কর্নাক মন্দিরে স্মৃতিময় এক সোনালী বিকেল
Published: 28th, October 2025 GMT
দিনটি ছিল ৩ জানুয়ারি ২০২৫, বিকেল ৪টা। শীতের বিকেল। সূর্য তখন ধীরে ধীরে পশ্চিমে হেলে যাচ্ছে। আমি দাঁড়িয়ে আছি প্রাচীন থেবস্ শহরের বুকে, মিশরের লুক্সরে অবস্থিত বিশাল এবং ইতিহাসে পূর্ণ কর্নাক মন্দির কমপ্লেক্সের প্রবেশপথে। প্রাচীন মিশরীয়দের প্রশাসনিক ও ধর্মীয় কর্মকান্ডের কেন্দ্র ছিল এই মন্দির।
এটি বিশ্বের বৃহত্তম মন্দির কমপ্লেক্স এবং মিশরে প্রাচীন মিশরীয়দের গুরুত্বপূর্ণ যতগুলো মন্দির আছে তার মধ্যে অন্যতম। মন্দিরে প্রবেশ করার জন্য টিটিক কাউন্টারে যেতে-না-যেতেই আমার হৃদয় ছন্দে-আনন্দে ধুকধুক করছে, চোখে স্বপ্নের মত ঝলকানি। এ এক বিশাল আনন্দ-অনুভূতি যা ভাষায় পূর্ণরুপে প্রকাশ করা সম্ভব নয়.
টিকিট কাটার মুহূর্ত থেকে শুরু:
মন্দিরে প্রবেশের আগে প্রথম কাজ ছিল টিকিট নেওয়া। মূল প্রবেশদ্বারের এক পাশেই টিকিট কাউন্টার। সামনে একটি বোর্ড ঝুলানো, সেখানে লেখা- “উই একসিপ্ট ভিসা কার্ড অনলি”।
কাউন্টারের পাশেই এটিএম মেশিনের মত স্বয়ংক্রিয় অনলাইন টিকিট কাটার মেশিন; এটিএম কার্ড, ভিসা কার্ড, ক্রেডিট কার্ড মেশিনে প্রবেশ করিয়ে কারো সাহায্য ছাড়াই নিজের টিকিট নিজেই সংগ্রহ করা যায়।
মিশরের দর্শনীয় স্থানগুলোর প্রবেশদ্বারে আধুনিকতার ছোঁয়া তথা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে। তাই স্বয়ংক্রিয় অনলাইন টিকিট কাটার মেশিন বুথে গেলাম, কার্ড কাজ না করার কারণে ফিরে গেলাম অন্য কাউন্টারে।
বিশাল লাইনে দাঁড়ালাম। সময়টা ভালভাবে কাটানোর জন্য লাইনে দাঁড়ানো অপেক্ষমাণ কয়েকজন বিভিন্ন দেশ থেকে আসা পর্যটকদের সাথে কথা বলতে বলতে কাউন্টারের সামনে চলে আসলাম।
মিশরে ইজিপ্টাইন পাউন্ডস্ ও ইউএস ডলার চলে। প্রতিটি টিকিটের মূল্য ৫৫০ ইজিপ্টাইন পাউন্ডস্ । পাউন্ডস্ জমা দিতে-না-দিতেই কাউন্টার ম্যান বলল, “উই একসিপ্ট ভিসা কার্ড অনলি” নো ক্যাশ।
আবার কার্ড দিলাম, কাজ হলো না। কাউন্টার ম্যান অনেক চেষ্টা করল কিন্তু কোন কাজ হলো না। মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল যে, ছন্দে-আনন্দে ধুকধুক করা হৃদয়, চোখে স্বপ্নের মতো ঝলকানি আর বিশাল আনন্দ-অনুভূতি কি মাটি হয়ে যাবে! না!!
তা হতে দেয়া যাবে না। অবশেষে বুদ্ধি কষলাম। লাইনে দাঁড়ানো কয়েকজনকে ঘটনা খুলে বললার পরে একজন হৃদয়বান ব্যক্তি বলল যে, তুমি আমাকে ৫৫০ পাউন্ডস্ ক্যাশ দাও, আমি তোমাকে টিকিট সংগ্রহ করে দিচ্ছি। কথামত টিকিট সংগ্রহ হয়েগেছে। লোকটিকে ধন্যবাদ দিয়ে প্রবেশ করতেছি মনের আনন্দে...
