দুবাই থেকে বিমানবন্দরে নেমেই উড়ালসড়কে অপহরণের শিকার প্রবাসী
Published: 28th, October 2025 GMT
হাসপাতালে শয্যাশায়ী অসুস্থ বাবাকে দেখার জন্য ছেলে ইমরান মুন্না ছুটে আসেন আরব আমিরাতের দুবাই থেকে। গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরে নেমে বাড়ির উদ্দেশে ওঠেন সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। অটোরিকশাটি পতেঙ্গা উড়াল সড়কে ওঠার পর অস্ত্রের মুখে মুন্না ও তাঁর এক আত্মীয়কে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। গতকাল এই ঘটনা ঘটেছে।
চট্টগ্রাম নগরের বায়েজিদ বোস্তামী এলাকা থেকে গতকাল সন্ধ্যায় পুলিশ তাঁদের উদ্ধার করে, তবে অপহরণকারী ব্যক্তিদের কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এ ঘটনায় কোনো মামলাও হয়নি।
পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী সুলতান মোহাম্মদ আহসান উদ্দিন রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাস্থল পতেঙ্গা হলেও ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা বায়েজিদ বোস্তামী এলাকায় উদ্ধার হন। সেখানে মামলা করার কথা বললে অপহরণের শিকার ইমরান রাজি হননি, তবে তাঁকে বুঝিয়ে মামলা করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) নুর ইসলাম রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ইমরান মুন্নার গ্রামের বাড়ি হাটহাজারী নজুমিয়াহাট এলাকায়। বিমানবন্দরে নেমে তিনি গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য অটোরিকশায় ওঠেন। সঙ্গে ছিলেন সুলাইমান নামের তাঁর এক আত্মীয়। তাঁদের বহনকারী অটোরিকশা শহীদ ওয়াসিম আকরাম উড়াল সড়কে ওঠার পর একটি প্রাইভেট কার এসে গতি রোধ করে। এরপর দেশি অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তাঁদের বায়েজিদ বোস্তামী থানার আতুরার ডিপো এলাকার একটি পরিত্যক্ত কটন মিলের ভেতরে নিয়ে যায়।
অপহরণের বিষয়টি গোপনসূত্রে জানতে পারে পতেঙ্গা থানা–পুলিশ। পরে বায়েজিদসহ বিভিন্ন থানায় বিষয়টি জানায় তারা। এরপর খবর পেয়ে বায়েজিদ থানা–পুলিশ ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। পুলিশ যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দূর থেকে দেখে অপহরণকারী ব্যক্তিরা পালিয়ে যায়। উদ্ধার করা হয় প্রবাসী মুন্নাকে। পরে তাঁর আত্মীয় সুলাইমানকেও পাওয়া যায়। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় প্রবাসীর লাগেজও।
অভিযানে থাকা বায়েজিদ বোস্তামী থানার এসআই মোহাম্মদ মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, দুই ভুক্তভোগী ও অটোরিকশাচালকের কাছ থেকে ঘটনার বিস্তারিত নেওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত থানায় বোঝানো হয়। কিন্তু তাঁরা কিছুতে মামলা করতে রাজি হচ্ছেন না।
প্রবাসী ইমরান মুন্নার মুঠোফোনে রাতে যোগাযোগ করা হলে এই বিষয়ে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উদ ধ র প রব স ইমর ন
এছাড়াও পড়ুন:
গুমের মামলা থেকে সাবেক ও বর্তমান ১২ সেনা কর্মকর্তার অব্যাহতির আবেদন
গুমের ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের একটি মামলা থেকে সাবেক ও বর্তমান ১২ সেনা কর্মকর্তাসহ ১৩ আসামির অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছে। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই আবেদন করা হয়।
মামলাটির ১৩ আসামির মধ্যে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) সিটিআইবির সাবেক তিন পরিচালক গ্রেপ্তার আছেন। তাঁরা হলেন মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
গ্রেপ্তার এই তিন আসামির আইনজীবী আজিজুর রহমান দুলু মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করেন। পরে তিনি ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে অব্যাহতির আবেদনের বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
আইনজীবী আজিজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, মাহবুবুর ও মাজাহারের বিরুদ্ধে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও মাইকেল চাকমাকে আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। সরওয়ারের বিরুদ্ধে ১২ জনকে আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে ২৬ জনকে আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়নি।
আইনজীবী আজিজুর রহমান বলেন, তাঁর তিন আসামির (সরওয়ার, মাহবুবুর ও মাজাহার) বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) চারটি অপরাধের অভিযোগ এনেছে। সেগুলো হলো আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতন। এর মধ্যে তিনটি অপরাধ (আটক, অপহরণ ও নির্যাতন) তাঁর আসামিরা ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবির পরিচালক হিসেবে যোগ দেওয়ার আগেই সংঘটিত হয়েছে। ডিজিএফআইয়ের পদায়নের আগের ঘটনার দায় দেওয়া হয়েছে, যার সুযোগ আইনে নেই।
এ ছাড়া সেনাবাহিনীর তদন্ত আদালতের প্রতিবেদনে গুমের ভুক্তভোগী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল্লাহিল আমান আযমী যে ঘরে ছিলেন, সেটি ২১ ফুট বাই ১৭ ফুটের ছিল বলে উল্লেখ করেন আইনজীবী আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, সেই ঘরে জানালা পাঁচটি, দুটি দরজা, ওয়ার্ডরোব, রিডিং টেবিল, পরে এয়ারকন্ডিশনও লাগানো হয়েছিল। অর্থাৎ আযমীকে গুম করে রাখার ঘর আয়নাঘর ছিল না, অন্য কোনো জায়গা ছিল। এ কারণে আযমীকে গুম করে রাখার অভিযোগও এই আসামিদের ওপর বর্তায় না।
এসব কারণে আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও গুম—এই চারটি অভিযোগ থেকে তিন আসামির (সরওয়ার, মাহবুবুর ও মাজাহার) অব্যাহতি প্রার্থনা করেছেন বলেও উল্লেখ করেন আজিজুর রহমান।
এ মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত ডিজিএফআই পরিচালিত জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেন্টার বা জেআইসিতে ২৬ জনকে আটক, অপহরণ, গুম ও নির্যাতন করা হয়েছে। জেআইসির অবস্থান ঢাকা সেনানিবাসের ডিজিএফআই সদর দপ্তরের পেছনে। এটি ‘আয়নাঘর’ নামেও পরিচিত। জেআইসি বা আয়নাঘরের দায়িত্বে ছিল ডিজিএফআইয়ের সিটিআইবি।
এ মামলার ১০ আসামি পলাতক। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক পাঁচজন মহাপরিচালক (ডিজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী ও মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক।
পলাতক আসামিদের মধ্যে আরও আছেন ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, মেজর জেনারেল কবীর আহাম্মদ ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মখছুরুল হক। এ ছাড়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকও এ মামলার পলাতক আসামি। তাঁদের পক্ষেও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীরা অব্যাহতির আবেদন করেছেন।