হাতে-পা ধরেও মাফ মেলেনি, যুবককে পেটালেন ইউপি সদস্য
Published: 27th, October 2025 GMT
“আমার ভাগ্নেরে মারতাছিল মোবাইল চুরির কথা কইয়া, সে মোবাইল চুরি করে নাই, মাফ চাইছে, হাতে-পায়ে ধরছে কিন্তু ছাড়ে নাই। আমি ছাড়াইতে গেছি, আমারেও মারছে, জামাকাপড় ছিঁড়া ফালাইছে। কেউ ভয়ে থামাইতে পারে নাই। কিছু না কইরাও আমরা এরকম মাইর খাইলাম, বেলচা দিয়ে পিটাইছে, কিল-ঘুষি দিছে, আমি বিচার চাই”, এভাবেই মারধরের বিবরণ দিচ্ছিলেন আখির আলী।
রবিবার (২৬ অক্টোবর) রাত ৮টার দিকে ঢাকার ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের বারবাড়িয়া এলাকায় মোবাইল চুরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক যুবক ও তার মামাকে মারধর করেন গাংগুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ইমান আলী ও তার ছেলে। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা।
আরো পড়ুন:
কুমিল্লায় প্রবাসীর স্ত্রীকে মারধর-তালাক, অন্যজনের সঙ্গে বিয়ে
৩ শিক্ষার্থীকে বলাৎকারের অভিযোগ, শিক্ষককে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ
মারধরের শিকাররা হলেন- ধামরাইয়ের গাংগুটিয়া ইউনিয়নের কৃষ্ণপুরা এলাকার আমান উল্লাহ (২২) ও তার মামা একই এলাকার আঁখির আলী (৩৯)। আঁখির আলী বারবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার ‘আখির মার্কেট’-এর মালিক।
অভিযুক্তরা হলেন- গাংগুটিয়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ইমান আলী (৫০) ও তার ছেলে ইসমাইল (২৪)। তারা কৃষ্ণপুরা এলাকার বাসিন্দা।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা জানান, ৭-৮ দিন আগে রাতে ইউপি সদস্যের ভাড়া বাড়িতে রঙের কাজ করতে কথা বলতে যান আমান উল্লাহ। সেখানে এক ভাড়াটিয়ার সঙ্গে কথার একপর্যায়ে নিজের বাড়িতে পেঁপে গাছ ও পেঁপে আছে বলে জানান আমান। সেই ভাড়াটিয়া পেঁপে চাইলে তিনি বাড়িতে পেঁপে আনতে যান। রাত হওয়ায় ভাড়াটিয়া তার একটি বাটন ফোন দিয়ে দেন লাইট হিসেবে ব্যবহারের জন্য। তবে, পেঁপে নিয়ে আমানের ফিরতে দেরি হলে ভাড়াটিয়া তার মামাকে বিষয়টি জানান। এরইমধ্যে আমান পেঁপে ও ফোন নিয়ে ফিরে আসেন। দেরি হওয়ায় ফোন চুরির অপবাদ দিয়ে তাকে আটকে চড় মারেন ওই ভাড়াটিয়া। এরপর বাড়িওয়ালা ইউপি সদস্য ও ভুক্তভোগীর মামা সেখানে গেলে তাকে ওই ভাড়াটিয়ারা ছেড়ে দেন।
তারা জানান, রবিবার রাতে আমান আখির মার্কেটের একটি দোকানে রঙের কাজ করছিলেন। একপর্যায়ে তিনি তাকে চড় মারা ভাড়াটিয়াকে মার্কেটে দেখতে পান। তাকে থামিয়ে তিনি একটি চড় মারেন। এর জেরে ওই ভাড়াটিয়া তার বাড়িওয়ালা ইউপি সদস্যকে ডেকে আনেন। সেখানে এসে ইউপি সদস্য আমানকে পাশে থাকা একটি বেলচা দিয়ে পেটাতে শুরু করেন। মারধরের সময় হাতে-পায়ে ধরে মাফ চান আমান। একপর্যায়ে মারধরে যোগ দেন ইউপি সদস্যের ছেলেও। প্রায় ১০-১৫ মিনিট ধরে বেলচা দিয়ে পেটানোসহ তাকে কিল-ঘুষি মারেন তারা।
ভাগ্নেকে মারধরের খবর পেয়ে সেখানে উপস্থিত হন মার্কেট মালিক আঁখি। আমানকে উদ্ধার করতে গেলে ইউপি সদস্য কিল-ঘুষিসহ মারধর করেন মার্কেট মালিককেও। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম হয়। স্থানীয় লোকজন তাদের উদ্ধার করেন। পরে স্থানীয় হাসপাতালে তারা চিকিৎসা নেন।
এ ঘটনার একাধিক ভিডিও ফুটেজ এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। একটিতে আমানকে টেনে নিয়ে যেতে দেখা যায়। অপরটিতে আমানকে মাফ চাইতে দেখা যায়। এছাড়া আঁখিরকে মারধর করতেও দেখা যায় ইমান আলীকে ভিডিওটিতে।
ভুক্তভোগী আঁখির আলী বলেন, “আমার ভাগ্নে আমান কাজের জন্য ইমান আলীর বাড়ি গেছিল। তখন ওই বাড়ির ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে কথা হয়। সে জানায়, তার বাড়িতে পেঁপে গাছ আছে, পেঁপে আছে। তখন তারা পেঁপে চায়। আমান বাড়ি যাবে, তাই লাইটের জন্য ওদের একটা ফোন তাকে দেয়। পেঁপে নিয়ে ফিরতে দেরি হলে ওই ভাড়াটিয়ারা আমাকে জানান, আমার ভাগ্নে ফোন নিয়ে গেছে।”
“এরমধ্যেই ভাগ্নে ফোন, পেঁপে নিয়ে ওই বাড়ি ফিরে যায়। ফিরলে তারা আমার ভাগ্নেকে আটকে মারধর করে। তখন আমি সেখানে যাই। ইমান আলী আমার ভাগ্নেকে আমাকে দিয়ে দেয়। যারা মারছিল, এরমধ্যে একজনকে (ইমান আলীর ভাড়াটিয়া) আজকে আমার মার্কেটে দেখে ভাগ্নে। তাকে একটা চড় দেয়। সেই ছেলে ইমান আলীকে জানায়। তখন ইমান আলী এসে আমানকে মারধর করে। ভাগ্নে ভয়ে একটা ঘরে লুকায়, সেখান থেকে টেনে বের করে তাকে এলোপাতাড়ি পেটায় বেলচা দিয়ে। আমি থামাতে গেলে আমাকেও লাথি, কিল-ঘুষি মারেন ইমান আলী ও তার ছেলে ইসমাইল”, যোগ করেন তিনি।
