সাহায্যের ছলে অসহায় নারীদের ওপর যৌন নিপীড়নের অভিযোগ, তুরস্কে দাতব্য সংস্থার মালিক গ্রেপ্তার
Published: 27th, October 2025 GMT
যৌন নির্যাতনের অভিযোগে তুরস্কের একটি দাতব্য সংস্থার মালিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিবিসির এক অনুসন্ধানে তাঁর বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ প্রকাশ পেয়েছিল।
বিবিসি নিউজ টার্কিশের খবরে বলা হয়েছে, সাদেত্তিন কারাগোজ নামের ওই ব্যক্তি অসহায় নারীদের সাহায্য দেওয়ার নাম করে তাঁদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে কারাগোজ এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
২০১৪ সালে তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় নিজের দাতব্য সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন কারাগোজ। সহায়তার জন্য মরিয়া সিরীয় শরণার্থীরা বলেন, শুরুতে তাঁকে ‘ফেরেশতার মতো’ মনে হয়েছিল।
তিন সন্তানকে একা লালন–পালন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন মাদিনা। তিনি অসহায় অবস্থায় সাহায্য চাইতে সাদেত্তিন কারাগোজের মালিকানাধীন দাতব্য সংস্থাটিতে যান। দাতব্য সংস্থাটির নাম হোপ চ্যারিটি স্টোর। সংস্থাটি শরণার্থীদের জন্য ডায়াপার, পাস্তা, দুধ ও পোশাকের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করত।তেমনই একজন শরণার্থী মাদিনা (ছদ্মনাম)। তিনি ২০১৬ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ থেকে পালিয়ে তুরস্কে আশ্রয় নেন। দুই বছর পর তাঁর এক সন্তান মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর তাঁর স্বামী তাঁকে ছেড়ে চলে যান। তাঁর পরিচয় গোপন রাখার জন্য ‘মাদিনা’ ছদ্মনামটি ব্যবহার করা হয়েছে।
তিন সন্তানকে একা লালন–পালন করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিলেন মাদিনা। তিনি অসহায় অবস্থায় সাহায্য চাইতে সাদেত্তিন কারাগোজের মালিকানাধীন দাতব্য সংস্থাটিতে যান। দাতব্য সংস্থাটির নাম হোপ চ্যারিটি স্টোর। সংস্থাটি শরণার্থীদের জন্য ডায়াপার, পাস্তা, দুধ ও পোশাকের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস সংগ্রহ করত।
দাতব্য সংস্থার ভবনটি দোতলা। এর দেয়াল লাল, সাদা ও সবুজ রঙে রাঙানো। দেয়ালে হাঁস ও শিশুদের ছবি আঁকা। মানুষকে বেশি বেশি দুধ পান ও ফলমূল-সবজি খেতে উদ্বুদ্ধ করতে সেখানে কিছু স্লোগান লেখা আছে।
কারাগোজের সঙ্গে কথোপকথনের প্রসঙ্গ টেনে মাদিনা বলেন, ‘তিনি (কারাগোজ) বলেছিলেন, যদি কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকে, আমার কাছে এসো। আমি তোমার দেখভাল করব।’
কিন্তু পরে কারাগোজের কাছে যাওয়ার পর তাঁর ভিন্নরূপ দেখতে পান মাদিনা।
মাদিনা বলেন, ‘তিনি আমাকে অফিসের পেছনে পর্দা দেওয়া এক জায়গায় যেতে বলেন। তিনি বলেছিলেন সেখান থেকে কিছু জিনিস দেবেন। তিনি আমাকে আঁকড়ে ধরেন এবং চুমু খেতে শুরু করেন.
