সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার চণ্ডীপুল এলাকায় গণসমাবেশ করেছে স্থানীয় বিএনপি। সমাবেশে জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীকে সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ) আসনে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান নেতা–কর্মীরা।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার এবং ধানের শীষ প্রতীকের জনসম্পৃক্ততা গড়ে তোলার লক্ষ্যে দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপি এ কর্মসূচির আয়োজন করে। এতে আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

কর্মসূচিতে দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা থেকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের বিপুল কর্মী-সমর্থক অংশ নেন। সমাবেশে বক্তারা আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীকে সিলেট-৩ আসনে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান। তাঁরা বলেন, ছাত্ররাজনীতি থেকে শুরু করে যুবদলে এবং এখন বিএনপির রাজনীতি করছেন কাইয়ুম চৌধুরী। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনি অসংখ্য মামলা ও দমন-পীড়নের শিকার হয়েও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের পাশে থেকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন। গত বছরের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি আহত হন। তাঁর মতো পরীক্ষিত রাজনীতিবিদকে তৃণমূলের কর্মীরা দলের প্রার্থী হিসেবে চান।

সমাবেশে আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘জনগণকে ভয় দেখিয়ে বা কৌশলের আশ্রয়ে রাজনীতি করতে চায়, এমন শক্তির বিরুদ্ধে বিএনপি দৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। যারা ছলচাতুরির মাধ্যমে জনগণকে ঠকাতে চায়, তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় আমরা ভেঙে দেব।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি আন্দোলনের ও মাঠের কর্মী হিসেবে বিশ্বাস করি, যদি দল আমাকে আগামী নির্বাচনে এ অঞ্চল থেকে ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করে, তাহলে সিলেট–৩ আসনের সকল নেতা-কর্মী ঐক্যবদ্ধভাবে আমার পক্ষে কাজ করবেন।’ পরে তিনি উপস্থিত নেতা–কর্মীদের ধানের শীষের পক্ষে থাকার শপথ পাঠ করান।

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি বদরুল ইসলাম জয়দু। জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক তাজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির উপদেষ্টা জিল্লুর রহমান সুয়েব, নিজাম উদ্দিন তরফদার, নুরুল আমিন, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হাসান আহমদ পাটোয়ারী, মামুনুর রশিদ, আনোয়ার হোসেন, ওয়াহিদুজ্জামান সুফি চৌধুরী প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র র জন ত উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদ দমন এবং সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠনে আলেমদের ভূমিকা

মানব সভ্যতার ইতিহাসে শান্তি ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রশ্নটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ইসলাম এসেছে দুনিয়ায় শান্তি, ন্যায়বিচার এবং সত্য প্রতিষ্ঠার বার্তা নিয়ে। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর জন্য ন্যায়ের ওপর দৃঢ়ভাবে অবস্থানকারী হও এবং সত্যের সাক্ষ্য দাও।” [সুরা নিসা : আয়াত ১৩৫]

অন্যদিকে সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদ সমাজের শান্তি বিনষ্ট করে, রাষ্ট্রকে করে অস্থির, জনগণকে করে নিপীড়িত। তাই ইসলামি সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে আলেমদের ভূমিকা অপরিহার্য। আলেমরা হলেন ‘নবীগণের উত্তরাধিকারী’ [আবু দাউদ : হাদিস ৩৬৪১]। তাদের দায়িত্ব সমাজকে সত্যের পথে আহ্বান করা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, রাষ্ট্রনায়ককে সৎ পরামর্শ দেওয়া এবং জনগণকে ন্যায় ও শান্তির দিকে পরিচালিত করা।

সন্ত্রাস দমনে আলেমদের ভূমিকা

ইসলামে সন্ত্রাস, খুন-খারাবি ও নিরীহ মানুষের ওপর হামলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করল, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে হত্যা করল।” [সুরা মায়েদা : আয়াত ৩২]

সন্ত্রাস মূলত ইসলামের শিক্ষা ও মহানবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহর পরিপন্থী। আলেমদের কাজ হচ্ছে কুরআন-সুন্নাহর এই সত্যকে জনগণের সামনে তুলে ধরা, বিভ্রান্ত তরুণদের সঠিক পথে ফেরানো, মসজিদ-মাদরাসা থেকে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক খুতবা ও বক্তব্য প্রদান।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “মুসলিম সেই ব্যক্তি, যার হাত ও জবান (ক্ষমতা ও ভাষা) থেকে অপর মুসলিম নিরাপদ থাকে।” [সহিহ বুখারি : হাদিস ১০]

আজকের বিশ্বে ‘সন্ত্রাসবাদ’ অনেক সময় রাজনৈতিক স্বার্থে সংজ্ঞায়িত হলেও ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে আলেমদের কর্তব্য হচ্ছে, প্রকৃত ইসলামি অবস্থান ব্যাখ্যা করা, যাতে যুবসমাজ ভুল পথে না যায় এবং রাষ্ট্রে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়।

