সুগন্ধি চাল রপ্তানির সময় বাড়ল ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত
Published: 28th, October 2025 GMT
সুগন্ধি চাল রপ্তানির সময়সীমা এক মাস বাড়িয়েছে সরকার। এ বৃদ্ধি ৫০ প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সুগন্ধি চাল রপ্তানি করতে পারবে। তাদের আগের সময়সীমা ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর।
রপ্তানি সময়সীমা শেষ হওয়ার প্রায় এক মাস পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার সময় বৃদ্ধির কথা জানিয়ে আমদানি-রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। আলাদা করে চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে ৫০ প্রতিষ্ঠানকে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বছর দুই দফায় মোট ১৮৭ প্রতিষ্ঠানকে সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দেয়। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রপ্তানির মেয়াদ দিয়ে ৮ এপ্রিল অনুমতি দেওয়া হয় ১৩৩ প্রতিষ্ঠানকে আর ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ দিয়ে ২৮ মে অনুমতি দেওয়া হয় ৫২ প্রতিষ্ঠানকে। যে ৫০ প্রতিষ্ঠানকে নতুন সময়সীমা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ৮ এপ্রিল অনুমতি পাওয়া। সবাই রপ্তানি করতে পারলে মোট পরিমাণ হবে ২৩ হাজার ৯৫০ টন।
সূত্রগুলো জানায়, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রপ্তানির সময়সীমা যাদের ছিল, তাদের অনেকেই রপ্তানি করতে না পেরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সময় বৃদ্ধির আবেদন জানায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত দিতে এক মাস সময় নেয়।
প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা অনুযায়ী ১০০, ১৫০, ২০০, ৩০০, ৪০০ ও ৫০০ টন করে অনুমতি দেওয়া হয় এ বছর। শর্ত হিসেবে বলা হয়, প্রতি কেজি চালের রপ্তানি মূল্য হতে হবে কমপক্ষে ১ দশমিক ৬০ মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে হিসাব করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে ১৯৫ টাকা।
অন্য শর্তের মধ্যে রয়েছে অনুমোদিত পরিমাণের বেশি চাল কেউ রপ্তানি করতে পারবে না। আর প্রতিটি চালান জাহাজীকরণ শেষে রপ্তানিসংক্রান্ত সব কাগজপত্র বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। এ অনুমোদন কোনোভাবেই হস্তান্তরযোগ্য নয়। অর্থাৎ অনুমোদিত রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নিজে রপ্তানি না করে অন্যের মাধ্যমে রপ্তানি করতে পারবে না অর্থাৎ সাব-কন্ট্রাক্ট দেওয়া যাবে না।
রপ্তানি নীতি আদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে সব সময়ই চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ, তবে সরকারের অনুমতি নিয়ে সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।
কোন বছর কত রপ্তানি
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুগন্ধি চাল রপ্তানি করে ২৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার আয় হয়েছিল। পরের বছর ২০২০-২১ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ২০ লাখ ৬০ হাজার ডলারে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই আয় আরও কমে ১০ লাখ ৭০ হাজার ডলারে নেমে আসে। এরপর ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি স্থগিত রাখে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশ সুগন্ধি চাল রপ্তানি শুরু করে। প্রথম বছর ৬৬৩ টন সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়। পরের বছরগুলোতে রপ্তানি বাড়তে থাকে, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ হাজার ৮৭৯ টনে উন্নীত হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে বছরে সুগন্ধি চাল উৎপাদিত হয় ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। প্রতিবছর গড়ে রপ্তানি হয় ১০ হাজার টন।
কোথায় রপ্তানি হয়
বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্য, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশে এ চাল রপ্তানি করে আসছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে রপ্তানিযোগ্য সুগন্ধি চালের একটি তালিকা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে কালিজিরা, কালিজিরা টিপিএল-৬২, চিনিগুঁড়া, চিনি আতপ, চিনি কানাই, বাদশাভোগ, কাটারিভোগ, মদনভোগ, রাঁধুনিপাগল, বাঁশফুল, জটাবাঁশফুল, বিন্নাফুল, তুলসী মালা, তুলসী আতপ, তুলসী মণি, মধুমালা, খোরমা, সাককুর খোরমা, নুনিয়া, পশুশাইল, দুলাভোগ ইত্যাদি।
