সুগন্ধি চাল রপ্তানির সময়সীমা এক মাস বাড়িয়েছে সরকার। এ বৃদ্ধি ৫০ প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রযোজ্য। আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলো সুগন্ধি চাল রপ্তানি করতে পারবে। তাদের আগের সময়সীমা ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর।

রপ্তানি সময়সীমা শেষ হওয়ার প্রায় এক মাস পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার সময় বৃদ্ধির কথা জানিয়ে আমদানি-রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। আলাদা করে চিঠির অনুলিপি দেওয়া হয়েছে ৫০ প্রতিষ্ঠানকে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বছর দুই দফায় মোট ১৮৭ প্রতিষ্ঠানকে সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দেয়। ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রপ্তানির মেয়াদ দিয়ে ৮ এপ্রিল অনুমতি দেওয়া হয় ১৩৩ প্রতিষ্ঠানকে আর ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ দিয়ে ২৮ মে অনুমতি দেওয়া হয় ৫২ প্রতিষ্ঠানকে। যে ৫০ প্রতিষ্ঠানকে নতুন সময়সীমা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো ৮ এপ্রিল অনুমতি পাওয়া। সবাই রপ্তানি করতে পারলে মোট পরিমাণ হবে ২৩ হাজার ৯৫০ টন।

সূত্রগুলো জানায়, ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রপ্তানির সময়সীমা যাদের ছিল, তাদের অনেকেই রপ্তানি করতে না পেরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সময় বৃদ্ধির আবেদন জানায়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত দিতে এক মাস সময় নেয়।

প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা অনুযায়ী ১০০, ১৫০, ২০০, ৩০০, ৪০০ ও ৫০০ টন করে অনুমতি দেওয়া হয় এ বছর। শর্ত হিসেবে বলা হয়, প্রতি কেজি চালের রপ্তানি মূল্য হতে হবে কমপক্ষে ১ দশমিক ৬০ মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে হিসাব করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে ১৯৫ টাকা।

অন্য শর্তের মধ্যে রয়েছে অনুমোদিত পরিমাণের বেশি চাল কেউ রপ্তানি করতে পারবে না। আর প্রতিটি চালান জাহাজীকরণ শেষে রপ্তানিসংক্রান্ত সব কাগজপত্র বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। এ অনুমোদন কোনোভাবেই হস্তান্তরযোগ্য নয়। অর্থাৎ অনুমোদিত রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নিজে রপ্তানি না করে অন্যের মাধ্যমে রপ্তানি করতে পারবে না অর্থাৎ সাব-কন্ট্রাক্ট দেওয়া যাবে না।

রপ্তানি নীতি আদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে সব সময়ই চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ, তবে সরকারের অনুমতি নিয়ে সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।

কোন বছর কত রপ্তানি

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুগন্ধি চাল রপ্তানি করে ২৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার আয় হয়েছিল। পরের বছর ২০২০-২১ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ২০ লাখ ৬০ হাজার ডলারে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এই আয় আরও কমে ১০ লাখ ৭০ হাজার ডলারে নেমে আসে। এরপর ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি স্থগিত রাখে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশ সুগন্ধি চাল রপ্তানি শুরু করে। প্রথম বছর ৬৬৩ টন সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়। পরের বছরগুলোতে রপ্তানি বাড়তে থাকে, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ হাজার ৮৭৯ টনে উন্নীত হয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে বছরে সুগন্ধি চাল উৎপাদিত হয় ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। প্রতিবছর গড়ে রপ্তানি হয় ১০ হাজার টন।

কোথায় রপ্তানি হয়

বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্য, ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশে এ চাল রপ্তানি করে আসছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে রপ্তানিযোগ্য সুগন্ধি চালের একটি তালিকা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে কালিজিরা, কালিজিরা টিপিএল-৬২, চিনিগুঁড়া, চিনি আতপ, চিনি কানাই, বাদশাভোগ, কাটারিভোগ, মদনভোগ, রাঁধুনিপাগল, বাঁশফুল, জটাবাঁশফুল, বিন্নাফুল, তুলসী মালা, তুলসী আতপ, তুলসী মণি, মধুমালা, খোরমা, সাককুর খোরমা, নুনিয়া, পশুশাইল, দুলাভোগ ইত্যাদি।

সুগন্ধি চাল রপ্তানির সঙ্গে খাদ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়—এ তিন দপ্তর জড়িত। জানা গেছে, সুগন্ধি চাল রপ্তানি করতে গেলে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সম্মতি নিতে হয়, এবারও তা নিতে হয়েছে। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমতি দিলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যদি ফাইটো স্যানিটারি সনদ না দেয়, তাহলে কেউই সুগন্ধি চাল রপ্তানি করতে পারে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সময়স ম র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