দুর্নীতি দমনে আলেমদের ভূমিকা

দুর্নীতি হলো রাষ্ট্রের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়ার অন্যতম প্রধান রোগ। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করো না।” [সুরা আরাফ : আয়াত ৫৬] দুর্নীতিকে ইসলামে ‘খেয়ানত’ বলা হয়েছে। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” [সহিহ মুসলিম : হাদিস ১০১]

আলেমদের দায়িত্ব দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া, সরকারি ও বেসরকারি খাতে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার দাবি তোলা, জনগণকে ইসলামি আমানতদারি ও জবাবদিহিতার শিক্ষা দেওয়া। ঐতিহাসিকভাবে দেখা যায়, ইসলামি খেলাফতের আলেমরা সবসময় শাসকদের পরামর্শক ও সমালোচক হিসেবে কাজ করেছেন, যাতে রাষ্ট্রে দুর্নীতি দমন হয়।

ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধে আলেমদের ভূমিকা

ফ্যাসিবাদ মানে হলো একক দল বা ব্যক্তির স্বৈরাচারী ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা, যা মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ফেরাউনের শাসনব্যবস্থাকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে বলেছেন, “ফেরাউন পৃথিবীতে উদ্ধত আচরণ করেছিল এবং সে তার প্রজাদের বিভিন্ন দলে বিভক্ত করেছিল; তাদের মধ্যে একদলকে সে দুর্বল করে রেখেছিল।” [সুরা কাসাস : আয়াত ৪]

এটি স্পষ্ট ফ্যাসিবাদী শাসনের নিদর্শন। আল্লাহর নবী মুসা আলাইহিস সালাম আল্লাহর নির্দেশে সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন। আলেমদেরও আজকের বিশ্বে একই ভূমিকা পালন করতে হবে ফ্যাসিবাদী শাসন, স্বৈরতন্ত্র ও দমননীতির বিরুদ্ধে জনগণকে জাগ্রত করার জন্য। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জুলুমকারী শাসকের সামনে সত্য কথা বলা সর্বোত্তম জিহাদ।” [সুনান আবু দাউদ : হাদিস ৪৩৪৪] অতএব, আলেমদের উচিত রাষ্ট্রীয় অন্যায় ও ফ্যাসিবাদী আচরণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া।

সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠনে আলেমদের ভূমিকা

ইসলামের লক্ষ্য শুধু উপাসনা নয়, বরং একটি ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আমি চাই পৃথিবীতে যাদের দুর্বল করা হয়েছিল তাদেরকে নেতা বানাতে এবং তাদেরকে উত্তরাধিকারী করতে।” [সুরা কাসাস : আয়াত ৫]

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাষ্ট্র গঠনের ক্ষেত্রে শিক্ষা, ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক সমতা ও সামাজিক নিরাপত্তাকে ভিত্তি করেছিলেন। আলেমরা এই দিকগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন- 

শিক্ষা প্রসার : সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা।
সামাজিক ন্যায় : ধনী-গরিবের বৈষম্য দূরীকরণে ইসলামি অর্থনীতি প্রচার।
নৈতিক নেতৃত্ব : রাষ্ট্রনায়কদের সঠিক পরামর্শ প্রদান।
গবেষণা ও দাওয়াহ : আধুনিক সমস্যার সমাধানে ইসলামি ফিকহের প্রয়োগ।

ঐতিহাসিক প্রমাণ

ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায়, আলেমরা সবসময় ন্যায় ও সত্যের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন। যেমন: ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহ. খলিফার অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্য উচ্চারণ করেছিলেন। শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলবি রহ. ভারতবর্ষে রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারে নেতৃত্ব দেন। বাংলাদেশেও আলেমরা স্বাধীনতা আন্দোলন ও সামাজিক সংস্কারে ভূমিকা রেখেছেন।

পরিশেষে কথা হলো সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদ মানবসমাজকে অস্থির করে তোলে, রাষ্ট্রকে দুর্বল করে। ইসলামের দৃষ্টিতে এগুলো ‘ফাসাদ ফিল্ আরদ’। আলেমদের উচিত কুরআন-হাদিসের আলোকে জনগণকে সচেতন করা, শাসকদের সত্যের পরামর্শ দেওয়া এবং ন্যায়ভিত্তিক সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “তোমরা সৎকাজে সহযোগিতা করো এবং গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনে সহযোগিতা করো না।” [সুরা মায়েদা : আয়াত ২]

অতএব, আলেমদের দায়িত্ব শুধু ইবাদত শিক্ষা নয়; বরং সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদ দমনে নেতৃত্ব দেওয়া এবং একটি শান্তিপূর্ণ, ন্যায়ভিত্তিক ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গড়ে তোলা।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ ইসলামি লেখক ফোরাম; পরিচালক, সম্পাদনা কেন্দ্র

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রশাসন পক্ষপাত করবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • দুর্নীতি ও ফ্যাসিবাদ দমন এবং সমৃদ্ধ রাষ্ট্র গঠনে আলেমদের ভূমিকা