যুবদলকর্মী আলম খুনেও আলোচনায় ‘সন্ত্রাসী’ রায়হানের নাম
Published: 26th, October 2025 GMT
চট্টগ্রামের রাউজানে যুবদলকর্মী মুহাম্মদ আলমগীর আলমকে (৪৫) প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ‘সন্ত্রাসী’ রায়হানের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এক ব্যক্তির সঙ্গে মুঠোফোনে আলমের কথোপকথনের একটি ভিডিও গতকাল শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানেও ‘সন্ত্রাসী’ রায়হানকে নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করতে দেখা গেছে আলমকে।
এর আগে গতকাল বিকেলে মোটরসাইকেল চালিয়ে বাড়ি ফেরার সময় রাউজান পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চারাবটতল বাজারসংলগ্ন কায়কোবাদ জামে মসজিদের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয় আলমকে। এ সময় তাঁর স্ত্রী ও সন্তান পেছনে একটি অটোরিকশায় ছিলেন। পাশের গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে দাওয়াত খেয়ে বাড়িতে ফিরছিলেন তাঁরা। আলমের বাড়ি পার্শ্ববর্তী ঢালারমুখ এলাকায়।
হত্যার ঘটনাটিতে কে বা কারা জড়িত তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। নিহত আলম যাদের আগ থেকে সন্দেহ করতেন, তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না তা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, রাউজান থানাপ্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কবরস্থানে লুকিয়ে থাকা আটজন অস্ত্রধারী আলমকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা আলম ঘটনাস্থলেই নিহত হন। অস্ত্রধারীরা তাঁকে হত্যার পর রাঙামাটি সড়ক দিয়ে অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে পালিয়ে গেছেন। নিহত আলমের শরীরে পাঁচটি গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অস্ত্র-মাদকসহ বিভিন্ন মামলায় ১২ বছর কারাগারে ছিলেন আলম। গত বছরের ৫ আগস্টের পর জামিনে মুক্তি পান তিনি। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী হিসেবে পরিচিত তিনি।
হত্যার ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, এক ব্যক্তির সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলছেন আলম। ‘সন্ত্রাসী’ রায়হানের নাম উল্লেখ করে অপর প্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে উদ্দেশ করে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘তুমি যে শোডাউন করিয়েছ আতঙ্ক সৃষ্টি করে, আমাকে তো মেরেও ফেলতে পারত, তুমি তো ও রকম মানুষ নিয়ে এসে আমাকে মেরে ফেলতে পার।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে তাড়ানোর জন্য তুমি এসব করছ।.
নিজে কারাগারে থাকার প্রসঙ্গ টেনে আলমকে মুঠোফোনে বলতে শোনা যায়, ‘আমি বাঁচতে চাই। ১৭ বছর আমি স্ত্রী-সন্তানকে ছেড়ে কারাগারে ছিলাম। এখনো যদি তোমাদের কারণে কষ্টে থাকি, আমি কার কাছে যাব। আমাকে আইনের আশ্রয় নিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘তাদের অস্ত্রসহ কেন আনলে। তিনটি মোটরসাইকেলে অস্ত্র ছিল।...আমি তো একলা ছিলাম। জনগণ পাশে আসায় ওরা চলে গেছে। নইলে তো আমার মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল।’
আলমের সঙ্গে কথোপকথনের সময় মুঠোফোনের অপর প্রান্তে কে ছিলেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে কথোপকথনে কয়েকজন স্থানীয় বিএনপি নেতার নাম উল্লেখ করেন আলম। জানতে চাইলে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘হত্যার ঘটনাটিতে কে বা কারা জড়িত, তাদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। নিহত আলম যাদের আগ থেকে সন্দেহ করতেন, তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, তা গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’
পুলিশ জানায়, রায়হান নামের যে ব্যক্তির নাম আলমের কথোপকথনে উঠে এসেছে, তাঁর বিরুদ্ধে গত বছরের ৫ আগস্টের পর চট্টগ্রাম নগর ও জেলায় জোড়া খুনসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৩টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ছয়টি হত্যা মামলা।
হত্যাচেষ্টার একটি মামলায় কারাগারে গিয়ে চট্টগ্রামের আলোচিত ‘সন্ত্রাসী’ ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে পরিচয় হয় রায়হানের। গত বছরের ৫ আগস্টের পর দুজন কারাগার থেকে জামিনে বের হন। এরপর ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন রায়হান। সাজ্জাদ সম্প্রতি আবারও কারাগারে গেলে তাঁর অস্ত্রভান্ডারের দেখভাল করছেন এই রায়হান।
নিহত যুবদলকর্মী মুহাম্মদ আলমগীর আলমউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
যুবদলকর্মীকে কুপিয়ে হত্যার পর বাড়িতে আগুন
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে নয়ন (৩২) নামের এক যুবদলকর্মীকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে শিবগঞ্জ উপজেলার নয়ালাভাঙ্গা বাবুপুর মোড়ে নয়নকে কোপানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে স্থানীয় হাসপাতালে ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ এন এম ওয়াসিম ফিরোজ।
পরে নিহত নয়নের বাড়িতে আগুন দেয় হামলাকারীরা। নয়ন নয়ালাভাঙ্গা গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সোমবার সন্ধ্যায় বাবুপুর মোড়ে একদল দুষ্কৃতকারী দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নয়নকে মারাত্মক জখম করে। নয়নের ভাইসহ স্থানীয়রা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে প্রথমে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে নেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে রামেক হাসপাতালে রেফার করা হয়।
নয়নকে কুপিয়ে জখম করার পর হামলাকারীরা তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে শিবগঞ্জ থেকে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল এসে দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এ এন এম ওয়াসিম ফিরোজ ঘটনাটি নিশ্চিত করে বলেছেন, প্রতিপক্ষের হামলায় নয়ন নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। আধিপত্য বিস্তার নাকি অন্য কোনো কারণে এ হত্যাকাণ্ড, সে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।
তিনি আরো জানান, নয়নের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে যুক্ত থাকার অভিযোগে থানায় একাধিক মামলা আছে। এলাকায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নয়ন শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আশরাফুল হকের অনুসারী এবং নয়ালাভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবদলের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। এ হত্যাকাণ্ডের পর এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
ঢাকা/শিয়াম/রফিক