মাদিনা জানান, তিনি কোনোরকমে সেই ভবন থেকে পালিয়ে আসেন। কিন্তু পরে কারাগোজ নিজেই তাঁর বাড়িতে হাজির হন। মাদিনা বলেছেন, তিনি দরজা খোলেননি। কারাগোজ তাঁকে সিরিয়ায় ফেরত পাঠানোর হুমকি দিয়েছিলেন।
মাদিনা বলেছেন, ভয়ের কারণে তিনি কখনো পুলিশের কাছে যাননি। ঘটনাটি তিনি কাউকে জানাননি।
অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মী সাদেত্তিন কারাগোজ অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বিবিসিকে বলেন, তাঁর সংস্থা এখন পর্যন্ত ৩৭ হাজারের বেশি মানুষকে সাহায্য করেছে। তাঁর দাবি, সংস্থার ত্রাণ বিতরণ এলাকা ছোট, জনাকীর্ণ এবং সেখানে সারাক্ষণ সিসিটিভি ক্যামেরায় নজরদারি চলে। তাই কোনো নারীর সঙ্গে একা থাকার প্রশ্নই ওঠে না।
বছরের পর বছর ধরে কারাগোজের সংস্থাটি ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে এবং ২০২০ সালে স্থানীয় একটি পত্রিকার পুরস্কারও জিতেছে। জাতীয় টেলিভিশনে সংস্থাটি নিয়ে খবরও প্রচার হয়েছে। তিনি বলেন, সংস্থাটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমর্থন পেয়েছে। চলতি বছরের মার্চে তিনি সংস্থার তুর্কি নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন ‘মাই হোম মিল অ্যাসোসিয়েশন’।বছরের পর বছর ধরে কারাগোজের সংস্থাটি ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছে এবং ২০২০ সালে স্থানীয় একটি পত্রিকার পুরস্কারও জিতেছে। জাতীয় টেলিভিশনে সংস্থাটি নিয়ে খবরও প্রচারিত হয়েছে। তিনি বলেন, সংস্থাটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমর্থন পেয়েছে। চলতি বছরের মার্চে তিনি সংস্থার তুর্কি নাম পরিবর্তন করে রেখেছেন ‘মাই হোম মিল অ্যাসোসিয়েশন’।
মাদিনাসহ তিন নারী বিবিসিকে বলেছেন, কারাগোজ তাঁদের ওপর যৌন নিপীড়ন চালিয়েছেন।
আর সংস্থার দুই সাবেক কর্মীসহ সাত ব্যক্তি বলেছেন, তাঁরা ২০১৬ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে কারাগোজকে নিপীড়ন চালাতে দেখেছেন কিংবা তাৎক্ষণিকভাবে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অভিযোগ শুনেছেন।
২৭ বছর বয়সী সিরীয় শরণার্থী নাদা (ছদ্মনাম) বলেন, কারাগোজ তাঁকে বলেছিলেন, সাহায্য পেতে হলে তাঁকে ফাঁকা একটি ফ্ল্যাটে যেতে হবে। সেখানে না গেলে সাহায্য দেওয়া হবে না।
নাদা বলেন, একবার কারাগোজ তাঁর ছেলের জন্য ডায়াপার দেওয়ার কথা বলে পর্দার পেছনে নিয়ে যৌন নিপীড়নের চেষ্টা চালিয়েছিলেন।
বিবিসির কাছে কারাগোজের বিরুদ্ধে যে তৃতীয় নারী অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর নাম বাতুল। তিনি পরে জার্মানিতে চলে গেছেন। তিনি একজন একা মা (সিঙ্গেল মাদার)। তিনিও অভিযোগ করেছিলেন, কারাগাজের কাছে সাহায্য চাইতে গিয়ে তিনি যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন।
কারাগোজের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ এবারই প্রথম নয়; এর আগে ২০১৯ সালেও তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। কিন্তু তখন তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলেছিলেন, মামলা করার জন্য পর্যাপ্ত প্রমাণ নেই।
