সংবিধানে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন, আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও ইসলামের অবমাননার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা ও গণভোটের দাবিসহ ৯টি প্রস্তাবনা দিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) রাজধানীর মতিঝিলস্থ মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারে দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ পরিষদের ৮ম অধিবেশনে এ সব প্রস্তাবনা করা হয়।

সংগঠনের আমীর মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হকের সভাপতিত্বে এবং মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ ও যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আতাউল্লাহ আমীনের যৌথ পরিচালনায় অধিবেশনে সারাদেশ থেকে প্রায় দুই সহস্রাধিক তৃণমূল নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন। পরে একই স্থানে বিকেল সাড়ে তিনটায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার জরুরি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।

উভয় অধিবেশনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের অংশগ্রহণ প্রক্রিয়া বিষয়ে আলোচনা হয়। মজলিসে শুরার সদস্যগণ এবং তৃণমূলের নেতৃবৃন্দ মৌখিক ও লিখিতভাবে মতামত প্রদান করেন— সংগঠনটি এককভাবে, অপরাপর ইসলামী দলের সঙ্গে আসনভিত্তিক সমঝোতার মাধ্যমে, নাকি বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে?

উদ্বোধনী বক্তব্যে মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক তিনটি প্রক্রিয়ার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘যে কোনো মতামত ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে আমাদের ইসলাম, দেশ ও সংগঠনের কল্যাণকে পর্যায়ক্রমে বিবেচনায় নিতে হবে।’’

তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতিতে কাউকেই চূড়ান্ত বন্ধু বা শত্রু মনে করা যায় না; বরং ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করতে হবে। মতামতের ভিত্তিতে যে সিদ্ধান্তই গৃহীত হোক, সবাইকে তা মেনে নিতে হবে।’’

সংগঠনের সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের প্রতি মহান আল্লাহর দরবারে দোয়ার আহ্বান জানান মাওলানা মামুনুল হক। এ সময় তিনি নির্বাচনে বিজয়ী না হলেও আগামী পাঁচ বছর আপদ-বিপদে সর্বশক্তি নিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার জনগণের পাশে থাকার আহ্বানও জানান।

অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, অভিভাবক পরিষদের অন্যতম সদস্য মাওলানা আকরাম আলী, নায়েবে আমির মাওলানা আফজালুর রহমান, মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, মাওলানা আলী উসমান, মাওলানা মুহিউদ্দীন রব্বানী, মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, মাওলানা কোরবান আলী কাসেমী ও মাওলানা মাহবুবুল হক প্রমুখ।

শুরা অধিবেশনে গৃহীত নয়টি প্রস্তাবনা হলো :

১.

সংবিধানে আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপন: এই শূরা অধিবেশন ঘোষণা করছে যে, সংবিধানে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের ঘোষণাপত্র পুনরায় সংযুক্ত করতে হবে। কুরআন ও সুন্নাহবিরোধী সকল আইন, বিধি ও নীতিমালাকে অকার্যকর ঘোষণা করার ধারা সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। 

২. আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও ইসলামের অবমাননার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণ: শূরা লক্ষ্য করেছে, আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তি ও অবমাননার ঘটনা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ধরনের অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রণয়ন করে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড নির্ধারণের দাবি জানানো হচ্ছে যাতে কেউ ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার সাহস না পায়।

৩. জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা ও গণভোটের দাবি: শূরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, জুলাই সনদকে জাতীয় ঐক্য ও ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের একটি ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এই সনদের আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অবিলম্বে শুরু করতে হবে এবং জাতীয় নির্বাচনের উল্লেখযোগ্য পূর্ব সময়ে গণভোটের মাধ্যমে জনগণের মতামত গ্রহণ করতে হবে। এর মাধ্যমে জনগণের সার্বভৌম মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদের নীতি ও লক্ষ্যসমূহ রাষ্ট্রীয়ভাবে বাস্তবায়নের পথ সুস্পষ্ট হবে।

৪. ফিলিস্তিন ও ভারতের মুসলিম নিধন বন্ধে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ: শূরা অধিবেশন গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর অব্যাহত গণহত্যা এবং ভারতে মুসলিম নিধনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানায়। একই সঙ্গে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ, ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (OIC) ও জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি কার্যকর ও দৃশ্যমান ভূমিকা পালনের আহ্বান জানায়। এছাড়া, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের দাবি জানানো হয়।

৫. কাদিয়ানীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে অমুসলিম ঘোষণা: শূরা মনে করে, কাদিয়ানী সম্প্রদায় হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে শেষ নবী হিসেবে অস্বীকার করে শরীয়তের দৃষ্টিতে ইসলামবিরোধী পথ অবলম্বন করেছে। যেভাবে বহু মুসলিম দেশ কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণা করেছে, বাংলাদেশেও রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের অমুসলিম ঘোষণা করতে হবে।