বন্ধ থাকবে সরকারি গাড়ি কেনা, সরকারি খরচে বিদেশভ্রমণ

চলতি অর্থবছরে সরকারি পর্যায়ে সব ধরনের যানবাহন কেনা বন্ধ থাকবে। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানের যেসব গাড়ি ১০ বছরের বেশি পুরোনো হয়ে গেছে, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সেসব গাড়ি প্রতিস্থাপন বা রিপ্লেস করা যাবে। গাড়ির পাশাপাশি বন্ধ থাকবে সরকারি অর্থায়নে সব ধরনের বৈদেশিক সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও কর্মশালায় অংশগ্রহণও। তবে অত্যাবশ্যকীয় বিবেচনায় কিছু ক্ষেত্রে বিদেশভ্রমণ করার সুযোগ থাকবে। সে ক্ষেত্রে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর যে পরিপত্র জারি করা হয়েছে, সেটি অনুসরণ করতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ গতকাল সোমবার এ–সংক্রান্ত নির্দেশনা জারি করেছে। সরকারের অগ্রাধিকার খাতগুলোর প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে সীমিত সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত ও সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের লক্ষ্যে এ নির্দেশনা জারি করা হয়। নির্দেশনায় সরকারি অর্থে গাড়ি কেনা ও বিদেশভ্রমণের ক্ষেত্রে এসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রাক্কলন অবশ্যই মূল বাজেটে প্রদর্শিত মোট ব্যয়সীমার (পরিচালন ও উন্নয়ন) মধ্যে রাখতে হবে। কোনোভাবেই প্রাক্কলিত বরাদ্দের অতিরিক্ত অর্থ দাবি করা যাবে না। এ ছাড়া ভূমি অধিগ্রহণ খাতে পরিচালন বাজেটে বরাদ্দ করা অর্থ ব্যয়ও বন্ধ থাকবে। তবে উন্নয়ন বাজেটের আওতায় অধিগ্রহণ কার্যক্রমের ক্ষেত্রে সব আনুষ্ঠানিকতা মেনে অর্থ বিভাগের অনুমতি সাপেক্ষে অর্থ ব্যয় করা যাবে। আর উন্নয়ন বাজেটের আওতায় পরিকল্পনা কমিশনের অনুকূলে ‘বিশেষ প্রয়োজনে উন্নয়ন সহায়তা’ খাতে সরকারের যে বরাদ্দ দেওয়া আছে, তা মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অনুকূলে ‘থোক বরাদ্দ’ হিসেবে ব্যয় করা যাবে। সে ক্ষেত্রেও অর্থ বিভাগের অনুমতি নিতে হবে।

পরিপত্রে আরও বলা হয়, চলতি অর্থবছরের ‘অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা’ খাত থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ করা হলে সংশোধিত বাজেটে তার প্রতিফলন নিশ্চিত করতে হবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত চলমান স্কিম এবং ইতিমধ্যে নতুন কোনো স্কিম অনুমোদিত হলে তার জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব প্রাক্কলনে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অননুমোদিত কোনো স্কিমের জন্য অর্থ বরাদ্দের প্রস্তাব করা যাবে না।

এ ছাড়া সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বা এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা সীমিত রাখতে বলা হয় নির্দেশনায়। পাশাপাশি সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করতে প্রয়োজনে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দেওয়ার কথাও বলা হয়। সংশোধিত এডিপির মূল অংশে বরাদ্দবিহীনভাবে কোনো প্রকল্প রাখা যাবে না বলে নির্দেশনায় বলা হয়েছে।

বৈদেশিক ঋণ বা অনুদানে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা ও পুনর্বাসন–সম্পর্কিত প্রকল্প এবং চলতি অর্থবছরে সমাপ্তির জন্য নির্ধারিত প্রকল্পকে অগ্রাধিকার দিতে বলে অর্থ বিভাগ। বৈদেশিক ঋণ বা অনুদান চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে এমন প্রকল্প সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ারও কথা বলা হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী, ধীরগতির প্রকল্প থেকে বরাদ্দ কমিয়ে দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে প্রয়োজন অনুযায়ী বরাদ্দ দেওয়া যাবে। বরাদ্দের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জলবায়ু, কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং দুর্যোগ মোকাবিলা ও পুনর্বাসন–সংশ্লিষ্ট প্রকল্প।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বন্ধ থাকবে সরকারি গাড়ি কেনা, সরকারি খরচে বিদেশভ্রমণ
  • অস্ত্র মামলায় সম্রাটের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
  • এপস্টেইন, ম্যাক্সওয়েল ও ওয়াইনস্টিনকে নিজ বাড়িতে নিয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের প্রিন্স অ্যান্ড্রু
  • জবির ২০২৫–২৬ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
  • চোটের কারণে অ্যাশেজে প্রথম টেস্টে নেই কামিন্স, অধিনায়ক স্মিথ
  • অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনশনরত রাবির চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের ৫ শিক্ষ
  • জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি (পাস) ও সার্টিফিকেট কোর্সের প্রথম বর্ষ পরীক্ষার সময়সূচি
  • উত্তরা ইপিজেডের ৪টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা
  • নারী বিশ্বকাপের সেমিফাইনালের সময়সূচি