প্রবেশদ্বারের প্রথম দৃশ্য- মূর্তির সারি ও প্রতীকী সুরক্ষা:
মূল প্রবেশপথ দিয়ে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ল মন্দিরের দরজার দু’পাশে সারিবদ্ধ অনেক মূর্তি; অনেকটা সিংহদেহী মানুষের মূর্তি; স্ফিনক্সের (spinx) সারি। প্রতিটি স্ফিনক্স যেন ইতিহাসের নিস্তব্ধ প্রহরী। মনে হচ্ছিল যেন হাজার বছর ধরে তারা পাহারা দিচ্ছে তাদের দেবতাদের প্রাসাদ। এগুলো হাজার বছর ধরে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
এগুলোর চোখে চোখ পড়তেই তারা যেন জীবন্ত হয়ে উঠল; বলতে শুরু করলো, ও হে পর্যটক বন্ধু! তোমাকে এই প্রাচীন রাজা ও দেবতাদের মন্দিরে স্বাগতম, সুদূর পথ পারি দিয়ে এসেছো প্রাচীন রাজা ও দেবতাদের ইতিহাস শুনতে, পড়তে ও দেখতে।
বেশ, ভালো, এবার সামনে চল, দেখ আর ইতিহাস শুন...সামনেই একটি মাঠ; মাঠটি পেরিয়ে এক ছোট ফুলের মতো আকৃতির প্রবেশপথ নজর কেড়েছে। ওটা পার হতেই আমি পৌঁছলাম মন্দিরের মূল প্রাঙ্গণে; যেখানে পাথরের গঠন আর খোদাইগুলোর জগৎ শুরু হলো...
চোখধাঁধানো মন্দিরের অভ্যন্তর দৃশ্য:
কর্নাক মন্দিরের সবচেয়ে চোখধাঁধানো অংশ হলো ‘হাইপোস্টাইল হল; একটি বিশাল হল, যেখানে ১৩৪টি পাথরের স্তম্ভ মাথা তুলে আকাশ স্পর্শ করে আছে মনে হয়। প্রতিটি স্তম্ভের পৃষ্ঠে খোদাই করা আছে পাখি, পশু, দেবতা, এবং প্রাচীন মিশরীয় হায়ারোগ্লিফিক লেখা যেন জীবন্ত; একেকটা পাথরের স্তম্ভ যেন কথা বলছে, প্রাচীন কাব্যের মত।
এত বড়, এত ভারী স্তম্ভ কিভাবে সেই সময় তোলা হয়েছিল এই প্রশ্ন আমার মাথায় বারবার ঘুরে বেড়াচ্ছিল। আর খোদাইয়ের নিখুঁততা ও সৌন্দর্যতা দেখে মুগ্ধ না হয়ে থাকা যায় না। এসব নিখুঁত কারুকার্য ও সৌন্দর্যতা আপনাকে মোহিত করে মুহূর্তের মধ্যে নিয়ে যাবে সেই প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার জগতে। যে যুগে ছিল না আজকের মত এত অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, মেশিনারিজ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি।
মনোমুগ্ধকর স্তম্ভগুলো কীভাবে বানানো হয়েছিল তা জানার চেষ্টা:
মন্দিরের ভিতরে পর্যটক গাইড ও স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে জানতে পারলাম যে, প্রাচীন মিশরীয় র্যাম্প পদ্ধতি ব্যবহার করে পাথর উত্তোলন করতেন; এটি এমন একটি পদ্ধতি যা পাথর সরানোর জন্য বড় আকারের ঢালু পথ তৈরি করে পাথরকে নির্দিষ্ট উচ্চতায় পৌঁছে দেয়া হত।
বিশাল আকৃতির পাথরগুলো নীলনদ-নদীপথে আনা হতো, তারপর মাটি বা কাঠের ঢালু র্যাম্পে গড়িয়ে তোলা হতো উপরে। এভাবে পাথরের ওপর পাথর সাজিয়ে তৈরি হয়েছিল ১৩৪টি আকাশ চুম্বি স্তম্ভ (পিলার) ।
একেকটি পিলারের উচ্চতা প্রায় ৪৬-৭৯ফুট, ব্যাস প্রায় ৬.৫-১১.৫ফুট ও পিলারের গোলাকার পরিধি প্রায় ২০-৩৬ফুট। এই মন্দিরটির কাজ শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৪০০০ বছর পূর্বে এবং এর সম্প্রসারণ কাজ প্রায় ২০০০ বছর ধরে চলছিল।
দেয়ালে লেখা প্রাচীন গল্প আর ইতিহাস:
মন্দিরের দেয়ালগুলোতে খোদাই করা ছবির মধ্যে ছিল প্রাচীন মিশরের রাজারা, যোদ্ধারা, দেব-দেবী; দেবতা আমুন-রা’র (Amun-Ra)মূর্তি থেকে শুরু করে রাজাদের যুদ্ধের দৃশ্য, সিংহাসনে বসার দৃশ্য এবং তাদের নানা আচার-অনুষ্ঠানের চিত্র, সবই যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে ছিল দৃশ্যপটে।