সুগন্ধি চাল রপ্তানির সঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়—এ তিন দপ্তর জড়িত। জানা গেছে, সুগন্ধি চাল রপ্তানি করতে গেলে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সম্মতি নিতে হয়, এবারও তা নিতে হয়েছে। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমতি দিলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যদি ফাইটো স্যানিটারি সনদ না দেয়, তাহলে কেউই সুগন্ধি চাল রপ্তানি করতে পারে না।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনের তফসিলে ভোটের তারিখ ছাড়াও যা যা থাকে
নির্বাচনকে ঘিরে দেশের মানুষের কৌতূহল ঘটতে যাচ্ছে তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে। তবে এবার জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে গণভোট একই দিনে হওয়ার কথা, যে কারণে আবহ কিছুটা আলাদা।
আজ বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টায় নির্বাচন কমিশন (ইসি) তফসিল ঘোষণা করবে; এই তফসিলের মাধ্যমে ছাড়বে ভোটের ট্রেন। আর সেই ট্রেনের গন্তব্য অর্থাৎ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের তারিখেই থাকবে সবার দৃষ্টি।
আরো পড়ুন:
‘নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে কমিশন সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেবে’
ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগে জনপ্রশাসনকে চিঠি পাঠালো ইসি
যতদূর জানা গেছে, ইসি ভোটগ্রহণের যে তারিখটি ঘোষণা করবে, ওই দিন সকাল ৭টা ৩০ মিনিট থেকে বিকেল ৪টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত ভোট দেওয়ার সুবিধা থাকার কথা।
এবার যেহেতু দুটি ভোট হবে, ফলে দুটি পৃথক রঙের ব্যালট থাকবে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট হওয়ার কথা সাদা-কালো। তবে গণভোটের ব্যালটের রং হওয়ার কথা গোলাপি।
দেশের ইতিহাসে এই প্রথমবার একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট হতে যাচ্ছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিন সন্ধ্যা ৬টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তফসিলও ঘোষণা করবেন। এর আগে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) বিকালে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভি এবং বাংলাদেশ বেতারে সিইসির ভাষণ রেকর্ড করা হয়।
তফসিলের মধ্যে কী কী থাকে
তফসিলে মূলত নির্বাচন আয়োজনের শুরু থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের শপথগ্রহণ পর্যন্ত সময়সূচির বিস্তারিত বর্ণনা থাকে। সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “খুব সাধারণ ভাষায় বলতে গেলে এটি নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখের আইনি ঘোষণা।”
তফসিলে থাকে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে প্রার্থীরা কবে থেকে মনোনয়নপত্র কিনতে ও জমা দিতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশন মনোনয়নপত্র বাছাই করতে কত দিন সময় লাগবে।
বাছাইয়ে বাতিল হলে প্রার্থীর আপিল করার সময়সীমা।
প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পাওয়ার পর তালিকা প্রকাশের তারিখ।
নির্বাচনি প্রচার কখন থেকে শুরু হবে এবং কতদিন চলবে।
ভোটের তারিখ ও সময়, ভোট গণনার প্রক্রিয়া ও স্থান।
নির্বাচনী প্রতীক ঘোষণা ও প্রচারের সূচি।
তফসিলের সিদ্ধান্ত কীভাবে নেওয়া হয়
সংবিধানে কিছু বিষয় নিশ্চিতভাবে বলা থাকে। তাই সেগুলোতে আলাদা সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। উদাহরণস্বরূপ, সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। তবে এবারের নির্বাচন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে হচ্ছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার সাংবিধানিক ক্ষমতার বলে সংসদ ভেঙে দেন এবং এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেন। তাই এবার ৯০ দিনের বাধ্যবাধকতা নেই; কমিশন দুই মাসের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করছে।
ঢাকা/এএএম/রাসেল