‘মোগো যহন সেতু হইল তহন রাস্তা ছেল না, এহন রাস্তা হইছে কিন্তু সেতু নাই’
Published: 28th, October 2025 GMT
বরগুনার তালতলী উপজেলার বেহালা গ্রামে চার বছর আগে ধসে গেছে একমাত্র সেতুটি। সেখানে কাঠ-বাঁশের সাঁকো দিয়েই ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দীর্ঘ সময়েও সেতুটি পুনর্নির্মাণ না হওয়ায় স্কুল, বাজার ও জরুরি যাতায়াতে গ্রামবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
বঙ্গোপসাগর তীরসংলগ্ন বেহালা গ্রামটি বেশ বড়। গ্রামের দক্ষিণ দিকটায় মানুষের বসতি। এরপর সরু পিচঢালা রাস্তা আর দক্ষিণে মাইলের পর মাইল ফসলের খেত, গোলগাছের বাগান। গ্রামটির অধিকাংশ বাসিন্দা কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। এ ছাড়া অধিকাংশ পরিবারই দরিদ্র-নিম্নমধ্যবিত্ত।
স্থানীয় বাসিন্দারা বরেন, আশপাশে কোনো বাজার নেই। তাই গ্রামবাসীকে বাজার-সদাই কিংবা কোনো প্রয়োজনে ছুটতে হয় ১৫ কিলোমিটার দূরে তালতলী উপজেলা সদরে। গ্রামটির চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি কাঁচা থেকে পাকা হয়েছে। কিন্তু এরপরও যোগযোগ মসৃণ হয়নি। এখন বেহালা গ্রামের মানুষের দুঃখ কেবল একটি, সেটি একটি সেতুর অভাব।
সরেজমিনে দেখা যায়, আমতলী-তালতলীর মূল সড়কে উঠতে হলে বেহালা খাল পারাপার হতে হয়। খালটিতে বাঁধ দিয়ে বদ্ধ খালে পরিণত করে মাছ চাষ করা হয়। বিশাল খালের ওপর আগে লোহার অবকাঠামোর ওপর সিসি ঢালাই দেওয়া স্ল্যাবের সেতু ছিল। সেটি ২০২২ সালের মার্চে ভেঙে পড়ে। এরপর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে বেহালা গ্রাম। প্রায় চার বছর পরও সেটিকে আর নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাই প্রথমে খেয়ায় এবং পরে বাঁশের অবকাঠামোর ওপর কাঠের তক্তা দিয়ে পায়ে পারাপারের জন্য একটি নড়বড়ে সাঁকো তৈরি করা হয়েছে। স্থানীয় সরকারের প্রকৌশল অধিদপ্তর এডিবির অর্থায়নে এই সাঁকো নির্মাণ করে দিয়েছে। এখন সেই ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকোই বেহালার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, সেতুটি দিয়ে প্রতিদিন কড়ইবাড়িয়া ও আশপাশের ১০ গ্রামের মানুষ তালতলী, আমতলী এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতেন। একই পথে বেহালা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী আসা-যাওয়া করত। সেতুটি ভেঙে পড়ায় এখন সবাইকে টানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। গ্রামের কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে অ্যাম্বুলেন্স যেতে পারে না। স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য আনা-নেওয়া করতেও ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
স্থানীয় বাসিন্দা কালিপদ মাঝি পেশায় ইজিবাইকচালক। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘মোগো যহন সেতু হইল, তহন রাস্তা ছেল না। এখন রাস্তা হইছে, কিন্তু সেতু নাই। মোগো কপালডাই ক্যামন যেন পোড়া!’
উত্তর বেহালা গ্রামের কেশব শিকারি নামে এক কৃষক বললেন, ‘মোগো গ্রামের মানুষের জন্মই অইছে, নাই নাই হোনার লইগ্গা। নাইলে হারা জাগায় এত্ত কাম-কাইজ হয়, মোগো এই ছোট্ট কামডা (সেতু) ক্যা অয় না।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানা গেছে, তালতলী উপজেলার কড়ইবাড়িয়া ইউনিয়নের বেহালা খালের ওপর লোহার অবকাঠামোর সেতুটি প্রায় ২৫ বছর আগে নির্মিত হয়েছিল। কিন্তু নির্মাণের পর সেটির সংস্কার না করায় অ্যাঙ্গেলগুলো লোনা পানিতে ক্ষয় হয়েছে। এতে অবকাঠামো নড়বড়ে হয়ে গেছে। পরে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা সেতুটি ২০২২ সালের মার্চে হঠাৎ করে পুরো কাঠামোসহ ধসে খালে পড়ে। এরপর সেই অবস্থায় পড়ে আছে।
অধিদপ্তরটির তালতলী উপজেলা প্রকৌশলী মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অবক ঠ ম উপজ ল র ওপর ত লতল
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত বাসে ছিনতাইয়ের চেষ্টা, বাস চালিয়ে ছিনতাইকারীকে নিয়ে থানায় চালক
চলন্ত বাসে মুঠোফোন ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়েন যাত্রী বেশে ওঠা এক ছিনতাইকারী। এরপর নেমে যেতে চেষ্টা করেন তিনি, ছুরিকাঘাত করেন চালকের সহকারীকে। তবে তাঁকেসহ চালক বাস চালিয়ে নিয়ে যান নিকটবর্তী থানায়। সেখানে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
চট্টগ্রাম নগরের কাস্টমস মোড় এলাকায় গতকাল রোববার দিবাগদ রাত ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটেছে। গ্রেপ্তার ছিনতাইকারীর নাম আকবর হোসেন (২৪)। এ ঘটনায় আকবরের তিন সহযোগী বাসের জানালা দিয়ে পালিয়ে যান।
ঘটনার শিকার বাসযাত্রী আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সিটি সার্ভিসের একটি বাসে বাসায় ফিরছিলেন তিনি। এরপর নিজ আসনে বসে কানে হেডফোন দিয়ে মুঠোফোনে ইউটিউব দেখছিলেন। একপর্যায়ে তাঁর পাশে যাত্রী বেশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন তাঁর মুঠোফোনটি নিয়ে নেন। এরপর বাসের দরজা বন্ধ করে সব যাত্রীর মুঠোফোন যাচাই করতে বলা হলে অভিযুক্ত আকবর মুঠোফোনটি এক যাত্রীর কাছে ফেলে নেমে যেতে চান। বাধা দিলে ক্ষিপ্ত হয়ে আকবর ছুরি বের করে চালকের সহকারীকে ছুরিকাঘাত করেন। এ সময় চলন্ত অবস্থায় তাঁর তিন সহযোগী জানালা দিয়ে পালিয়ে যান। এরপরও বাস থামাননি চালক। তিনি বাস চালিয়ে বন্দর থানায় নিয়ে যান।
বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। পলাতক বাকি তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।