পুলিশ বলেছে, ভুক্তভোগী বা সাক্ষীরাও আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করার জন্য এগিয়ে আসতে ইচ্ছুক ছিলেন না।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বল ছ ল ন শরণ র থ রস ক র র জন য বল ছ ন ত রস ক অসহ য় বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
চিত্রকর্মে আরব্য রজনীর চরিত্র: ২৪ হাজার টাকায় কিনে ৭৪ লাখে বিক্রি
চিত্রকর্মটি বেশ পুরোনো। গড়পড়তা চোখে দেখে অনেকে হয়তো বলবেন, এ আর এমন কী, ভয়ংকরদর্শী মানুষের মাথায় চেপে বসেছে ভিনগ্রহী কোনো বস্তু। তবে ঝানু চোখের রায় হবে ভিন্ন। খুঁটিয়ে দেখলে তিনি ঠিকই বুঝবেন, ছবিটি যেনতেন কিছু নয়। কারণ, এর আঁকিয়ের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। তিনি স্প্যানিশ চিত্রশিল্পী সালভাদর দালি।
সালভাদর দালির ওই চিত্রকর্ম শুক্রবার যুক্তরাজ্যে নিলামে বিক্রি হয়েছে। নামী শিল্পী, তাই দামটাও আকাশছোঁয়া। পরিচয় প্রকাশ না করা কেউ একজন সেটি কিনে নিয়েছেন ৪৫ হাজার ৭০০ পাউন্ডে, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা সাড়ে ৭৪ লাখ টাকার বেশি। অবাক করা বিষয় হলো চিত্রকর্মটি মাত্র ১৫০ পাউন্ডে (২৪ হাজার টাকা) কিনেছিলেন জন রাসেল (ছদ্মনাম) নামের এক ব্যক্তি।
জন রাসেল একজন শিল্পকর্ম বিক্রেতা। তাঁর সঙ্গে ঘটনাটি ঘটেছিল দুই বছর আগে। যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজে একটি বাড়ির পুরোনো জিনিসপত্র বিক্রি হচ্ছিল। সেখানেই ওই চিত্রকর্ম এক চোখ দেখার সুযোগ পান রাসেল। চিত্রকর্মের এক কোণে ছিল দালির স্বাক্ষর। আর পেছনে ছিল যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত নিলামকারী প্রতিষ্ঠান সদবি’স-এর স্টিকার।
‘এটি হয়তো নকল’—ঠিক এ কথাই প্রথম মাথায় এসেছিল রাসেলের। তবে একটু ঝুঁকি নিতে দোষ কী? যদি ভাগ্য খুলে যায়। চিত্রকর্মটির দরাদরি শুরু করেন তিনি। তাঁর সঙ্গে আরও একজন দরদাম করছিলেন। তবে রাসেল হুট করে ১৫০ পাউন্ড বলার পর ওই ব্যক্তি আর আগে বাড়েননি। রাসেলের কথায়, ‘জীবনে এমন সুযোগ একবারই আসে।’
চিত্রকর্মটি যে আসল, তা পরে যাচাই করে বোঝা যায়। এটি আসলে একজন ‘বৃদ্ধ সুলতানের’ ছবি। তিনি আরব্য রজনীর একটি চরিত্র। ১৯৬৬ সালে আরবের এই রূপকথা নিয়ে ৫০০ ছবির এক সিরিজ আঁকতে চেয়েছিলেন সালভাদর দালি। সুলতানের চিত্রকর্মটি তারই একটি অংশ। কোনো কারণে চিত্রকর্মটি সিরিজ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল।
চিত্রকর্মটি কেনার পর রাসেলের অবশ্য আরও কিছু খরচ হয়েছিল। সেটি আসল কি না যাচাই করতে পকেট থেকে বের হয়েছিল ৪ হাজার পাউন্ড। তবে কেমব্রিজের নিলামকারী প্রতিষ্ঠান চেফিন্জ-এ যখন চূড়ান্ত দামটা হাঁকা হলো তখন রাসেলের মনে হয়েছিল, তিনি যেন ‘চাঁদকে ছাড়িয়ে’ গেছেন। তাঁর একটাই কথা—‘এটি ছিল অসাধারণ।’
চিত্রকর্মে ‘সুররিয়ালিজম’ বা ‘পরাবাস্তববাদ’ ধারার জন্য সালভাদর দালির খ্যাতি রয়েছে। তাঁর বিখ্যাত শিল্পকর্মগুলোর কয়েকটি হলো—‘দ্য পারসিসট্যান্স অব মেমোরি’, ‘দ্য এলিফেন্টস’, ‘দ্য বার্নিং জিরাফ’ ও ‘মেটামরফোসিস অব নার্সিসাস’। ১৯৮৯ সালে ৮৪ বছর বয়সে মৃত্যু হয় এই শিল্পীর।