প্রতিটি ছবি যেন এক একটি জীবন্ত গল্পের অংশ। রাজা ও ফারাওরা যেভাবে দেবতা আমুন-রা’র (Amun-Ra) কাছে ভক্তি নিবেদন করত, সেটাও এই প্রতিকৃতিগুলো থেকে বুঝতে পারলাম। প্রতিটি খোদাই আমাকে মনে করিয়ে দেয় প্রায় দুই হাজার বছর পূর্বের প্রাচীন মিশরীদের ঐতিহ্য ও মানুষের বিশ্বাস। যদিও দেয়ালে খোদাই করা লেখা আর প্রতীকগুলো পড়তে পারিনি, কিন্তু তার গভীরতা অনুভব করেছিলাম।
দৃশ্যপটে পবিত্র হ্রদের শান্ত জল:
মন্দিরের এক পাশেই আছে একটি আয়াতাকার পবিত্র হ্রদ। একসময় এই হ্রদটি ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত হত। আজ সে জল শান্ত, কিন্তু যেন তার ভেতর জমে আছে হাজার বছরের স্মৃতি। আমি সেখানে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ থেমে গেলাম, সূর্যের শেষ আলো হ্রদের জলে প্রতিফলিত হতেই চোখের সামনে ভেসে উঠল মায়াজাল; সেই প্রাচীনতার রূপ, যা দেখে মুগ্ধ হলাম।
পর্যটকদের আনন্দ ও ছবি তোলার খুশি:
আমার সঙ্গে অনেক বিদেশী পর্যটকও ছিল, যারা উৎসাহভরে চোখধাঁধানো সারা মন্দির ঘুরে দেখছিল। বিভিন্ন ভাষায় তারা কথা বলছিল, সবাই কর্নাক মন্দিরের প্রাচীন ইতিহাসের মহিমা অনুভব করছিল।
আমার আশেপাশে বিদেশী পর্যটকদের মুখে বলতে শুনেছিলাম যে, তারা সবাই মিশরের এই ঐতিহ্যের কাছে মুগ্ধ হয়েছিল। আমার ক্যামেরায় আমি যতগুলো ছবি তুললাম, সেগুলো শুধু ছবিই নয়, ভ্রমণ সময়ের প্রমাণ ও প্রাচীন ইতিহাসের ছোঁয়া স্মৃতি বিজড়িত এক সোনালী বিকেল।
ছবি তোলা আমার কাছে ছিল এক অসাধারণ আনন্দের উৎস, কারণ ছবি বলবে সে মুহূর্তের আনন্দ, সৌন্দর্য ও গভীরতার কথা, তুলে ধরবে স্মৃতি আর প্রাচীন ইতিহাসের কথা।
ছবিগুলো যখন দেখি; তখন চোখের সামনে ভেসে উঠে প্রাচীন মিশরীয় ইতিহাসের রাজা, যোদ্ধা, দেব-দেবী, ও তাদের নানা আচার-অনুষ্ঠানের প্রতিচ্ছবি এবং রাজা ও ফারাওরা যেভাবে দেবতা আমুন-রা’র (Amun-Ra) কাছে ভক্তি নিবেদন করত, এর সবই মায়াজালে স্পষ্ট ফুটে উঠে।
আরও ফুটে উঠে বিদেশী পর্যটকদের সঙ্গে ঘুরে বেড়ানো, নানা স্থানের ছবি তোলা ও কথোপকথনের এক অসাধারণ আনন্দের দিন কাটানোর মুহূর্ত। প্রতিটি ছবি যেন একেকটি স্মৃতির দরজা খুলে দেয়।
প্রশাসনিক ও ধর্মীয় কেন্দ্রের নিদর্শন:
কর্নাক শুধু ধর্মীয় মন্দিরই নয়, এটি ছিল প্রাচীন মিশরের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কেন্দ্রও। বর্তমানে এটি প্রাচীন মিশরের রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জীবনের এক বিস্ময়কর দলিল হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে মিশরের বুকে।
এখানেই ফারাওরা রাজনীতি চালাতেন, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান করতেন। এখানকার প্রতিটি স্থাপত্য, প্রতিটি খোদাই এই দুই দিকের মেলবন্ধন ফুটিয়ে তোলে এক অতুলনীয় সৌন্দর্য।
স্থাপত্যের চমৎকার ও আকাশচুম্বি বিশাল পিলারগুলো কীভাবে স্থানান্তড়িত ও নির্মিত হয়েছিল, তার কৌশল এখনও রহস্যে ঘেরা।
তবে স্পষ্ট, প্রাচীন ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা ছিল অসাধারণ। প্রতিটি পাথরে সূক্ষ্ম নকশা আর চিত্র-রেখা, অঙ্কিত চিহ্ন কেবল শৈল্পিক নয়, বরং ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও রাষ্ট্রীয় কাজের প্রতীক ছিল। এই স্থাপত্যের নিপুণতা দেখে মন্দির থেকে বের হতে মনে চাচ্ছিলনা।
