জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের নিয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ সৃষ্টির লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তরুণ নেতৃত্বের এ দল সরকার গঠনের লক্ষ্যে একটি মধ্যপন্থী ও আদর্শভিত্তিক রাজনৈতিক চিন্তাকে সামনে রেখে জোট গঠনের জোরালো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে দল থেকে সবুজ সংকেত পাওয়া নেতারা নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান করে গণসংযোগ শুরু করেছেন। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) বা বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে এনসিপির জোট গঠনের আলোচনা যেমন আছে, তেমনই এনসিপির নেতৃত্বে অন্যান্য মধ্যপন্থী ছোট দলকে নিয়ে জোট করার সম্ভাবনা নিয়েও গুঞ্জন চলছে। তবে, কোন কোন দলের সঙ্গে জোট করতে যাচ্ছে এনসিপি, সেটা স্পষ্ট হতে আরো অপেক্ষা করতে হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই জোট নির্বাচনের তফসিলের ঘোষণার আগেই হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এনসিপির এই জোট গঠন দেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ নিয়ে আসতে পারে। এর বড় একটা কারণ হলো—দেশের তরুণ ভোটাররা এখন দেশ নিয়ে বেশি সচেতন এবং তাদের ভোট ব্যাংক বড় ফ্যাক্টর।

আরো পড়ুন:

নভেম্বরে গণভোটের প্রস্তাব জামায়াতের, ইসিতে ১৮ সুপারিশ

বাংলাদেশের নির্বাচনে বড় পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে ইইউ

মধ্যপন্থীদের নিয়ে জোটের আভাস
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এই সময়সীমা ধরেই কাজ করছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই দেশের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত মিলছে। তরুণ ছাত্রদের রাজনৈতিক দল এনসিপি মধ্যপন্থী ও সমমনা দলগুলোকে নিয়ে নতুন জোট গঠনের পথে হাঁটতে পারে। এনসিপির নেতারা নিজেদেরকে ‘মধ্যপন্থী’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান তৈরি করতে চাচ্ছেন এবং দেশের বিদ্যমান বৃহত্তর রাজনৈতিক দলগুলোর বলয় থেকে বেরিয়ে এসে নতুন একটি রাজনৈতিক শক্তির উত্থানের সম্ভাবনা দেখাচ্ছেন।

এনসিপি দলীয় সূত্র জানিয়েছে, দলটি আগামী নির্বাচনে নিজেদের নেতৃত্বেই মধ্যপন্থীদের নিয়ে একটি রাজনৈতিক জোট করে বড় চমক দেখাতে চাচ্ছে। দেশের বিদ্যমান রাজনীতিতে তারা বৃহত্তর পরিসরে নিজেদের ‘বাংলাদেশপন্থা’ মতাদর্শ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অন্য কোনো বড় দলের জোটে ভিড়ে নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে ফলতে চাইছে না। বরং, একটি স্বতন্ত্র অবস্থান থেকে তারা রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে আগ্রহী।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এনসিপি যদি সফলভাবে একটি মধ্যপন্থী জোটের নেতৃত্ব দিতে পারে, তবে তা দেশের প্রচলিত রাজনৈতিক ধারায় একটি নতুন মাত্রা যোগ করবে এবং ভোটারদের সামনে একটি নতুন বিকল্প উপস্থিত হবে। তবে, শেষ পর্যন্ত এই জোটের প্রকৃতি ও কার্যকারিতা কেমন হবে, তা জানতে হলে সব দলের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর মধ্যকার টানাপোড়েনের মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান খুঁজতে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি নতুন জোট করে দেশের রাজনীতিতে ‘তৃতীয় শক্তি’ হিসেবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর হাতিরপুলের একটি রেস্তোরাঁয় নয়টি দলের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছিল— গণসংহতি আন্দোলন, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, জেএসডি (জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল), ভাসানী জনশক্তি পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), এবি পার্টি ও গণ অধিকার পরিষদ।

এনসিপির নির্বাচনী জোট, নতুন সমীকরণে বাংলাদেশর রাজনীতি

আসন্ন এয়োদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ইতোমধ্যে তাদের নির্বাচনী কৌশল ও জোট নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে, প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর বাইরে আলাদা জোট গঠনের পরিকল্পনা দেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে দূরত্ব এবং রাজনৈতিক মতাদর্শগত ভিন্নতার সুযোগ নিয়ে এনসিপির এই মধ্যপন্থী জোট বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের দ্বিদলীয় রাজনীতিতে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলোর একটি নির্বাচনী জোট গঠন হলে সেটি জাতীয় রাজনীতিতে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এনসিপির জোট নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানিয়েছে, এনসিপিসহ সমমনা দলগুলো আলাদা জোট গঠন করলে বিএনপি সেটাকে খুব বেশি নেতিবাচকভাবে দেখবে না। কারণ, এতে জামায়াতের সঙ্গে খুব বেশি দলের জোট করার সুযোগ কমবে, যা বিএনপির জন্য কৌশলগত সুবিধা আনতে পারে।

সম্প্রতি বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, “নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত রাজনৈতিক জোট নিয়ে আলোচনা চলবে। কী হয়, তা সময়ই বলে দেবে।”

জামায়াতে ইসলামীর একটি সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনী জোটে এনসিপিকে সাথে পাওয়ার আগ্রহ জামায়াতের আছে, যদি এনসিপি চায়। প্রয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত আছেন তারা।

