টিকনারের ঝলমলে প্রত্যাবর্তনে নিউ জিল্যান্ডের সিরিজ জয়
Published: 29th, October 2025 GMT
এক ম্যাচ বাকি থাকতেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারল নিউ জিল্যান্ড। হ্যামিলটনের সেডন পার্কে আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) দ্বিতীয় ওয়ানডে ৫ উইকেটে জিতে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জয় নিশ্চিত করেছে।
প্রথম ওয়ানডের মতোই এটি ছিল নিউ জিল্যান্ডের একতরফা ম্যাচ। এবার তারা ইংল্যান্ডকে থামিয়ে দিয়েছে মাত্র ১৭৫ রানে। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে ব্যাট হাতে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ড্যারিল মিচেল। যিনি প্রথম ওয়ানডেতে ৭৮ রানের অপরাজিত ইনিংসের পর এবারও খেলেছেন ৫৬ রানের ইনিংস। তার আগে রাচিন রবীন্দ্রর ৫৪ রানের ইনিংসই ম্যাচের মূল ভিত গড়ে দেয়। আর অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার ঝড় তুলেছেন ১৭ বলে অপরাজিত ৩৪ রান করে। হাতে তখনো পড়ে ছিল ১০১ বল। যা তাদের আধিপত্যের সাক্ষী।
আরো পড়ুন:
নারী বিশ্বকাপে জয়ে শুরু অস্ট্রেলিয়ার
মার্শ ঝড়ে বৃথা গেল রবিনসনের সেঞ্চুরি, অস্ট্রেলিয়ার দাপুটে জয়
তবে আসল নায়ক ছিলেন ব্লেয়ার টিকনার। প্রায় দুই বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই ঝলমলে স্পেল উপহার দেন। তুলে নেন ৪ উইকেট মাত্র ৩৪ রানে! এটাই তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগার। কাইল জেমিসনের জায়গায় স্কোয়াডে যোগ হয়ে পরে ম্যাট হেনরির ইনজুরিতে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু এই ফিরে আসা ছিল গভীরভাবে ব্যক্তিগত এক লড়াইয়ের ফল। তার স্ত্রী সারা লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। এখনও কেমোথেরাপি চলছে। যদিও এখন তিনি রেমিশনে আছেন। টিকনারের ভাষায়, “প্রতিটি দিন এখন একেকটা আশীর্বাদ।” হ্যামিলটনের এই জয় তাই তার জন্যও আবেগে ভরা এক প্রত্যাবর্তন।
ইংল্যান্ডের জন্য দিনটি ছিল একেবারে উল্টো। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে তারা ব্যাটিংয়ে ব্যর্থ। প্রথম ওয়ানডের ২২৩ রানের পর এবার অলআউট ১৭৫। শেষ ১৬ ইনিংসে দশমবারের মতো ইনিংস গুটিয়ে গেল তাদের।
এই ম্যাচে হ্যারি ব্রুকও বাঁচাতে পারেননি দলকে। ১২তম ওভারে ৫১ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ক্রিজে নামেন তিনি। কিন্তু থামলেন ৩৪ রানে। যা প্রথম ম্যাচের ১৩৫ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসের অনেক নিচে। কিছুটা প্রতিরোধ গড়েছিলেন জেমি ওভারটন। তিনি ২৮ বলে লড়াকু ৪২ রানে ইনিংস খেলেন। বাকিদের ব্যর্থতায় সেই ইনিংসও বৃথা গেল।
তবে ইংল্যান্ডের একমাত্র সান্ত্বনা ছিলেন জোফরা আর্চার। ২০১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালের পর প্রথমবার নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে খেলতে নেমেই নিলেন ৩ উইকেট ২৩ রানে। ১০ ওভারের মধ্যে ৪টিই ছিল মেইডেন! ৯০ মাইল গতির ধারালো বোলিংয়ে তিনি নিউ জিল্যান্ডের টপ অর্ডারকে বিপাকে ফেলেছিলেন। কিন্তু রান ডিফেন্ড করার মতো পুঁজি ছিল না তাদের।
টসে জিতে বোলিং নিয়েছিলেন স্যান্টনার। বৃষ্টি দেরি করলেও সিদ্ধান্তটা ছিল সঠিক। শুরুতেই জেকব ডাফি ফিরিয়ে দেন বেন ডাকেটকে। এরপর টিকনার দারুণ ছন্দে পরপর উইকেট তুলে নেন জো রুট ও জ্যাকব বেথেলসহ চারজনের। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ধসে পড়তে সময় লাগেনি।
১৭৫ রানের লক্ষ্য নিউ জিল্যান্ডের জন্য চ্যালেঞ্জ ছিল না। যদিও আর্চার শুরুতেই উইল ইয়াংকে ফিরিয়ে কিছুটা উত্তেজনা আনেন। তবু রবীন্দ্র ও মিচেলের ব্যাটে দ্রুত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায় স্বাগতিকরা।
রবীন্দ্র ৫৩ রানে আউট হলেও কাজটা সহজ করে দিয়েছিলেন। এরপর মিচেল ও স্যান্টনার ঝড়ো ৫৯ রানের অপরাজিত জুটিতে ম্যাচ শেষ করে দেন স্টাইলের সঙ্গে। মিচেল পেরিয়ে যান নিজের ১৭তম ওয়ানডে অর্ধশতকের গণ্ডি। আর স্যান্টনার খেলেন মাত্র ১৭ বলে ২টি চার ও ৩ ছক্কায় ৩৪ রানের ইনিংস।
শেষ পর্যন্ত ১৪ ওভার হাতে রেখে জয় তুলে নেয় নিউ জিল্যান্ড। অন্যদিকে ইংল্যান্ডের ওয়ানডে ধস অব্যাহত। ২০২৫ সালে ১৪ ম্যাচে এটা তাদের দশম হার।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য ন টন র ৩৪ র ন উইক ট প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল, জিয়া-জলিলের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি
