আফগানিস্তানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী
Published: 29th, October 2025 GMT
আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে চলমান শান্তি আলোচনা ‘ব্যর্থ’ হয়েছে, এমনটাই বলেছেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার। দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে গত কয়েক দিন ধরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে আলোচনা চলছিল।
কিন্তু সংকটের কোনো ‘কার্যকর সমাধান’ ছাড়াই ওই আলোচনা শেষ হয়েছে। এই শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়া ওই অঞ্চলের জন্য একটি বড় ধাক্কা, বিশেষ করে এ মাসে সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘর্ষের পর।
গত সপ্তাহে সীমান্তে সংঘর্ষে দুদেশ মিলিয়ে কয়েক শ মানুষ নিহত হয়েছেন। ২০২১ সালে তালেবান আবার আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসার পর এটাই ছিল দুদেশের মধ্যে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সীমান্ত সংঘাত।
সীমান্তে কয়েক দিনের সংঘাত শেষে ১৯ অক্টোবর কাতারের মধ্যস্থতায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তান একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।এমনকি ইস্তাম্বুলে শান্তি আলোচনা চলার সময়েও সীমান্তে সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল মঙ্গলবার কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে ইস্তাম্বুলে শান্তি আলোচনা ‘কোনো কার্যকর’ সমাধান ছাড়াই শেষ হওয়ার খবর আসে।
আজ বুধবার পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার এই বৈঠক নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, আফগানপক্ষ মূল বিষয় থেকে বারবার বিচ্যুত হচ্ছিল। তারা সেই গুরুত্বপূর্ণ বিন্দু এড়িয়ে চলছিল, যার ওপর ভিত্তি করে এই আলোচনা শুরু হয়েছিল।
তারার আরও দাবি করেন, ‘কোনো দায়িত্ব গ্রহণের পরিবর্তে আফগান তালেবান শুধু অন্যকে দোষারোপ করা, এড়িয়ে যাওয়া ও বিভ্রান্ত করার কৌশল অবলম্বন করেছে। ফলে আলোচনা কোনো কার্যকর সমাধানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে।’
আরও পড়ুনসমঝোতা ছাড়াই ইস্তাম্বুলে যুদ্ধবিরতি আলোচনা শেষ১৬ ঘণ্টা আগেসীমান্তে কয়েক দিনের সংঘাত শেষে ১৯ অক্টোবর কাতারের মধ্যস্থতায় পাকিস্তান ও আফগানিস্তান একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়।
পাকিস্তানের একটি নিরাপত্তা সূত্র বলেছে, পাকিস্তান চায় তালেবান যেন বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী, যেমন পাকিস্তান তালেবান (টিটিপি) ও অন্যান্য গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করে।
কোনো দায়িত্ব গ্রহণ করার পরিবর্তে আফগান তালেবান শুধু অন্যকে দোষারোপ করা, এড়িয়ে যাওয়া এবং বিভ্রান্ত করার কৌশল অবলম্বন করেছে। ফলে আলোচনা কোনো কার্যকর সমাধানে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছে।আতাউল্লাহ তারার, পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রীকিন্তু তালেবান এ বিষয়ে আগ্রহ দেখায়নি। পাকিস্তান এসব গোষ্ঠীকে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হিসেবে দেখে।
আলোচনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল একটি আফগান সূত্র বলেছে, এই বিষয়ে ‘উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়ের’ পর আলোচনা শেষ হয়। তালেবান বলেছে, পাকিস্তানি তালেবানের ওপর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এসব গোষ্ঠী গত কয়েক সপ্তাহে পাকিস্তানি সেনাদের ওপর একাধিকবার হামলা চালিয়েছে।
আরও পড়ুনপাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে আবার সংঘর্ষ, ৫ পাকিস্তানি সেনা নিহত২৭ অক্টোবর ২০২৫আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলসহ কয়েকটি এলাকায় পাকিস্তানের বিমান হামলার পর অক্টোবরে দুদেশ সীমান্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল।