কিন্তু সময় শেষ; সোনালী বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে গেল, যথা সময়ে রাত্রিযাপনের স্থান হোটেলে চলে যেতে হবে। যদিও পুরো মন্দিরটি ঘুরে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল, তবুও মনে হচ্ছিল যে, আরও কিছুক্ষণ সময় থাকতে পারলে প্রতিটি শৈল্পিক আকাশচুম্বি স্তম্ভের গায়ে খোদাই করা নকশা, রেখা-চিত্র, বর্ণ ও মূর্তির সাথে আরও বেশিক্ষণ কথা বলতে পারতাম, শুনতে পেতাম আরও আরও প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার ইতিহাস। সময় স্বল্পতা যে কখনও কাউকে কোন দর্শনীয় স্থানে স্থির থাকতে দেয় না; অগ্রে চলতে বাধ্য করে।
মন্দির থেকে বিদায়:
ঘুরে ঘুরে, ছবি তুলতে তুলতে, মন্দিরের প্রতটি কোণার সৌন্দর্য উপলব্ধি করে বিকেল শেষ করলাম। আজকের এই যাত্রা ছিল শুধুমাত্র চোখে দেখার নয়, মন থেকে অনুভব করার। প্রচীনতা ও ইতিহাসের সঙ্গে একাত্ম হয়ে এই কার্নাক মন্দির আমার হৃদয়ে একটি চিরস্থায়ী স্মৃতি হয়ে রইল।
ব্যক্তিগত অনুভূতি:
“কর্নাক মন্দির শুধু পাথর ও মূর্তির সংকলন নয়, এটি প্রাচীন মিশরের প্রাণ, ইতিহাস ও বিশ্বাসের এক অমর নিদর্শন। আমার চোখে এক মায়াবী দুনিয়া, যেখানে ইতিহাস আর প্রকৃতি একাকার।
আজও এখানকার প্রতিটি পাথর, স্থাপত্য, প্রতিটি নকশা গল্প আর ইতিহাস বলে, প্রতিটি কোণায় ভেসে উঠে গানের সুর, যা আমাদের নিয়ে যায় সেই গৌরবময় অতীতে। এটাই প্রকৃত জাদুকরী প্রাচীনত্ব। মন্দিরে ছবি তোলা আমার জন্য এক আনন্দের কাজ, কারণ প্রতটি ছবিতে জমে থাকে এক অন্য দুনিয়ার জাদু।
আমার চোখে দেখা মিশরের জাদুকরী প্রাচীনত্ব কর্নাক মন্দির ভ্রমণ শেষে মনের গভীরে এক অনুভূতি জাগলো- “ যদি সমগ্র পৃথিবীটাকে একটি গ্রন্থ ভাবা হয়, তা হলে প্রতিটা রাষ্ট্র হলো গন্থের একেকটি অধ্যায় আর রাষ্ট্রের রীতিনীতি, মানুষের জীবনপ্রকৃতি; সংস্কৃতি ও দর্শনীয় স্থানগুলো হলো একেকটি পাতা; এই পাতাগুলো পড়ে জ্ঞান অর্জন করার জন্য অবশ্যই দেশ-বিদেশ ভ্রমণ ও দর্শনীয় স্থানগুলো পরিদর্শন করতে হবে”।
---০---
লেখক-
ডা. গাজী খায়রুজ্জামান
(হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, স্বাস্থ্য বিষয়ক কলামিষ্ট ও লেখক)
0174 38 34 816
[email protected]
আরো পড়ুন
চা পানের গুণাগুণ
নারায়ণগঞ্জে আধুনিক পোশাকের ব্র্যান্ড ব্লু ড্রিমের শোরুম উদ্বোধন
নিস্তব্দ হোয়াইট চ্যাপেল
২৩১/১ বঙ্গবন্ধু সড়ক (৬ষ্ঠ তলা, লিফটের ৫)
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবন, নারায়ণগঞ্জ
নির্বাহী সম্পাদক: মোশতাক আহমেদ (শাওন)
ফোন:+৮৮০১৯৩৩-৩৭৭৭২৪
ইমেইল : [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ বা ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
© ২০২৫ | সকল স্বত্ব নারায়ণগঞ্জ টাইমস কর্তৃক সংরক্ষিত | উন্নয়নে ইমিথমেকারস.কম
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: র ন ক মন দ র ন র য়ণগঞ জ হ জ র বছর ক উন ট র মন দ র র খ দ ই কর স ন দর য আনন দ র জ বন ত র র জন স তম ভ অন ভ ত র জন য র স মন হয় ছ ল ব যবহ ন করত
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রিপ্লেক্স বাড়ি, ফ্ল্যাটসহ ২০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক নজরুল ইসলাম
