শনি ও ইউরেনাস গ্রহের মধ্যবর্তী অঞ্চলে তৈরি হচ্ছে বলয়, কারণ কী
Published: 27th, October 2025 GMT
আমাদের সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম গ্রহ শনির কথা উঠলেই চোখের সামনে উজ্জ্বল বলয়বেষ্টিত এক গ্রহের ছবি ভেসে ওঠে। হাজার বছর ধরে কোটি কোটি বরফকণা আর ছোট পাথরের টুকরার সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে এই বলয়। এবার শনি ও ইউরেনাস গ্রহের মধ্যবর্তী বরফময় মহাজাগতিক বস্তু কাইরনকে ঘিরে নতুন বলয় তৈরির ঘটনা শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। নতুন এই আবিষ্কারের ফলে মহাজাগতিক বস্তুর চারপাশে বলয় তৈরি ও বিবর্তনের বিস্তারিত তথ্য জানার সুযোগ তৈরি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, আনুষ্ঠানিকভাবে কাইরন একটি ক্ষুদ্র গ্রহাণু বা মাইনর প্ল্যানেট, যা সেন্টর নামে পরিচিত বিশেষ শ্রেণির বস্তুর অন্তর্ভুক্ত। এটি শনি ও ইউরেনাসের কক্ষপথের মধ্যবর্তী অঞ্চলে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করছে। এর ব্যাস প্রায় ২০০ কিলোমিটার ও এটি প্রায় ৫০ বছরে একবার কক্ষপথে আবর্তন সম্পন্ন করে। কাইরনকে ঘিরে চারটি স্বতন্ত্র বলয় শনাক্ত করা হয়েছে এবং সেখানে ছড়িয়ে থাকা বস্তুকণা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
১৯৭৭ সালে আবিষ্কারের পর থেকে বিজ্ঞানীরা কাইরনকে নিয়মিত বিরতিতে পর্যবেক্ষণ করেছেন। ২০২৩ সালে ব্রাজিলের পিকো দস দিয়াস অবজারভেটরি থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে ২০১১, ২০১৮ ও ২০২২ সালের তথ্য একত্র করে নতুন একটি স্পষ্ট চিত্র তৈরি করা হয়েছে। কাইরন কেন্দ্রের থেকে প্রায় ২৭৩ কিলোমিটার, ৩২৫ কিলোমিটার ও ৪৩৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত তিনটি ভেতরের বলয় দিয়ে পরিবেষ্টিত। এ ছাড়া প্রায় ১ হাজার ৪০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দূরবর্তী আরেকটি বলয় প্রথমবার শনাক্ত করা হয়েছে।
কাইরনের ভেতরের বলয় ঘূর্ণমান ধূলিকণার একটি ডিস্কের মধ্যে রয়েছে। সেখানে জটিল ও গতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ব্রাজিলের ফেডারেল ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি-পারানার বিজ্ঞানী ব্রাগা রিবাস বলেন, কাইরন সেন্টর ক্যারিক্লো ও নেপচুনের ওপরে থাকা বরফময় জগৎ হাউমেয়া ও কুয়াওআরের সঙ্গে বলয়যুক্ত চারটি পরিচিত ছোট সৌরজগতের বস্তুর নির্বাচিত গ্রুপে যোগ দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৭ সালে কাইরন আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানী চার্লস কোয়াল। এটিই প্রথম আবিষ্কৃত সেন্টর। প্রথমে এটিকে একটি গ্রহাণু হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছিল। তবে এর কক্ষপথ ও ধূমকেতুর আচরণ এটিকে পরবর্তী সময় ধূমকেতু ও গ্রহাণুর হাইব্রিড হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি একটি ধূমকেতুর মতো একটি ক্ষীণ কোমা বা ধূলিকণার মেঘ তৈরি করতে পারে, যদিও এটি ধূমকেতুর মতো নিয়মিত লেজ তৈরি করে না।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ইরন
