ডুবন্ত মানুষের টিকে থাকার কাহিনি
Published: 25th, October 2025 GMT
‘ফিলিপের (পিএইচডি সুপারভাইজার) ফেরত দেওয়া চ্যাপ্টার নিয়ে বাসায় ফিরছি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি, সেই চ্যাপ্টারে মাত্র চার-পাঁচটা কমেন্ট। দুয়েক জায়গা আন্ডারলাইন করা। ফিলিপ কি ভালো করে দেখেইনি আমার চ্যাপ্টার? নাকি দেখার রুচি হয়নি ওর। বুক নিথর করা বেদনা আর অপমানে ফুটপাতের ওপর বসে পড়ি। ভাগ্য ভালো, লন্ডনে ফুটপাতে বসে পড়া মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকে না কেউ।’
কথাগুলো লিখেছেন আসিফ নজরুল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক, কলামিস্ট, রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও কথাসাহিত্যিক।
আসিফ নজরুলের লেখা প্রথম পড়ি বিচিত্রা ঈদসংখ্যায়, উপন্যাস নিষিদ্ধ কয়েকজন। সেই উপন্যাস আমার মগজের ভেতর ঢুকে পড়ে। কোনো লেখকের ব্যাপারে আমার ভেতরে কখনো মোহ কাজ করেনি। লেখা পড়ে বিরক্ত কিংবা মুগ্ধ হই। লেখার ওপারের মানুষকে খুঁজি না।
আসিফ নজরুলকে খুঁজলাম। কেন খুঁজলাম, নিশ্চিত জানি না। হয়তো সদ্য স্বৈরাচার সরকারকে হটিয়ে রাজপথ থেকে ঘরে ফিরেছি, তাই। হয়তো বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস নিয়ে লেখা সেই উপন্যাসের অংশ হয়ে গেছি বলে, ঠিক বুঝিনি।
খোঁজ নিয়ে জানলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অত্যধিক তরুণ শিক্ষক লেখক আসিফ নজরুল। একরোখা তারুণ্য নিয়ে তাঁর আরও লেখা পড়ার প্রতীক্ষায় থাকলাম।
দিন যায়, মাস যায়, বছর যায় আসিফ নজরুলের লেখা কোনো নতুন উপন্যাস পাই না, বিচিত্রায় কেবল তাঁর লেখা প্রতিবেদন পড়ি। শুনেছি, সে সময় আসিফ নজরুলের লেখা আরও দুটি বই প্রকাশিত হয়েছে, তখন মফস্সল শহর থেকে কিছুদিন হলো আমি দেশের বাইরে গেছি পড়াশোনা করতে।
অনেকদিন পর আসিফ নজরুলের লেখা উপন্যাস পেলাম আবার, পরপর কয়েকটা। টেলিভিশনে দেখেছি তাঁকে, টক শোতে। স্রোতের বিপরীতে চলা সাহসী চাঁছাছোলা কথা বলা মানুষ।
ফেসবুকে তাঁর লেখা পড়ি। তিনি পিএইচডির গল্প লেখা শুরু করলেন। অসাধারণ সব লেখা, মনছোঁয়া। মনে হলো, বই হিসেবে থাকা দরকার লেখাগুলো।
বই আকারে পিএইচডির গল্প প্রকাশিত হলো। তখনই বইটা কিনে পড়ে ফেললাম। ভালো লাগল। চোখ ভিজে আসা ভালোলাগা, বুকের ভেতর আচমকা শূন্য হয়ে যাওয়া ভালোলাগা, গলায় কিছু আটকে গিয়ে ব্যথা বোধ হওয়া ভালোলাগা, ডুবন্ত মানুষের ভীষণভাবে টিকে থাকার লড়াইয়ের ভালোলাগা।
বইয়ের পরিচিতিতে লেখা হয়েছে, ‘পিএইচডির গল্প হাস্যরসাত্মক, করুণ এবং বিমোহিত হওয়ার কাহিনি।’ আমার মনে হয়েছে পিএইচডির গল্প জেগে ওঠার গল্প।
আসিফ নজরুল পিএইচডির গল্প বইতে তাঁর পারিবারিক আবহের কথা লিখেছেন, সেখানে আছে বাবা–মায়ের কথা, ছোট বোন লিলির কথা, সাড়ে ১০ বছর বয়সে যে মারা গেছে। আসিফ নজরুল লিখেছেন ইশকুলের কথা, ক্লাস নাইন থেকে উপার্জনের কথা আর বিচিত্রার চাকরি, লেখা, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর কথা। লিখেছেন হার না মানা জেদের কথা। যে লেখা পাঠককে সাহসী করে।