৬. সীমান্ত হত্যা বন্ধে কূটনৈতিক উদ্যোগ জোরদার: শূরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে— সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক নিরীহ বাংলাদেশিদের হত্যা অব্যাহত রয়েছে, অথচ সরকারের কূটনৈতিক কার্যক্রম অত্যন্ত দুর্বল। শূরা সীমান্ত হত্যা বন্ধে সমতার ভিত্তিতে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করার আহ্বান জানাচ্ছে এবং প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে মানবিক মর্যাদাভিত্তিক সম্পর্ক পুনর্গঠনের তাগিদ দিচ্ছে।

৭. ইসকনসহ সকল হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন মোকাবেলা: দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসকন ও হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলোর মাধ্যমে মসজিদ, ইমাম ও ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডের উদ্বেগজনক ঘটনা ঘটছে। শূরা এসব কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সরকারকে কঠোর প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে এবং জাতিকে ঐক্যবদ্ধভাবে এসব আগ্রাসনের মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানাচ্ছে।

৮. পশ্চিম তীরকে ইসরাইলের অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদ: শূরা পশ্চিম তীরকে ইসরাইলের অংশ হিসেবে ঘোষণা ও সংযুক্তিকরণের সকল পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা জানায়। এটিকে আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের ঘোর লঙ্ঘন হিসেবে অভিহিত করে বিশ্ব জনমত ও মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানায়।

৯. খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিশ্ব মুসলিমের প্রতি আহ্বান: শূরা অধিবেশন ঘোষণা করছে— ইসলামী খেলাফত ব্যবস্থাই পৃথিবীতে ন্যায়বিচার, নিরাপত্তা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ। এ কারণে বিশ্বের মুসলিম জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে খেলাফত প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে শরিক হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানানো হচ্ছে।

অধিবেশনে আরও উপস্থিত ছিলেন, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা আব্দুল আজীজ, মুফতি শরাফত হোসাইন, মাওলানা তোফাজ্জল হোসাইন মিয়াজী, মাওলানা শরীফ সাইদুর রহমান প্রমূখ ।

ঢাকা/ নঈমুদ্দীন

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র আহ ব ন জ ন জ ল ই সনদ গ রহণ কর ই সনদ র ও ইসল ম স গঠন র ত গ রহণ লক ষ য আল ল হ গণভ ট মজল স র আইন মত মত

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় দেশের গবেষকদের নিয়ে চুয়েটে আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) আজ বুধবার থেকে শুরু হয়েছে ‘অষ্টম যন্ত্রকৌশল ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিবিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন’। তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলন চলবে আগামী শুক্রবার পর্যন্ত। চুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের উদ্যোগে এ সম্মেলন আয়োজিত হচ্ছে।

আজ বেলা ১১টায় চুয়েটের কেন্দ্রীয় অডিটরিয়ামে সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়। অনলাইনে প্রধান অতিথি হিসেবে যুক্ত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ আবুল ফয়েজ। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া। বিশেষ অতিথি ছিলেন মেকানিক্যাল অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারিং অনুষদের ডিন অধ্যাপক কাজী আফজালুর রহমান এবং ব্যুরো অব রিসার্চ, টেস্টিং অ্যান্ড কনসালটেন্সির পরিচালক অধ্যাপক বদিউস সালাম।

চুয়েটের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান শুরু হয়। স্বাগত বক্তব্য দেন সম্মেলনের সম্পাদক অধ্যাপক মো. সানাউল রাব্বী। এ ছাড়া বক্তব্য দেন জাপানের সাগা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আকিও মিয়ারা এবং নরওয়ের আগডার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক তোরে ভেহুসও।

উদ্বোধনী বক্তব্যে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফয়েজ বলেন, ‘আমাদের একসঙ্গে কাজ করার এবং দেশ ও সমাজের কল্যাণে নতুন কিছু করার সুযোগ এসেছে। এই সম্মেলন আন্তর্জাতিক প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের মানচিত্রে আমাদের অবস্থানকে সুদৃঢ় করবে।’

চুয়েটের উপাচার্য ড. মাহমুদ আব্দুল মতিন ভূঁইয়া বলেন, ‘টেকসই ও প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প অর্থনীতিতে রূপান্তরের জন্য বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হবে। এ জন্য গবেষণা, উদ্ভাবন এবং দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে হবে। এ ধরনের সম্মেলন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

অষ্টমবারের মতো আয়োজিত এ সম্মেলনে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, নরওয়ে, মালয়েশিয়াসহ ছয়টি দেশের প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষক, গবেষক ও শিল্পোদ্যোক্তা অংশ নিচ্ছেন। থাকছেন সাতজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বক্তা। তাঁরা নবায়নযোগ্য জ্বালানি, রোবোটিকস, বুদ্ধিমান সিস্টেম, উন্নত উৎপাদন প্রযুক্তি ও আধুনিক যন্ত্র প্রকৌশল বিষয়ে গবেষণা উপস্থাপন করবেন।

সম্মেলনে মোট ২৪১টি গবেষণাপত্র উপস্থাপনের কথা রয়েছে। দ্বিতীয় দিনে ২০টির বেশি শিল্পপ্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে সেমিনার হবে। তৃতীয় দিনে চুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধীনে থাকা চারটি সংগঠনের মাধ্যমে রোবো রেস, পোস্টার প্রেজেন্টেশন ও ডিজাইন কনটেস্ট প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