ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর প্রধানমন্ত্রী কমলাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করল ভেনেজুয়েলা
Published: 29th, October 2025 GMT
ভেনেজুয়েলা সরকার দেশটিতে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর প্রধানমন্ত্রীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। ক্যারিবিয়ান সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতা ঘিরে দেশ দুটির মধ্যে চরম বিরোধ চলছে। এর জেরেই ভেনেজুয়েলায় ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর সরকারপ্রধানকে অবাঞ্ছিত করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে ভেনেজুয়েলার জাতীয় পরিষদে ভোটাভুটি হয়। পরিষদের সদস্যরা ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর প্রধানমন্ত্রী কমলা প্রসাদ বিসেসারকে অবাঞ্ছিত করার পক্ষে ভোট দেন। প্রধানমন্ত্রী কমলা সম্প্রতি ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরোর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়েছেন। এ জন্য দেশটিতে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর প্রধানমন্ত্রীকে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন‘নিঃসন্দেহে’ মাদুরো সরকারকে উৎখাত করতে চান ট্রাম্প, বিবিসিকে ভেনেজুয়েলার কর্মকর্তা২৭ অক্টোবর ২০২৫এমন উদ্যোগ নেওয়ার এক দিন আগে বিষয়টি নিয়ে ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগোর প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিল বার্তা সংস্থা এএফপি। জবাবে কমলা বলেন, ‘তারা কেন ভাবল যে আমি ভেনেজুয়েলায় যেতে চাইব?’
ভেনেজুয়েলা ও ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো ছোট একটি উপসাগর দিয়ে বিভক্ত। সবচেয়ে সংকীর্ণ জায়গাটিতে এটি মাত্র ১১ কিলোমিটার (প্রায় ৭ মাইল) চওড়া। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় এ অঞ্চলে মার্কিন সামরিক তৎপরতা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে।
ক্যারিবীয় সাগরে মার্কিন সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি ও মাদক পাচারের নৌকাগুলোয় হামলার ঘটনায় যে কয়জন আঞ্চলিক নেতা প্রশংসা করেছেন, কমলা তাঁদের একজন।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করার পরপর গত ২ সেপ্টেম্বর কমলা বলেছিলেন, ‘বেশির ভাগ দেশের সঙ্গে আমিও খুশি যে মার্কিন নৌবাহিনী তাদের অভিযানে সফল হচ্ছে। পাচারকারীদের (মাদক) প্রতি আমার কোনো সহানুভূতি নেই। মার্কিন বাহিনীর উচিত তাদের সবাইকে সহিংসভাবে হত্যা করা।’
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের ‘গোপন অভিযান’ ঠেকাতে সামরিক মহড়া চালাচ্ছে ভেনেজুয়েলা২৬ অক্টোবর ২০২৫কমলার এমন অবস্থান তাঁকে মাদুরো সরকারের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে ফেলেছে। এ সপ্তাহে ভেনেজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইভান গিল পিন্টো জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বলেন, ‘মার্কিন বাহিনীর হামলা আমাদের মাথার ওপর ঝুলে থাকা একটি অবৈধ ও সম্পূর্ণ অনৈতিক সামরিক হুমকি।’
আইনবিশেষজ্ঞরা মার্কিনিদের এসব বোমাবর্ষণকে ‘বিচারবহির্ভূত হত্যার’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘিত হচ্ছে বলেও বলেছেন তাঁরা। এ পর্যন্ত ১৪টি সমুদ্রগামী নৌযানে ১৩টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব নৌযানের বেশির ভাগই ছোট নৌকা।
ওই অঞ্চলে মার্কিন হামলায় ৫৭ জন নিহত হয়েছেন। তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাঁরা সবাই মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত—এমন কোনো প্রমাণ এখনো প্রকাশ্যে উপস্থাপন করা হয়নি। এর মধ্যেই কমলাকে ভেনেজুয়েলায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার কথা জানা গেল।
আরও পড়ুনট্রাম্প এশিয়ায় শান্তি খুঁজছেন, উত্তেজনা বাড়াচ্ছেন লাতিনে ২৭ অক্টোবর ২০২৫এর আগে গতকাল এএফপি জানায়, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো নিজ ভূখণ্ড থেকে অবৈধ অভিবাসীদের ‘গণবিতাড়নের’ কথা বিবেচনা করছে। তাঁদের বেশির ভাগই ভেনেজুয়েলার নাগরিক।
এএফপির পর্যালোচনা করা স্মারক অনুযায়ী, ত্রিনিদাদ ও টোবাগোর হোমল্যান্ড সিকিউরিটিমন্ত্রী রজার আলেকজান্ডার আটক হওয়া ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ যেকোনো পরিকল্পিত মুক্তি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন।