আঁখির আলী অভিযোগ, “প্রায় ১৫ দিন আগে ইমান আলী আমার কাছে মার্কেট চালাই তাই ৩৫ হাজার টাকা চাঁদা চান। আমি না দেওয়ায় তারা ক্ষুব্ধ ছিল। আমি এই বিষয়টি বিএনপির নেতাকেও জানিয়েছিলাম। আজকে তারা আমাকে মারল। আমি বিচার চাই। আমি থানায় অভিযোগ করব, তাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাই।”
অভিযুক্ত ইউপি সদস্য ইমান আলী মারধরের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “আঁখির ভাগ্নে মোবাইল চুরি করেছিল। তাকে আটকানো হয়েছিল। আমি মাফ করে দিছি। আজকে আমার ভাড়াটিয়া বাজার করে ফেরার সময় তাকে ধরে চড় মেরেছে। আমি বিচার করেছি। ধরে কয়টা দিতে গেছি, তখন আঁখি আসছে। তাই আরকি।”
ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.
ঢাকা/সাব্বির/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম রধর অভ য গ ওই ভ ড় ট য় আম র ভ গ ন আ খ র আল ম রধর র এল ক র চড় ম র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
সমাবেশ মঞ্চে বিএনপি নেতাকে ১০ লাখ টাকার চেক দিলেন এক কর্মী
বিএনপির ৩১ দফার প্রচার ও ধানের শীষের পক্ষে সমাবেশ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ওই নির্বাচনী এলাকায় দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপি নেতা। একপর্যায়ে কর্মীরা তাঁকে টাকার ফুল ও মালা গলায় দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। তখন এক কর্মী ওই নেতাকে নির্বাচনের খরচের জন্য ১০ লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেন।
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনাবাজারে শনিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
৩১ দফার প্রচারণার ঘোষণা থাকলেও এটি ছিল মূলত জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুলের নির্বাচনী সমাবেশ।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নেতা-কর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন। সমাবেশ শুরুর পর একপর্যায়ে কামরুজ্জামানকে ফুল, টাকার মালা গলায় পরিয়ে দেন কিছু নেতা-কর্মী। তখন মঞ্চে উঠে নূর কাশেম নামের একজন কর্মী কামরুজ্জামানের হাতে একটি চেক তুলে দেন। কামরুল সেটি হাতে নিয়ে দেখেন ১০ লাখ টাকার চেক। পরে তিনি চেকটি সমাবেশে উপস্থিত দলের নেতা-কর্মীদের দেখান।
কামরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের ওই কর্মীর সঙ্গে আমার আগে পরিচয় হয়নি। তিনি চেকটি আমার হাতে দিয়ে কাল (রোববার) ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার কথা বলেছেন। মানুষের ভালোবাসায় আমি অভিভূত।’ মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে দৃঢ় বিশ্বাস প্রকাশ করেন কামরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমি ধানের শীষের কথা বলছি। ধানের শীষে ভোট চাইছি। জনগণ পাশে থাকলে আমি এখানে মনোনয়ন পাব বলে বিশ্বাস করি।’
জামালগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুম মাহমুদ তালুকদারের সভাপতিত্বে সমাবেশে কামরুজ্জামান ছাড়াও বক্তব্য দেন উপজেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মো. শাহীনুর রহমান, জুলফিকার চৌধুরী, ফজলুল কাদের চৌধুরী (তৌফিক) ও সাজ্জাদ মাহমুদ তালুকদার, তাহিরপুর উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জুনাব আলী, ধর্মপাশা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল হক প্রমুখ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ-১ আসনে (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর) কামরুজ্জামান ছাড়াও দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে মাঠে আছেন এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি প্রয়াত নজির হোসেনের স্ত্রী সালমা নজির, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ও তাহিপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক, যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বিএনপি নেতা হামিদুল হক আফিন্দী, ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আবদুল মোতালেব খান।