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেন সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন এবং ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া। জাতীয় ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও সভায় উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/এএএম/রফিক