এনসিপির নেতৃত্বে মধ্যপন্থী জোট বাংলাদেশে বিদ্যমান রাজনীতিতে কী ধরনের প্রভাব ফেলবে, জানতে চাইলে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, যদি ছোট ছোট দলগুলো একত্রিত হয়, তাহলে তো একটা বড় প্ল্যাটফর্ম হবে। আর এই বড় প্ল্যাটফর্ম যদি একই মন-মানসিকতার হয় এবং তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি যদি কাছাকাছি থাকে, তাহলেই শুধুমাত্র জোট হওয়া সম্ভব। যারা এখন জোট করবে, তারা যদি সবাই মধ্যপন্থী দল হয় এবং আদর্শভাবে তাদের মধ্যে ঐক্য হলে মধ্যপন্থার চর্চা হতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশে তো মধ্যপন্থার একটা উদার রাজনৈতিক ধারা হিসেবে বিএনপিকে অনেকেই মনে করছে। এখন আমাদের অপেক্ষা করতে হবে যে, কোন কোন দল তাদের সঙ্গে আসলো এবং তারা সবাই একই রকম চিন্তা রাখে কি না বা সবাই মধ্যপন্থা চিন্তা করছে কি না?

আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ভোটের রাজনীতিতে নতুন তৃতীয় শক্তির উত্থান হওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভোটের রাজনীতিতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি একটা বিষয়। আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির ভোট অন্য কোন দলের প্রার্থীদের পক্ষে যাবে, এটা বলা অত্যন্ত কঠিন। তবে, তাদের অনুপস্থিতিতে তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি আসার সম্ভাবনা আছে। আমাদের এখন অপেক্ষা করতে হবে দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনকে সামনে রেখে কী কী পদক্ষেপ নেয় সেগুলো দেখার জন্য। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। কারা জোট নিয়ে আসছে এবং জোটে কারা থাকছে, সেটা দেখার জন্য অপেক্ষা রাখতে হবে। যদি কেউ এরকম উদ্যোগ নেয় যে, মধ্যপন্থর জোট করবে, তাকে অবশ্যই নিজস্ব এই মধ্যপন্থার আদর্শ ধারণ করতে হবে।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক জোট সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, আমাদের জোটের বিষয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। গণঅধিকার পরিষদ, গণতন্ত্র মঞ্চ ও এক-দুটি ইসলামিক দলের সঙ্গে এনসিপির টুকটাক আলোচনা হয়েছে। তবে, এখনো জোটের বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বিএনপি এবং জামায়াতের বাইরে মধ্যপন্থী যারা আছে, এদের নিয়ে একটি নতুন জোট করার ধারাবাহিক চেষ্টা চলছে। তবে, এই জোটের ধারণা স্পষ্ট হতে আমাদের আরো অপেক্ষা করতে হবে। সময়ই বলে দেবে, আগামীতে কী হবে।

জোটের বিষয় এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেছেন, “জোট বা আসন ভাগাভাগির আলোচনা হয়নি। সব দলের জন্য এনসিপির দরজা খোলা।”

ঢাকা/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় ন গর ক প র ট এনস প দ শ র র জন ত ত র জন ত ক ব শ ল এনস প র ন ত র র জন ত ক জ ট গঠন র ন র ব চনক দশ জ ত য ন র জন ত অবস থ ন ইসল ম র আম দ র এই জ ট র জন য জ ট কর ব এনপ র একট দলগ ল

এছাড়াও পড়ুন:

প্রেমিকের পরামর্শে স্বামীকে গ্যাস ট্যাবলেট খাইয়ে হত্যার অভিযোগ,

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে প্রেমিকের পরামর্শে অতিরিক্ত গ্যাসের ট্যাবলেট খাইয়ে স্বামী আব্দুল করিমকে (২৫) হত্যার অভিযোগে তানজিলা খাতুন (২২) নামের এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ।

বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে শাহজাদপুর উপজেলার নন্দলালপুর গ্রাম থেকে আব্দুল করিমের মরদেহ উদ্ধার ও অভিযুক্ত নারীকে আটক করা হয়েছে।

আব্দুল করিম নন্দলালপুর গ্রামের নবী মন্ডলের ছেলে। আটক তানজিলা খাতুন পাবনার সাথিয়া উপজেলার বাঐটোলা গ্রামের হাসেন আলীর মেয়ে।

পুলিশ ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, এক মাস আগে মিশুকচালক আব্দুল করিমের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তানজিলা খাতুনের। বিয়ের পর করিমের পরিবার জানতে পারে যে, আগে থেকেই সাথিয়ার প্রতিবেশী সিএনজি অটোরিকশার চালক নুর আলম ওরফে নাহিদের সঙ্গে তানজিলার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্প্রতি তানজিলা বাবার বাড়িতে গেলে প্রেমিক নাহিদ তাকে বিয়ের জন্য চাপ দেন। এ অবস্থায় তিনি প্রেমিকের পরামর্শে স্বামী করিমকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেন।

গত সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাতে তানজিলা কৃমিনাশক ট্যাবলেটের কথা বলে তার স্বামীকে অতিরিক্ত গ্যাসের ট্যাবলেট খাওয়ান। কিছুক্ষণ পর থেকে পেটে জ্বালাপোড়া শুরু হলে প্রথমে স্থানীয় ক্লিনিকে এবং পরে তাকে এনায়েতপুর খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার সকালে আব্দুল করিমের মৃত্যু হয়।

শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম আলী বলেছেন, বুধবার সকালে নিজ বাড়ি থেকে আব্দুল করিমের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নববধূ তানজিলাকে আটক করে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি তার স্বামীকে অতিরিক্ত গ্যাসের ট্যাবলেট খাওয়ানোর কথা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।

ঢাকা/অদিত্য/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