১৯৭৫ সালের নভেম্বরে পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থানের মধ্যে নিহত কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা বীর বিক্রম হত্যাকাণ্ডের ৪৭ বছর পর করা মামলার তদন্ত শেষ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাতে তৎকালীন সেনাপ্রধান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, মেজর (অব.) মো. আবদুল জলিল ও মেজর (অব.) আসাদ উজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি জানিয়ে তাঁদের মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
তবে এ হত্যাকাণ্ডে লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহেরের (অব.) দায় পেলেও মৃত হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধেও অভিযোগপত্র দেননি তদন্ত কর্মকর্তা।
গত ৩০ নভেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির ঢাকা মেট্রোর পরিদর্শক সিকদার মহিতুল আলম। তাঁর এই প্রতিবেদন আদালতে গৃহীত হলে দৃশ্যত এ মামলার যবনিকাপাত হবে।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর অস্থিরতার মধ্যে ৩ নভেম্বর সামরিক বাহিনীতে এক অভ্যুত্থান ঘটে মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে। তখন বন্দী করা হয়েছিল তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে। চার দিন পর ৭ নভেম্বর আবু তাহেরের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থানে মুক্ত করা হয় জিয়াউর রহমানকে। সেদিনই দশম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট অফিসে (বর্তমানে জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণ) নিহত হন খালেদ মোশাররফ, নাজমুল হুদা ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার।
কর্নেল খন্দকার নাজমুল হুদা হত্যাকাণ্ডের ৪৭ বছর পর ২০২৩ সালে মামলা করেন তাঁর মেয়ে নাহিদ ইজাহার খান। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় মেজর জলিলকে। হুকুমের আসামি করা হয় জিয়াউর রহমান ও কর্নেল তাহেরকে।নাজমুল হুদা মুক্তিযুদ্ধে ৮ নম্বর সেক্টরে একটি সাবসেক্টরের অধিনায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের আগে ১৯৬৮ সালে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুসহ ৩৫ জনকে অভিযুক্ত করে যে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা করেছিল, সে মামলার আসামিদের একজন ছিলেন তিনি।
৪৭ বছর পর মামলা
নাজমুল হুদা হত্যাকাণ্ডের ৪৭ বছর পর ২০২৩ সালে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন তাঁর মেয়ে সংসদ সদস্য নাহিদ ইজাহার খান। মামলায় মেজর (অব.) জলিলকে প্রধান আসামি করা হয়। হুকুমের আসামি করা হয় তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান ও জাসদ নেতা আবু তাহেরকে।
মামলায় নাহিদ ইজাহার অভিযোগ করেন, তাঁর বাবা (নাজমুল হুদা) নিহত হওয়ার সময় তিনি ও তাঁর ভাই ছোট ছিলেন। তাঁরা বড় হয়ে বাবার কোর্সমেট, সহকর্মী ও বিভিন্ন সূত্র থেকে অনুসন্ধানে জানতে পারেন, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সকালে দশম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট অফিসে নাজমুল হুদার সঙ্গে অপর দুই সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফ এবং এ টি এম হায়দার অবস্থান করছিলেন। নাজমুল হুদা সকালে নাশতা করার সময় দশম ইস্ট বেঙ্গলের সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল নওয়াজেশের কাছে দ্বিতীয় ফিল্ড আর্টিলারি থেকে একটি ফোন আসে। এরপর দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তারা নাজমুল হুদাসহ তিন কর্মকর্তাকে বাইরে নিয়ে যান।
গত ৩০ নভেম্বর মেজর নাজমুল হুদা হত্যা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। মামলার সঙ্গে তিনজনের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাঁদের অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।সিকদার মহিতুল আলম, তদন্ত কর্মকর্তাএরপর তৎকালীন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান ও জাসদ নেতা আবু তাহেরের নির্দেশে দশম ইস্ট বেঙ্গলের কর্মকর্তা, জেসিও ও সৈনিকেরা সংঘবদ্ধভাবে ঠান্ডা মাথায় নাজমুল হুদাসহ তিনজনকে হত্যা করেন বলে এজাহারে দাবি করা হয়।
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে আসামি করে এ মামলা করার সময় নাহিদ ইজাহার সংসদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদে সংরক্ষিত আসনের সদস্য ছিলেন। বিএনপি তখন মামলার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেছিল, এর পেছনে সরকারের কারসাজি থাকতে পারে।
মেজর এম এ জলিল ও জিয়াউর রহমান