কাবুলে হামলার জবাব দিতে তালেবান ২ হাজার ৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত বরাবর পাকিস্তানের সেনাচৌকিগুলোতে হামলা চালায়। এতে দুদেশের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ শুরু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল।
আরও পড়ুনদোহায় আলোচনা: অবিলম্বে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে আফগানিস্তান-পাকিস্তান১৯ অক্টোবর ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আফগ ন স ত ন ক র যকর স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
‘কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে’
৯ মাস আগে বিধবা লাকি রানী দের (৪০) গোয়ালঘরের তালা কেটে দুর্বৃত্তরা চারটি গরু চুরি করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর কানাডাপ্রবাসী এক ব্যক্তি তাঁকে একটি গাভি কিনে দেন। পরে গাভিটি একটি বাছুরের জন্ম দেয়। বাছুরটির বয়স হয়েছিল প্রায় সাত মাস। গতকাল শুক্রবার রাতে দুর্বৃত্তরা আবারও তাঁর গোয়ালঘরের দরজার তালা লাগানোর শিকল কেটে বাছুরসহ গাভিটি চুরি করে নিয়ে গেছে।
লাকি রানীর বাড়ি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের উত্তর ভবানীপুর গ্রামে। তাঁর স্বামী প্রশান্ত দে প্রায় চার বছর আগে হঠাৎ হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। লাকির দুই মেয়ে। বড় মেয়ে রিয়া রানী দে স্থানীয় তৈয়বুন্নেছা খানম সরকারি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। ছোট মেয়ে রুহি রানী দে পঞ্চম শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা দিয়েছে। স্বামীর অকালমৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরেন লাকি। পাঁচটি গরু লালন-পালন করছিলেন। গরু বিক্রি করে সংসার আর দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ চালাবেন ভেবেছিলেন। একটি গরু বিক্রিও করেন। এরই মধ্যে গত মার্চ মাসে বাকি চারটি গরু চুরি হয়ে যায়।
আজ শনিবার বিকেলে সরেজমিনে লাকির বাড়িতে গেলে তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ঘুম থেকে জেগে দেখেন, গোয়ালঘরের দরজায় তালা লাগানোর শিকল কাটা। ভেতরে গরু–বাছুর কোনোটাই নেই। জুড়ী থানার পুলিশের এক কর্মকর্তার মুঠোফোনের নম্বর ছিল তাঁর কাছে। ওই নম্বরে কথা বলে তাঁকে ঘটনাটি জানান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে লাকি রানী বলেন, ‘গাইটা (গাভি) পাইয়া মনে কিছু শান্তি ফিরিয়া আইছিন। একটা বাছুরও পাইলাম। মনে করছিলাম, বাছুরটার বয়স ৯-১০ মাস হইলে বিক্রি করি দিমু। ৫০ হাজার টাকা লোন (ঋণ) করছিলাম বেশ আগে। ২০-২৫ হাজার টাকা পরিশোধের বাকি। বাছুর বিক্রি করে এই টাকাটা পরিশোধ করার চিন্তাভাবনা করছিলাম। চোর আমারে আবার পথে নামাই দিল। কার কপালে বাড়ি মারলাম, কে বারবার এই ক্ষতিটা করে?’
এ বিষয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করেননি লাকি। তিনি বলেন, ‘আগেরবার চুরির পরেও পুলিশরে জানাইয়া কোনো লাভ হইছে না। খামাখা করিয়া লাভ কিতা হইব? তবে কাইল (শুক্রবার) খবর জানানির পর তারা (পুলিশ) আইয়া খোঁজাখুঁজি করছে, চেষ্টা করছে।’
লাকি বলেন, ‘সংসারের নানা খরচ আছে। মেয়েরার লেখাপড়ায়ও খরচ লাগে। এইটা তো চালানি লাগব। এসএসসি পাসের পর আমার বিয়া হই গেছে। ৩-৪ হাজার টাকা বেতনের একটা চাকরি পাইলে করতাম। কিন্তু এসএসসি পাসে তো চাকরি পাওয়াও কঠিন। কিতা করতাম, কিলা চলতাম—এইটাই খালি ভাবি। ঘরে বেকার বসি থাকলে সংসার চলব কেমনে?’
আরও পড়ুনশূন্য গোয়ালের সামনে কাঁদতে কাঁদতে লাকী রানী বললেন, ‘চোরে মরা মানুষরে মারিয়া গেল’০৩ মার্চ ২০২৫জুড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. ফরহাদ মিয়া বলেন, খবর পেয়ে তিনিসহ থানার আরেক এসআই মুজিবুর রহমান লাকি রানীর বাড়িতে যান। খোঁজাখুঁজি করেও চুরি হওয়া গরু ও বাছুরের সন্ধান মেলেনি। তবে তাঁদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।