পিএইচডির গল্প বইতে তিনি এক জায়গায় লিখেছেন, ‘আমার ভেতর ইস্পাতকঠিন একটা মানুষ জেগে ওঠে এ সময়। ছোটবেলা থেকে মার খেয়ে খেয়ে একসময় জন্ম হয়েছে তার। এই মানুষটা খুব প্রিয় আমার। সে আমাকে বলে, ট্রাই ওয়ান হান্ড্রেড পারসেন্ট। তারপর যা হওয়ার হবে! তোমার যেন দুঃখ না থাকে যে সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করোনি।’
আসিফ নজরুল পাখির মতো। তিনি গাছের চিকন ডালে বসতে পারেন অনায়াসে। কারণ, তিনি গাছের ডালের ওপরে নয়, নিজের পাখার ওপর ভরসা রাখেন সব সময়।
অসাধারণ কাহিনি, পিএইচডির গল্প লেখার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ আসিফ নজরুল।
পিএইচডির গল্প
আসিফ নজরুল
প্রকাশক: বাতিঘর
প্রকাশ: ফেব্রুয়ারি ২০২১
প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা
পৃষ্ঠা: ১২০
মূল্য: ৩০০ ৳
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপন য স র ভ তর প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
মাইক্রোসফট রিসার্চ ফেলোশিপ ২০২৬: গবেষকদের জন্য নতুন যে সুযোগ
বিশ্বব্যাপী গবেষক ও শিক্ষাবিদদের জন্য উন্মুক্ত হলো মাইক্রোসফট রিসার্চ ফেলোশিপ। এই ফেলোশিপের মাধ্যমে একাডেমিক প্রতিষ্ঠান ও মাইক্রোসফট রিসার্চের বিশেষজ্ঞরা একসঙ্গে কাজ করবেন। দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির যুগে এই সহযোগিতাকে প্রতিষ্ঠানটি ‘ভবিষ্যৎ গঠনের জন্য অপরিহার্য’ বলে উল্লেখ করেছে।
কারা আবেদন করতে পারবেন
এই ফেলোশিপে আবেদন করতে পারবেন তিন ধরনের একাডেমিক ব্যক্তিত্ব—
১. পিএইচডি শিক্ষার্থী
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক
৩. পোস্টডক্টরাল গবেষক
শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা
– আবেদনকারীকে অবশ্যই স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি প্রোগ্রামে ভর্তি থাকতে হবে।
আরও পড়ুনঅস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা: ভিসা–জটিলতা এড়াতে শিক্ষার্থীদের যে নতুন নির্দেশনা০৩ ডিসেম্বর ২০২৫শিক্ষকদের যোগ্যতা
– অধ্যাপক বা সহকারী/সহযোগী অধ্যাপকেরা নিজেরা প্রস্তাব জমা দিতে পারবেন।
– তাঁদের প্রস্তাবে একজন শিক্ষার্থীকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং নির্বাচিত হলে উভয়েই ফেলো হবেন।
– অধ্যাপকের অবশ্যই টার্মিনাল ডিগ্রি (যেমন PhD বা DSc) থাকতে হবে।
পোস্টডক্টরদের যোগ্যতা
– পোস্টডক্টরাল গবেষক নিজস্ব প্রস্তাব জমা দিতে পারবেন, তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অ্যাডভাইজার বা ডিপার্টমেন্ট চেয়ার–এর লিখিত অনুমোদন থাকতে হবে।
– সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ও ওপরের তালিকাভুক্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে হতে হবে।
প্রযোজ্য দেশগুলো
আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড, কানাডা, ইউরোপ, ভারত, হংকং, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, চিলি, কলম্বিয়া, মেক্সিকো, পুয়ের্তো রিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও গবেষকেরা আবেদন করতে পারবেন।
ছবি: সংগৃহীত