আরও পড়ুনভেনেজুয়েলা নিয়ে ট্রাম্প কী লক্ষ্য অর্জন করতে চান২৫ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পরিস্থিতির উন্নতির জন্য নির্বাচন হতেই হবে
বাংলাদেশে নির্বাচনপূর্ব সময়ে সব সময় কিছু বিশৃঙ্খলা বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়। তবে এবারের পরিস্থিতি অন্যবারের চেয়ে বেশি নাজুক। এর কারণ বিপ্লব–পরবর্তী সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে পর্যায়ে নেমেছে, সেখান থেকে বর্তমান সরকার দেড় বছর সময় পেলেও খুব দৃশ্যমান কোনো উন্নতি ঘটাতে পারেনি।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এবং এর আগে থেকে পরিস্থিতির ওপর যে ধরনের পর্যালোচনা বা অনুধাবনের প্রয়োজন ছিল, সেখানে ঘাটতি ছিল। কাজেই প্রস্তুতিও সেভাবে নেওয়া হয়নি। বিপুলসংখ্যক অস্ত্র এর আগে খোয়া গিয়েছিল, হারিয়ে গিয়েছিল। সেগুলো উদ্ধার করার জন্য জোর তৎপরতা চালানোর মতো দৃশ্যমান কিছু দেখা যায়নি। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত ছিল, সেখানে বড় ধরনের ঘাটতি আমরা দেখতে পেয়েছি।
আমরা এটাও জানি যে আওয়ামী লীগ (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ), বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেত্রী এবং অন্য যে নেতারা ভারতে পালিয়ে গেছেন, তাঁরা সেখান থেকে বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য প্রত্যক্ষভাবে উসকানি দিয়েছেন। এগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর আগাম প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন ছিল। সে ধরনের কোনো প্রস্তুতি যদি তারা নিয়ে থাকে, তাহলে অবস্থার অবনতি হতো না বা হওয়ার কথা নয়।
যেসব বাহিনী দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সেই বাহিনীগুলোর কর্মদক্ষতায় বড় ধরনের ঘাটতি রয়ে গেছে। বিশেষ করে পুলিশ সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠিত হয়নি। এই বাহিনীকে সরকার সম্পূর্ণভাবে আগের জায়গাতে ফিরিয়ে নিতে পারেনি বা তৈরি করতে পারেনি।
বিশেষ করে অস্ত্র উদ্ধারের ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। এ ব্যাপারে কোনো জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে আমরা কোনো কিছু দেখতে পাইনি। একই সঙ্গে যে ধরনের গোয়েন্দা তৎপরতা বা আগাম তথ্য থাকা উচিত, সেখানে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তারা আগাম তথ্য পাচ্ছে না। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তাদের তৎপরতা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আগাম তথ্য ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতির ওপর সঠিক নিয়ন্ত্রণ রাখাটা দুরূহ হয়ে পড়ে।
তবে আমরা নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। নির্বাচন যেকোনো মূল্যে হতে হবে। নির্বাচন ছাড়া কোনোভাবেই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে না। নির্বাচনই একমাত্র পন্থা, যার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের স্বপ্ন, যার জন্য হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, সেই লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাতে পারব। কাজেই নির্বাচন হতে হবে।
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে, শান্তিপূর্ণভাবে করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকতে হবে, যাতে পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যতটুকু অবনতি হয়েছে, সেটিকে প্রারম্ভিক পর্যায় বলা যায়। তবে এটা একটা অশনিসংকেত। উচিত হবে এখনই এটাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। পুরো পরিস্থিতির ওপর সঠিক নিয়ন্ত্রণ রাখা এবং যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার লক্ষণকে একেবারে নির্মূল করে দেওয়া।
আমরা আশা করব, আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে যেসব দায়িত্বশীল ব্যক্তি আছেন, বিশেষ করে যাঁরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন, যাঁরা পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরা নিজেদের সঠিক ভূমিকাটা রাখবেন। কোনোভাবেই যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে এবং দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, এটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত হবে ঝুঁকিপূর্ণ প্রার্থীদের চিহ্নিত করা এবং তাঁদের জন্য এখন থেকেই বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান, সভাপতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