ঢাকার বারিধারা, গুলশান, বসুন্ধরা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলামের বিপুল সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে নজরুল ইসলাম নিজেই তাঁর বাড়ি, ফ্ল্যাট, জমিসহ বিপুল সম্পদের তথ্য দেন। আজ সোমবার দুদক এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
দুদক গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বংশাল থেকে নজরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। পরে পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে আজ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে (সিএমএম) ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে রাজি হলে তাঁকে আদালতে নেওয়া হয়। কিন্তু আদালতে গিয়ে তিনি জবানবন্দি দিতে অস্বীকার করেন।
দুদক বলছে, বারিধারায় আট কাঠা জমির ওপর ‘পুতুল হাউস’ নামে একটি ট্রিপ্লেক্স বাড়ি রয়েছে নজরুল ইসলামের, যা বিদেশিদের কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। গুলশান–১ নম্বর ভাসাবির পেছনে ৩ হাজার ২০০ বর্গফুটের একটি এবং বারিধারা ডিওএইচএসে ২ হাজার ৮৪১ বর্গফুটের আরেকটি ফ্ল্যাট রয়েছে। গুলশান–২ নম্বরে পাঁচ কাঠা জমির ওপর দোতলা একটি ভবন রয়েছে।
শুধু রাজধানী নয়, আশপাশের এলাকায়ও নজরুল ইসলামের মালিকানায় একাধিক সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে দুদক। তাদের ভাষ্য, নারায়ণগঞ্জের ভূলতা গাউছিয়ায় এম এ খালেক ও আজহার হোসেনের সঙ্গে যৌথভাবে ‘প্রাইম শপ’ নামে ১৮ কোটি টাকার একটি কোম্পানির সম্পদে তাঁর অংশীদারত্ব আছে। মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানে কৃষিজমি রয়েছে। এভাবে ঢাকা ও এর আশপাশের জেলায় নজরুল ইসলামের দুই শ কোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে।
রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, নজরুল ইসলাম ফারইস্ট ইসলামী লাইফ, ফারইস্ট ইসলামী সিকিউরিটিজ, ফারইস্ট ইসলামী প্রোপার্টিজ, সিভিসি ফাইন্যান্স, ফারইস্ট ফাইন্যান্সসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করেছেন। এসব প্রতিষ্ঠানে তাঁর শেয়ারমূল্য ১৫ থেকে ২০ কোটি টাকার সমপরিমাণ।
দুদক বলছে, নজরুল ইসলাম ও তাঁর পুরো পরিবার যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। ২০১৫ সালে তিনি ৫ লাখ ৫০ হাজার ডলার যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে ওয়েলিংটনে একটি বাড়ি কেনেন। তার আগের বছর ফারইস্ট ইসলামী লাইফের নামে রাজধানীর তোপখানা রোডে ২০৭ কোটি টাকায় জমি ক্রয়ের সময় ২৮ কোটি টাকা ভাগাভাগি হয়, যার মধ্যে নজরুল ইসলাম পান ৬ কোটি টাকা। তিনি জমি বিক্রেতা আজহার হোসেন খানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এবং তাঁর কাছ থেকে নিজের হিসাবে ১০ কোটি টাকা ও স্ত্রীর হিসাবে ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা স্থানান্তর করেন। এই অর্থ বিদেশে পাচার করে নজরুল ইসলাম মানি লন্ডারিং করেছেন বলে তদন্ত কর্মকর্তাদের ধারণা।
লাখ লাখ টাকা খরচ করে নজরুল ইসলাম ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, ঢাকা বোট ক্লাবসহ অন্তত ১৪টি অভিজাত ক্লাবের সদস্য।
আরও পড়ুনফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম গ্রেপ্তার২৩ অক্টোবর ২০২৫