বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, “আইন কেবল নিয়মের সমষ্টি নয়, এটি জাতির নৈতিক বিবেকের প্রতিফলন। ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্র দৃঢ় হয়, আর ন্যায় ব্যর্থ হলে সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্রও ভেঙে পড়ে।”

শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশে রাজনীতি করবে বাংলাদেশপন্থিরা: ডাকসু ভিপি

রাবিতে বিচারপতিদের মিলনমেলা

প্রধান বিচারপতি বলেন, “মানবতা যখন অবিচার ও অমানবিক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভয়াবহ পরিণতি প্রত্যক্ষ করে, তখনই মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা মানবজাতিকে নতুন এক নৈতিক চেতনার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। যখন রাষ্ট্র নাগরিকদের মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়, তাদের কণ্ঠরোধ করে, তখন ন্যায়ের জন্য লড়াই করা নৈতিকভাবে অপরিহার্য হয়ে পড়ে।”

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, “১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন কেবল ভাষার জন্য ছিল না, এটি ছিল ন্যায়, মর্যাদা ও অস্তিত্বের অধিকারের সংগ্রাম। ঠিক একইভাবে ১৯৭১ সালে বাঙালি কেবল রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য নয়; বরং মর্যাদা, সমতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের জন্য লড়েছিল।”

বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এমন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে প্রশাসনিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ, নৈতিকভাবে সাহসী ও সংবিধানিকভাবে শক্তিশালী বিচার বিভাগ বিনির্মাণ করতে হবে।”

তিনি বলেন, “দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই বিচার বিভাগ সংস্কারের একটি ‘রোডম্যাপ’ ঘোষণা করেছি। যার মূল উদ্দেশ্য হলো পৃথক সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠা। ‘সুপ্রীম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫’ বিগত ১৫ মাসের সুপরিকল্পিত কৌশলগত প্রচেষ্টা ও বহুপাক্ষিক প্রয়াসের ফল।”

সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের উদ্দেশ্যে সতর্কবার্তা দিয়ে তিনি বলেন, “কোনো ধরনের অবিশ্বাস বা একতরফা আচরণ গত ১৫ মাসের নিরলস প্রচেষ্টায় গড়ে তোলা প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতার এই ভিত্তিকে দুর্বল করে দিতে পারে। বিচার বিভাগীয় স্বায়ত্তশাসনের স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে সব অংশীজনের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বাস ও সমন্বয়ের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।”

আইনজীবী, শিক্ষাবিদ ও আইনের নবীন স্নাতকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আইনের অধ্যয়ন কেবল পেশাগত প্রশিক্ষণ নয়, এটি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার সাধনা। প্রত্যেক আইনের পেছনে আছে একটি জীবন, প্রত্যেক রায়ের পেছনে আছে একটি ভাগ্য।”

প্রযুক্তিনির্ভর বিচার ব্যবস্থার ওপর জোর দিয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, “একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আমরা এখনো ঔপনিবেশিক কাঠামোর উত্তরাধিকার বহন করছি। তাই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডেটা-নির্ভর ব্যবস্থাপনা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে আমাদের বিচার ব্যবস্থাকে সময়োপযোগী করতে হবে।”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান স্মরণ করে তিনি বলেন, “এই বিশ্ববিদ্যালয় অসংখ্য আইনবিদ তৈরি করেছে। আমি বিশ্বাস করি, এখান থেকে ভবিষ্যতেও এমন আইনজ্ঞ তৈরি হবে, যারা কেবল জ্ঞানে নয়, মানবিকতাতেও আলোকিত হবে।”

বক্তব্যের শেষাংশে প্রধান বিচারপতি ড.

সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, “ন্যায়বিচারের পুনর্জাগরণ এখন আমাদের সময়ের আহ্বান। সংবিধানের স্বাধীনতা, সমতা ও ন্যায়বিচারের অঙ্গীকার যেন দেশের প্রতিটি নাগরিকের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায়—সেটিই আমাদের দায়িত্ব।”

রাবির আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক অধ্যাপক ড. সাঈদা আঞ্জুর সভাপতিত্বে এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি এসএসহ অন্যান্য বিচারপতি।

এছাড়া রারি উপাচার্য ড. সালেহ হাসান নকিব, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মাঈন উদ্দীন খান, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন খান প্রমুখ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আইনজ ব স ব ধ নত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় দেশের গবেষকদের নিয়ে চুয়েটে আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) আজ বুধবার থেকে শুরু হয়েছে ‘অষ্টম যন্ত্রকৌশল ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন’। তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন চলবে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত। চুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে এ সম্মেলন আয়োজিত হচ্ছে।

আজ বেলা ১১টায় চুয়েটের কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। অনলাইনে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন মেকানিক্যাল অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক কাজী আফজালুর রহমান এবং ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেন্সির পরিচালক অধ্যাপক বদিউস সালাম।

চুয়েটের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান শুরু হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন সম্মেলনের সম্পাদক অধ্যাপক মো. সানাউল রাব্বী। এ ছাড়া বক্তব্য দেন জাপানের সাগা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকিও মিয়ারা এবং নরওয়ের আগডার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তোরে ভেহুসও।

উদ্বোধনী বক্তব্যে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফয়েজ বলেন, ‘আমাদের একসঙ্গে কাজ করার এবং দেশ ও সমাজের কল্যাণে নতুন কিছু করার সুযোগ এসেছে। এই সম্মেলন আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মানচিত্রে আমাদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করবে।’

চুয়েটের উপাচার্য ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া বলেন, ‘টেকসই ও প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। এ জন্য গবেষণা, উদ্ভাবন এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। এ ধরনের সম্মেলন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

অষ্টমবারের মতো আয়োজিত এ সম্মেলনে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নরওয়ে, মালয়েশিয়াসহ ছয়টি দেশের প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষক, গবেষক ও শিল্পোদ্যোক্তা অংশ নিচ্ছেন। থাকছেন সাতজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বক্তা। তাঁরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি, রোবোটিকস, বুদ্ধিমান সিস্টেম, উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তি ও আধুনিক যন্ত্র প্রকৌশল বিষয়ে গবেষণা উপস্থাপন করবেন।

সম্মেলনে মোট ২৪১টি গবেষণাপত্র উপস্থাপনের কথা রয়েছে। দ্বিতীয় দিনে ২০টির বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে সেমিনার হবে। তৃতীয় দিনে চুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধীনে থাকা চারটি সংগঠনের মাধ্যমে রোবো রেস, পোস্টার প্রেজেন্টেশন ও ডিজাইন কনটেস্ট প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