এছাড়াও পড়ুন:
ভিন নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে আসা অতিথির মুখোমুখি মহাকাশযান
সৌরজগতে প্রবেশ করা সুদূর প্রাচীন নক্ষত্রপুঞ্জ থেকে আসা অতিথি এক মহাজাগতিক বস্তু আর মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নাসার মহাকাশযানের মুখোমুখি হবে। ধারণা করা হচ্ছে, ৩আই/অ্যাটলাস নামের রহস্যময় বস্তুটি ২৫ অক্টোবর থেকে ৬ নভেম্বরের মধ্যে নাসার ইউরোপা ক্লিপার ও ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার হেরা মহাকাশযানের কাছাকাছি দিয়ে অতিক্রম করবে। ইউরোপীয় গবেষকেরা একটি গবেষণাপত্রে এ তথ্য প্রকাশ করেছেন।
গবেষকরা বলছেন, মহাকাশযান দুটি ৩আই/অ্যাটলাসের আয়ন লেজের মধ্যে পড়বে। এতে আন্তনাক্ষত্রিক ধূমকেতুর আয়ন লেজের বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করার দারুণ সুযোগ মিলবে। সবচেয়ে আকর্ষণীয় সম্ভাবনা হবে, ধূমকেতুর আয়ন লেজের চার্জযুক্ত কণার স্রোত সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা যাবে। এই লেজ ধূমকেতুর কোমা থেকে কয়েক মিলিয়ন মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে।
আয়ন লেজের সঙ্গে এমন সাক্ষাৎ অত্যন্ত অস্বাভাবিক ও মূল্যবান। লেজের মধ্যে আছে সৌরজগতের বাইরের বিভিন্ন উপাদান। গবেষকেরা টেলক্যাচার প্রোগ্রাম ব্যবহার করে মহাকাশযানের সঙ্গে ধূমকেতুর আয়ন লেজের নিকটতম পৌঁছানোর দূরত্ব বা ইমপ্যাক্ট প্যারামিটার গণনা করছেন। ৩আই/অ্যাটলাস টেলক্যাচারের সর্বনিম্ন দূরত্ব প্রায় পাঁচ মিলিয়ন মাইল হতে পারে।
গবেষকেরা জানান, ইউরোপা ক্লিপার সমস্ত উপাদান পরিমাপ করতে না পারলেও আয়ন লেজের কাঠামো ও উপাদানের তথ্য ধারণ করতে পারবে। ফিনিশ মেটিওরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী স্যামুয়েল গ্র্যান বলেন, আন্তনাক্ষত্রিক ধূমকেতু ও যে নক্ষত্রব্যবস্থা তাদের তৈরি করেছে, তাদের অভ্যন্তর সম্পর্কে আমাদের কার্যত কোনো তথ্য নেই। এভাবে লেজের নমুনা সংগ্রহ করা সরাসরি নমুনা সংগ্রহের সুযোগ করে দিচ্ছে। বস্তুটি ছায়াপথের একটি ভিন্ন অংশের নমুনাও বটে।
নাসার ইউরোপা ক্লিপার বর্তমানে বৃহস্পতির চাঁদ ইউরোপার দিকে যাত্রা করছে। আর ইসার হেরা মহাকাশযানটি বর্তমানে গ্রহাণু বলয়ে ডিডিমোস-ডাইমরফোস বাইনারি গ্রহাণু ব্যবস্থার দিকে ভ্রমণ করছে। ইউরোপা প্রোব প্লাজমা অধ্যয়নের জন্য সরঞ্জাম ও একটি ম্যাগনেটোমিটার দিয়ে সজ্জিত। আর হেরা মিশন আয়ন বা চৌম্বকক্ষেত্র পরিমাপ করতে পারে না। সৌরবায়ুর পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে ইউরোপা ক্লিপার আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুর লেজ থেকে উপাদান অধ্যয়নের এক বিরল সুযোগ পাবে।
যদিও বস্তুটি ধূমকেতুর সাধারণ আচরণের বাইরেও বেশ কিছু অস্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য দেখাচ্ছে। বস্তুটিতে একটি অ্যান্টিটেইল রয়েছে। এর কণার বিচ্ছুরণ বা জেট সূর্য থেকে দূরে না গিয়ে সূর্যের দিকে নির্দেশ করে।
সূত্র: ডেইলি মেইল